চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে দেওয়া হলে বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ‘দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও আন্দোলন’ আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় বক্তারা এই হুঁশিয়ারি দেন। রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মানিক মিয়া হলে এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আজকে দেশ বাঁচাতে গিয়ে সবাই গণতন্ত্রের প্রশ্নে একমত। আমরা চাই ড.

ইউনূস সফল হোন। তিনি সফল মানে তো জুলাই অভ্যুত্থানের সফলতা। আমরা লড়াই করা জাতি। গণতন্ত্র, জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার আগে যেন ঈশ্বর আমার মৃত্যু না দেয়।’ এই মুহূর্তে দেশ ও বন্দর বাঁচানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকার নয়, নির্বাচিত সরকার মিয়ানমারে করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘সবকিছু করার ম্যান্ডেট অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। তাদের কাজ হলো (জুলাই-আগস্টের) গণহত্যার বিচার করা, আহতদের সুচিকিৎসা দেওয়া, হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং সংস্কার দ্রুত শেষ করে নির্বাচন দেওয়া। বন্দর ইজারা দেওয়া, এনবিআর ভাঙা তাদের কাজ নয়।’ দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণারও দাবি জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকার প্রয়োজন হলে দেশের মেধাবী কর্মকর্তা দিয়ে বন্দর পরিচালনা করতে পারে।’ দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপেরও (পথনকশা) দাবি করেন তিনি।

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান ও দেশ বাঁচাও, বন্দর বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, বন্দর নিয়ে দেশের নিরাপত্তা ও জাতির স্বার্থ দেখতে হবে। বন্দরের শুল্কের (ট্যারিফ) বিভিন্ন ভাগ আছে। বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সেই দায়িত্ব দিলে তারা নিজেদের মতো শুল্ক নির্ধারণ করবে। নতুনভাবে এখানে একটা টাকাও বিনিয়োগের সুযোগ নেই। কারণ, চট্টগ্রাম বন্দর এমনিতেই আয়বর্ধক প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারকে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে আহ্বান জানান আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি সরকারকে বন্দরের বিষয়ে গণশুনানি করারও পরামর্শ দেন।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘ভবিষ্যতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সরকার চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ফেরত না এলে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।’

বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটুর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, আমজনতা পার্টির সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’

তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’

অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’

পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’

তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’

সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’

আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’

ঢাকা/আসাদ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
  • আমেরিকানদের হাতে সময় আছে মাত্র ৪০০ দিন
  • হুংকার দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ঠেকান যাবে না: জাহিদ হোসেন
  • বাংলাদেশ পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে: আইরিন খান
  • কেমন সংবিধান চান, জানালেন এনসিপি নেতা আখতার হোসেন
  • বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় ইইউ