দেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৮০ শতাংশ নারী এই দুই ধরনের ক্যানসার শনাক্ত পরীক্ষার বাইরে আছেন। নতুন গবেষণা বলছে, জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য দায়ী সব ধরনের ভাইরাসকে মাথায় রেখেই টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

আজ রোববার বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচির তথ্য ও ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দেওয়া হয়। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে পাঁচটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ৪৬ জন বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করা হয়।

সরকারি অর্থায়নে সারা দেশে ‘ইলেকট্রনিক ডেটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা তাঁর উপস্থাপনায় বলেন, দেশে ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারী আছেন তিন কোটি। এঁদের প্রত্যেকের জরায়ুমুখ ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার শনাক্তের পরীক্ষা হওয়া উচিত। কিন্তু ২০০৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই দুই ধরনের ক্যানসার শনাক্তের পরীক্ষা হয়েছে ৬০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭ জনের। এর অর্থ ওই বয়সী প্রায় ৮০ শতাংশ নারী জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার শনাক্তের পরীক্ষার বাইরে আছেন। এ পর্যস্ত পরীক্ষা হওয়া ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ নারীর শরীরে ক্যানসারের পূর্বাবস্থা বা ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে।

অধ্যাপক আশরাফুন্নেসা বলেন, ক্যানসার শনাক্তে গ্রাম পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে জেলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত নেটওয়ার্ক আছে। এর সঙ্গে স্বাস্থ্য সহকারী, পরিবারকল্যাণ সহকারী, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), নার্স, চিকিৎসকসহ ২৪ হাজারের বেশি প্রশিক্ষিত জনবল জড়িত। শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি নারী আসেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও কমিউনিটি ক্লিনিকে। ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের ক্যানসার শনাক্তের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধন করা হয়। পরীক্ষা করা সব নারীর একটি করে নিবন্ধন নম্বরও দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে একাধিক উপস্থাপনায় বলা হয় নারীদের মধ্যে বেশ কয়েক ধরনের ক্যানসার দেখা যায়। এর মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যানসার ও স্তন ক্যানসার সবচেয়ে বেশি। ক্যানসারবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গ্লোবোকনের ২০২০ সালের পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করে বলা হয়, ৬৮ হাজার ৭০০ নারী ক্যানসার রোগীর মধ্যে ১৯ শতাংশ স্তন ক্যানসারে, ১২ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যানসারে, ১১ দশমিক ১ শতাংশ খাদ্যনালির ক্যানসারে, ৭ দশমিক ৮ শতাংশ পিত্তাশয়ের ক্যানসারে, ৬ দশমিক ৭ শতাংশমুখ ও ঠোঁটের ক্যানসারে এবং ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ নারী আরও কয়েক ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত।

চিকিৎসকেরা জানান, জরায়ুমুখ ক্যানসার পরীক্ষার সময় প্রত্যেক নারীর স্তন ক্যানসারও পরীক্ষা করা হয়। জরায়ুমুখ ক্যানসার শনাক্তে দেশে চার ধরনের পদ্ধতি প্রচলিত আছে: ভায়া, প্যাপসমেয়ার, ফ্লুইড বেজড সাইটোলজি ও এইচপিভি-ডিএনএ টেস্ট। এর মধ্যে ভায়া পরীক্ষা সারা দেশে বিনা মূল্যে করা হয়।

টিকা নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে

জরায়ুমুখ ক্যানসার হয় মূলত ভাইরাস থেকে। এটি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি নামে পরিচিত। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ রকম ভাইরাস আছে মোট ১৪টি। এর মধ্যে এইচপিভি১৬ এবং এইচপিভি১৮ নামের ভাইরাস ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জরায়ুমুখ ক্যানসারের কারণ। বাকি ১২টি ভাইরাসকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। টিকাও দেওয়া হয় এইচপিভি১৬ ও এইচপিভি১৮ এর জন্য। কিন্তু দেশে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য ভাইরাসগুলোর কারণে জরায়ুমুখ ক্যানসার বেশি হচ্ছে।

৩ হাজার ৮৫৬ জন নারীকে নিয়ে এই নতুন গবেষণাটি করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনোলজিক্যাল অনকোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিরিন আক্তার বেগম। তিনি এইচপিভি ডিএনএ পরীক্ষাপদ্ধতি ব্যবহার করেন। তিনি জানান, এই পরীক্ষাটি ব্যয়বহুল। প্রতিটি পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়।

গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনের সময় অধ্যাপক শিরিন আক্তার বলেন, পরীক্ষায় ১৩৮ জনের বা ৩ দশমিক ৬ শতাংশ নারীর ক্যানসারের পূর্বাবস্থা বা ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ জনের (১.

৭ শতাংশ) অন্য এইচপিভি, ৪৯ জনের (১ দশমিক ৩শতাংশ) এইচপিভি১৬ এবং ১২ জনের (০.৩ শতাংশ) এইচপিভি১৮ শনাক্ত হয়েছে।

অনুষ্ঠান শেষে শিরিন আক্তার বেগম প্রথম আলোকে বলেন, এইচপিভি ডিএনএ পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। এই পরীক্ষার খরচ কমানোর ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যদিকে টিকা দেওয়ার ব্যাপারেও আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শাহিদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সারোয়ার বারী। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েবা আক্তার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আবুল কালাম আজাদ, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পর ক ষ অন ষ ঠ ন পর ক ষ র এইচপ ভ র জন য দশম ক সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

এইচএসসি পরীক্ষায় হিসাববিজ্ঞানে ভালো নম্বর কীভাবে পাবে

প্রিয় ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পরীক্ষার্থী, এ বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে পরীক্ষা দেবে, তাই হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে যথার্থ প্রস্তুতি নিয়েছ। অযথা ভয় পাবে না। হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে দুটি পত্রে পরীক্ষা হবে। যার মধ্যে উভয়পত্রে আর্থিক বিবরণী অধ্যায় থেকেই ৪০ নম্বরের বাধ্যতামূলক সৃজনশীল অংশে থাকবে, এই অধ্যায়টি ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে ভালো ফলাফল করার একটি সুযোগ নিতে পারো।

হিসাববিজ্ঞান একটি বিষয়, যা আত্মবিশ্বাস ও চর্চার মাধ্যমে অনেক সহজ হয়ে ওঠে। মনে রেখো, বিষয়টি মুখস্থনির্ভর নয় বরং বিশ্লেষণমূলক ও হিসাবনির্ভর। হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রস্তুতি সহজ করার পাশাপাশি বেশি কমন নিশ্চিত করার জন্য কিছু টিপস নিচে দেওয়া হলো।

অধ্যায়ভিত্তিক প্রস্তুতির গুরুত্ব

কোন অধ্যায় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে, কোনগুলো বেশি নম্বর পাওয়া যায়, তা বোঝার জন্য বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করা জরুরি। হিসাববিজ্ঞান প্রথম পত্রের পুনর্বিন্যস্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে এ বছর তোমরা নির্ধারিত অধ্যায়গুলো বারবার চর্চা করবে। বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবে-হিসাব সমীকরণ ও হিসাব সমীকরণে লেনদেনের প্রভাব, জাবেদা প্রস্তুতকরণ, দুঘরা, তিনঘরা ও অগ্রদত্ত নিয়মে খুচরা নগদান বই, নগদ প্রাপ্তি ও নগদ প্রদান জাবেদা প্রস্তুতকরণ, প্রচলিত ও সংশোধিত উভয় পদ্ধতিতে ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী প্রস্তুতকরণ,রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ, অশুদ্ধি সংশোধন–পরবর্তী রেওয়ামিল প্রস্তুতকরণ, কার্যপত্র প্রস্তুতকরণ, সমন্বয় দাখিলা, সমাপনী দাখিলা, বিপরীত দাখিলা জাবেদা প্রস্তুতকরণ, অবচয় ধার্যের ও হিসাবভুক্তকরণের পদ্ধতি, আর্থিক বিবরণী ও এর বিভিন্ন অংশ, বিশদ আয় বিবরণী ও আর্থিক অবস্থার বিবরণী এর প্রস্তুতপ্রণালি। এই অধ্যায়গুলো থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। হিসাববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেবে—অংশীদারি ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি অবণ্টন হিসাব, স্থায়ী ও পরিবর্তনশীল পদ্ধতিতে অংশীদারদের মূলধন হিসাব প্রস্তুতকরণ, অংশীদারের চলতি হিসাব প্রস্তুতকরণ, যৌথ মূলধনি কোম্পানি, যৌথ মূলধনি কোম্পানির বিশদ আয় বিবরণী ও এর প্রস্তুত প্রণালি, প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করে কোম্পানির আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ, অনুপাত বিশ্লেষণ, উৎপাদন ব্যয় বিবরণী প্রস্তুতকরণও পদ্ধতিতে মজুত পণ্যের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি ইত্যাদি। শুধু পঞ্চম অধ্যায় থেকে বিগত সব বোর্ডে দুটি করে প্রশ্ন এসেছিল। তোমরা হিসাববিদ্যা দ্বিতীয় পত্রে সংক্ষিপ্ত অধ্যায় থেকে পঞ্চম অধ্যায়সহ অন্য যেকোনো চারটি অধ্যায় ভালোভাবে চর্চা করলেই ভালো ফলাফল করার একটি মোক্ষম সুযোগ নিতে পারো।

সৃজনশীল অংশের জন্য

১. তোমরা প্রথমে প্রতিটি প্রশ্ন ভালোভাবে পড়বে এবং বুঝবে। অতঃপর যে প্রশ্নগুলো সমাধান ভালোভাবে করতে পারবে, সেগুলোর সমাধান করবে। প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, প্রশ্নে কম চাওয়া হয়েছে? প্রশ্নগুলো ঠিক ঠিক বোঝার ওপর নির্ভুল সমাধান প্রদান নির্ভর করে। মান বণ্টনের ওপর খেয়াল রেখে প্রতিটি প্রশ্ন অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ে সমাধান নির্দিষ্ট করতে হবে।

২. কোনো প্রশ্নের যতটুকু অংশের শুদ্ধভাবে সমাধান করতে পারবে, ততটুকু অংশের জন্য নম্বর পাবে। তোমরা কতটুকু ভুল করলে কত নম্বর কাটা যাবে, তার চিন্তা দরকার নেই। একটু ভুল করলেই সম্পূর্ণ উত্তরটা কাটার দরকার নেই। তাই কোনো সৃজনশীল প্রশ্নের ক, খ কিংবা গ–এর কিছু অংশের সঠিক সমাধান করতে না পারলে বিচলিত হবে না।

৩. কোন প্রশ্নের উত্তর করার সময় মাথা ঠান্ডা রেখে যথাসম্ভব দ্রুত উত্তর লিখতে হবে যেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাতটি প্রশ্নের উত্তর করা যায়।

৪. হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র যেহেতু একটি প্রায়োগিক বিষয়, তাই এ সৃজনশীল অংশে কোনো থিওরি প্রশ্ন থাকবে না। সব প্রশ্নই হবে গাণিতিক কিংবা প্রায়োগিক সমস্যাসংক্রান্ত হবে। প্রতিটি প্রশ্নে ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ ৩টি অংশ থাকবে। প্রশ্নের ‘ক’ অংশ সহজ যা ‘২’ নম্বর বরাদ্দ এই অংশের জন্য যথার্থ উত্তর করবে। খুব বেশি লেখার প্রয়োজন নেই। প্রশ্নের ‘খ’ অংশ মধ্যম যা ‘৪’ নম্বর বরাদ্দ, এই অংশটিতে প্রশ্নে যা চাওয়া হবে, তোমরা সমাধানে প্রয়োজনীয় সবকিছুই উল্লেখ করবে। প্রশ্নের ‘গ’ অংশ কঠিন মানের হবে, যা ‘৪’ নম্বর বরাদ্দ, এই অংশে তোমরা উত্তর করার সময় নিজেদের চিন্তা-চেতনা প্রতিফলন ঘটাবে। তোমরা মনে রাখবে হিসাববিজ্ঞানে যতটুকু ভুল করবে ততটুকু নম্বর কাটা যাবে। ৪ নম্বরের মধ্যে ৪ নম্বরই কাটা যায় না। প্রশ্নের উত্তর করার সময়, ধাপ ও চিন্তার ব্যাপকতার ওপর ভিত্তি করে নম্বর বিভাজন করতে হবে।

৫. তোমরা সময়ের দিকে খেয়াল রেখে যে যত বেশি অঙ্কের অনুশীলন করবে, সেই কেবল পরীক্ষায় অঙ্কের সমাধান করতে সহজ হবে। হিসাববিজ্ঞান অনুশীলন ছাড়া আয়ত্ত করা যায় না। প্রতিটি অঙ্ক নিজ হাতে করে শিখতে হবে। ক্যালকুলেশন ও পদ্ধতিগত সমাধান যত বেশি করবে, ততই আত্মবিশ্বাস বাড়বে।

৬. বিগত বছরের বোর্ড প্রশ্ন থেকে অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্ন আলাদা করে সমাধান করবে। এতে প্রশ্নের ধরন বুঝতে সুবিধা হবে। মডেল টেস্ট ও সময় ধরে পরীক্ষার মতো পরিবেশে নিজেকে যাচাই করবে। প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ও সংজ্ঞাগুলো আলাদা করে নোট করবে। সূত্র ও সংজ্ঞা মুখস্থ কর সহজ উপায়ে, এগুলো সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের জন্য খুবই জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট সময় নোট রিভিশন দেবে।

বহুনির্বাচনি অংশ

হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র পত্রের পাঠ্যসূচির নির্ধারিত অধ্যায়ের সঙ্গে মিল রেখে বহুনির্বাচনী প্রশ্নগুলো বারবার পড়তে হবে। বহুনির্বাচনী এই অংশে মধ্যম বলে কিছু নেই। প্রত্যেকটি বহুনির্বাচনী প্রশ্নের যথার্থতার কাছাকাছি গেলে হবে না, তোমাদের সঠিক উত্তর করতে হবে। বহুনির্বাচনি অপশনগুলো সাধারণত এমনভাবে থাকে, যা দেখে তোমাদের মনে হতে পারে ২–৩টিই সঠিক উত্তর। এমন পরিস্থিতিতে তোমাদের প্রস্তুতি এমন হতে হবে, যাতে সঠিক উত্তরের দিকে তোমাদের নজর যায়।

১. বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করার ক্ষেত্রে অনেক কম সময়ে উত্তর করা যায়। তোমরা এ বছর ৩০টি বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করবে। ভুল উত্তরের জন্য কোনো নম্বর কাটা যায় না। তাই জানা-অজানা নির্ধারিত সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

২. কোনো বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর করতে না পারলে সেটা নিয়ে সময় নষ্ট না করে পরবর্তী প্রশ্নের উত্তর করার চেষ্টা করবে। শেষে সময় পেলে ফেলে আসা প্রশ্নগুলোর উত্তর করার চেষ্টা করবে।

৩. কোন বহুনির্বাচনি প্রশ্ন পড়ে কঠিন মনে হলে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। হয়তো দেখা যাবে যে বিষয়গুলো এমনভাবে আছে যে তোমরা যাচাই করে সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে পারবে।

৪. কোন বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর নির্বাচনে সন্দেহ দেখো দিলে প্রথমে নিশ্চিত ভুল উত্তরগুলো নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করবে। তাহলে সঠিক উত্তরটি সহজেই অনুমান করা সম্ভব হবে। বহুনির্বাচনি অংশে ভালো করার জন্য যেকোনো ভালো মানের বইয়ের অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা পড়ে অনুশীলনীর বহুনির্বাচনি অংশ এবং বিগত বছরের বোর্ডের বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।

পরীক্ষার আগে করণীয়

পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের আলোকে তোমরা নির্ধারিত অধ্যায়গুলোর গাণিতিক কিংবা প্রায়োগিক সমস্যা ভালোভাবে অনুশীলন করবে। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ও উত্তর দেখে অনুশীলন করবে। বিভিন্ন টেস্ট পেপার ও প্রশ্ন ব্যাংক থেকে প্রশ্ন সমাধান করবে। অঙ্ক করার সময় ক্যালকুলেটর ব্যবহারের অভ্যাস করবে। প্রতিটি অধ্যায়ের অনুশীলন শেষ হলে রিভিশন দেবে, নিজের তৈরি নোট বারবার পড়ে নিবে, পরীক্ষার এক দিন আগে সময় ধরে মডেল টেস্টের অনুশীলন করবে, সময় ব্যবস্থাপনার অভ্যাস গড়ে তুলবে।

সময় ব্যবস্থাপনা

পরীক্ষার হলে হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের সৃজনশীল অংশে গাণিতিক কিংবা প্রায়োগিক সমস্যার প্রতিটি প্রশ্নের জন্য কত সময় বরাদ্দ করবে, তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখ। কোনো থিওরি প্রশ্ন থাকবে না। সময়মতো সব কটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করো। অতিরিক্ত সময় নষ্ট না করে যে প্রশ্নগুলো সহজে পারবে, সেগুলোর উত্তর আগে দেবে।

অপ্রয়োজনীয় উত্তর লেখা বা বেশি সময় ব্যয় করা থেকে বিরত থাকো। গাণিতিক কিংবা প্রায়োগিক সমস্যার সমাধানে প্রতিটি ছকে পেনসিলের ব্যবহার করবে, অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ও গাণিতিক সমাধানে নিখুঁত ক্যালকুলেশন করবে। মনে রাখবে, প্রতিটি ১ নম্বরের জন্য তোমরা দুই মিনিট সময় পাবে, নম্বর ও সময় উভয়ের প্রতি খেয়াল রেখে তোমাকে উত্তর করতে হবে। যে সৃজনশীল প্রশ্ন তুমি পারবে না, সেখানে কোনোভাবেই সময় নষ্ট করা যাবে না । শিক্ষার্থীরা, তোমরা পরীক্ষার সময় প্রশ্নটি হাতে পেয়ে প্রথমে প্রশ্নটি ভালোভাবে পড়ে সিদ্ধান্ত নেবে, প্রথমে কয়েক অংশের দুটি বাধ্যতামূলক প্রশ্নের সমাধান করবে, অতঃপর দুঃখ অংশে ৯টি থেকে যেকোনো পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর করবে, এ ক্ষেত্রে তোমরা অবশ্যই খেয়াল রাখবে, যে সৃজনশীলের গাণিতিক সমস্যার কয়েক, দুঃখ এবং গণ্ড তিনটি অংশের উত্তর তুমি ভালোভাবে পারবে, সেটি প্রথমে উত্তর করবে। একটি প্রশ্নের তিনটি অংশের উত্তরই ধারাবাহিকভাবে করবে। পরীক্ষার হলে কোনো প্রশ্ন কঠিন মনে হলে ঘাবড়ে না গিয়ে শান্তভাবে চিন্তা করে উত্তর করার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে সময় নিয়ে অন্য প্রশ্নের উত্তর দেবে এবং পরে সেই কঠিন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবে। পরীক্ষার শেষের দিকে ১৫ মিনিট আগে সতর্কতামূলক যে ঘণ্টা বাজবে, এই সময় তুমি তোমার লেখা বন্ধ করে, প্রশ্নের নম্বর অনুযায়ী উত্তরটি মিল আছে কি না, তা অবশ্যই একনজরে যাচাই করে নেবে ।

হিসাববিজ্ঞান এমন একটি বিষয়, যেখানে বোঝা ও প্রয়োগ দুটিই সমান গুরুত্বপূর্ণ। অনেক শিক্ষার্থী শুধু মুখস্থ করে শিখতে চায়, অথচ এই বিষয় অনুশীলনভিত্তিক ও বিশ্লেষণমূলক। তাই মুখস্থের চেয়ে বুঝে শেখা ও হাতে-কলমে চর্চা করাই সফলতার মূল চাবিকাঠি। তোমরা এ বিষয়গুলোর প্রতি অধিক গুরুত্ব দিলে বোর্ড পরীক্ষায় হিসাববিজ্ঞান প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে এ প্লাস পাবে।

লেখক: মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, সহকারী অধ্যাপক, সিদ্ধেশ্বরী কলেজ, ঢাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই জেলায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনা
  • এলজিইডির ২৫৭ প্রকৌশলীর নিয়োগ-পদোন্নতিতে অনিয়ম
  • এইচএসসি পরীক্ষায় হিসাববিজ্ঞানে ভালো নম্বর কীভাবে পাবে