জয়পুরহাটে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রায় এক ডজন, প্রস্তুত জামায়াত
Published: 2nd, July 2025 GMT
সীমান্তঘেঁষা জেলা জয়পুরহাটে মাত্র দুটি সংসদীয় আসন। একটি জয়পুরহাট-১ আসন, অন্যটি জয়পুরহাট-২ আসন। জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা নিয়ে জয়পুরহাট-১ আসন এবং আক্কেলপুর, কালাই ও ক্ষেতলাল এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত জয়পুরহাট-২ আসন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই দুটি আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা অনেক আগে থেকেই নির্বাচনী এলাকায় জানান দিচ্ছেন। এ দুটি আসনেই জামায়াতে ইসলামীর চিত্র অন্য রকম। দলটি দুটি আসনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে রেখেছে। ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের সব প্রস্তুতিও শেষ করেছে। দুটি আসনেই বিএনপির প্রায় এক ডজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই জোরেশোরে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন।
জয়পুরহাট-১ আসনের চেয়ে জয়পুরহাট-২ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা অনেক বেশি। এই আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সবাই শক্তিশালী। তবে শেষ পর্যন্ত আসন দুটিতে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন কার ভাগ্যে জুটবে, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী জেলার দুটি আসনের একটিতেও বিজয়ী হতে পারেনি।
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, একসময় জয়পুরহাট বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিতি ছিল। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জেলার দুটি সংসদীয় আসন বিএনপির দখলে ছিল। এরপর আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী মোজাহার আলী প্রধান ও জয়পুরহাট-২ আসনে গোলাম মোস্তফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মোজাহার আলী প্রধান মারা গেছেন। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। তাঁর ছেলে মাসুদ রানা প্রধান এখন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের পদে আছেন।
জামায়াতের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুটি আসনেই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। জয়পুরহাট-১ আসনে দলীয় প্রার্থী জেলা জামায়াতের আমির ফজলুর রহমান এবং জয়পুরহাট-২ আসনে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এস এম রাশেদুল আলম। দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র পরিচালনা কমিটি থেকে পোলিং এজেন্টের তালিকাও শেষ করা হয়েছে। জামায়াতের এই দুই নেতা বলেন, দুটি আসনেই নির্বাচনের সব প্রস্তুতি তাঁরা নিয়েছেন। নির্বাচনে তাঁরা জয়ী হবেন বলে আশাবাদী।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, জয়পুরহাট-১ (জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি) আসনে যাঁরা দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন তাঁরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলিম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ারুল হক ওরফে আনু।
জয়পুরহাট-২ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক এএইচএম ওবায়দুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা, সাবেক সংসদ সদস্য আবু ইউসুফ মো.
জয়পুরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। এখানে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। যখন দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে, তখন সবাই দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে কাজ করবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দল য় প র র থ ব এনপ র দ সদস য ইসল ম আসন ই
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট-৪ আসনে বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর পাল্টাপাল্টি ‘শোডাউন’
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে আট ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট–কোম্পানীগঞ্জ–জৈন্তাপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতার সমর্থনে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই নেতার এসব কর্মসূচিকে স্থানীয় লোকজন ‘পাল্টাপাল্টি শোডাউন’ হিসেবে মনে করছেন।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুবারের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মতবিনিময় সভা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা সদরে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থকেরা।
স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সিলেট-১ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় তাঁকে দলের উচ্চপর্যায় থেকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। পরে ৫ নভেম্বর দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দলের চেয়ারপারসন তাঁকে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন। শিগগির এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হবে।
আরিফুল হকের এমন ঘোষণার পর ‘স্থানীয় প্রার্থী’ হিসেবে আসনটিতে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছেন তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। একই দাবিতে সভা–সমাবেশ করছেন জেলা বিএনপির আরেক উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদের অনুসারীরাও।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, তাঁতী দল, শ্রমিক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা হয়। বেলা একটা পর্যন্ত চলা এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আরিফুল হক চৌধুরী। সভায় তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে প্রায় ৪৭ বছর ধরে আছি। কোনো দিন বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। দলের সিদ্ধান্তে আমি আপনাদের খেদমতে এসেছি। কারণ, বিগত ১৭ বছর যে উন্নয়ন হওয়ার কথা, এর ছিটেফোঁটাও গোয়াইনঘাটে লাগেনি। খনিজ সম্পদে ভরপুর এ এলাকার মানুষ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে এই এলাকার চিত্র বদলে যাবে।’
সভা শেষে উপজেলা সদরে আরিফুল হকের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়। পরে তিনি গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহবুব রব চৌধুরী ও ইকবাল আহমদ, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুস শুকুর ও কাজী মুজিবুর রহমান, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সুরমান আলী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সামাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের শহীদ মিনারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্থানীয় বিএনপির একাংশ। মিছিল থেকে সিলেট-৪ আসনে আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তাঁরা ‘লোকাল না বাইরা, লোকাল লোকাল’, ‘হাকিম ভাই হাকিম ভাই, হাকিম ছাড়া উপায় নাই’, ‘মানি না মানব না, হাকিম ছাড়া মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
যোগাযোগ করলে আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট-৪ আসনে জামায়াত শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর বিপরীতে জয় পেতে হলে বিএনপিকে একজন “স্থানীয় ও শক্তিশালী” প্রার্থী দেওয়া উচিত। যেহেতু আমি গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দা, তাই স্থানীয়রা আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে সভা, সমাবেশ, মিছিল করছেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই চূড়ান্ত।’
স্থানীয় বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, আরিফুল, হাকিম ও হেলাল ছাড়াও সিলেট-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহস্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান মনোনয়নপ্রত্যাশী। এখানে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন দলটির জেলা কমিটির সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।