কেন নেভানো যাচ্ছে না লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল
Published: 15th, January 2025 GMT
দশ দিন ধরে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে এটাকে মার্কিন ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ দাবানল বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে এটি ২৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। নিখোঁজ আছেন বেশ কয়েকজন। ধ্বংস হয়ে গেছে ১২ হাজার ৩০০টির বেশি স্থাপনা। নতুন করে শুরু হয়েছে ঝোড়ো বাতাস সান্তা আনা। শুষ্ক এ লু হাওয়ায় আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হলেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে লস অ্যাঞ্জেলেসে ৬০ বর্গমাইলের বেশি এলাকা ভস্মীভূত হয়ে গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির আকৃতির চেয়েও বড়।
প্রতি বছরই ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলের ঘটনা ঘটে। তবে এবার দাবানলের ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংসযজ্ঞ অনেকটাই বেশি। গত ৭ জানুয়ারির পর লস অ্যাঞ্জেলেসে সব মিলিয়ে ১২টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে প্যালিসেডস ও ইটন ফায়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত শুধু এ দুই দাবানলই ১২ হাজারের স্থাপনা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বেশি।
ক্যালিফোর্নিয়ার বন ও অগ্নিসুরক্ষা বিভাগের তথ্যমতে, প্যালিসেডস ফায়ার ধনাঢ্যদের বসতি হিসেবে খ্যাত প্যাসিফিক প্যালিসেডসের ওপর দিয়ে গেছে। এটি এরই মধ্যে ৫ হাজার ৩০০টির বেশি বাড়িঘর ধ্বংস করেছে। অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন ওই এলাকার এক লাখের বেশি বাসিন্দা। এ স্থানটি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার পূর্বদিকে ইটন ফায়ার আলটাডেনা এলাকায় চালাচ্ছে তাণ্ডব। এটি পাঁচ হাজারের বেশি স্থাপনা ধ্বংস করেছে। এরই মধ্যে দেড়শ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এর চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতি হতে পারে– এমনটাও বলছেন কেউ কেউ।
প্রশ্ন উঠছে কেন এ আগুন নেভানো যাচ্ছে না? ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার কৃষি ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের অধ্যাপক ড্যানিয়েল সুয়াইন মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকায় রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহারের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েছে, যা এ ধরনের দুর্যোগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার সিএনএন জানায়, বৈশ্বিক উষ্ণতা এভাবে না বাড়লে হয়তো দাবানল সংঘটিত হতো; কিন্তু এত ভয়াবহ রূপ নিত না। লস অ্যাঞ্জেলেসে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার পেছনেও জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করা হচ্ছে।
সাত মাস ধরে কোনো বৃষ্টি হয়নি লস অ্যাঞ্জেলেসে। বৃষ্টি কমে যাওয়ায় প্রকৃতি শুষ্ক হয়ে ওঠে; ঘাস ও লতাগুল্ম শুকিয়ে গেছে। এগুলো আগুনকে ধারণ ও দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে। সেই সঙ্গে বইছে সান্তা আনা নামের লু হাওয়া, যা মুহূর্তেই আগুনকে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কখনও কখনও আগুন কুণ্ডলী পাকিয়ে এক স্থান থেকে চলে যাচ্ছে অন্য স্থানে। লস অ্যাঞ্জেলেসে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার (ইউসিএলএ) গবেষকরা বলছেন, গত মে মাস থেকে একেবারেই বৃষ্টি না হওয়া কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। তাছাড়া লু হাওয়া সান্তা আনাকেও ‘অস্বাভাবিক’ বলছেন গবেষকরা। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এবিসি নিউজ জানায়, প্রায় ১০০ মাইল গতিতে প্রবাহিত বাতাসের মধ্যে অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা আগুন নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় আগুন নেভানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার থেকে নতুন করে শুরু হয়েছে সান্তা আনা। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। লস অ্যাঞ্জেলেসের দক্ষিণাঞ্চলের ৬০ লাখের বেশি মানুষ আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। সিএনএনের গবেষণায় উঠে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো শহরের তুলনায় লস অ্যাঞ্জেলেসের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগে কর্মীর সংখ্যা কম। দাবানলের কারণে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বাতাসের মান আরও খারাপের দিকে গেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এ পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন থাকতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: লস অ য ঞ জ ল স বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মৌসুমের শেষে বাজারে আসে রুমা অধিকারীর বাগানের ভিন্ন জাতের আম, লাভও বেশি
এক একর জমির ওপর করা আমবাগানে গাছ আছে ৩০০টি। তবে কোনোটিই প্রচলিত জাতের নয়। বেশির ভাগ ভিনদেশি। কিং অব চাকাপাত, চ্যাংমাই, ডকমাই, কাটিমন, ব্যানানা, রেড পালমার, শ্রাবণী, হানি ডিউ, ফোর কেজি—এমন বাহারি নামের আম ঝুলছে বাগানের গাছে গাছে।
নীলফামারী জেলা সদরের কুন্দপুকুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া গ্রামে এই বাগান গড়ে তুলেছেন রুমা অধিকারী নামের এক নারী। ইউটিউব দেখে এসব উন্নত জাত সম্পর্কে ধারণা নিয়ে চারা সংগ্রহের মাধ্যমে বাগানটি করেছেন তিনি। আমের পাশাপাশি মাল্টা, ড্রাগন, জাম্বুরা, কমলা ও সুপারির গাছও রয়েছে বাগানে।
এসব জাতের আমগাছে মার্চ মাসে মুকুল আসতে শুরু করে। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পরিপক্ব হয়। দেশি আমের মৌসুমের শেষে এসব আম বাজারজাত হয়। এ কারণে বাজার দরও ভালো পাওয়া যায়। ফলে লাভের অঙ্কটাও একটু বেশি।
গত রোববার বাগান ঘুরে দেখার সময় নিজের গল্প জানালেন রুমা অধিকারী। তিনি ২০০৪ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এর পর থেকে তিনি কৃষিতে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। প্রায় ২০ বছর পর এসে সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি।
২০০৪ সালে নীলফামারী সদর উপজেলার উত্তর বালাপাড়া গ্রামের দুলাল অধিকারীর সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। স্বামী পুলিশের উপপরিদর্শক। রুমার বাবা রমনী মোহন রায়ও ছিলেন পুলিশে। বিয়ের পর স্বামীর চাকরির সুবাদে দীর্ঘ সময় কেটেছে রংপুরে।
এরপর ২০২৩ সালে একাই (রুমা) গ্রামের বাড়িতে ফিরে স্বামীর পৈতৃক এক একর জমিতে রোপণ করেন বিভিন্ন প্রজাতির ৩০০টি আমের চারা। একই জমিতে আমের সঙ্গে রোপণ করেছেন বিখ্যাত দার্জিলিং কমলার চারা। বাগানের চারদিক ঘিরে রয়েছে ড্রাগন, জাম্বুরা, মাল্টা ও সুপারির গাছ। এতে তাঁর খরচ হয়েছে তিন লক্ষাধিক টাকা।
রুমা অধিকারী জানান, ২০২৪ সালে প্রথম আমের ফলন আসে। তাতে আয় হয় দেড় লক্ষাধিক টাকা। এবার ৩০০ গাছে আমের ফলন পেয়েছেন। বাগানে পরিপক্ব আম জাত ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে। তাতে পাঁচ লাখ টাকার ওপরে আয়ের আশা করছেন তিনি। ইতিমধ্যে দুই লক্ষাধিক টাকার আম বিক্রি করেছেন। বাগানটির নাম দিয়েছেন ‘বৃন্দাবন অর্গানিক অ্যাগ্রো ফার্ম’। বাগানে আমের সঙ্গে কমলা, ড্রাগন, মাল্টা ও সুপারির ফল নামলে প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
পরিবেশবান্ধব কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থেকে ভিন্ন জাতের আমের বাগান গড়ে তুলেছেন রুমা অধিকারী। গত রোববার নীলফামারী সদর উপজেলার উত্তর বালাপাড়া গ্রামে