দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি নিয়ে যাঁরা একটু খোঁজখবর রাখেন, তাঁরা অনেকেই জানেন, এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে একধরনের ঝড়। সেটির মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো কাবুল। তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সম্প্রতি (১০-১৬ অক্টোবর) নয়াদিল্লি সফর নিয়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তব অবস্থা এটিই।

এ সফরের সর্বশেষ খবর হলো কাবুলে ২১ অক্টোবর থেকে ভারত তার দূতাবাস পুনরায় খুলে দিয়েছে। চার বছর ধরে ভারতের এই দূতাবাস বন্ধ ছিল। ব্রিটিশ কূটনীতিক লর্ড পামারস্টনের একটি উক্তি আজ দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তব রাজনীতিতে যেন নতুন করে প্রাসঙ্গিক। তাঁর মতে, ‘রাজনীতিতে কোনো স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু নেই, আছে কেবল স্থায়ী স্বার্থ।’

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের মধ্যকার সম্পর্কের উষ্ণতা এ অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

যে তালেবানকে একসময় ভারত ‘চরমপন্থী গোষ্ঠী’ হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর সমালোচনা করেছিল, আজ সেই সরকারের সঙ্গেই নয়াদিল্লি নতুন সেতুবন্ধের পথে হাঁটছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন এই হঠাৎ উষ্ণতা? আর এই কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতা কি টেকসই হবে?

২.

ভারত ও আফগানিস্তানের সম্পর্কের শিকড় বেশ পুরোনো। প্রাচীনকাল থেকে কাবুল, কান্দাহার ও হেরাতের সঙ্গে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল নিবিড়। মোগল সাম্রাজ্যের উত্থানেও আফগান বংশীয় শাসকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কাবুল ও নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্ক ছিল সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ। সোভিয়েত দখলের সময়েও ভারত ছিল আফগান সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র। সংসদ ভবন নির্মাণ, সড়ক প্রকল্প, হাসপাতাল, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ অবকাঠামো—প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্পে ভারতের সম্পৃক্ততা ছিল বিশাল।

তবে ১৯৯৬ সালে তালেবান প্রথমবার ক্ষমতায় এলে সেই সম্পর্কের পুরো চিত্র পাল্টে যায়। কট্টর ইসলামি ব্যাখ্যা, নারীর অধিকারবিরোধী নীতি ও পাকিস্তানঘেঁষা কূটনীতি ভারতকে দূরে সরিয়ে দেয়। বিশেষত ১৯৯৯ সালের ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনস অপহরণকাণ্ডে তালেবানের ভূমিকা ভারতীয় জনমনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুনআমরা ভারতের হয়ে পাকিস্তানের আর পাকিস্তানের হয়ে ভারতের পক্ষে লড়ব না২৬ অক্টোবর ২০২৫৩.

২০২১ সালে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করলে তালেবান পুনরায় কাবুল দখল করে। বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে, আর ভারত তাৎক্ষণিকভাবে দূতাবাস বন্ধ করে নিজ নাগরিকদের সরিয়ে নেয়।

তবে কূটনীতিতে শূন্যতা কখনো স্থায়ী হয় না। সময়ের সঙ্গে দেখা যায়, তালেবান তাদের শাসনকে তুলনামূলকভাবে ‘বাস্তববাদী’ রূপে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তারা উপলব্ধি করেছে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বিদেশি বিনিয়োগ ছাড়া দেশ পরিচালনা সম্ভব নয়। ফলে ধীরে ধীরে ভারতের মতো দেশগুলোকেও কৌশলগতভাবে কাছে টানতে শুরু করে তারা।

চীন, রাশিয়া, ইরান, কাতার, তুর্কমেনিস্তান—এসব দেশই তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এ অবস্থায় ভারতও বুঝেছে, আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য ঠিক হবে না।

ভারতের সাবেক কূটনীতিক শান্তনু মুখার্জি বলেছেন, ‘তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক কেবল কৌশলগত নয়, নৈতিক পরীক্ষাও বটে। ভারত যদি তার মূল্যবোধ হারায়, তবে সে নিজের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিও হারাবে।’৪.

ভারতের এই কৌশলগত পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে পাকিস্তান। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর ইসলামাবাদ ভেবেছিল, আফগানিস্তান তাদের ‘কৌশলগত গভীরতা’ হিসেবেই থাকবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টোটা।

ডুরান্ড লাইন নিয়ে সীমান্ত সংঘর্ষ, বাণিজ্যপথ বন্ধ, এমনকি কূটনৈতিক বিবাদ—সবই বেড়েছে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির প্রকাশ্যে তালেবানকে ‘সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়দাতা’ আখ্যা দিয়েছেন। তালেবানও পাল্টা সুরে ইসলামাবাদকে ‘অন্য দেশের এজেন্ট’ বলে অভিহিত করেছে।

এ অবস্থায় নয়াদিল্লি বুঝে নিয়েছে, ইসলামাবাদ-কাবুল দূরত্ব ভারতের জন্য এক নতুন কৌশলগত জানালা খুলে দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রভাব সীমিত হলে ভারতের প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা বাড়বে।

আরও পড়ুনপাকিস্তান-আফগান উত্তেজনায় ডুরান্ড লাইন কেন আলোচনায়২৩ অক্টোবর ২০২৫৫.

তালেবান নেতৃত্বের অনেকেই দক্ষিণ এশিয়ার দেওবন্দি ধারার অনুসারী। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে বহু আফগান আলেম শিক্ষা নিয়েছেন। দেওবন্দি মতবাদই তালেবানের আদর্শিক ভিত্তি হিসেবে পরিচিত। এই ঐতিহাসিক ধর্মীয় সেতুবন্ধ এখন ভারতের জন্য এক নরম কূটনীতির (সফট ডিপ্লোমেসি) সুযোগ তৈরি করছে।

যদিও ভারতের নীতিগত আদর্শ গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা, তবু বাস্তবতা বলছে, ‘ধর্মীয় আত্মীয়তার রাজনীতি’ও এখন কার্যকর হাতিয়ার।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন ক টন ত ক ক শলগত র জন ত ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ইমরানের পতন ও আসিম মুনিরের উত্থানে ভারতের জন্য যে বিপদ ডেকে আনছে

পাকিস্তান অদ্ভুত থমথমে অবস্থার মধ্যে আছে। ঝড় থেমে যাওয়ার পর যেমন এক ধরনের নীরবতা থাকে, কিন্তু তার মধ্যে আবার নতুন অস্থিরতার গন্ধ থাকে, পাকিস্তানে এখন সে রকম একটি পরিস্থিতি।

পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খান এখন আদিয়ালা জেলে বন্দী। ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির পুরো ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে। শাহবাজ শরিফ নামমাত্র প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

এ অবস্থায় একটি ব্যর্থ গণতন্ত্রের জাহাজ সামনে এগোতে চেষ্টা করছে। ভারতের জন্য (যে দেশ মাত্র কিছুদিন আগে পেহেলগামে এক মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে এবং পরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়েছে) পাকিস্তানের এই অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা দূরের ঘটনা নয়। কারণ এটি দক্ষিণ এশিয়ার নড়বড়ে নিরাপত্তা ভারসাম্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে।

ইমরান খানের পতন পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নাটকীয় ঘটনা। দুর্নীতির মামলায় ইমরানের সাজা এবং তাঁর দলকে ভেঙে দেওয়ার নানা উদ্যোগ—এ সবকিছু দেশটিতে একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

তবু অদ্ভুতভাবে ইমরান এখনো পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতীক। জেলে থাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা কমেনি; বরং তিনি এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রতীক হয়ে উঠেছেন, যেটিকে বহু মানুষ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত বলে মনে করে।

যা বোঝা যাচ্ছে, তাতে আপাতত ইমরানের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নেই। কারণ নির্বাচনী প্রতীক হারিয়ে ইমরানের দল পিটিআই দুর্বল হয়ে পড়েছে। দলীয় কর্মীরা গ্রেপ্তার হয়েছেন। সভা-সমাবেশ বন্ধ। দলটির নেতা-কর্মীদের হয় চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, নয়তো সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠদের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।

ইমরানের দল পিটিআই যতই দমন-পীড়নের শিকার হোক, শহুরে তরুণ ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী; বিশেষ করে পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখাওয়ার তরুণেরা এখনো পিটিআইকেই ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধী’ শক্তি মনে করেন।

ইমরানের দলকে দমন করে রাখার পেছনে রয়েছেন পাকিস্তানের প্রথম ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ আসিম মুনির। দেশটির বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থপতি তিনিই। ইমরানের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান কঠোর। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কঠিন। পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি—সবকিছু একাই নিয়ন্ত্রণ করেন।

পাকিস্তানে বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ক আগে থেকেই সেনাবাহিনীর দিকে ঝুঁকে ছিল। মুনির সেটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকাপোক্ত করেছেন। শাহবাজ শরিফ এমন এক ম্যান্ডেটে সরকার চালাচ্ছেন যা জনগণের উচ্ছ্বাস থেকে নয়; বরং সেনাবাহিনীর কৌশলগত প্রয়োজন থেকে এসেছে। তিনি নির্বাচিত নেতার মুখোশ পরে বাস্তবে সেনাপ্রধানের নির্দেশনায় হাঁটছেন।

মুনির-শাহবাজের এই সমঝোতা কার্যকর হলেও ভেতরে-ভেতরে তা ভীষণ ভঙ্গুর। কারণ পাকিস্তানের অর্থনীতি ঋণে জর্জরিত, আইএমএফের কঠোর শর্তে নিঃশেষ, আর প্রবৃদ্ধি খুবই কম।

বাইরের দিকেও পাকিস্তানের সমস্যা বাড়ছে। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক দ্রুত খারাপ হয়েছে। পাকিস্তানের অভিযোগ, তেহরিক-এ-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-কে তালেবান আশ্রয় দিচ্ছে। টিটিপির হামলাও বেড়েছে। জবাবে পাকিস্তান বিমান হামলা চালিয়েছে, সীমান্ত বন্ধ করেছে এবং লাখো অনথিভুক্ত আফগানকে ফেরত পাঠিয়েছে।

এদিকে ভারত কাবুলের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়েছে। এটিও পাকিস্তানের জন্য এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করছে।

চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপেক) এখনো পাকিস্তান-চীন সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু। তবে চীন এখন অনেক বেশি সতর্ক এবং শর্তসাপেক্ষ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র আবার পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে মূলত সন্ত্রাসবাদবিরোধী সহযোগিতা এবং কৌশলগত কারণ থেকে। ওয়াশিংটনে শাহবাজ ও মুনিরের যৌথ উপস্থিতি থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই সম্পর্ক সহযোগিতামূলক হলেও পুরোপুরি লেনদেননির্ভর। এই পুরো ছবিতে সৌদি আরবও একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে কাজ করছে। বহু বছর ধরে সৌদি আরব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ত্রাতা হিসেবে কাজ করেছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর, অবকাঠামো, মসজিদ, মাদ্রাসা—বহু জায়গায় সৌদির অবদান আছে। এখনো তারা পাকিস্তানকে বিলম্বিত তেল মূল্য পরিশোধ সুবিধা দেয় আর রাজনৈতিক দিক থেকেও পাকিস্তানকে রক্ষা করে।

মুনির ও শাহবাজের জন্য সৌদির সমর্থন অত্যন্ত জরুরি। এটা না থাকলে আইএমএফের সঙ্গে শর্ত আরও কঠিন হতো। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিপজ্জনকভাবে কমে যেত। কিন্তু একই সময়ে সৌদি আরবের ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করে, পাকিস্তান আর আগের মতো সহজে সৌদির বন্ধুত্বের ওপর ভরসা করতে পারে না।

এই বিস্তৃত কূটনৈতিক পরিস্থিতি সরাসরি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলছে। ভারতের কাছে পেহেলগাম হামলাটি ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ সীমা অতিক্রমের ঘটনা। এরপর পাকিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীর ওপর ভারতীয় হামলা, পাকিস্তানের পাল্টা আঘাত এবং তারপর যুদ্ধবিরতি—সব মিলিয়ে এক কঠিন ‘নতুন স্বাভাবিক’ তৈরি হয়েছে। এখন এই অঞ্চলে সীমিত সামরিক সংঘর্ষ, ড্রোন যুদ্ধ, ক্ষেপণাস্ত্রভিত্তিক প্রতিরোধ—সবকিছুই পারমাণবিক হুমকির ছায়ার সঙ্গে পাশাপাশি চলছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ককে স্থিতিশীল রাখতে বহু বছর ধরে যে দুইটি বড় কূটনৈতিক চুক্তি কাজ করত তার একটি হলো সিন্ধু পানিচুক্তি, আরেকটি হলো শিমলা চুক্তি। তবে দুটো চুক্তিই এখন কার্যত অচল বা স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। ফলে আগের মতো কোনো নিয়ম বা কাঠামো নেই যা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়লে তা নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

এখন অঞ্চলটি এমন এক কৌশলগত মুহূর্তে দাঁড়িয়ে, যা গত দুই দশকে দেখা যায়নি। পাকিস্তানের ভেতরের অস্থিরতা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে পররাষ্ট্রনীতি পরিকল্পিত নয়; বরং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া-নির্ভর হয়ে পড়েছে। ভারতের জন্য এর মানে হলো, পাকিস্তান এখন শুধু একটি দুর্বল দেশ নয়, বরং এটি একটি অনিশ্চয়তার দেশ।

আর দক্ষিণ এশিয়ায় সরাসরি শত্রুতা যতটা বিপজ্জনক, অনিশ্চয়তা অনেক সময় তার চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। ভারতের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হলো পাকিস্তানের নানা কথা, প্রচারণা বা হুমকির ভিড় থেকে কোনটি আসল বার্তা—তা ঠিকভাবে বোঝা।

ইসলামাবাদে যেসব রাজনৈতিক নাটক চলে, তার আড়ালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভেতরে যে গভীর পরিবর্তন হচ্ছে, সেটাও আলাদা করে চিনতে হবে। ভারত যদি পাকিস্তানের বিশৃঙ্খলাকে নিজের জন্য সুবিধা মনে করে, সেটা ভুল হবে।

কারণ এমন একটি অনিরাপদ, অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং রাজনৈতিকভাবে চাপে থাকা প্রতিবেশী দেশ যেকোনো সময় হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসতে পারে যা তার বেসামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। সেই সিদ্ধান্তের ফল ভারতকে বড় ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।

ভারতের কাজ পাকিস্তানকে ঠিক করা নয়, বরং নিশ্চিত করা যে, পাকিস্তানের অস্থিরতা যেন ভারতের সীমান্তে সমস্যা না তৈরি করে এবং ভারতের বড় কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলোকে যেন ব্যাহত না করে।

দিল্লিকে এখন নিশ্চিত করতে হবে, ভারত এখন ইন্দো-প্যাসিফিক, উপসাগরীয় অঞ্চল এবং আফগানিস্তানে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, পাকিস্তানের ভেতরের অস্থিরতা যেন সেই বড় কাজগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে।

দিল্লিকে মাথায় রাখতে হবে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ভবিষ্যতে কোনো বড় চুক্তি বা নাটকীয় কূটনৈতিক সাফল্যে বদলে যাবে না। তাই দুই দেশের মধ্যে যে ঝুঁকি আছে, ভারত কত শান্তভাবে এবং বুদ্ধি দিয়ে তা সামলাতে পারে—তা দিয়েই ভারতকে সম্পর্কের প্রকৃতি ঠিক হবে।

নাজিব জং জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে নেওয়া

অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইমরানের পতন ও আসিম মুনিরের উত্থানে ভারতের জন্য যে বিপদ ডেকে আনছে