যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে পাস হলো ট্রাম্পের আলোচিত ব্যয় বিল
Published: 2nd, July 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বড় ধরনের কর ছাড় ও ব্যয় বিল পাস হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সিনেটের রিপাবলিকান সদস্যরা খুব অল্প ব্যবধানে বিলটি পাস করাতে সক্ষম হন।
এই বিলে কর কমানো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি কমানো, সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে খরচ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তবে এ বিলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণের পরিমাণ আরও ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার বেড়ে যাবে।
এখন বিলটির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদে পাঠানো হয়েছে। তবে সেখানকার কয়েকজন রিপাবলিকান সদস্য ইতিমধ্যেই সিনেটে যুক্ত হওয়া বিলের কিছু শর্তের বিরোধিতা করেছেন।
৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের আগেই ট্রাম্প বিলটিতে স্বাক্ষর করে সেটি আইনে পরিণত করতে চান। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার মাইক জনসনও বলেছেন, তিনি সেই সময়সীমার মধ্যেই কাজ শেষ করতে চান।
বিলটি ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে দেওয়া কর ছাড়েরই সম্প্রসারিত রূপ। পাশাপাশি বকশিশ ও অতিরিক্ত সময় কাজ করাজনিত আয়ের ক্ষেত্রে নতুন কর ছাড় দেওয়া হবে। সেনাবাহিনী ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে খরচও বাড়ানো হবে।
এই বিলে কম আয়ের মার্কিন নাগরিকদের জন্য মেডিকেইড নামের স্বাস্থ্য কর্মসূচি ও খাদ্যসহায়তা কর্মসূচির খরচ থেকে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি ডলার কাটার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদকালে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির জন্য দেওয়া অনেক সুবিধাও বাতিল করা হবে।
বিলটি নিয়ে রিপাবলিকানদের মধ্যেও মতভেদ দেখা দিয়েছে। কারণ, বিলটি দেশটিতে দ্রুত বাড়তে থাকা ৩৬ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের জাতীয় ঋণের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে। এ বিলে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের নিজেদের নির্ধারিত ঋণসীমা আরও ৫ লাখ কোটি ডলার বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কংগ্রেস যদি এই সীমা না বাড়ায়, তাহলে ভয়াবহ ঋণখেলাপির ঝুঁকি তৈরি হবে।
গতকাল সিনেটে বিলটি ৫১-৫০ ভোটে পাস হয়। বিলের পক্ষে-বিপক্ষে সমান ভোট পড়ায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ‘টাই’ ভেঙে বিলের পক্ষে ভোট দেন। বিলটির বিপক্ষে ভোট দেওয়া ডেমোক্র্যাটদের ৪৭ সদস্যের সঙ্গে ৩ জন রিপাবলিকানও যোগ দেন। তাঁরা হলেন—নর্থ ক্যারোলাইনার টম টিলিস, মেইনের সুসান কলিন্স ও কেনটাকির র্যান্ড পল।
সিনেটে গতকাল ভোটাভুটির আগে রাতভর বিতর্ক চলে। রিপাবলিকান সিনেট সদস্যরা বিলের খরচ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা–ব্যবস্থার ওপর এর প্রভাব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন।
শেষ মুহূর্তে আলাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর লিসা মুরকৌস্কির সমর্থন পেতে অনেক দর-কষাকষিও হয়েছে। কারণ, তিনি আগে বলেছিলেন যে বিলে বড় ধরনের পরিবর্তন না হলে তিনি এর বিরুদ্ধে ভোট দেবেন।
শেষ পর্যন্ত লিসার সমর্থন নিশ্চিত করতে দুটি বিশেষ শর্ত বিলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। একটি শর্ত হলো, আলাস্কা এবং আরও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে অতিরিক্ত খাদ্যসহায়তার অর্থ পাঠানো হবে। অন্যটি হলো, মেডিকেইডে বড় কাটছাঁটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর সহায়তায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ দেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র প বল ক ন স সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ইলন মাস্ক কি নতুন দল গঠন করতে পারবেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ কংগ্রেসে পাস হলে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবেন বলে এ সপ্তাহে হুমকি দিয়েছেন ইলন মাস্ক। এ ধনকুবের মনে করেন, বিলটি পাস হলে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে রিপাবলিকানদের পার্থক্য থাকবে না। ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে করদাতাদের অর্থ অপচয়ের অভিযোগ রয়েছে।
ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বিলটি গত মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে পাস হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটিকে নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে পাঠানো হয়েছে। বিলটিতে করছাড়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা ও দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা কমানোর কথা বলা হয়েছে।
গত মাসে মাস্ক একাধিকবার বিলটির সমালোচনা করেন এবং নতুন দল গঠনের ইঙ্গিত দেন। গত সোমবার মাস্ক এক্স পোস্টে লেখেন, এ পাগলাটে বিল পাস হলে পরদিনই ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠন করা হবে। তিনি বলেন, ‘দেশে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান মিলিয়ে একটাই দল চলছে। মানুষের আসল কণ্ঠস্বর শোনার জন্য এখন বিকল্প দরকার।
বিলটি নিয়ে এক সময়ের ঘনিষ্ঠজন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় মাস্কের। তিনি প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের দাবিও জানান।
গত ৫ জুন ইলন মাস্ক তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে জরিপ চালান। সেখানে অনুসারীদের প্রশ্ন করেন, ‘এখন কি যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সময় এসেছে, যা মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা ৮০ শতাংশ মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করবে?’ জরিপে ৫৬ লাখ মানুষ অংশ নেন। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ ‘হ্যাঁ’ উত্তর দিয়েছেন। পরে মাস্ক ফল শেয়ার করে বলেন, এটা প্রমাণ হলো যে, বেশির ভাগ মার্কিনি নতুন রাজনৈতিক দল চান।
ইউনিভার্সিটি অব এসেক্সের অধ্যাপক নাতাশা লিন্ডস্ট্যাড বলেন, মাস্ক বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশ মানুষ ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান— এই দুই প্রধান দল নিয়ে সন্তুষ্ট নন এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব করা হচ্ছে না। সূত্র: আলজাজিরা।