চ্যাটজিপিটি কি আমাদের চিন্তা আটকে দিচ্ছে?
Published: 1st, July 2025 GMT
আমি প্রচুর চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করি। সম্ভবত একটু বেশিই করি। হয়তো পয়সা উশুল করার জন্য। অথবা ঝামেলা পাকানোর জন্য। আমার ধারণা, যন্ত্রকে বিপদে ফেলার জন্য। অনেক সময় এমন হয়, মাথায় একটা প্রশ্ন এল, তারপর আর বেশি চিন্তা না করে সরাসরি টাইপ করে ফেলি, চ্যাটজিপিটি, বলো তো...।
একটা সময় ছিল, এসব প্রশ্ন নিয়ে আমি কষ্ট করতাম। ভাবতাম, গুগল করে হাজারো ঘাঁটাঘাঁটি করতাম, ভুল করতাম, শিখতাম। এখন সেসব কষ্ট নেই। যন্ত্র এসে সব সহজ করে দিয়েছে। কিন্তু এই ‘সহজ করে দেওয়া’র মধ্যেই লুকিয়ে আছে একধরনের বিপদ। যে বিপদ খুব ধীরে ধীরে আসে, সাইলেন্ট মোডে। আপনি টেরও পাবেন না, কখন আপনার চিন্তা করা বন্ধ হয়ে গেছে।
চ্যাটজিপিটি উত্তর দেয় তাড়াতাড়িই, গোছানো, সুন্দর ভাষায়। যেন আপনি যা জানতে চাচ্ছেন, তার চেয়ে এক ধাপ বেশি বুঝে ফেলেছে যন্ত্রটাই। তখন আপনি আর থামেন না। একবার, দুইবার, তিনবার, চারবার .
এই অভ্যাস যখন গেঁথে যায়, তখন চিন্তাটা আউটসোর্স করে দেওয়ার মোডে চলে যায়। আপনার মাথার বদলে একটা বিশাল সফটওয়্যার ভাবছে। আপনি শুধু উত্তর নিচ্ছেন না, বিশ্বাসও করছেন। চিন্তা করছেন না। যাচাই করছেন না। তর্কও করছেন না। পাল্টা বাড়ি দিচ্ছেন না। ধমক দিচ্ছেন না ভুল বলে।
এটাই ভয়ংকর। আসলেই ভয়ংকর।
চ্যাটজিপিটি অনেক সময় এমনভাবে উত্তর দেয় যেন ব্যাপারটা খুবই সহজ, নিখুঁত; একদম নির্দ্বিধায় মানার মতো। আপনি ভাবছেন, ‘এই তো, এটাকেই তো খুঁজছিলাম!’ অথচ আমরা বুঝতে পারছি না, উত্তরটা ঠিক হলেও আমরা নিজে কিছু ভাবিনি, আমরা নতুন কিছু আবিষ্কার করিনি। এটা কিন্তু আমাদের বিপদে ফেলছে। অনেকের মাথাকে অসার করে ফেলছে।
আগে কী হতো?
একটা বিষয়ে মাথায় প্রশ্ন এলে আমরা সেটা নিয়ে পড়তাম, বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করতাম, নানা রকম চিন্তার ভেতর দিয়ে যেতাম। তর্ক হতো, ঝগড়া হতো। তখন একটা ভুল উত্তরও অনেক সময় ভালো একটা শিক্ষার জন্ম দিত। মাথা আবার চকচকে নতুনের মতো কাজ করত। সেই ভুল করা, দ্বিধায় পড়া, পথ হারানো, বাড়ি খেয়ে আবার পথ খুঁজে পাওয়া—পুরো যাত্রাটা একটা চিন্তার অভ্যাস তৈরি করত। এই অভ্যাসই ছিল আমাদের চিন্তার মূল শক্তি। এটাই মানুষের মূল শক্তি। এটাই আমাদের বিবর্তনের রাস্তা, যেটাতে হেঁটেছি আমরা এত এত শতক।
এখন আমরা সেটাই ছাড় দিচ্ছি।
চ্যাটজিপিটি বলে, ‘এই রাস্তায় হাঁটুন।’ আমরাও চোখ বুজে হাঁটছি। আর এই চোখ বুজে হাঁটার মধ্যেই হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রশ্ন করার সাহস। যন্ত্র যে রাস্তা দেখাচ্ছে, সেটা ভালো হতেই পারে, কিন্তু সেটা একমাত্র রাস্তা নয়। আমরা নিজেরা আর খোঁজার চেষ্টা করছি না, বিকল্প ভাবছি না। ভয়ংকর ব্যাপার।
এআই-এর ভাষা এতটাই গোছানো, এতটাই বিশ্বাসযোগ্য যে অনেক সময় ভুল হলেও তা ধরতে ইচ্ছা করে না। আপনি ভাবেন, এত সুন্দর করে বলছে, নিশ্চয় ঠিকই বলেছে। তখন আর নিজের মতো করে চিন্তা করার দরজাটা খোলা থাকে না।
একটা সময় গিয়ে আপনার চিন্তার ধরনটাই বদলে যায়। আপনি নিজের মতো করে ভাবার বদলে চ্যাটজিপিটির মতো করে ভাবতে শুরু করেন। ওর যুক্তি, ওর বাক্যগঠন, ওর কাঠামো সব ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ে আপনার মাথায়। তখন আপনি বুঝতেই পারেন না, আপনার মাথার ভেতরে যেটা ঘুরছে, সেটা আদৌ আপনার নিজের চিন্তা নয়, বরং এটা যন্ত্রের ছায়া। আমি নিজেই উপলব্ধি করেছি, এতগুলো সিস্টেম ব্যবহার করে।
এটাই সবচেয়ে ভয়ংকর জায়গা।
তবে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। চ্যাটজিপিটি কোনো শত্রু নয়। ও একটা শক্তিশালী টুল। কিন্তু সেটাকে আপনি কীভাবে ব্যবহার করছেন, সেটাই আসল। আপনি যদি শুধু শর্টকাট চান, ও আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি একটা উত্তর দিয়ে দেবে। সেটা নেওয়াটা ঠিক হবে না।
কিন্তু আপনি যদি নিজে চিন্তা করতে চান, নিজের মতো করে দ্বিধা, ভুল, অনিশ্চয়তা পেরিয়ে সামনে যেতে চান, তাহলে চ্যাটজিপিটিকে সহকারী বানান, গুরু নয়। ওর উত্তর নিয়ে প্রশ্ন করুন, সন্দেহ করুন, তর্ক করুন। দেখবেন, তখনো আপনি শিখছেন, কিন্তু নিয়ন্ত্রণটা থাকছে আপনার হাতে।
চ্যাটজিপিটি আমাদের চিন্তা কেড়ে নিচ্ছে না। আমরাই বরং নিজেরা তুলে দিচ্ছি। এখন প্রশ্ন হলো, আপনি কি ভাবার আগেই উত্তর পেতে চান, নাকি উত্তর পাওয়ার আগেই ভাবতে চান?
রকিবুল হাসান
টেলিকম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক বইয়ের লেখক এবং লিংকথ্রি টেকনোলজিসের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আপন র ম থ অন ক সময় তর দ য় র আগ ই আম দ র করছ ন ন আপন করত ম
এছাড়াও পড়ুন:
স্মার্টফোনে ডিএসএলআর ক্যামেরার মতো ছবি তোলার ৫ কৌশল
স্মার্টফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, ছবি তোলার ক্ষেত্রেও হয়ে উঠেছে অন্যতম প্রধান যন্ত্র। আধুনিক স্মার্টফোনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিসহ উন্নত সেন্সর ও ম্যানুয়াল নিয়ন্ত্রণ সুবিধা যুক্ত থাকায় সহজেই ডিএসএলআর ক্যামেরার মতো ভালো মানের ছবি তোলা যায়। স্মার্টফোনে ভালো ছবি তুলতে এআই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের পাশাপাশি ক্যামেরার সক্ষমতা বাড়ানোর কৌশলগুলো দেখে নেওয়া যাক।
প্রো মোড ব্যবহারস্মার্টফোনে থাকা ‘প্রো’ বা ‘ম্যানুয়াল’ মোড ব্যবহার করে আলোর পরিমাণ, গতি ও রঙের ভারসাম্য সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর তাই ছবি তোলার আগে আইএসও, শাটার স্পিড, হোয়াইট ব্যালান্স ও ম্যানুয়াল ফোকাস ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত আবহ তৈরি করতে হবে।
পোর্ট্রেট মোড ব্যবহারডিএসএলআর ক্যামেরার বোকেহ ইফেক্টের কথা অনেকেই জানেন। বোকেহ ইফেক্টে বিষয়বস্তু স্পষ্ট থাকলেও পটভূমি ঝাপসা হয়ে যায়। স্মার্টফোনের পোর্ট্রেট মোড ব্যবহার করেও এই অভিজ্ঞতা পাওয়া সম্ভব। এআই প্রযুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিষয় ও পটভূমি শনাক্ত করে এবং প্রয়োজনীয় গভীরতা তৈরি করে, ফলে ছবির বিষয়বস্তু আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুনস্মার্টফোনের তথ্য নিরাপদ রাখতে এই পাঁচ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন তো১০ মে ২০২৫সিন ডিটেকশন সুবিধা ব্যবহারস্মার্টফোনের ক্যামেরায় যুক্ত ‘সিন ডিটেকশন’ বা দৃশ্য শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ছবির ধরন নিজে থেকেই বুঝে নেয়। খাবার, প্রকৃতি, প্রাণী, সূর্যাস্ত কিংবা রাতের দৃশ্য যেটাই হোক না কেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছবির রং, উজ্জ্বলতা ও কনট্রাস্ট অনুযায়ী তাৎক্ষণিকভাবে সামঞ্জস্য আনে। এতে আলাদাভাবে ক্যামেরা সেটিংস নিয়ে ভাবতে হয় না। আর তাই ছবি তোলার সময় অবশ্যই সিন ডিটেকশন সুবিধা ব্যবহার করতে হবে।
সঠিক আলোর ব্যবহারছবি তোলার ক্ষেত্রে আলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দিনের শুরুতে বা সূর্যাস্তের ঠিক আগে যখন আলো থাকে নরম ও উষ্ণ, তখন ভালো ছবি তোলা যায়। আর তাই যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক আলোতে ছবি তোলার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, বেশি ফ্ল্যাশ ব্যবহার করলে ছবির স্বাভাবিক রং বিকৃত হতে পারে এবং ত্বকের টোন কৃত্রিম লাগতে পারে।
আরও পড়ুনস্মার্টফোনের জায়গা খালি করার ৪ কৌশল২০ এপ্রিল ২০২৫ফোকাস ও পরিষ্কার লেন্সছবির গুণগত মান নির্ভর করে ফোকাসের ওপর। স্মার্টফোনে স্ক্রিনে যেখানে ট্যাপ করা হয়, ক্যামেরা সেখানেই ফোকাস করে। তাই সঠিক জায়গায় ট্যাপ করে ফোকাস ঠিক করা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি অনেক সময় লেন্সে আঙুলের ছাপ, ধুলা কিংবা তেলতেলে আবরণ পড়ে থাকে, যার ফলে ছবি ঝাপসা হয়। এ জন্য ছবি তোলার আগে ক্যামেরার লেন্স একটি মসৃণ কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে।
সূত্র: টেকলুসিভ