ইউক্রেনে আজ রবিবার ব্যাপক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে অন্তত পাঁচজন নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর বিবিসির। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিকটবর্তী পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভকে কেন্দ্র করে লাপাইভকা গ্রামে রাশিয়ার হামলায় একই পরিবারের চারজন নিহত হয়েছেন, নিহতদের মধ্যে একটি ১৫ বছর বয়সী মেয়েও রয়েছে। হামলায় দুই প্রতিবেশী আহত হয়েছেন। 

আরো পড়ুন:

কিয়েভে আবারো ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া: মেয়র

রাশিয়ার দখলে থাকা সব অঞ্চল ফিরে পেতে পারে ইউক্রেন: ট্রাম্প

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনীয় সামরিক ও অবকাঠামোগত লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে একটি ‘ব্যাপক’ হামলা চালিয়েছে।

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের জনগণের বিরুদ্ধে আরো এক দফা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল লভিভ, জাপোরিঝিয়া, চেরনিহিভ, ভিনিতসিয়া, ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক, খেরসন, খারকিভ এবং ওডেসা অঞ্চলগুলো।

তিনি বলেন, রাতভর তার দেশে ৫০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রায় ৫ শতাধিক ড্রোন হামলা করা হয়েছে।

জেলেনস্কি আরো বলেন, “এই আকাশ সন্ত্রাসকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের আরো সুরক্ষা এবং সকল প্রতিরক্ষা চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন, বিশেষ করে আকাশ প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে।”

ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিডেঙ্কো জানিয়েছেন, জাপোরিঝিয়ায় রুশ বাহিনী আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে ড্রোন এবং এরিয়াল বোমা হামলা করলে একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। 

তিনি বলেন, লভিভ কয়েক ঘণ্টা ধরে হামলার শিকার হয়েছে, যার ফলে গণপরিবহন পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে এবং বৈদ্যুতিক সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।

শীতকাল ঘনিয়ে আসায় ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। কিয়েভের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাতভর হামলায় জাপোরিঝিয়া, চেরনিহিভ এবং সুমি অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

জ্বালানি মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে, চেরনিহিভ এবং সুমিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

জাপোরিঝিয়ার আঞ্চলিক গভর্নর ইভান ফেদোরভ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রে রুশ হামলার পর ৭৩ হাজারেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। 

এদিকে, ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনে বিমান হামলা শুরু করার পর রবিবার ভোরে তারা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে।

পোল্যান্ডের অপারেশনাল কমান্ড এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছে, “পোলিশ এবং মিত্র বিমানগুলো আমাদের আকাশসীমায় কাজ করছে, একইসময় স্থলভিত্তিক বিমান প্রতিরক্ষা এবং রাডার রিকনেসান্স সিস্টেমগুলোকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতির স্তরে আনা হয়েছে।”

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের পূর্ব ডনবাস অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নিয়েছে, যার মধ্যে লুহানস্ক এবং দোনেৎস্কও রয়েছে।

রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে ক্রিমিয়া উপদ্বীপও রয়েছে, যা তারা ২০১৪ সালে নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির বার্তা সংস্থা আরআইএ জানিয়েছে, রাশিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিটগুলো রাতভর ৩২টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে।

ইউক্রেন সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার তেল শোধনাগারগুলো লক্ষ্য করে হামলা বাড়িয়েছে, যার ফলে রাশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চলে পেট্রোলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন ইউক র ন র প র লক ষ য

এছাড়াও পড়ুন:

নীলফামারীতে বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি, রেড অ্যালার্ট

ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

রোববার সকাল ছয়টায় লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ১২ ঘণ্টার ব্যবধানের সন্ধ্যা ছয়টায় সেখানে ৮৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

ওই পয়েন্টে তিস্তা নদীর বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। সকাল ৬টায় প্রবাহিত হচ্ছিল ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার দিয়ে। সন্ধ্যা ছয়টায় সেখানে প্রবাহিত হচ্ছিল ৫২ দশমিক ২৮ মিটার দিয়ে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার ডান তীরের বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানে বাশের পাইলিং করে বালির বস্তা নিক্ষেপ করছে পাউবো।

তিস্তার তীরবর্তী ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম এবং চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, রোববার দুপুরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে, যা অব্যাহত আছে। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের ঝাড় সিংহেরস্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের বোল্ডারের চর, খোকার চর, খাড়াপাড়া, ফ্লাটপাড়াসহ তিস্তাপারের বিভিন্ন চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, দুপুরের পর থেকে তিস্তা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিস্তীর্ণ এলাকার রোপা আমন খেত তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্রমতে, রোববার সকাল ছয়টায় লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি ৫১ দশমিক ৪৩ মিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৪৮ মিটার, দুপুর ১২টায় ৫২ মিটার, বেলা তিনটায় ৫২ দশমিক ১৪ মিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৫২ দশমিক দশমিক ২৮ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল তিস্তা নদীর পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রোববার সকাল ছয়টায় বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যা ৬টায় ৮৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা নদীর জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি কালীগঞ্জ নামের স্থানে তিস্তার ডান তীরের প্রধান বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেটির মেরামতকাজ চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪ টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তিনি জানান, তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে সন্ধ্যায় মাইকিং করা হয়েছে। রাত ৮টার দিকে পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ