Prothomalo:
2025-12-11@14:54:58 GMT

রুভার জন্মদিনের উপহার

Published: 27th, October 2025 GMT

মুক্তমনের বাড়িতে আজ উৎসবের আমেজ। ঘরের দেয়ালে রঙিন কারুকাজ, টেবিলে সুগন্ধি ফুল আর মেঝেতে বিচিত্র আলপনা। সারা বাড়িতে বন্ধু ও অতিথিরা হাসিমুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

আজ মুক্তমনের জন্মদিন। ঘরে হরেক রকম খাবার। পোলাও, কোরমা, মিষ্টি ও পিঠার গন্ধে ঘর ম ম করছে। কিন্তু মুক্তমনের মন ভালো নেই।

জন্মদিনে ওর বাবাটা পড়ে আছেন বাংলাদেশে। তিনি বাংলাদেশেই থাকেন। এক মাস পরপর কলকাতায় আসেন।

মা বললেন, ‘মন খারাপ কোরো না, সোনা। তোমার বাবা এবার আসতে পারল না। আগামী জন্মদিনে নিশ্চয়ই আসবে।’

মুক্তমনের মন তবু ভালো হয় না। সে মাকে খুব ভালোবাসে। বাবাকে ভালোবাসে আরও বেশি। বাবাকে তো ইচ্ছে হলেই সে দেখতে পায় না। কাছেও পায় না।

মেয়ের যেকোনো আনন্দে মা–বাবা আনন্দিত হন। সে একটু দুঃখ পেলে বা অসুস্থ হলে তাঁদের মন আনচান করে ওঠে। রাতে ঘুমাতে পারেন না। কেননা মুক্তমন তাঁদের সব আবেগ ও ভালোবাসার নাম।

মুক্তমন জানে, বাবা পৃথিবীর যেখানেই থাকুক, জন্মদিনে কলকাতায় ঠিকই ছুটে আসবেন।

সারা দিন সে ফোন করবে, ‘বাবা, তোমার আর কতক্ষণ লাগবে পৌঁছুতে?’

বাবা বলবেন, ‘এই তো, আসছি। তোমার জন্য কী গিফট আনব, মা?’

মুক্তমনের মা–বাবা দুজন পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। বাবা বাংলাদেশের মানুষ। তিনি ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি নিয়ে কলকাতায় পড়তে গিয়েছিলেন। সে অনেক দিন আগের কথা। বাবা নিজে লেখক ও পরিচালক। একবার মুক্তমন বলল, ‘বাবাই, তুমি এক মাস থাকো আর এক মাস আমার কাছে কেন থাকো না?’ বাবা বললেন, ‘আমাকে তো ঢাকা শহরে চাকরি করতে হয়, মা।’

মুক্তমন বলবে, ‘তুমি আমার কাছে এসো, তুমি এলে সেটাই আমার বেস্ট গিফট হবে, বাবা।’

বাবা এসে ঘরে ঢুকতেই মেয়ে তাঁর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

মুক্তমনের মা–বাবা দুজন পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন। বাবা বাংলাদেশের মানুষ। তিনি ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি নিয়ে কলকাতায় পড়তে গিয়েছিলেন। সে অনেক দিন আগের কথা। বাবা নিজে লেখক ও পরিচালক। তাঁর পছন্দের লেখকের নাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। বাবাকে মা প্রথম উপহার দিয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘অর্ধেক জীবন’ বইটি।

মন খারাপ হলে, বাবার কথা মনে পড়লে মুক্তমন বইটা ছুঁয়ে দেখে। সে ভাবে, বাবা ছাড়া তার জীবনও অর্ধেক।

একবার মুক্তমন বলল, ‘বাবাই, তুমি এক মাস থাকো আর এক মাস আমার কাছে কেন থাকো না?’

বাবা বললেন, ‘আমাকে তো ঢাকা শহরে চাকরি করতে হয়, মা।’

‘চাকরি? আমি টাকা জমাচ্ছি। তোমাকে আমি টাকা দেব, তুমি আমার চাকরি করবে।’

বাবা অবাক হলেন, ‘কী চাকরি করব তোমার?’

মুক্তমনের দাদু বাড়িওয়ালা, তিনি বাড়িভাড়া থেকে প্রতি মাসে তাকে কিছু টাকা দেন।

মুক্তমন বলল, ‘কী চাকরি? তুমি আমার সঙ্গে খেলবে, গল্প করবে। আমি যখন পড়ব, তুমি পাশে বসে থাকবে। এটাই তোমার চাকরি।’

বাবা বললেন, ‘ঠিক আছে, ভেবে দেখব।’

‘না, ভেবে দেখা যাবে না। তুমি কাছে থাকলে আমার খুব ভালো লাগে। তুমি যখন থাকো না, তখন খুব মন খারাপ হয়।’

এটা সত্যি, মুক্তমনের বাবা বেশির ভাগ সময় মেয়ের কাছে থাকতে পারেন না। বাবার অবর্তমানে মা তখন একা দুর্গার মতো দশ হাত দিয়ে সবকিছু সামলে নেন।

মা একটা স্কুলে পড়ান। তিনিও মন ভরে মেয়েকে সময় দিতে পারেন না।

মেয়ের জন্মদিনে থাকতে না পেরে বাবারও মন ভালো নেই। বাবা তাকে বুঝিয়ে বলেছেন, ভিসা জটিলতায় তিনি আটকে গেছেন।

মেয়ের মন কি এতে শান্ত হয়? সে সারা দিন ফোন করেছে, ‘বাবা, তুমি সত্যি আসবে না?’

বাবা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। তাঁর বুকটা ভেঙে যায়।

মুক্তমন একটু আগে ফোন করে বলল, ‘বাবাই, আজ আমার জন্মদিন, তুমি আসবে না?’

বাবা বললেন, ‘ছুটি পাইনি মা, এবার তো আসতে পারছি না।’

মেয়ে অভিমানী গলায় বলল, ‘এক দিনের জন্য এলে কী হয়?’

‘কিন্তু আমাকে যে ছুটি দেয়নি।’

‘কে তোমাকে ছুটি দেয়নি? তাকে ফোনটা দাও তো।’

‘কেন?’

‘বকে দেব।’

‘আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি, মা। পরে কথা বলব, কেমন।’

বাবা ফোন কেটে দিলেন।

মুক্তমনদের বাড়িটা দমদম রেলস্টেশনের কাছেই। হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন থামলে মনে হয়, ওই বুঝি বাবা এলেন। সে একবার জানালার ওপাশে উঁকি দিল। দাদু বললেন, ‘এসো ভাই, আমরা কেক কাটি।’ মুক্তমন সাড়া দিল না। মা ডাকলেন, ‘মুক্তমন, এসো।’ মুক্তমন তবু চুপ করে বসে থাকল। হঠাৎ কলবেল বেজে উঠল। ঘরে এত অতিথি, বসার আর জায়গা নেই। কে এল এই অসময়ে?

সন্ধ্যা হয়ে গেল। একটু পরই জন্মদিনের কেক কাটা হবে। বাড়িতে অতিথি ও ছেলেমেয়েরা হইহই করছে। মুক্তমনের মুখটা ভার। সে গালে হাত দিয়ে বিছানায় বসে আছে।

মুক্তমনদের বাড়িটা দমদম রেলস্টেশনের কাছেই। হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন থামলে মনে হয়, ওই বুঝি বাবা এলেন। সে একবার জানালার ওপাশে উঁকি দিল।

দাদু বললেন, ‘এসো ভাই, আমরা কেক কাটি।’

মুক্তমন সাড়া দিল না।

মা ডাকলেন, ‘মুক্তমন, এসো।’

মুক্তমন তবু চুপ করে বসে থাকল।

হঠাৎ কলবেল বেজে উঠল। ঘরে এত অতিথি, বসার আর জায়গা নেই। কে এল এই অসময়ে?

দাদু দরজা খুলেই আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন, ‘দাদুভাই, দেখে যাও, কে এসেছে।’

শুকনো মুখে তাকাল মুক্তমন। আন্দাজ করতে চাইল, কে? পারল না।

দরজা খুলেই কেউ বলল, ‘মামণি, তুমি কোথায়?’

ঝড়ের বেগে মুক্তমন ঘর থেকে বেরিয়ে এল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সিনেমার ভঙ্গিতে সে ঝাঁপিয়ে পড়ল মানুষটার বুকে।

কে সেই মানুষ?

মানুষটা তার খুব প্রিয়। সে আর কেউ নয়, মুক্তমনের বাবা।

বাবা বললেন, ‘শুভ জন্মদিন, মামণি!’

মুক্তমনের চোখ ভিজে গেল। আনন্দে সে কিছুক্ষণ কোনো কথাই বলতে পারল না।

বাবাটা এত ভালো, এত বোকা, এত মিষ্টি, এত আপন! মুক্তমনের জন্য বাবা এমন সুন্দর ও অদ্ভুত সারপ্রাইজ জমা করে রেখেছিল, সে কল্পনাও করতে পারেনি।

কিছুক্ষণ পর মুক্তমন দেখল, বাবার পেছন পেছন এক বয়স্ক লোক ঢুকছেন। পাঞ্জাবি পরা লোকটার মাথায় সাদা চুল। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। পেটটা বেশ বড়। মুখে দুষ্টুমি হাসি ঝুলে আছে। কে এই লোক?

‘সমরেশদা, আসুন। বসুন প্লিজ।’

বাবা লোকটাকে দাদা বলছে দেখে মুক্তমন অবাক হলো। সে ভালো করে তাঁকে দেখল।

বইয়ের আলমারির সামনে দুটো হাতলওয়ালা চেয়ার। একটাতে হেলান দিয়ে লোকটি বসলেন। চারপাশে তাকালেন। মুক্তমনের বন্ধু ও অতিথিরা সবাই চুপ হয়ে গেল।

মা এসে হাসিমুখে দাঁড়ালেন। দুজন বয়স্ক মহিলা এগিয়ে এসে বললেন, ‘দাদা, আপনার লেখা পড়ি। খুব ভালো লাগে। “সাতকাহন” পড়ে কতবার যে কেঁদেছি।’

পাঠকের এমন প্রতিক্রিয়ায় আসলে বলার কিছু থাকে না। সমরেশ মৃদুভঙ্গিতে হেসে দুহাত জোড় করে মাথা নোয়ালেন।

লোকটা বয়স্ক হলে কী হবে, মুক্তমন খেয়াল করল, কেমন ছোটমানুষের মতো করে সে হাসল। হাসিটা সুন্দর।

জন্মদিনের কেক কাটার আয়োজন একটু পিছিয়ে গেল।

লোকটি আদুরে গলায় বললেন, ‘এই যে লিটল মিস দত্ত, তোমাকে একটা কথা বলতে পারি, প্লিজ?’

মুক্তমন ফিক করে হেসে ফেলল, ‘ইয়েস, বলো।’

‘আমি কি একটা সিগারেট খেতে পারি?’

মুক্তমন ঠোঁট উল্টে অদ্ভুতভাবে তাকাল। বলল, ‘নো, ডিয়ার। সিগারেটের গন্ধ আমার একদম সহ্য হয় না। ব্যাড স্মেল হয়। সরি।’

সেই মুহূর্তে বাবা এলেন। মেয়ের পাশে বসে বললেন, ‘মুক্ত মা, ইনি হচ্ছেন সমরেশ মজুমদার। তিনি অনেক বড় লেখক। ওই যে তুমি চা–বাগানের একটা মেয়ের গল্প পড়েছিলে, বইটা তিনি লিখেছেন।’

মুক্তমন সহজ হয়ে এল।

বাবা বললেন, ‘তোমাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন। উনি তোমার এবারের জন্মদিনের সারপ্রাইজ।’

মুক্তমন খুশি হলো আর মিষ্টি করে হাসল।

সমরেশ মজুমদার বললেন, ‘ওকে ডিয়ার’; বলেই চেয়ার ছেড়ে দোতলার ব্যালকনিতে চলে গেলেন।

ধূমপান শেষ করে তিনি ঘরে ফিরে এলেন।

মুক্তমন বলল, ‘এই যে বুড়ো লেখক, শোনো.

..’

সমরেশ পাশ ফিরে তাকালেন, ‘হ্যাঁ, বলো।’

মুক্তমন মুখটা হাসি হাসি করে বলল, ‘আচ্ছা, তোমার পেটটা এত বড় কেন?’

সমরেশ মজুমদার অবাক। মেয়েটা বলে কী?

একটু সামলে নিয়ে তিনি বললেন, ‘এমন বড় পেট সবার থাকে না। যাদের থাকে, তারা ভাগ্যবান।’

মুক্তমন ভেংচি কেটে বলল, ‘ভাগ্যবান! কীভাবে?’

সমরেশ বললেন, ‘আমি কী করি, বলো তো?’

‘তুমি তো একজন লেখক। স্টোরি ও নভেল লেখো।’

‘এই তো বুঝতে পেরেছ। আমার পেটে অনেক লেখা আছে। সেই লেখা বই হয়ে বেরোবে। ধীরে ধীরে লেখা পেটে জমা হচ্ছে।’

মুক্তমন ঠোঁটে অদ্ভুত ভঙ্গি করে তাকাল। চোখ সরু করে বলল, ‘আমার বাবাও একজন লেখক। তার পেট তো এমন বড় নয়।’

সমরেশ বললেন, ‘ওর পেটে লেখা এখনো জমা হয়নি। সে জন্য ছোট।’

‘তুমি কি আমার বাবার নাম জানো?’

‘হুম, জানি।’

‘কিন্তু...’

‘কিন্তু কী?’

‘বাবা তো বলেছে, লেখার ভাবনা ও কল্পনা সব মাথায় থাকে। ধীরে ধীরে কলম বেয়ে খাতায় নেমে আসে।’

‘তোমার বাবা ঠিকই বলেছে। পেট থেকে লেখাগুলো মাথায় বদলি হয়ে যায়। সেখান থেকে কলম বেয়ে কাগজে নেমে আসে।’

‘যাও, তুমি ভারি দুষ্টু। বানিয়ে বানিয়ে আমাকে মিথ্যে গল্প বলছ।’

মুক্তমনের কথা শুনে সমরেশ মজুমদার হা হা করে হাসতে লাগলেন। হাসির দাপটে তার বড় পেটটা কাঁপতে লাগল।

মুক্তমন বলল, ‘উরি মা, তোমার পেটটা কী রকম কাঁপছে, দেখেছ?’

সমরেশ চোখেমুখে দুষ্টুমি ফুটিয়ে বললেন, ‘লেখাগুলোর এখন পেট থেকে মাথায় রওনা দেওয়ার সময় হয়েছে। সে কারণে কাঁপছে।’

মুক্তমন সন্দেহের চোখে লেখক সমরেশ মজুমদারের দিকে তাকিয়ে রইল।

মা এসে হাসিমুখে দাঁড়ালেন। দুজন বয়স্ক মহিলা এগিয়ে এসে বললেন, ‘দাদা, আপনার লেখা পড়ি। খুব ভালো লাগে। “সাতকাহন” পড়ে কতবার যে কেঁদেছি।’ পাঠকের এমন প্রতিক্রিয়ায় আসলে বলার কিছু থাকে না। সমরেশ মৃদুভঙ্গিতে হেসে দুহাত জোড় করে মাথা নোয়ালেন। লোকটা বয়স্ক হলে কী হবে, মুক্তমন খেয়াল করল, কেমন ছোটমানুষের মতো করে সে হাসল। হাসিটা সুন্দর।

বাবা ঘরে গিয়েছিলেন। বেরিয়ে এসে দেখলেন, মুক্তমনের মুখটা কেমন থমথমে। তিনি হাসিমুখে মেয়ের মাথায় হাত রেখে চেয়ারে বসলেন। বললেন, ‘কী হয়েছে, মা?’

মুক্তমন বলল, ‘এই লোকটা, উনি কি সত্যি একজন লেখক?’

বাবা হা হা করে হাসতে লাগলেন।

মুক্তমন বলল, ‘এত হেসো না। বেশি হাসি ভালো নয়।’

বাবা হাসি থামিয়ে বললেন, ‘হ্যাঁ মা, তিনি অনেক বড় লেখক।’

মুক্তমন বলল, ‘লেখকটা ভারি দুষ্টু। আর খুব মিথ্যে কথা বলে।’

বাবা বললেন, ‘তুমি কী করে বুঝলে?’

মুক্তমন আড়চোখে সমরেশ মজুমদারের পেটের দিকে তাকাল। বলল, ‘দেখো বাবা, ওনার পেটটা কত বড়!’

বাবা লজ্জা পেয়ে ফিক করে হেসে ফেললেন।

মুক্তমন বলল, ‘তিনি বলছেন, তাঁর পেটের ভেতরে নাকি অনেক লেখা জমা আছে। সে জন্য পেটটা এত বড়। সেই লেখা পেট থেকে ধীরে ধীরে মাথায় চলে যাবে। মাথা থেকে কল্পলোকে। সেখান থেকে কলম বেয়ে খাতায় নেমে আসবে। এটা কি সত্যি, বাবা?’

মেয়ের কথা শুনে বাবা হা হা করে হাসতে লাগলেন। হাসতে হাসতে তিনি চেয়ার থেকে নিচে পড়ে গেলেন। পড়ে গিয়ে আরও জোরে হাসতে লাগলেন।

মুক্তমনের মা ভেতর থেকে ছুটে এলেন। বললেন, ‘এই, তুমি নিচে পড়ে গেলে কীভাবে?’

মা ও বাবাকে দেখে মুক্তমন মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসতে লাগল।

কিছুক্ষণ পর একটা কাজে বাবা ঘরের ভেতরে চলে গেলেন। আর মা চা-নাশতা নিয়ে এসে ছোট টেবিলে রাখলেন।

শিউলি ফুল আঁকা একটা কাপ এগিয়ে দিয়ে মা বললেন, ‘মামণি, এটা তোমার চা।’

চা খুব পছন্দ মুক্তমনের। সে মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘থ্যাংক ইউ, মম।’

একটু পরে মা ঘর থেকে সমরেশ মজুমদারের একটা বই এনে বললেন, ‘দাদা, একটা অটোগ্রাফ দাও।’

চায়ের কাপ রেখে লেখক কী যেন লিখে দিলেন। মা বইটা হাতে নিয়ে চলে যেতেই সমরেশ পিরিচ থেকে কাটা পেয়ারা তুলে মুখে দিলেন। চিবুতে চিবুতে বললেন, ‘এই যে মিষ্টি মেয়ে, এতক্ষণ তোমার সঙ্গে কথা বলছি, কিন্তু তোমার নামটা তো জানা হলো না।’

‘আমার নাম মুক্তমন।’

‘মুক্তমন? এটা কোনো নাম হলো? তেমন ভালো লাগছে না।’

মুক্তমন রাগী চোখে তাকাল। ওর ফরসা সুন্দর মুখটা লাল হয়ে উঠল।

সমরেশ হাসতে গিয়েও সামলে নিলেন। চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, ‘তোমার নামটা সুন্দর। তবে অদ্ভুত। এমন নাম আমি কখনো শুনিনি।’

মুক্তমন একটু হাসল, ‘আমার এই নামের পেছনে একটা গল্প আছে।’

‘কী গল্প?’

‘আমার নামটা কে রেখেছে, জানো?’

‘কে?’

‘আমার বাবা রেখেছেন। বাবা ঈশ্বরের কাছে চেয়েছেন, তাঁর মেয়ের মনটা যেন বড় আর উদার হয়, মানবিক মানুষ হয়।’

সমরেশ খুশির গলায় বললেন, ‘বাহ। এ তো খুব সুন্দর প্রার্থনা।’

‘এই শোনো, তোমার লেখা অনেক গল্প আমি পড়েছি। খালি দুষ্টু দুষ্টু কথা।’

সমরেশ মজুমদার অবাক, ‘দুষ্টু কথা?’

‘নয় তো কী? ছোটদের এত সাহস কি ভালো?’

মুক্তমন গল্পের বই পড়তে ভালোবাসে। তবে শুনতে বেশি পছন্দ করে। বাবার কাছে সমরেশ মজুমদারের লেখা গল্প শুনে সে খুব আনন্দ পেয়েছিল। ডুয়ার্সের চা–বাগানের দুষ্টু শেয়ালের গল্প।

সমরেশকে সে কথা বলতেই তিনি শেয়ালের মতো ‘হুক্কা হুয়া হু হু’ ডেকে উঠলেন।

মুক্তমন ঝরনার মতো কলকল করে হেসে উঠল।

মা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। বললেন, ‘কী হয়েছে, মুক্তমন?’

সমরেশ বললেন, ‘শেয়ালকে নিয়ে লেখা আমার গল্প তোমার মেয়ে খুব পছন্দ করেছে। আমি শেয়ালের ডাক ডেকেছি, অমনি সে হেসে উঠেছে।’

সমরেশের কথায় মা হেসে ফেললেন।

মুক্তমন বলল, ‘জানো, আমার আরও একটি নাম আছে।’

‘কী নাম?’

‘রুভা।’

‘রুভা তোমারই নাম?’

‘হুম। কিন্তু তুমি খুব অবাক হচ্ছ যে?’

‘অবাক হচ্ছি, কারণ তুমি তো আমার চেয়েও বিখ্যাত।’

মুক্তমন অবাক। ‘কীভাবে?’

‘তোমার বাবা যে সিনেমা বানায়, রুভা মুভিজ থেকে সেই সিনেমা পরিবেশিত হয়। যতদূর মনে পড়ছে “অনুপ্রবেশ” নামে একটি ফিল্ম বানিয়েছিল, সেখানে অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।’

‘সৌমিত্র? ওই যে লম্বা করে বুড়ো লোকটা?’

‘বুড়ো লোক? হা হা হা। বুড়ো হলেও তিনি খুবই আধুনিক। আর স্মার্ট। কী সুন্দর করে কথা বলেন। এমন লোক কখনো বুড়ো হয় না।’

‘তাই বুঝি?’

সমরেশ বললেন, ‘হ্যাঁ। তুমিও তো বিখ্যাত মেয়ে।’

‘বিখ্যাত মানে কী?’

সমরেশ মাথা চুলকে বললেন, ‘বিখ্যাত মানে, ধরো সুন্দর একটা কাজ বা কোনো গুণের কারণে বহু মানুষ তাকে চেনে।’

রুভা ঠোঁট টিপে হাসল।

সমরেশ মজুমদার হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। পেছনে রাখা হাত দুটো বের করে বললেন, ‘শুভ জন্মদিন, রুভা সোনা।’

মুক্তমন বলল, ‘থ্যাংক ইউ।’

‘এই নাও, তোমার জন্মদিনের উপহার।’

মুক্তমন চেয়ার থেকে জলদি করে নামল। তার চোখেমুখে আনন্দ উপচে পড়ছে। সে ঠোঁট টিপে আড়চোখে তাকাল। দেখল, লেখক কয়েকটি লাল গোলাপ, চকলেট ও আইসক্রিম ধরে আছেন।

লজ্জায় সে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারল না।

লেখকেরা কি মনের কথা পড়তে পারেন? তিনি মুক্তমনের মাথায় হাত রেখে বললেন, ‘আশীর্বাদ করি, তুমি অনেক বড় হও।’

‘থ্যাংক ইউ গুড বয়। না না, গুড বুড়ো।’

‘আমি বুড়ো হয়ে গেছি? মাথার চুল পাকলেই কি লোকে বুড়ো হয়?’

‘হয় না? ঠিক আছে, তুমি বুড়ো নও। ইউ আর আ গুড বয়।’

ডোরবেল বেজে উঠল।

সমরেশ মজুমদার পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে সময় দেখলেন। বললেন, ‘একটা জরুরি কাজ আছে। আমাকে এখন উঠতে হবে।’

মুক্তমন আদুরে গলায় বলল, ‘জন্মদিনের কেক না কেটে তুমি কিছুতেই যেতে পারবে না।’

মা ও বাবা একসঙ্গে বসার ঘরে ঢুকলেন। মেয়ের মুখটা ভার দেখে বললেন, ‘কী হয়েছে?’

‘মা দেখো, কেক না কেটেই বুড়োটা চলে যাচ্ছে।’

মেয়ের কথায় মা–বাবা দুজনই হেসে উঠলেন।

মা বললেন, ‘এই, সবাই এসো। এখনই জন্মদিনের কেক কাটা হবে।’

মুক্তমন, সমরেশ মজুমদার ও অতিথিরা গোল হয়ে দাঁড়াল। কেকের ওপর মোমবাতি ও রঙিন আলো জ্বলে উঠল। সবাই সুর করে একসঙ্গে গাইল—

‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ...’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সমর শ বলল ন ল ন ম ক তমন ম ক তমন র ব ম ক তমন র ম ম ক তমন স কলক ত য় সমর শ ম স ন দর এক ম স আম র ব ল গল ন বয়স ক একব র ন বলল র একট আনন দ ন একট

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজার বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন লাইটিং জেটি উচ্ছেদের সুপারিশ বিআইডব্লিউটিএর

কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সমুদ্রবক্ষে নির্মাণাধীন লাইটিং জেটিসহ অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) গঠিত তদন্ত কমিটি।

গতকাল বুধবার নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব বরাবর পাঠানো তদন্ত প্রতিবেদন লাইটিং জেটি উচ্ছেদসহ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান আরিফ আহমেদ মোস্তফা। প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মকর্তা।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কক্সবাজার বিমান বন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের আওতায় মহেশখালী চ্যানেলের অভ্যন্তরে জেটি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। তাতে নৌ চ্যানেলের ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির পরিমাণ ৪ কোটি ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩০ টাকা। তদন্ত কমিটি সম্প্রতি সরেজমিন অনুসন্ধান করে এই ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে। ক্ষতির এই টাকা আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণের কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

 প্রতিবেদনে চারটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো, মহেশখালী সাগর চ্যানেলে পাইলিং করে বিমান অবতরণে সহায়ক কাঠামো (লাইটিং জেটি) অপসারণের জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) চিঠি দেওয়া। মহেশখালী চ্যানেলে রানওয়ে সম্প্রসারণের ফলে চ্যানেল ও সংলগ্ন নৌপথে ভবিষ্যতে কী প্রভাব পড়বে—তার জন্য বেবিচকের অর্থায়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমীক্ষা করা, বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজে মালামাল পরিবহনের জন্য ভূমি ব্যবহার, অস্থায়ী জেটি নির্মাণ ইত্যাদি বাবদ বেবিচক হতে বিআইডব্লিউটিএর অনুকূলে ৪ কোটি ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩০ টাকা বকেয়া রাজস্ব আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ এবং মহেশখালী চ্যানেল রক্ষার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ইউনুস ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি টাকায় রানওয়েসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। উচ্ছেদ করতে হলে সরকার করবে। আর ক্ষতিপূরণের টাকাও দেবে সরকার। সে ক্ষেত্রে তাঁর করার কিছু নেই।

ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে সমুদ্রের তলদেশ ভরাট করে  ১ হাজার ৭০০ ফুট লম্বা রানওয়ে নির্মাণ হয়েছে। এখন রানওয়ের শেষপ্রান্তে (মহেশখালী সাগর চ্যানেলে) আরও এক কিলোমিটার ‘লাইট ব্রিজ’ জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। বাতি দেখে রানওয়েতে বিমানের উড্ডয়ন-অবতরণ ঘটবে। বর্তমানে রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের ৮৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিরক্ষা বাঁধ, সীমানাপ্রাচীরসহ অবশিষ্ট কাজ শেষ করতে আরও ১৫-২০ দিন সময় লাগতে পারে।

বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঝিনুক আকৃতির দৃষ্টিনন্দন আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ২৭৭ কোটি টাকা। গত ১২ অক্টোবর কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ১২ দিনে মাথায় সেই ঘোষণা বাতিল করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ