বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার ও নির্বাচন—দুটোই চাই। শুধু গণতন্ত্র হলেই হবে না, এর অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কেও সচেতন হতে হবে। দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র সত্যিকারের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে পারে। 

সোমবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার চাই, নির্বাচন চাই—আমরা অন্য অধিকারগুলোও চাই, ছাত্রদের অধিকার চাই। শুধু গণতন্ত্র হলেই তো হবে না, সেই গণতন্ত্রকে বুঝতে হবে। গণতান্ত্রিক যেমন অধিকার আছে, গণতন্ত্রের তেমন দায়িত্বও আছে। সেই দায়িত্ব পালন করলেই গণতন্ত্র সত্যিকারের অর্থেই একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে পারবে।

জাতির পুনর্গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ জাতি পুনর্গঠন করতে গেলে আমাদের ছাত্রদের তৈরি করতে হবে। তারা যেন সব ক্ষেত্রে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ দিতে পারে। এই বিশ্বে টিকে থাকতে হলে কিন্তু জ্ঞানের প্রতিযোগিতা করতে হবে। এখন তো আরও কঠিন হয়েছে। টেকনোলজি এমন এক জায়গায় চলে গেছে যে, টেকনোলজিতে যদি আমরা কোপ-আপ করতে না পারি, তাহলে আমরা পিছিয়ে যাব।

শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশে এত আন্দোলন, বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থান হলেও শিক্ষার মান আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। সারাদেশেই শিক্ষার মান উদ্বেগজনকভাবে খারাপ হয়ে গেছে। কে দায়ী, সেদিকে না গিয়ে আমি বলতে চাই, সামগ্রিকভাবেই মান কমেছে।
 
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাষ্ট্রকে সুন্দর করতে হলে, একটা সুন্দর জাতি নির্মাণ করতে হলে, আপনাকে অবশ্যই লেখাপড়া করতে হবে। লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। দুই নম্বর, এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস করতে হবে। খেলাধুলা করতে হবে। শারীরিক যোগ্যতা প্রমাণ করতে হলে কাজ করতে হবে এবং প্র্যাকটিস করতে হবে। লেখাপড়ায় যেমন প্র্যাকটিস করতে হবে, খেলাধুলাতেও প্র্যাকটিস করতে হবে।

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘রিভারভিউ হাই স্কুলের শিক্ষার মান কমার কোনো কারণ ছিল না, কারণ ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুলের পরেই এর স্থান ছিল। আমি প্রত্যাশা করব, যারা দায়িত্বে আছেন, তারা সবাই চেষ্টা করবেন যেন রিভারভিউ স্কুলের শিক্ষার মানটাকে উন্নত করা যায়। এ ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করা উচিত নয়। শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো কম্প্রোমাইজ করা যেতে পারে না।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঠ ক রগ ও ম র জ ফখর ল গণত ন ত র ক গণতন ত র ট স করত

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া

বাংলাদেশ এমনই এক ভূখণ্ড, যেখানে প্রকৃতি আর রাজনীতি একসঙ্গে হেঁটে চলে। রাজনীতি আমাদের নিত্যজীবনের অজানা এক সুর, যার বাঁশি বাজে কখনও মধুর, কখনও বিষণ্ন। এই দেশের গণতন্ত্রও যেন সেই সুরেরই অন্তর্গত এক সংগীত। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। প্রথম দশকে গণতন্ত্রের কাঠামো হোঁচট খেতে শুরু করে সামরিক শাসন ও একদলীয় নীতির ভারে। কিন্তু এই দেশের মানুষ বারবার প্রমাণ করেছে, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। 

১৯৯০ সালে স্বৈরশাসনের পতন, সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুথান ও গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আবারও সেই আশা পুনরুজ্জীবিত হয়। তবে এই যাত্রাপথ মসৃণ নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক অসহিষ্ণুতা, অবরোধ, হরতাল, সহিংসতা, এসব যেন গণতন্ত্রের মঞ্চে অনাহূত দর্শক। তবুও নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার গঠনের ধারা অব্যাহত আছে, যা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কেবল নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় নয়, বরং কার্যকর গণতান্ত্রিক চর্চায় নিহিত। সংসদে বিরোধী দলের কার্যকর ভূমিকা, আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সুশাসন– এসব উপাদান মিলেই একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলে। কিন্তু এই ক্ষেত্রগুলোতে আজও অনেক প্রশ্ন, অনেক সংশয়। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মতপ্রকাশে প্রতিবন্ধকতা কিংবা প্রশাসনের রাজনৈতিক ব্যবহারের অভিযোগ– এসবই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষীণ করে। আবার বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সহিংসতা, ধ্বংসাত্মক আচরণও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য নষ্ট করে। বড় আশার কথা, দেশের তরুণ প্রজন্ম রাজনৈতিক সচেতন হয়ে উঠছে। সামাজিক মাধ্যমে তাদের অংশগ্রহণ, নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কিংবা দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব, সবই রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে নতুন রূপ দিতে পারে। এই তরুণ শক্তিই হতে পারে ভবিষ্যতের পরিবর্তনের বাহক। 

বাংলাদেশের অর্থনীতি যেমন কৃষকের মাঠ থেকে শিল্পাঞ্চলে গড়ে উঠেছে, ঠিক তেমনি রাজনীতির ক্ষেত্রেও দরকার মাটির ঘ্রাণ, জনগণের সত্যিকারের অংশগ্রহণ। দলীয় আদর্শ ও নীতির ভিত্তিতে রাজনীতি গড়ে উঠলে ব্যক্তি বা পরিবারকেন্দ্রিক নেতৃত্ব নয়, গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব বিকশিত হলে, স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে। বিশ্ব রাজনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে প্রয়োজন স্বচ্ছ নির্বাচন, কার্যকর নির্বাচন কমিশন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিরপেক্ষতা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আজ রাজনীতির গুণগত মানের দিকে তাকিয়ে আছে, শুধু ভোটের সংখ্যার দিকে নয়।

গণতন্ত্র শুধু নির্বাচন নয়, এটি একটি সংস্কৃতি, যেখানে ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা, সংলাপের প্রতি বিশ্বাস এবং জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা থাকা চাই। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ যেন এক স্নিগ্ধ প্রভাতের দিকে এগিয়ে যায়, যেখানে নদীর মতোই প্রবহমান গণতন্ত্র, মাঠের ফুলের মতোই সহিষ্ণু রাজনীতি, আর আকাশের পাখির মতোই মুক্ত মতপ্রকাশ। 

জুয়েল হাসান: প্রকৌশলী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে করার দাবি পুনর্ব্যক্ত জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের
  • রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া