সীমান্তঘেঁষা জেলা জয়পুরহাটে মাত্র দুটি সংসদীয় আসন। একটি জয়পুরহাট-১ আসন, অন্যটি জয়পুরহাট-২ আসন। জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা নিয়ে জয়পুরহাট-১ আসন এবং আক্কেলপুর, কালাই ও ক্ষেতলাল এই তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত জয়পুরহাট-২ আসন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই দুটি আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে।

বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা অনেক আগে থেকেই নির্বাচনী এলাকায় জানান দিচ্ছেন। এ দুটি আসনেই জামায়াতে ইসলামীর চিত্র অন্য রকম। দলটি দুটি আসনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে রেখেছে। ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের সব প্রস্তুতিও শেষ করেছে। দুটি আসনেই বিএনপির প্রায় এক ডজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই জোরেশোরে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন।

জয়পুরহাট-১ আসনের চেয়ে জয়পুরহাট-২ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তৎপরতা অনেক বেশি। এই আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা সবাই শক্তিশালী। তবে শেষ পর্যন্ত আসন দুটিতে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন কার ভাগ্যে জুটবে, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী জেলার দুটি আসনের একটিতেও বিজয়ী হতে পারেনি।

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, একসময় জয়পুরহাট বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিতি ছিল। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জেলার দুটি সংসদীয় আসন বিএনপির দখলে ছিল। এরপর আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী মোজাহার আলী প্রধান ও জয়পুরহাট-২ আসনে গোলাম মোস্তফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মোজাহার আলী প্রধান মারা গেছেন। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। তাঁর ছেলে মাসুদ রানা প্রধান এখন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের পদে আছেন।

জামায়াতের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দুটি আসনেই দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। জয়পুরহাট-১ আসনে দলীয় প্রার্থী জেলা জামায়াতের আমির ফজলুর রহমান এবং জয়পুরহাট-২ আসনে জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এস এম রাশেদুল আলম। দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র পরিচালনা কমিটি থেকে পোলিং এজেন্টের তালিকাও শেষ করা হয়েছে। জামায়াতের এই দুই নেতা বলেন, দুটি আসনেই নির্বাচনের সব প্রস্তুতি তাঁরা নিয়েছেন। নির্বাচনে তাঁরা জয়ী হবেন বলে আশাবাদী।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, জয়পুরহাট-১ (জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি) আসনে যাঁরা দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন তাঁরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলিম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আনোয়ারুল হক ওরফে আনু।

জয়পুরহাট-২ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির রাজশাহী বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক এএইচএম ওবায়দুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোস্তফা, সাবেক সংসদ সদস্য আবু ইউসুফ মো.

খলিলুর রহমান, সাবেক সচিব আবদুল বারী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আব্বাস আলী, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম মনোনয়নপ্রত্যাশী।

জয়পুরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। এখানে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। যখন দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে, তখন সবাই দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে কাজ করবেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দল য় প র র থ ব এনপ র দ সদস য ইসল ম আসন ই

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় কৃষি ব্যাংক লুটের ঘটনায় মামলা, নেই গ্রেপ্তার

কৃষি ব্যাংক খুলনার রূপসা ঘাট শাখার ভল্ট ভেঙে ১৬ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ব্যাংকটির ওই শাখার ব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে শনিবার (১৬ আগস্ট) রাতে রূপসা থানায় মামলাটি করেন।  

এদিকে, ঘটনার দুইদিন অতিবাহিত হলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক তিন নিরাপত্তা প্রহরীকে থানায় রাখা হয়েছে।

গত শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে ব্যাংকের টাকা লুট করে সন্ত্রাসীরা। ওইদিন রাতে ব্যাংকের তিনজন নিরাপত্তা প্রহরীকে আটক করে সংশ্লিষ্ট থানায় নেওয়া হয়। ব্যাংকের এই শাখা কার্যালয়টি পূর্ব রূপসা পেট্রোল পাম্প ও পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ড পুলিশ ফাঁড়ির কাছে খুলনা-মোংলা মহাড়কের পাশে অবস্থিত। ব্যাংকে চুরির খবরে এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।    

আরো পড়ুন:

পঞ্চগড়ে ছাত্রদল কর্মী হত্যা, গ্রেপ্তার ২ আসামি কারাগারে

সরকার উৎখাতের যড়যন্ত্রের মামলায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার

সিসিটিভির ফুটেজ থেকে জানা গেছে, গত শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এই দুই ঘণ্টার মধ্যে ব্যাংকের বিভিন্ন গেটের ছয়টি তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে সন্ত্রাসীরা। তারা ব্যাংকের ভেতরের চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা কাপড় দিয়ে ঢেকে ক্যাশ কাউন্টারে প্রবেশ করে। ভল্টের তালা ভেঙে সেখানে রক্ষিত ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকার মধ্যে ১ হাজার ৪২০ টাকা রেখে বাকি টাকা নিয়ে যায় তারা। সিসিটিভি ফুটেজে একজন সন্ত্রাসীকে দেখা গেলেও মুখে কাপড় দিয়ে বাঁধা থাকায় তাকে চিহ্নিত করা যায়নি। 

সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে ব্যাংকের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ব্যাংকের তিন নিরাপত্তা প্রহরী আফজাল হোসেন, আবুল কাশেম ও তরিকুল ইসলাম এখনো পুলিশ হেফাজতে আছেন।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী আবুল কাশেম শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ব্যাংকের প্রধান গেট খোলা দেখতে পেয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানালে রূপসা থানার ওমি মো. মাহফুজুর রহমান ও স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। রাতেই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, খুলনা জেলা ডিবি পুলিশের টিম, ব্যাংকের অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাতে ব্যাংকের তিনজন নিরাপত্তা প্রহরীকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে রুবেল নামে এক ওয়ার্কশপ কর্মচারীকে আটক করে থানায় রাখা হয়েছে। 

এ বিষয়ে কৃষি ব্যাংকের খুলনা বিভাগীয় অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‍“ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করার নিয়ম থাকলেও এখনো করা হয়নি। আজ রবিবার (১৭ আগস্ট) করা হতে পারে।” 

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আটক তিন নিরাপত্তা প্রহরীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা কারো নামে মামলা দেইনি। পুলিশ তাদের তিনজনসহ আরো একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ ব্যাপারে পুলিশ ভালো বলতে পারবে।”

কৃষি ব্যাংকের রূপসা ঘাট শাখার ম্যানেজার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “গত বৃহস্পতিবার অফিস শেষে আমরা সবাই বাড়ি চলে যাই।  শুক্রবার রাত ১০টায় নিরাপত্তা প্রহরীর মাধ্যমে জানতে পারি, ব্যাংকে চুরি হয়েছে। সন্ত্রাসীরা গেটের তালা ও ভেতরের ভল্ট ভেঙে ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকার মধ্যে ১ হাজার ৪২০ টাকা রেখে বাকি টাকা নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছি।”  

খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আল-বেরুনী বলেন, “প্রকৃত তথ্য উদঘাটনে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।” 

খুলনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মুক্ত রায় চৌধুরী বলেন, “মূল ঘটনা উদঘাটনে কাজ চলছে। দ্রুত এ ঘটনার রহস্য যাতে বের করা যায় এজন্য আমাদের টিম কাজ করছে।” 

রূপসা থানার ওসি মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যাংকের তিন নিরাপত্তা প্রহরীকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যাংকের ম্যানেজার বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন।” 

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ