ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বগুড়া স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠনের পক্ষে দুইটি গ্রুপ আলুঘাটি উৎসব করার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের পাল্টাপাল্টি এমন কর্মসূচিকে ঘিরে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী আলু ঘাটি উৎসবকে কেন্দ্র করে এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এক গ্রুপ আগামীকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের দাবি, তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মী। অন্য গ্রুপটি ৮ ফেব্রুয়ারি টিএসসিতে এই উৎসব করবে। তাদেরও দাবি– তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকর্মী। এদিন অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

অভিযোগ উঠেছে, বহিরাগতরা বগুড়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নাম ব্যবহার করে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে আলু ঘাটি উৎসবের নামে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদাবাজি শুরু করেছে।

পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচিকে ঘিরে এরই মধ্যে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একই সংগঠনের নামে আলাদা আলাদা ব্যানার ফেস্টুন এবং পোস্টারও ঝোলানো হয়েছে। একটি ব্যানারে আয়োজক হিসেবে লেখা হয়েছে ‘বগুড়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। এই গ্রুপটি আগামীকাল আয়োজন করবে। অন্যদিকে, আরেক গ্রুপের ব্যানারেও একই নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে নামের নিচে ‘ক্যাম্পাসের নিয়মিত শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত’ লেখা রয়েছে। এই গ্রুপটি ৮ ফেব্রুয়ারি উৎসব করবে। আলাদা আলাদা দুটি কর্মসূচিকে ঘিরে ক্যাম্পাসে বগুড়ার শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। একে অপরের বিরুদ্ধে আলু ঘাটি উৎসব বানচাল করা নিয়ে নানা হুমকি-ধামকিও দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। ছিড়ে ফেলা হয়েছে ব্যানার পোস্টারও।

নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজকদের অভিযোগ, সাবেক শিক্ষার্থীদের গ্রুপটি তাদের প্রচারণার ব্যানার ও পোস্টার ছিড়ে ফেলেছে। একইসঙ্গে তাদের কর্মীদের নানাভাবে হুমকি–ধামকিও দেওয়া হচ্ছে। আয়োজকদের অন্যতম সংগঠক ও ঢাবি ছাত্রদলের যোগাযোগ সম্পাদক জুবায়ের আলী সাবেক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তাদের পোস্টার ব্যানার ছেড়ার অভিযোগ তুলেছেন। একইসঙ্গে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের তাদের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ না করতে ভয়–ভীতি দেখানো হচ্ছে। ঢাবির ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রবিউল এবং সমাজ কল্যাণ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বিল্লালকে ডেকে তাদের এই প্রোগ্রাম থেকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ দেন। অন্যথায় তাদের দেখে নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন তারা।

এ ব্যাপারে জুবায়ের আলী নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের বহিরাগত কিছু শিক্ষার্থী বগুড়ার সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে টিএসসিতে একটি আলু খাটি উৎসব করার ঘোষণা দেন। যেখানে বগুড়ার নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এ কারণেই আমরা নিয়মিত শিক্ষার্থীরা নিজেরা আরেকটা প্রোগ্রামের আয়োজন করি। সেখানে আমাদের কর্মীদের নানাভাবে হুমকি ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আর যারা এসব করছেন তারা ক্যাম্পাসের অনিয়মিত শিক্ষার্থী। আমার প্রশ্ন হল অনিয়মিতরা কোন মতলবে হঠাৎ করে এসে আবার নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে আলু ঘাটি উৎসবের ঘোষণা দেয়। একই সাথে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বগুড়া সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করছেন। তাদের আয়োজকদের দেখলেই বোঝা যায় যে, তারা কারা।  তাদের বেশিরভাগই ক্যাম্পাস থেকে কমপক্ষে ১০ বছর বেড়িয়ে গেছেন। আর ক্যাম্পাসে বগুড়া স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের কোনো কমিটিও নেই। সুতরাং বহিরাগতদের বগুড়য় অ্যাসেসিয়েশনের নাম ব্যবহার করার কারণ কি?

অন্যদিকে, ‘সিনিয়র’ গ্রুপের আয়োজকদের দাবি তারা সবাই মিলেই আলুঘাটি উৎসবটি করছেন। একই সঙ্গে অন্যদের পোস্টার ব্যানার ফেস্টুন ছেড়েননি বলেও দাবি করেন তারা। একইসাথে অন্যদের ভয়-ভীতি দেখানোর বিষয়টিও অস্বীকার করেন তারা। এ বিষয়ে তাদের অন্যতম আয়োজক সফিউল আলম বলেন, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সংগঠনটি স্বৈরাচারের দোসরদের নিয়ন্ত্রণে। তাই আমরা তাদেরটা প্রত্যাখান করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একই সংগঠনের আলাদা প্রোগ্রাম হলেও আমরা উভয়ে উভয়ের প্রোগ্রামে যাবো।

নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা আয়োজন করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম জুবায়ের আলী মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক। জুবায়ের আলী বিশ্বধর্ম তত্ব বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। এছাড়াও রয়েছেন সংস্কৃত বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো.

শিপন মিয়া, অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রবিউল, খাতিজাতুল কুবরা নিশী, সমাজ কল্যাণ বিভাগের মাস্টারের শিক্ষার্থী বিল্লাল হোসেন।

আর সিনিয়রদের পক্ষে অন্যতম আয়োজক সাফিউল আলম ২০০৫-২০০৬ সালের শিক্ষার্থী, তিনি মীরপুরের সাবেক ঝুট ব্যবসায়ী। আরেক আয়োজক ছাত্রদলের  কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আনোয়ার পারভেজ ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ২০০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থী ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রনি, আইইআরে ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী আল মামুন ইলিয়াস, তিনি যাকাত ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা। আরেকজন ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের তথ্য বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদ হোসেন কাজল। কাজলের নামে অতীতে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।

ঢাবিতে একই সংগঠনের পাল্টপাল্টি প্রোগ্রাম নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার বিষয়ে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাবিতে এই ধরণের প্রোগ্রাম করতে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।  এই ঘটনায় যেকোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না এবং এই আয়োজন করতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র স গঠন র দ র কর একই স করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকার একঝাঁক তারকা নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘আনন্দমেলা’

জুলাই মানেই যেন লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে উৎসবের মাস। আর সেই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ–‘আনন্দমেলা’। প্রতি বছরের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের ‘লিটল বাংলাদেশ’ এলাকায় আয়োজিত হতে যাচ্ছে এই বর্ণাঢ্য আয়োজন। ১৯ ও ২০ জুলাই দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে প্রবাসী বাঙালিদের এই সবচেয়ে বড় উৎসবের নবম পর্ব।

দুই দিনজুড়ে গান, নাচ, আবেগ আর দেশীয় সংস্কৃতির উচ্ছ্বাসে ভরে উঠবে লস অ্যাঞ্জেলেসের আকাশ। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছেন একঝাঁক তারকা– যাদের উপস্থিতিতে এবারের ‘আনন্দমেলা’ হয়ে উঠবে আরও প্রাণবন্ত, আরও জমজমাট। প্রবাসীদের সঙ্গে এই আয়োজনে নেচে-গেয়ে মেতে উঠবেন কণ্ঠশিল্পী প্রীতম হাসান, প্রতীক হাসান, কিশোর দাস, চিত্রনায়ক জায়েদ খান, অভিনেত্রী পারসা ইভানা, মৌসুমী মৌ, নীল হুরে জাহান ও নৃত্যশিল্পী আলিফ, গায়ক আর্নিক, আবু নাঈম, ইচ্ছাসহ অনেকেই। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন।

এর আগে আয়োজনটিতে হাজির হয়েছেন খ্যাতিমান অভিনেতা মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী ও আরিফিন শুভ, পূর্ণিমা ও অপু বিশ্বাসের মতো অভিনেত্রীরা। গান গেয়ে মাতিয়েছেন তাহসান ও এস আই টুটুলের মতো গায়করাও। এই আয়োজনে এবার প্রথমবারের মতো গাইছেন প্রীতম হাসান। এতে পারফর্ম করার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন প্রীতম হাসান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ধারাবাহিকভাবে কনসার্ট করছি। আনন্দমেলাতেও পারফর্ম করব। অনেক বছর ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এই আনন্দঘন আয়োজন করে আসছে। তাদের সঙ্গে এবার আমিও আনন্দ ভাগাভাগি করতে গাইব।

আনন্দমেলার আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, ‘এটি পুরোপুরি নন প্রফিট একটি উদ্যোগ। লস অ্যাঞ্জেলেসের বাংলাদেশিরা এই মেলার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। এই আনন্দমেলাই প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলায় পরিণত হয়। আমি মনে করি, বাংলাদেশের শিল্পীদের সরব উপস্থিতি এবারের উৎসবকে নতুন মাত্রা দেবে।’

আনন্দমেলা আয়োজনের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী এবং প্রেসিডেন্ট শরীফ হাসিবুল জানান, ‘এই আয়োজন কোনো লাভের জন্য নয়। আমাদের মূল লক্ষ্য, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে আত্মিক বন্ধন তৈরি করা এবং তাদের জন্য এমন একটি পরিসর তৈরি করা যেখানে তারা দু’দিন নিখাদ আনন্দে মেতে উঠতে পারেন।’ তারা জানান, দুই দিনের এই আয়োজনে শুধু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, থাকবে দেশীয় পণ্য, মুখরোচক খাবার, দেশীয় পোশাক এবং হস্তশিল্পের স্টল। বেলা ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

আরও জানা গেছে, এবারের আনন্দমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন লেক প্যারিস সিটি ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়র মাইকেল ভার্গা ও লস অ্যাঞ্জেলেস সিটির কাউন্সিলর হেদার হার্ট। এ ছাড়াও আমন্ত্রিত থাকছেন প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্টজন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সমাজসেবক, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিনিধিরা।

আয়োজনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক নাসির খান মৌ এবং প্রধান উপদেষ্টা শিপার চৌধুরী, কনভেনর দাউদ বাফাদিয়া এবং প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন জিয়া ইসলাম। 
এবারের আনন্দমেলাও থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত। তাই বলা যায়, প্রবাসে থেকেও এক টুকরো বাংলাদেশকে ছুঁয়ে দেখার, আপন সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করার এক অনন্য সুযোগ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্যারিসে স্বামীর নামে ‘প্রেম তালা’ লাগিয়ে এলেন মেহজাবীন
  • প্যারিসের স্যাক্রে-ক্যোতে স্বামীর নামে ‘প্রেম তালা’ লাগিয়ে দিলেন মেহজাবীন
  • কার্লোভি ভেরি উৎসবে পুরস্কার পেল বাংলাদেশের ‘বালুর নগরীতে’
  • কান বিজয় শেষে মেলবোর্নে আদনানের ‘আলী’
  • কানে বিজয় শেষে মেলবোর্নে আদনানের ‘আলী’
  • ইউরোপের উৎসব থেকে পুরস্কার পেল বাংলাদেশের ‘বালুর নগরীতে’
  • বিকিকিনি উৎসব
  • কানে জয়ের পর মেলবোর্নে আদনানের ‘আলী’
  • লস অ্যাঞ্জেলেস মাতাবেন ঢাকার তারকারা
  • ঢাকার একঝাঁক তারকা নিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘আনন্দমেলা’