এআই–নির্ভর ভবিষ্যতের জন্য বর্তমান কম্পিউটার যথেষ্ট নয়: স্যাম অল্টম্যান
Published: 1st, July 2025 GMT
প্রযুক্তির অগ্রগতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যত এগোচ্ছে, বর্তমান কম্পিউটার যন্ত্রপাতি যে এই যুগের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না, এ ধারণা ততই স্পষ্ট হচ্ছে। সম্প্রতি এমনই মন্তব্য করেছেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান।
ভাই জ্যাক অল্টম্যানের পডকাস্টে অংশ নিয়ে স্যাম অল্টম্যান বলেন, ‘বর্তমানে ব্যবহৃত কম্পিউটার তৈরি হয়েছিল এমন এক সময়ে, যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্বই ছিল না।’ অবশ্য কিছুদিন আগেও তিনি মনে করতেন, এআই বিপ্লবের জন্য নতুন ধরনের কোনো যন্ত্রের দরকার হবে না। সে সময় তিনি বলেন, ‘মানুষ বিদ্যমান যন্ত্র দিয়েই খুশি থাকবে।’ তবে এবার তার অবস্থান পাল্টেছে। অল্টম্যান এখন মনে করছেন, ভবিষ্যতের প্রযুক্তি ব্যবস্থায় সফল হতে হলে আমাদের প্রয়োজন এমন যন্ত্র, যা হবে আরও কনটেক্সট সচেতন, পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত এবং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত জীবনধারার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত।
অল্টম্যানের ভাষায়, ‘আমরা এমন যন্ত্রের দিকে এগোচ্ছি, যেগুলো ব্যবহারকারীর জীবন ও পরিবেশ সম্পর্কে অনেক বেশি সচেতন থাকবে।’ এই উপলব্ধি অবশ্য অল্টম্যানের একার নয়। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাইও জানিয়েছেন, কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা বা এজিআইয়ের মতো উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মডেল পরিচালনার জন্য বর্তমানে ব্যবহৃত কম্পিউটার হার্ডওয়্যার যথেষ্ট নয়। বিশ্লেষকদের মতে, এআই এখন যে গতিতে উন্নত হচ্ছে, তাতে কেবল সফটওয়্যার উদ্ভাবন দিয়ে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। জটিল মডেল চালানোর জন্য যন্ত্রকে হতে হবে আরও দক্ষ, প্রাসঙ্গিক ও বুদ্ধিদীপ্ত। এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই স্যাম অল্টম্যান কাজ শুরু করেছেন নতুন ধরনের একটি যন্ত্র তৈরির পরিকল্পনায়। এতে তাঁর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন অ্যাপলের সাবেক প্রধান ডিজাইন কর্মকর্তা স্যার জনি আইভ।
ওপেনএআই সম্প্রতি আইভের নেতৃত্বাধীন একটি এআই ডিভাইস স্টার্টআপ অধিগ্রহণ করেছে ৬৫০ কোটি ডলারে। এই দুই প্রযুক্তিবিদের নেতৃত্বে তৈরি হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র, যা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ব্যবহার অভিজ্ঞতা দিতে পারে। জানা গেছে, এই যন্ত্র হবে পকেট আকারের, পর্দাবিহীন এবং এটি কোনো চশমা বা পরিধানযোগ্য গ্যাজেট হবে না। স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের পরিপূরক হয়ে ‘তৃতীয় প্রধান যন্ত্র’ হিসেবে কাজ করবে।
স্যাম অল্টম্যান আশাবাদী, এই যন্ত্র বাজারে এলে প্রযুক্তির ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ১০ কোটি ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে যাবে। যদিও এটির কারিগরি বিবরণ এখনো গোপন রাখা হয়েছে, তবে অল্টম্যান জানিয়েছেন, ওপেনএআই ইতিমধ্যে নতুন ধরনের ব্যবহার পদ্ধতির (ইন্টারঅ্যাকশন) ওপর পরীক্ষা চালাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এতে ভয়েস কমান্ড, সেন্সর ও পরিবেশ সচেতন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন এক অভিজ্ঞতা তৈরি করা হবে, যেখানে যন্ত্রটি ব্যবহারকারীর জীবনধারার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনে সহায়তা করবে।
তবে এমন একটি যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারকারীদের এআইয়ের প্রতি অনেক বেশি আস্থা রাখতে হবে, এমনটি স্বীকার করেছেন অল্টম্যান নিজেও। তাঁর মতে, এমন প্রযুক্তিকে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তুলতেও সময় লাগবে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র এমন এক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
এন্নিও মোররিকোনে, শোনাতেন ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের সুর
বাংলা সিনেমার এক টিপিক্যাল দৃশ্য দিয়ে শুরু করা যাক। ধরলাম, সিনেমার নায়ক জসিম। পাহাড়ের পাদতলে ঘোড়া ছুটিয়ে তিনি ছুটে যাচ্ছেন ভিলেন জাম্বুকে পাকড়াও করতে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে। এক ভুতুড়ে-রহস্যময় সুর। ড্রামের মৃদু তালে তালে ঠোঁটের শিস। ট্রাম্পেটের ঢেউ। কখনো সেই সুর মিলিয়ে যাচ্ছে হ্রেষায়, কখনো খুরের টগবগে (সুরকে যদি ভাষায় প্রকাশ করা যেত!)। ক্ষণে ক্ষণে গা শিউরে উঠছে দৃশ্য ও সুরের পরম্পরায়, ঘটনার উত্তেজনায়। কিন্তু তখন কি জানতাম, বাংলা সিনেমায় এমন জাদুকরি সুর নেওয়া হয়েছে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ থেকে!
কিংবদন্তি ইতালিয়ান কম্পোজার প্রয়াত এন্নিও মোররিকোনের এই ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বিশ্ব সিনেমার জগতে অনন্য হয়ে থাকবে সব সময়। তেমনি ‘স্পেগেত্তি ওয়েস্টার্নের’ স্রষ্টা সার্জিও লিওনের ‘ডলার্স ট্রিলজি’। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’র শেষ দৃশ্যে কবরস্থানে যখন ত্রিমুখী হয়ে বন্দুক হাতে ‘ম্যান উইথ নো নেম’ (ক্লিন্ট ইস্টউড), ‘টুকো’ (এলি ওয়ালাচ) ও ‘অ্যাঞ্জেল আইস’ (লি ফন ক্লিফ) দাঁড়ায়, তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজতে থাকে সেই বিখ্যাত সাসপেন্স-থ্রিলারমাখা সুর। সেই সুরের কথাই বলেছি মূলত শুরুতে। মোররিকোনের মিউজিক কেবল ঢালিউডে নয়; বলিউডের বহু চলচ্চিত্রেও হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ডলার্স’ সিরিজসহ লিওনের আরও দুই মাস্টারপিস ছবি ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ওয়েস্ট’ ও ‘ওয়ানস আপন আ টাইম ইন আমেরিকা’র মিউজিকও কম্পোজ করেন মোররিকোনে।
চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না!চলচ্চিত্রের শুরুর দিককার সময় কোনো সুর ছিল না। নির্বাক যুগ পেরিয়ে সিনেমা এখন এত দূর বিস্তৃত, যা এক শতকের মধ্যেই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছাড়া তো এখন সিনেমার কথা চিন্তাই করা যায় না! এখন দর্শক কেবল পর্দার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বসে থাকেন না; কানকেও কাজে লাগান সিনেমাবোধের জন্য। কাহিনিকে যদি আমার শরীর ধরি, তবে অভিনয় হচ্ছে সিনেমার প্রাণ। আর সংগীত যেন এই দুইয়ের সংযোগস্থল। কাহিনি ও অভিনয়কে আরও বেগবান করে তোলে সংগীত।
এন্নিও মোররিকোনে (১০ নভেম্বর ১৯২৮—৬ জুলাই ২০২০)