ব্যবসায়ী হত্যা: ‘জনসাধারণ, ধামরাই’ ব্যানারে এনসিপি-জামায়াতের বিক্ষোভ
Published: 12th, July 2025 GMT
রাজধানীর মিডফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী সোহাগকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকার ধামরাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতৃত্বে ‘জনসাধারণ, ধামরাই’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে উপজেলার বাজার রোড এলাকায় অর্ধশতাধিক লোকের অংশগ্রহণে মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। এতে সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।
মিছিলে তারা, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেবো না’, ‘চাঁদাবাজদের কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘মিডফোর্ডে হত্যা কেনো, প্রশাসন জবাব দে’, ‘এক দুই তিন চার, চাঁদাবাজরা দেশ ছাড়’, ‘আমার সোনার বাংলায়, চাঁদাবাজদের ঠাঁই নাই’ হত্যাদি স্লোগান দেন।
আরো পড়ুন:
২৪-এর আকাঙ্ক্ষা এখনো পূরণ হয়নি: সারজিস
ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যার প্রতিবাদে রংপুরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
পরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘‘৫ আগস্টের পর থেকে দেশে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি, হত্যা, ধর্ষণ হচ্ছে; এমন স্বাধীনতা তো আমরা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম সুন্দর একটা রাষ্ট্র। অপরাধীর শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তায় থাকব। দেশের প্রতিটি হত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে এই সরকারকে।’’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, ‘‘বিগত ৯ তারিখে মিডফোর্ডে যেভাবে হায়েনার মতো এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছে চাঁদার কারণে, এ হত্যাকাণ্ড আইয়ামে জাহেলিয়াতকে হার মানিয়েছে। অতীতে যে জালেমরা জনগণের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছেন, সেই নিপীড়নকেও হার মানিয়েছে। আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, একটি দলের নাম ভাঙিয়ে একজন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদা দাবি করে দিবালোকে পাথর নিক্ষেপ করে মানুষকে হত্যা করেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করছি, অনতিবিলম্বে তিনি যেই দলেরই হোক, যে চাঁদাবাজ, যে সন্ত্রাসী, যে হত্যাকারী তার বিচার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হতে হবে। কোনো ধরনের পার্টির প্রভাব যাতে না হয়। জনগণকে বলছি, আপনারা নিজেরা শক্তি হয়ে উঠুন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠুন, প্রতিবাদ গড়ে তুলুন। আপনাদের সঙ্গে ছাত্র সমাজ আছে। ইসলামি দলের নেতারা আপনাদের সঙ্গে আছে।’’
এনসিপির ধামরাই উপজেলার আহ্বায়ক ইসরাফিল খোকন বলেন, ‘‘চব্বিশ পরবর্তী বাংলাদেশে যেই স্বপ্ন দেখেছিলাম, একটি রাজনৈতিক দল ১০ মাসে তা ধূলিস্যাৎ করে দিয়েছে। এই রাজনৈতিক দলকে আমরা বলতে চাই, আপনারা যদি এই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চান, হাসিনার কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন। চব্বিশের ছাত্র-জনতা কেউ ঘরে ফিরে যায় নাই। এই বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে আপনাদের শোধরাতে হবে। এই ১০ মাসে যে কার্যক্রম করেছেন, হাসিনার ১৭ বছরকে অতিক্রম করে ফেলেছেন। আমরা আপনাকে বলতে চাই, যদি রাজনীতি করতে চান, আপনাদের লাস্ট আল্টিমেটাম, আমার আর কোনো ভাইয়ের যদি লাশ পড়ে, আপনাদের পতন অনিবার্য।’’
এ সময় এনসিপির ধামরাই উপজেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী উজ্জ্বল হোসেন, উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আসাদুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আশিকুর রহমান, সোমাভাগ ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি রাজু আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের সড়কে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে এবং ইটপাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয়। তার শরীরের ওপর উঠে লাফায় কেউ কেউ। এ হত্যার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় দুটি (হত্যা মামলা ও অস্ত্র মামলা) মামলা হয়। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল চারজনকে সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে।
ঢাকা/সাব্বির/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এনস প ব যবস য় আপন দ র হত য র উপজ ল এনস প ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
পুতিনকে নিয়ে ‘হতাশ’ ট্রাম্পের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও শুক্রবার আবারও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দুই দিনের মধ্যে এটি ছিল দ্বিতীয় বৈঠক। তাঁদের এসব বৈঠকের মূলে রয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। আগের দিন মালয়েশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের সম্মেলনের ফাঁকে লাভরভের সঙ্গে ৫০ মিনিট বৈঠক হয় রুবিওর।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করবেন। কিন্তু চার মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা আগের মতোই দূরের বিষয় বলে মনে হচ্ছে। একই সঙ্গে রাশিয়া সম্প্রতি ইউক্রেনের ওপর ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার দিক থেকে আরও নমনীয়তা না দেখানোয় ট্রাম্প ‘হতাশ ও বিরক্ত’।
তাহলে কি যুদ্ধের ব্যাপারে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে আর এ নিয়ে তাঁর পরবর্তী বিকল্পগুলোই বা কী?
রাশিয়ার বিষয়ে কি ট্রাম্পের অবস্থান বদলেছেএমন সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এসব কথা বললেন, যখন প্রকাশ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা বাড়িয়েছেন ট্রাম্প। এর আগে ইউক্রেন শান্তি চায় না বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘পুতিন আমাদের উদ্দেশে অনেক আজেবাজে কথা বলেছেন। তিনি সব সময় খুব ভালো ব্যবহার করেন, কিন্তু দেখা যায় শেষ পর্যন্ত সেগুলো অর্থহীন।’
গত ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২২ সালে রাশিয়ার সর্বাত্মক হামলার প্রথম মাসগুলোর পর সর্বশেষ মে মাসে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনার আয়োজন করে ওয়াশিংটন।
কিন্তু পুতিন সাময়িক অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিলেও ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। ইউক্রেন অবশ্য এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। রাশিয়ার যুক্তি, ইউক্রেন এই যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে সেনাদের নতুন উদ্যমে মোতায়েন এবং নিজেদের আরও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করতে পারে।
গত সপ্তাহে সাংবাদিকেরা ট্রাম্পের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি পুতিনের প্রতি তাঁর হতাশা থেকে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি না। জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি আপনাদের বলব না। আমরা কি একটু চমক চাই না?’
অবশ্য ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত—এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। লন্ডনভিত্তিক চিন্তন প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের সিনিয়র কনসালটিং ফেলো কিয়ার জাইলস আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে পুতিনের বিষয়ে ট্রাম্পের পরিবর্তনশীল অবস্থান নিয়ে মন্তব্যে ভরা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই, কোনো কিছু একেবারে বদলে গেছে।’
কিয়ার জাইলস বলেন, ‘সারা বিশ্বে আশাবাদের একটি ঢেউ বইছে যে এটি অবশেষে মার্কিন নীতির পরিবর্তন ঘটাতে পারে। কিন্তু এর আগের প্রতিটি ঘটনাতেই এমন কিছু ঘটেনি।’
প্রকৃতপক্ষে রুবিও ও লাভরভের মধ্যে বৃহস্পতিবারের বৈঠকের পর উভয় পক্ষই ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা কূটনৈতিকভাবে যুক্ত থাকতে ইচ্ছুক।
ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহজুলাই মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প প্রশাসন কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ ‘স্থগিত’ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল। এক সপ্তাহ পরে ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। ৮ জুলাই তিনি বলেন, ‘আমরা আরও কিছু অস্ত্র পাঠাতে যাচ্ছি। আমাদের তা করতেই হবে। তাদের (ইউক্রেন) নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হতে হবে। তারা এখন খুব কঠিন হামলার শিকার হচ্ছে।’
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসিকে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, এ অস্ত্রগুলো ন্যাটোর কাছে বিক্রি করা হবে। ন্যাটো এর সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করবে। ন্যাটো এরপর সেগুলো ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তর করবে।
ন্যাটো মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি সামরিক জোট। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা ন্যাটোতে অস্ত্র পাঠাচ্ছি। ন্যাটো সেই অস্ত্রের মূল্য পরিশোধ করছে, শতভাগ মূল্য।’ যুক্তরাষ্ট্র এই জোটকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে বলেও জানান তিনি।
ট্রাম্প বলেন, জুনে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে এই চুক্তি হয়েছিল।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক তিক্ত বৈঠকের পর ট্রাম্প ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সাহায্য পাঠানো স্থগিত করেছিলেন। জেলেনস্কিকে অভিযুক্ত করে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এমন একটি যুদ্ধে ৩৫ হাজার কোটি ডলার খরচ করার জন্য প্ররোচিত করেছেন, যা জেতা সম্ভব নয়।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোটের (আসিয়ান) সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও