দেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৮০ শতাংশ নারী এই দুই ধরনের ক্যানসার শনাক্ত পরীক্ষার বাইরে আছেন। নতুন গবেষণা বলছে, জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য দায়ী সব ধরনের ভাইরাসকে মাথায় রেখেই টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

আজ রোববার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচির তথ্য ও ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দেওয়া হয়। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে পাঁচটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ৪৬ জন বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করা হয়।

সরকারি অর্থায়নে সারা দেশে ‘ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, দেশে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারী আছেন তিন কোটি। এঁদের প্রত্যেকের জরায়ুমুখ ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার শনাক্তের পরীক্ষা হওয়া উচিত। কিন্তু ২০০৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই দুই ধরনের ক্যানসার শনাক্তের পরীক্ষা হয়েছে ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭ জনের। এর অর্থ ওই বয়সী প্রায় ৮০ শতাংশ নারী জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার শনাক্তের পরীক্ষার বাইরে আছেন। এ পর্যস্ত পরীক্ষা হওয়া ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ নারীর শরীরে ক্যানসারের পূর্বাবস্থা বা ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে।

অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা বলেন, ক্যানসার শনাক্তে গ্রাম পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত নেটওয়ার্ক আছে। এর সঙ্গে স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবারকল্যাণ সহকারী, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), নার্স, চিকিৎসকসহ ২৪ হাজারের বেশি প্রশিক্ষিত জনবল জড়িত। শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি নারী আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও কমিউনিটি ক্লিনিকে। ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের ক্যানসার শনাক্তের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধন করা হয়। পরীক্ষা করা সব নারীর একটি করে নিবন্ধন নম্বরও দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে একাধিক উপস্থাপনায় বলা হয় নারীদের মধ্যে বেশ কয়েক ধরনের ক্যানসার দেখা যায়। এর মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার সবচেয়ে বেশি। ক্যানসারবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবোকনের ২০২০ সালের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে বলা হয়, ৬৮ হাজার ৭০০ নারী ক্যানসার রোগীর মধ্যে ১৯ শতাংশ স্তন ক্যানসারে, ১২ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যানসারে, ১১ দশমিক ১ শতাংশ খাদ্যনালির ক্যানসারে, ৭ দশমিক ৮ শতাংশ পিত্তাশয়ের ক্যানসারে, ৬ দশমিক ৭ শতাংশমুখ ও ঠোঁটের ক্যানসারে এবং ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ নারী আরও কয়েক ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত।

চিকিৎসকেরা জানান, জরায়ুমুখ ক্যানসার পরীক্ষার সময় প্রত্যেক নারীর স্তন ক্যানসারও পরীক্ষা করা হয়। জরায়ুমুখ ক্যানসার শনাক্তে দেশে চার ধরনের পদ্ধতি প্রচলিত আছে: ভায়া, প্যাপসমেয়ার, ফ্লুইড বেজড সাইটোলজি ও এইচপিভি-ডিএনএ টেস্ট। এর মধ্যে ভায়া পরীক্ষা সারা দেশে বিনা মূল্যে করা হয়।

টিকা নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে

জরায়ুমুখ ক্যানসার হয় মূলত ভাইরাস থেকে। এটি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি নামে পরিচিত। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ রকম ভাইরাস আছে মোট ১৪টি। এর মধ্যে এইচপিভি১৬ এবং এইচপিভি১৮ নামের ভাইরাস ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যানসারের কারণ। বাকি ১২টি ভাইরাসকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। টিকাও দেওয়া হয় এইচপিভি১৬ ও এইচপিভি১৮ এর জন্য। কিন্তু দেশে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য ভাইরাসগুলোর কারণে জরায়ুমুখ ক্যানসার বেশি হচ্ছে।

৩ হাজার ৮৫৬ জন নারীকে নিয়ে এই নতুন গবেষণাটি করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনোলজিক্যাল অনকোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিরিন আক্তার বেগম। তিনি এইচপিভি ডিএনএ পরীক্ষাপদ্ধতি ব্যবহার করেন। তিনি জানান, এই পরীক্ষাটি ব্যয়বহুল। প্রতিটি পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়।

গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনের সময় অধ্যাপক শিরিন আক্তার বলেন, পরীক্ষায় ১৩৮ জনের বা ৩ দশমিক ৬ শতাংশ নারীর ক্যানসারের পূর্বাবস্থা বা ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ জনের (১.

৭ শতাংশ) অন্য এইচপিভি, ৪৯ জনের (১ দশমিক ৩শতাংশ) এইচপিভি১৬ এবং ১২ জনের (০.৩ শতাংশ) এইচপিভি১৮ শনাক্ত হয়েছে।

অনুষ্ঠান শেষে শিরিন আক্তার বেগম প্রথম আলোকে বলেন, এইচপিভি ডিএনএ পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। এই পরীক্ষার খরচ কমানোর ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে টিকা দেওয়ার ব্যাপারেও আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শাহিদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সারোয়ার বারী। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েবা আক্তার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আবুল কালাম আজাদ, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পর ক ষ অন ষ ঠ ন পর ক ষ র এইচপ ভ র জন য দশম ক সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

বেতন বৈষম্য দূরীকরণসহ ছয় দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের বিক্ষোভ

বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, পদোন্নতিসহ ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। রোববার সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন, কেন্দ্রীয় পরিষদ। দাবি আদায় না হলে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ইপিআইসহ স্বাস্থ্য সেবার সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন বন্ধের ঘোষণা দেন তারা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত সকল সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে বাস্তবায়ন করলেও দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সহকারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে সমাবেশে অভিযোগ করেন তারা।

অবস্থান কর্মসূচিতে হাজারও স্বাস্থ্য সহকারী অংশগ্রহণ করেন। এতে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মো. আখিল উদ্দিনের সভাপতিত্বে বক্তব্য প্রদান করেন সদস্য সচিব মো. মোজাম্মেল হক, ওয়াসিউদ্দিন রানা, এ. কে. এম মাইনউদ্দীন খোকন, ১১-২০ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনস্থ দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আওতায় ২৬ হাজারের অধিক স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শক কাজ করছেন। এই সংখ্যা সরকারী স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত মোট জনবলের ৩১ শতাংশ। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রোগ প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে স্বাস্থ্য সহকারীগণ মাঠ পর্যায়ে আন্তঃব্যক্তি যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে ঘরে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেন। এছাড়াও সমাজের প্রচলিত রোগ হতে মুক্তির উপায় এবং নতুন রোগের আগমন প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পরামর্শ প্রদান করেন। তারা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) বাস্তবায়ন, ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীদের টিটি/টিডি টিকা দান, গর্ভবতী মা ও শিশুদের সেবা প্রদান, গর্ভকালীন ৪টি চেকআপ নিশ্চিত করা, প্রসব-পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সেবা প্রদান। মা ও শিশুর পুষ্টি, পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ দেয়া, জাতীয় ও বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা দেয়া, স্কুল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মায়েদের স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান, পুষ্টি, পরিবেশ স্বাস্থ্য, ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ,এলাকা ভিত্তিক জনগণের স্বাস্থ্য তথ্য সংগ্রহ ও হালনাগাদ করা, সংক্রামক, অসংক্রামক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিসহ স্বাস্থ্য সহকারীগণ সপ্তাহে ৩ দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করে থাকেন।

তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীরা অপ্রতুল সুযোগ সুবিধা ও সীমিত জনবল নিয়েও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে তারা প্রথম সারির যোদ্ধা হিসাবে জনগণের স্বাস্থ্য সেবায় নিবেদিত থেকেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ পর্যন্ত তাদের পদে কোন পরিবর্তন হয়নি। বেতন কাঠামোতে রয়েছে চরম বৈষম্য। তবুও তারা থেমে থাকেনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে যে সাফল্য এসেছে, তার পেছনে স্বাস্থ্য সহকারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য এবং শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস, পোলিও নিয়ন্ত্রণ, বসন্ত নির্মূল এবং ১০টি মারাত্মক রোগে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে তারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাই স্বাস্থ্য সহকারীদের বাস্তবসম্মত দাবি মেনে নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ৬ দফা দাবি জানান তারা। তাদের দাবিগুলো হলো-

১.নির্বাহী আদেশে নিয়োগ বিধি সংশোধন শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক/সমমান করে ১৪তম গ্রেড প্রদান করা।

২. ইনসার্ভিস ডিপ্লোমা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টেকনিক্যাল পদমর্যাদাসহ বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীতকরণ।

৩.পদোন্নতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড নিশ্চিতকরণ।

৪. স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ পূর্বের নিয়োগ বিধি দ্বারা নিয়োগ প্রাপ্ত হলেও সকলেই প্রশিক্ষণবিহীন স্নাতক পাশ স্কেলে আন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৫. বেতন স্কেল উন্নীতকরণের পূর্বে স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ যত সংখ্যক টাইম স্কেল, উচ্চতর স্কেল প্রাপ্ত হয়েছেন, তা উন্নীত পুনঃনির্ধারিত বেতন স্কেলের সাথে যোগ করতে হবে। 

৬.পূর্বে ইনসার্ভিস ডিপ্লোমা (এস.আই.টি) কোর্স সম্পন্নকারী স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ ডিপ্লোমাধারী হিসেবে গণ্য করার দাবি জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দৈনিক ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ নীতিমালা বাতিলের দাবি
  • শালবনে আবার শালগাছই ফেরত আনা হবে: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
  • বেতন বৈষম্য দূরীকরণসহ ছয় দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের বিক্ষোভ
  • পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধে সিদ্ধিরগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান, জরিমানা
  • বিদ্যুৎ খাতে লুটের রাজত্ব কায়েম করেছিল আ.লীগ: জুনায়েদ সাকি
  • সরকারি দিনমজুরের দৈনিক পারিশ্রমিক বাড়ল