নতুন এক রহস্যময় জীবের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা
Published: 1st, July 2025 GMT
বিজ্ঞানীরা নতুন এক জীবের কোষীয় সত্তার খোঁজ পেয়েছেন, যার মধ্যে প্রাণ ও প্রাণহীন উভয় অবস্থান দেখা গেছে। কানাডার নোভা স্কশিয়ার হ্যালিফ্যাক্সের ডালহৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী রিও হারাডারের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী সামুদ্রিক প্ল্যাঙ্কটন সিথারিস্টেস রেজিয়াসের ব্যাকটেরিয়া জিনোম বিশ্লেষণের সময় অদ্ভুত এই জীবের খোঁজ পান। বায়ো আর্কাইভ সাময়িকীতে রহস্যময় জীবটির বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
নতুন জীবের নামকরণ হয়েছে সুকুনাআর্কিয়াম মিরাবিল। আর্কিয়া ডোমেনের অন্তর্গত জীবটি তার হোস্টের কাছ থেকে কিছু কাজ ভাগাভাগি করে থাকে। এই জীব নিজস্ব রাইবোসোম ও আরএনএ তৈরি করতে পারে। জীবটির জিনোম আশ্চর্যজনকভাবে বেশ ছোট, যা ক্ষুদ্রতম আর্কিয়াল জিনোমের প্রায় অর্ধেক।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, সাধারণত ভাইরাসের জীবন ও কার্যকারিতা নির্ভর করে হোস্টের ওপর। অন্যদিকে নতুন প্রাণের সত্তা বেশ জটিল। সাধারণ জীবনের সঙ্গে ভাইরাসের মতো সত্তাকে মেলানো যায় না। সুকুনাআর্কিয়াম মিরাবিল নামকরণ হয়েছে জাপানের এক দেবতার নামে। এই দেবতা তার ছোট আকারের জন্য পরিচিত।
জীবটিতে নিজস্ব রাইবোসোম ও বার্তাবাহক আরএনএ তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় জিন রয়েছে। সুকুনাআর্কিয়ামের আবিষ্কার কোষীয় জীবনের প্রচলিত সীমানাকে সামনে ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন আবিষ্কৃত জীবটি ভাইরাস ও কোষের মধ্যকার প্রাণ ও প্রাণহীন অবস্থার মধ্যকার রেখাটি অতিক্রম করছে বলেও ধারণা করছেন তাঁরা।
সূত্র: পপুলার মেকানিকস
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ক য
এছাড়াও পড়ুন:
লালভাঙার লাল ফুল
জেমস লি (১৭১৫-১৭৯৫) আর লুইস কেনেডি (১৭২১-১৭৮২) ছিলেন দুটি পরিবারের দুজন স্কটিশ নার্সারিকর্মী। তাঁরা দুজন মিলে লন্ডনের হ্যামারস্মিথে আঠারো শতকের প্রথম দিকে একটি নার্সারি গড়ে তুলেছিলেন, যার নাম ছিল ভাইনইয়ার্ড নার্সারি। ধারণা করা হয়, সেটি বিশ্বের প্রথম দিকের নার্সারিগুলোর একটি।
বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক নার্সারিটি ছিল লিনিয়ান বোটানিক গার্ডেন অ্যান্ড নার্সারি। রবার্ট প্রিন্স ১৭৩৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সেটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভাইনইয়ার্ড নার্সারি ছিল সেটির সমসাময়িক। লি ও কেনেডি বংশের সন্তানেরা তিন প্রজন্ম ধরে একই সঙ্গে সেই নার্সারিকে টিকিয়ে রেখেছিলেন।
নার্সারি কাজের পাশাপাশি জেমস লি ছিলেন একজন উদ্ভিদ সংগ্রাহকও। জেমস লি ১৭৮৭ সালে লন্ডনে প্রথম চীনা গোলাপ প্রবর্তন করেছিলেন। কালক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন উদ্ভিদের দ্বিপদী নামকরণের জনক কার্ল লিনিয়াসের একজন সহযোগী। জেমস লি ১৭৬০ সালে প্রকাশিত লিনিয়ান পদ্ধতির একটি সংকলন তৈরি করেন। অ্যান ইন্ট্রোডাকশন টু বোটানি নামের সংকলনটির সে সময় পাঁচটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। লিনিয়াস নার্সারি কর্মী জেমস লির নামে একটি উদ্ভিদ গণের নামকরণ করেন। Leea নামের সে গণের সারা বিশ্বে ২০২৩ সালের ১২ জুলাই পর্যন্ত ৪৫টি গ্রহণযোগ্য প্রজাতি প্লান্টস অব দ্য ওয়ার্ল্ড অনলাইনে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে আছে এ গণের অন্তত ১০টি প্রজাতি। কুকুরজিব বা বনচালিতা, কাকজংলা, ডানাজংলা, কুকুরা, ঢোলসমুদ্র, লালভাঙা ইত্যাদি এ গণের উদ্ভিদ।
ঢাকায় আহসান মঞ্জিলে রয়েছে একটি ঢোলসমুদ্রগাছ, চন্দ্রিমা উদ্যানে পুকুরপাড়ে দেখেছিলাম কুকুরজিবগাছ আর এবার আষাঢ় মাসে বলধা উদ্যানের সিবিলি অংশে গিয়ে দেখা পেলাম লালভাঙাগাছের। লালভাঙা বা red leea গাছের প্রজাতিগত নাম Leea rubra ও পরিবার ভিটেসি। অর্থাৎ গবেষকেরা এ গাছকে আঙুরের গোত্রে ফেলেছেন। আগে এ গাছের গোত্র ছিল লিয়েসি। প্রজাতিগত নামের শেষাংশ রুব্রা অর্থ লাল।
বলধা উদ্যানে দেখলাম লালভাঙাগাছে কয়েকটা থোকায় লাল টকটকে ফুল ফুটেছে। ফুল এত ক্ষুদ্র যে খুব খেয়াল করে না দেখলে তা সহজে চোখে পড়ে না। গাছটার ডালপালা লালচে সবুজ, গিঁটগুলো ফোলা ফোলা, দেখে মনে হয়, চাপ দিলেই বোধ হয় ওখান থেকে মটাৎ করে ডালটা ভেঙে যাবে। আসলে তা হয় না, কাণ্ড বেশ শক্ত। শাখাপ্রশাখা নিয়ে গুল্ম প্রকৃতির গাছটার উচ্চতা ৬ থেকে ৭ ফুটের বেশি উঁচু হয়ে সেখানে এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। ডালপালা ও পাতার সন্ধিস্থলে রয়েছে বড় খোঁপার মতো পুষ্পমঞ্জরি। ফোটা ফুলের চেয়ে বুটের দানার মতো কুঁড়িগুলোই যেন বেশি সুন্দর।
লালভাঙা একটি বহুবর্ষজীবী ছোট আকারের গুল্ম প্রকৃতির গাছ। উচ্চতা ৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। কাণ্ডের রং লালচে, পাতা সবুজ। পাতা উপবৃত্তাকার, অগ্রভাগ সুচালো, কিনারা অগভীরভাবে খাঁজকাটা, পাতা দেখতে অনেকটা চালতা পাতার মতো, তবে চালতাপাতার চেয়ে আকার ছোট। শাখা-প্রশাখায় পাতাগুলো বিপরীতমুখী হয়ে একান্তরক্রমিকভাবে জন্মে। পাতা খসখসে ও প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। একে আমরা পাতা বলছি, আসলে সেগুলো পত্রক বা লিফলেট। কেননা পত্রদণ্ডের দুধারে পত্রকগুলো সাজানো থাকে। পুষ্পমঞ্জরি, কুঁড়ি ও ফুল উজ্জ্বল লাল। ফুলের পাপড়ির রং উজ্জ্বল লাল, গোলাপি বা ঘিয়ে হতে পারে।
ফোটা ফুলগুলো এতই ক্ষুদ্র যে পুষ্পমঞ্জরিতে ফোটার পর সেগুলো ঘিয়ে রঙের বিন্দুর মতো দেখায়। ফুলের পাঁচটি পাপড়ি তারার মতো মেলে থাকে, মাঝখানে থাকে ঘিয়ে রঙের জননাঙ্গগুলো। ক্ষুদ্র নাকফুলের মতো ফুল। আষাঢ় মাস থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়, ফল ধরা শেষ হয় অগ্রহায়ণ মাসে। ফলের রং প্রথমে লাল থাকলেও পরে হয় বেগুনি ও পাকার পর কালো হয়ে যায়। ফল বেরি প্রকৃতির, বড় মটর দানার মতো, ব্যাস মাত্র ১১ মিলিমিটার, ফলের ভেতরে ৪ থেকে ৬টি বীজ থাকে। বীজ থেকে চারা হয়। তবে শাখা কেটে কলম করে ও শাখায় গুটিকলম করে এ গাছের চারা তৈরি করা যায়। বয়স্ক গাছ থেকে কলম করে তা টবে বা বাগানে লাগালে সেসব গাছে দ্রুত ফুল ফোটে। এ গাছের কিছু ঔষধি গুণ আছে। পাতা ক্ষত সারানোয় ব্যবহৃত হয়। আমাশয় সারানোয় এর ফল খাওয়া হয়। এ দেশে বুনো গাছ হলেও কেউ কেউ বাহারি গাছ হিসেবে বাগানে লাগান। ফুল ফোটা গাছ দেখতে সুন্দর। এ গাছের আদি নিবাস বাংলাদেশ, আসাম, মিয়ানমার হলেও লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনেই, ফিলিপাইন প্রভৃতি দেশে এ গাছ দেখা যায়।