দশ দিন ধরে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে এটাকে মার্কিন ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ দাবানল বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে এটি ২৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। নিখোঁজ আছেন বেশ কয়েকজন। ধ্বংস হয়ে গেছে ১২ হাজার ৩০০টির বেশি স্থাপনা। নতুন করে শুরু হয়েছে ঝোড়ো বাতাস সান্তা আনা। শুষ্ক এ লু হাওয়ায় আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসে ৬০ বর্গমাইলের বেশি এলাকা ভস্মীভূত হয়ে গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির আকৃতির চেয়েও বড়। 

প্রতি বছরই ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলের ঘটনা ঘটে। তবে এবার দাবানলের ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ অনেকটাই বেশি। গত ৭ জানুয়ারির পর লস অ্যাঞ্জেলেসে সব মিলিয়ে ১২টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে প্যালিসেডস ও ইটন ফায়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত শুধু এ দুই দাবানলই ১২ হাজারের স্থাপনা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বেশি।

ক্যালিফোর্নিয়ার বন ও অগ্নিসুরক্ষা বিভাগের তথ্যমতে, প্যালিসেডস ফায়ার ধনাঢ্যদের বসতি হিসেবে খ্যাত প্যাসিফিক প্যালিসেডসের ওপর দিয়ে গেছে। এটি এরই মধ্যে ৫ হাজার ৩০০টির বেশি বাড়িঘর ধ্বংস করেছে। অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন ওই এলাকার এক লাখের বেশি বাসিন্দা। এ স্থানটি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইটন ফায়ার আলটাডেনা এলাকায় চালাচ্ছে তাণ্ডব। এটি পাঁচ হাজারের বেশি স্থাপনা ধ্বংস করেছে। এরই মধ্যে দেড়শ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এর চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতি হতে পারে– এমনটাও বলছেন কেউ কেউ। 

প্রশ্ন উঠছে কেন এ আগুন নেভানো যাচ্ছে না? ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার কৃষি ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের অধ্যাপক ড্যানিয়েল সুয়াইন মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকায় রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েছে, যা এ ধরনের দুর্যোগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার সিএনএন জানায়, বৈশ্বিক উষ্ণতা এভাবে না বাড়লে হয়তো দাবানল সংঘটিত হতো; কিন্তু এত ভয়াবহ রূপ নিত না। লস অ্যাঞ্জেলেসে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার পেছনেও জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হচ্ছে।

সাত মাস ধরে কোনো বৃষ্টি হয়নি লস অ্যাঞ্জেলেসে। বৃষ্টি কমে যাওয়ায় প্রকৃতি শুষ্ক হয়ে ওঠে; ঘাস ও লতাগুল্ম শুকিয়ে গেছে। এগুলো আগুনকে ধারণ ও দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে। সেই সঙ্গে বইছে সান্তা আনা নামের লু হাওয়া, যা মুহূর্তেই আগুনকে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কখনও কখনও আগুন কুণ্ডলী পাকিয়ে এক স্থান থেকে চলে যাচ্ছে অন্য স্থানে। লস অ্যাঞ্জেলেসে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার (ইউসিএলএ) গবেষকরা বলছেন, গত মে মাস থেকে একেবারেই বৃষ্টি না হওয়া কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তাছাড়া লু হাওয়া সান্তা আনাকেও ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন গবেষকরা। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এবিসি নিউজ জানায়, প্রায় ১০০ মাইল গতিতে প্রবাহিত বাতাসের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় আগুন নেভানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বুধবার থেকে নতুন করে শুরু হয়েছে সান্তা আনা। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। লস অ্যাঞ্জেলেসের দক্ষিণাঞ্চলের ৬০ লাখের বেশি মানুষ আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। সিএনএনের গবেষণায় উঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো শহরের তুলনায় লস অ্যাঞ্জেলেসের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগে কর্মীর সংখ্যা কম। দাবানলের কারণে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বাতাসের মান আরও খারাপের দিকে গেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এ পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন থাকতে পারে।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ ল স বলছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ওয়েস্টিনে ‘টেস্ট অব অ্যারাবিয়া’ উৎসব শুরু

সিটি ব্যাংক পিএলসির সহযোগিতায় দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা আয়োজন করেছে অ্যারাবিয়ান ফুড ফেস্টিভ্যাল ‘টেস্ট অব অ্যারাবিয়া’। ২০ থেকে ৩০ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত গুলশান-২-এ লেভেল-২–এ অবস্থিত হোটেলের সারা দিনের ডাইনিং রেস্টুরেন্ট ‘সিজনাল টেস্টস’-এ অতিথিরা উপভোগ করতে পারবেন আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের আসল স্বাদ, ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্যময় রন্ধনশৈলী।

ফেস্টিভ্যালটির উদ্বোধন হয় ১৯ নভেম্বর দ্য ওয়েস্টিন ঢাকায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওমানের রাষ্ট্রদূত জামিল হাজি আল-বালুশি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লা আলী আলহামুদি এবং ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসির সিইও মো. শাখাওয়াত হোসেন। উপস্থিত ছিলেন সিটি ব্যাংকের হেড অব প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস ইনিশিয়েটিভস নাফিস রাইহান এবং দ্য ওয়েস্টিন ঢাকার জেনারেল ম্যানেজার স্তেফান ম্যাসে। ফেস্টিভ্যালের রিবন কাটিংয়ে অংশ নেন অতিথিবৃন্দ, প্রবাসী শেফ এবং হোটেলের সিনিয়র লিডারশিপ টিমের সদস্যরা। পরে অতিথিদের জন্য স্বাক্ষর খাবারের বিশেষ টেস্টিং সেশন অনুষ্ঠিত হয়।

ইন্টারন্যাশনাল শেফ রিমুন ওবাইদ, শেফ সাঈত দুরসুন, শেফ স্বপন রোজারিও এবং তাঁদের টিমের তত্ত্বাবধানে আয়োজন করা হয়েছে আরব বিশ্বের নানা অঞ্চলের স্বাদে ভরপুর মেনু। ঢাকায় প্রথমবারের মতো অতিথিরা বিশেষ শেফদের প্রস্তুতকৃত উটের মাংসের পদ—হোল লেগ অব ক্যামেল কুজি, ক্যামেল স্ট্যু, নিহারি, পোলাও, তাজিন, সুলতান’স ক্যামেল মাজবুস এবং ক্যামেল মিল্ক উম আলি উপভোগ করার সুযোগ পাবেন। আরও থাকছে ল্যাম্ব কাবসা, চিকেন মান্দি, হোল ফিশ তাজিন, কোফতা কাবাব, মেজেজ প্ল্যাটার, দোনার কাবাব, শাওয়ারমা, বকলাভা, উম আলি ও কুনাফাসহ জনপ্রিয় আরবীয় খাবার ও মিষ্টান্ন। পরিবেশ সাজানো হয়েছে আরবীয় আবহে, সঙ্গে থাকবে লাইভ কুকিং স্টেশন এবং অতিথি আগমনে কমপ্লিমেন্টারি কাহওয়া ও বিশেষ ওয়েলকাম ড্রিংকস।

‘টেস্ট অব অ্যারাবিয়া’ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

সম্পর্কিত নিবন্ধ