ভারতের তেলেঙ্গানায় একটি রাসায়নিক কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪২ জনে দাঁড়িয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় পুলিশ এ তথ্য জানিয়েছে। খবর দ্য ওয়ালের। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল সোমবার সকালে তেলেঙ্গানার সাঙ্গারেড্ডি জেলায় শিল্পতালুক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, কারখানার ছাদ উড়ে গিয়ে ১০০ মিটার দূরে পড়ে। ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে একের পর এক উদ্ধার করা হচ্ছে কারখানা শ্রমিকদের মরদেহ। সোমবার রাত পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল ১৩। মঙ্গলবার সকাল থেকে আরো মরদেহ উদ্ধার করার পর তা প্রথমে ৩৪ এবং পরে ৪২-এ গিয়ে পৌঁছেছে।

উদ্ধারকাজের শেষ পর্বের কাজ এখনও চলছে বলে জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, সোমবার সকালে একটি রিঅ্যাক্টর ফেটে বিস্ফোরণ ঘটে। তেলেঙ্গানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী দামোদর রাজানরসিংহ জানান, বিস্ফোরণের সময় ৯০ জনের মতো শ্রমিক কারখানায় কাজ করছিলেন। রাসায়নিক ও আগুনে ঝলসে কারখানাটির আরো অনেক কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।

আরো পড়ুন:

মহেশপুর সীমান্তে ভারতীয় নারী আটক

ভারতে রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত ৫, আহত ১৫

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নিহতদের পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন।

পুলিশের উচ্চ পদস্থ একজন কর্মকর্তা সোমবার বলেছিলেন, বিস্ফোরণের কারণ জানা যায়নি। ধ্বংসস্তূপ পুরোপুরি না সরানো গেলে ফরেনসিক কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, কয়েকজন বিস্ফোরণের জেরে উড়ে গিয়ে প্রায় শখানেক মিটার দূরে গিয়ে ছিটকে পড়েন। কারখানার বিস্ফোরণে একটি বাড়ি ভেঙে পড়ে এবং সংলগ্ন একটি বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসক ও এসপি ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থেকে আগুন নেভানো ও উদ্ধারকাজের তদারক করেন। তারা জানান, সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড নামে ওই কারখানায় মাইক্রোক্রিস্ট্যালিন সেলুলোজ ও খাবারে মেশানোর রাসায়নিক তৈরি হতো। বিস্ফোরণের জেরে গোটা এলাকা রাসায়নিক ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। তাতে অনেকের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পুলিশ-প্রশাসন দ্রুত আশপাশের মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যায়।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স মব র

এছাড়াও পড়ুন:

ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চিকিৎসা পেলেন কয়েক শ মানুষ

ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান ও তাঁর নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প। ফারাজ হোসেন ফাউন্ডেশন ও এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের আয়োজনে এসব ক্যাম্পে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পেয়েছেন কয়েক শ মানুষ। 

গতকাল সোমবার দিনব্যাপী বরিশাল, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, নীলফামারী ও মাগুরায় মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। 

বরিশালের ক্যাম্পটি হয় সদর উপজেলার সাহেবের হাট বাজারে নজরুল সমাজকল্যাণ ক্লাব ও পাঠাগারে। এখানে চিকিৎসা নেন ৩১১ জন। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসাদের একজন ব্রিজ এলাকার বাসিন্দা রাবেয়া বেগম (৬০)। তিনি দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্ট ও বুকের ব্যথায় ভুগছিলেন। 

বয়োবৃদ্ধ এই নারী বলেন, বাজার থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে তিনি সাময়িক উপকার পান। কিন্তু পারিবারিক দৈন্যের কারণে কোথাও গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে পারেননি। তাই মেডিকেল ক্যাম্পের মাইকিং শুনে তিনি এখানে চলে এসেছেন। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ ও বিনা মূল্যে ওষুধ পেয়ে খুশি হয়ে রাবেয়া বেগম বলেন, ‘মোগো গরিবে গো লইগ্গা এমন আয়োজন য্যারা করছে, হ্যাগো আল্লায় ভালো করুক। আমি প্রাণ খুইল্লা হ্যাগো লইগ্গা দোয়া করমু।’ 

চিকিৎসাসেবা পেয়ে নিজেদের খুশির কথা জানালেন দীর্ঘদিন ধরে জ্বালাপোড়া, উচ্চ রক্তচাপ ও ঘুমের সমস্যায় ভোগা বিশারদ গ্রামের মো. হাসেম গাজী (৮০), বুকে-পিঠে ব্যথায় ভোগা কানাইপুরের খাদিজা বেগম (৪২) ও টনসিলের ব্যথা নিয়ে বাবার সঙ্গে ক্যাম্পে আসা ৮ বছর বয়সী শিশু হোসাইন।

বরিশালে চিকিৎসাসেবা দেন ডা. রউফুল ইসলাম হিমেল ও ডা. জয়দেব বোরাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসকেএফের আঞ্চলিক বিক্রয় ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার দাস, জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. আজিজুল ইসলাম, মেডিকেল সার্ভিস অফিসার মো. শফিকুল ইসলাম, মো. মিয়াজ সরদার, সেলস অফিসার মো. মিলন হোসেন প্রমুখ।

সাতক্ষীরার ক্যাম্পটি হয় আশাশুনি উপজেলার বুধহাটার করিম সুপার মার্কেটের ডায়াবেটিস অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালে। আয়োজকেরা জানান, এখানে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন ৪৫০ জনের মতো।

সাতক্ষীরার ক্যাম্পে রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন মেডিসিন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিনাক কুমার বিশ্বাস ও প্রসূতি রোগবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনামিকা বাছাড়। চিকিৎসক দেখিয়ে ও ওষুধ পেয়ে নিজেদের ভালো লাগার কথা জানান বুধহাটা গ্রামের শারমিন সুলতান (২৮), বুধহাটা গ্রামের মোস্তাক আহমেদ, গুনাকরকাটি গ্রামের তাসলিমা খাতুন (২৫), নৈকাটি গ্রামের মহব্বত আলী (৬৫) প্রমুখ। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালের জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক বিক্রয় ব্যবস্থাপক মো. রেজাউল করিম। ক্যাম্প পরিচালনায় সহযোগিতা করছেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের এলাকা ব্যবস্থাপক নারায়ণ চন্দ্র হালদার, মাঠ ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন, মেডিকেল সার্ভিস কর্মকর্তা কামারুজ্জামান ও দীপক কুমার রায়। 

কুষ্টিয়ার স্বাস্থ্য ক্যাম্পটি হয় মিরপুর উপজেলার অঞ্জনগাছি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে। সেখানে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ৪২৫ জন রোগীকে বিনা মূল্যে ওষুধ ও ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়েছে। 

এখানে রোগী দেখেন ডা. লুৎফুল নাহার, দেবাশীষ দেবনাথ, মনিরুজ্জামান শিমুল, মুরাদ আলী, ইয়াসমিন আরা ও আবদুস সামাদ। সহযোগিতা করেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের জ্যেষ্ঠ এলাকা ব্যবস্থাপক আরিফুল ইসলাম, সিনিয়র মেডিকেল সার্ভিসেস অফিসার মিলন মোল্লা, কুতুবুজ্জামান, মেডিকেল সার্ভিসেস অফিসার আমিরুল ইসলাম ও আশিক হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের উপবিক্রয় ব্যবস্থাপক মাসুদ পারভেজ। 

নীলফামারীর ক্যাম্পটি হয় সৈয়দপুর উপজেলা শহরের বেসরকারি হাসপাতাল নিউ এভার কেয়ার-এ। এখানে ৩০০ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। রোগী দেখেন ডা. মো. জাভেদ ইউসুফ, নাহিদ আকতার, রাবেয়া সুলতানা ও আতাউর রহমান। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের পঞ্চগড় অঞ্চলের রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার মো. সোহাগ তালুকদার, সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার কামাল কৌটি সানা, সিনিয়র মেডিকেল সার্ভিস অফিসার মো. গাজী সালাউদ্দিন, মো. রফিকুল ইসলাম, মেডিকেল সার্ভিস অফিসার মো. রেজওয়ান আহমেদ, প্রণয় বিশ্বাস দীপ্ত। 

সৈয়দপুর শহরের একজন শ্বাসকষ্টের রোগী জাহানারা বেগম (৪০) বলেন, ‘অনেক কষ্ট পাচ্ছিলাম। খবর পেয়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে এসেছি। এখানে ডাক্তার দেখলাম, ফ্রি ওষুধও পেলাম।’ 

মাগুরার ক্যাম্পটি হয় শ্রীপুর উপজেলার নাকোল ইউনিয়ন পরিষদে। এখানে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত শিশু, গাইনি, মেডিসিন ও অর্থোপেডিক বিষয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রায় আড়াই শ রোগীকে এ চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের একজন আকিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গ্রাম থেকে জেলা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। গ্রামের মানুষ বড় কোনো সমস্যায় না পড়লে হাসপাতালে যেতে চান না। গ্রামে বসেই মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা ও ওষুধ পেয়ে উপকৃত হয়েছেন।’ 

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় ফারাজ আইয়াজ হোসেন নিহত হন। আর ২০২০ সালের ১ জুলাই প্রয়াত হন তাঁর নানা, শিল্পপতি লতিফুর রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ