পোশাক কেনাবেচার কথা বলে দেড় মাস আগে ভাড়া নেওয়া হয় বাসাটি
Published: 27th, May 2025 GMT
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে কুষ্টিয়া শহরের যে বাসা থেকে আটক করা হয়েছে, সেটি দেড় মাস আগে ভাড়া নেন পেছনের বাড়ির এক দম্পতি। তাঁরা অনলাইনে পোশাক কেনাবেচার কথা বলে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন।
প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন ওই বাড়ির মেসে থাকা কয়েকজন ছাত্র। তবে তাঁরা নাম প্রকাশ করতে চাননি।
মেসের বাসিন্দা এক ছাত্র বলেন, মালিকের কাছ থেকে পুরো বাড়িটি তাঁরা ভাড়া নিয়েছেন। একজন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন। দেড় মাস আগে পেছনের বাড়ির বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী মিনারা খাতুন (হীরা) আসেন। তাঁরা নিচতলার ফ্ল্যাট ভাড়া চান। তাঁরা বলেন, এখানে অনলাইনে পোশাক কেনাবেচার জন্য পোশাক রাখা হবে এবং তাঁদের কিছু লোকজন থাকবেন। মাসিক ছয় হাজার টাকা ভাড়ায় ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন ছাত্ররা। এরপর হেলাল উদ্দিন এই ভবনের সামনে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেন। ক্যামেরার সংযোগ পেছনে তাঁর নিজের বাড়িতে নিয়ে যান।
ওই ছাত্র আরও বলেন, ভাড়া নেওয়ার কয়েক দিন পর এই বাসায় এক ব্যক্তি আসেন। তিনি দেখতে যুবক গোছের। খুব কম সময় বাসা থেকে বের হতেন। তবে তাঁর সঙ্গে কখনো মেসে থাকা ছাত্রদের কথা হতো না। তাঁর নাম–পরিচয় কেউ জানতেন না। ২০ থেকে ২৫ দিন আগে এক নারীকে নিচতলার এই ফ্ল্যাটে দেখতে পান ছাত্ররা। ওই নারী কিছুদিন এখানে অবস্থান করেন বলে ছাত্ররা জানান।
ছাত্ররা জানান, ১০-১২ দিন ধরে এই ভবনের সামনে একটি লাল রঙের প্রাইভেট কার এসে দাঁড়াত। বেশ কিছু লোকের যাতায়াত তাঁরা লক্ষ করতেন। তবে কারও সঙ্গে ছাত্রদের কোনো কথা হতো না। নিচতলার যে ফ্ল্যাট থেকে সুব্রত বাইনকে আটক করা হয়েছে ওই ফ্ল্যাটের ভেতরে গত দেড় মাসে কোনো রকম খাবার রান্না হয়নি। সব খাবার বাইরে থেকে আনা হতো।
মেসে থাকা আরেক ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পাঁচ-ছয় দিন আগে আসরের নামাজ পড়তে বের হওয়ার সময় দেখেন নিচতলার ওই ফ্ল্যাটের দরজা খোলা এবং সেখানে দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। ওই ব্যক্তি ছাত্রকে দেখে দ্রুত ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। আজকে যাঁকে আটক করা হয়েছে, তিনি সেদিনের ওই ব্যক্তি বলে নিশ্চিত করেছেন ছাত্ররা।
আরও পড়ুনকুষ্টিয়ার একটি বাড়িতে যৌথ বাহিনীর অভিযান, শহরে ছড়াল শীর্ষ সন্ত্রাসীকে আটকের খবর৫ ঘণ্টা আগেসুব্রত বাইনকে যে ফ্ল্যাট থেকে আটক করা হয়েছে, ঠিক সেই ভবনের পেছনেই মিনারা খাতুন ও হেলাল উদ্দিনের বাড়ি। মিনারা একটি পোশাকের দোকানের মালিক। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামীর মাধ্যমে এই ব্যক্তিরা এখানে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। যাঁরা আটক হয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন। ভীতসন্ত্রস্ত কণ্ঠে জানান, এই ঘটনায় তাঁরা ফেঁসে গেছেন।
মিনারা খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী হেলাল উদ্দিন ১৭ থেকে ১৮ বছর দুবাই ছিলেন। গত বছরের শেষে বা চলতি বছরের প্রথম দিকে তিনি দেশে ফেরেন। তাঁর স্বামী জমি কেনাবেচা ও ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসা করেন বলে দাবি করেন। দেড় মাস আগে তাঁর স্বামী তাঁকে জানান, কয়েকজন ব্যক্তি এখানে থাকবে, মিনারা যেন সামনের ভবনের নিচতলাটা ভাড়া নেন। এরপর মেসের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন তাঁরা। এরপর ওই ব্যক্তিরা এই নিচতলাতে থাকতে শুরু করেন।
মিনারা খাতুন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, এই ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক নেই, কোনো আত্মীয়তার সম্পর্কও নেই, এমনকি তাঁদের আগে কখনো দেখেননি। স্বামী হেলাল উদ্দিন কোথায় জানতে চাইলে মিনারা খাতুন বলেন, তাঁর স্বামী গত রাতে বাইরে গেছেন। এখন কোথায় আছেন, জানেন না।
আতঙ্কে মেস ছেড়ে যাচ্ছেন ছাত্ররা
সুব্রত বাইনকে আটকের পর ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকা ছাত্ররা বাড়ি চলে যাচ্ছেন। দুপুরের পর গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ায় ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। বিকেল চারটার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ১৮ জন ছাত্রের মধ্যে অন্তত ১০ জন ব্যাগ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ছাত্র বলেন, সকালের পর থেকেই তাঁরা আতঙ্কে ছিলেন। এরপর দুপুরে যখন তাঁরা নিশ্চিত হন যে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন তাঁদের এই নিচের ফ্ল্যাটে ছিল, তখনই তাঁরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ জন্য পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তাঁরা বাড়ি চলে যাচ্ছেন।
এই মেসের তৃতীয় তলায় থাকা দীর্ঘদিনের বাসিন্দা শাহীন আলম প্রথম আলোকে বলেন, মেসে থাকা ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাই অনেকেই চলে গেছেন। তবে তিনি এখানে থাকবেন।
আরও পড়ুনকুষ্টিয়া থেকে আটক সেই ব্যক্তি আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন৩ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক দ ড় ম স আগ ন চতল র ভবন র আতঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
পপির চাচাকে ‘জমিদার বাড়ি’ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ
চিত্রনায়িকা পপির চাচা মিয়া বাবর হোসেনকে খুলনার সোনাডাঙ্গাস্থ জমিদার বাড়ি ‘মিয়াবাগ’ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পপির চাচি শিউলি বেগম ও ভগ্নিপতি তারেক আহমেদ চৌধুরী তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন বলে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মিয়া বাবর হোসেন। তিনি বলেন, “আমার বাবা জমিদার মৃত ইসমাঈল মিয়ার ৬ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে আমি চতুর্থ। অন্যান্য শরিকদের মতো আমিও মিয়াবাগের একজন শরিক। আমি নিঃসন্তান থাকায় বিভিন্ন সময় ঢাকায় থাকি। এই সুযোগে আমার ভাইয়ের স্ত্রী শিউলি বেগম (কবীর হোসেনের স্ত্রী) ও তার মেয়ের জামাই তারেক আহমেদ চৌধুরী (ট্রাস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা) আমার মায়ের রুম, ড্রয়িং রুম, গেস্ট রুমসহ বিভিন্ন রুম দখল করে আছে।”
উদ্যত হয়ে মিয়া বাবর হোসেনের মুঠোফোন ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ তার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “গত ৪ জুলাই, বেলা ১১টায় বাড়িতে গিয়ে দেখি আমার ভাইয়ের স্ত্রী শিউলি বেগমের রুম বাদে অন্য সকল রুম তালাবদ্ধ। এ দৃশ্য দেখে আমি হতবাক হয়ে যাই। শিউলি বেগমকে তখন বলি, আমি রাতে কোথায় থাকব। সে বলে, ‘আপনি দ্বিতীয় তলায় থাকেন।’ এ ঘটনার পরের দিন (৫ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে শিউলি বেগম এবং তার মেয়ের জামাই তারেক আহমেদ চৌধুরী আমাকে আধা ঘণ্টার মধ্যে বাসা থেকে নেমে যেতে বলে হুমকি দেয়। ওই সময় বাসা থেকে নামতে দেরি হওয়ায় তারা আমার কাছে থাকা মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলে এবং আমাকে মারধর করতে উদ্যত হয়।”
আরো পড়ুন:
জেন-জিদের ভাষা বোঝার চেষ্টা করি না: কাজল
দেবশ্রীর বোন মারা গেছেন
এ ঘটনার পর খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন মিয়া বাবর হোসেন। এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, “মানসম্মানের ভয়ে আমি অসহায় হয়ে বাসা থেকে নিচে এসে বসি। এরপর তারা আরো অজ্ঞাতনামা লোকজন ডেকে আমার ঘাড় ধরে বাসা থেকে রাস্তায় বের করে দেয়। পরবর্তীতে আমি আমার পরিচিত মান্নানের বাসায় আশ্রয় নিই। এরপর আমি আমার নিকটতম লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করি।”
তারেক আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলে মিয়া বাবর হোসেন বলেন, “জমিদার বাড়ির সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে আমি এতদিন নিশ্চুপ ছিলাম। পারিবারিক বিষয়গুলো ঘরের বাইরে আনতে চাইনি। কিন্তু জামাই নামধারী ট্রাস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা তারেক আহমেদ চৌধুরীর অসৌজন্যমূলক আচরণ, প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি-ধামকি দিয়ে পরিবেশ অস্বাভাবিক করে তুলেছে। তারেক আমাদের বাড়িতে লজিং মাস্টার থেকে লেখাপড়া করেছে। ভাইজিকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করার পর, এখন জোরপূর্বক পুরো বাড়ি দখল করে আছে। ট্রাস্ট ব্যাংকে চাকরি করার সুবাধে প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়।”
মিয়া বাবর হোসেনের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয় তারেক আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে। অভিযোগ অস্বীকার তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘদিন খুলনায় যাই না। আমাকে কেন জড়ানো হলো বুঝতে পারছি না। মিয়া বাবর হোসেন ৭০ বছর আগে তার সম্পত্তি বিক্রি করে চলে গেছেন। তার আপন মামিকে ভাগিয়ে বিয়ে করার কারণে তার সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ ছিল না। এছাড়া জমিদার বাড়ির যে অংশটুকু তার ছিল সেটি তারই আপন ছোট ভাই চিত্রনায়িকা পপির বাবা আমির হোসেন টুলুর কাছে বিক্রি করেছেন। টুলু জীবিত থাকাকালে বিক্রিত ওই অংশটুকু তার মেয়ে খেয়ালিকে লিখে দেন।”
মিয়া বাবর হোসেন তার ফুফুর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট করেছেন। হাবিব নামে এক যুবক মিয়া বাড়ির সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য এবং সম্পত্তি দখল করার জন্য কলকাঠি নাড়ছেন বলেও অভিযোগ তারেক আহমেদ চৌধুরীর।
তবে তারেক আহমেদ চৌধুরীর অভিযোগ মিয়া বাবর হোসেনকে জানালে, এসব ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেন তিনি। মিয়া বাবর হোসেন বলেন, “আমার বয়স এখন ৭৩ বছর। ৭০ বছর আগে আমি তিন বছরের নাবালক ছিলাম। তখন সম্পত্তি প্রাপ্তি এবং বিক্রি করার প্রশ্নই আসে না। তারেক আহমেদ চৌধুরী মিথ্যা কথা বলেছেন।”
ঢাকা/নুরুজ্জামান/শান্ত