ঢাবিতে ‘আলুঘাটি’ উৎসব নিয়ে এক সংগঠনের দুই গ্রুপের উত্তেজনা
Published: 4th, February 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বগুড়া স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন নামের একটি সংগঠনের পক্ষে দুইটি গ্রুপ আলুঘাটি উৎসব করার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের পাল্টাপাল্টি এমন কর্মসূচিকে ঘিরে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী আলু ঘাটি উৎসবকে কেন্দ্র করে এই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এক গ্রুপ আগামীকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের দাবি, তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মী। অন্য গ্রুপটি ৮ ফেব্রুয়ারি টিএসসিতে এই উৎসব করবে। তাদেরও দাবি– তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকর্মী। এদিন অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
অভিযোগ উঠেছে, বহিরাগতরা বগুড়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নাম ব্যবহার করে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে আলু ঘাটি উৎসবের নামে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে চাঁদাবাজি শুরু করেছে।
পাল্টাপাল্টি এই কর্মসূচিকে ঘিরে এরই মধ্যে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একই সংগঠনের নামে আলাদা আলাদা ব্যানার ফেস্টুন এবং পোস্টারও ঝোলানো হয়েছে। একটি ব্যানারে আয়োজক হিসেবে লেখা হয়েছে ‘বগুড়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’। এই গ্রুপটি আগামীকাল আয়োজন করবে। অন্যদিকে, আরেক গ্রুপের ব্যানারেও একই নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তবে নামের নিচে ‘ক্যাম্পাসের নিয়মিত শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত’ লেখা রয়েছে। এই গ্রুপটি ৮ ফেব্রুয়ারি উৎসব করবে। আলাদা আলাদা দুটি কর্মসূচিকে ঘিরে ক্যাম্পাসে বগুড়ার শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। একে অপরের বিরুদ্ধে আলু ঘাটি উৎসব বানচাল করা নিয়ে নানা হুমকি-ধামকিও দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। ছিড়ে ফেলা হয়েছে ব্যানার পোস্টারও।
নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজকদের অভিযোগ, সাবেক শিক্ষার্থীদের গ্রুপটি তাদের প্রচারণার ব্যানার ও পোস্টার ছিড়ে ফেলেছে। একইসঙ্গে তাদের কর্মীদের নানাভাবে হুমকি–ধামকিও দেওয়া হচ্ছে। আয়োজকদের অন্যতম সংগঠক ও ঢাবি ছাত্রদলের যোগাযোগ সম্পাদক জুবায়ের আলী সাবেক শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তাদের পোস্টার ব্যানার ছেড়ার অভিযোগ তুলেছেন। একইসঙ্গে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের তাদের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ না করতে ভয়–ভীতি দেখানো হচ্ছে। ঢাবির ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রবিউল এবং সমাজ কল্যাণ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বিল্লালকে ডেকে তাদের এই প্রোগ্রাম থেকে সরে যাওয়ার জন্য চাপ দেন। অন্যথায় তাদের দেখে নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন তারা।
এ ব্যাপারে জুবায়ের আলী নামে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসের বহিরাগত কিছু শিক্ষার্থী বগুড়ার সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে টিএসসিতে একটি আলু খাটি উৎসব করার ঘোষণা দেন। যেখানে বগুড়ার নিয়মিত শিক্ষার্থীদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এ কারণেই আমরা নিয়মিত শিক্ষার্থীরা নিজেরা আরেকটা প্রোগ্রামের আয়োজন করি। সেখানে আমাদের কর্মীদের নানাভাবে হুমকি ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আর যারা এসব করছেন তারা ক্যাম্পাসের অনিয়মিত শিক্ষার্থী। আমার প্রশ্ন হল অনিয়মিতরা কোন মতলবে হঠাৎ করে এসে আবার নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে আলু ঘাটি উৎসবের ঘোষণা দেয়। একই সাথে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বগুড়া সমিতির নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করছেন। তাদের আয়োজকদের দেখলেই বোঝা যায় যে, তারা কারা। তাদের বেশিরভাগই ক্যাম্পাস থেকে কমপক্ষে ১০ বছর বেড়িয়ে গেছেন। আর ক্যাম্পাসে বগুড়া স্টুডেন্টস এসোসিয়েশনের কোনো কমিটিও নেই। সুতরাং বহিরাগতদের বগুড়য় অ্যাসেসিয়েশনের নাম ব্যবহার করার কারণ কি?
অন্যদিকে, ‘সিনিয়র’ গ্রুপের আয়োজকদের দাবি তারা সবাই মিলেই আলুঘাটি উৎসবটি করছেন। একই সঙ্গে অন্যদের পোস্টার ব্যানার ফেস্টুন ছেড়েননি বলেও দাবি করেন তারা। একইসাথে অন্যদের ভয়-ভীতি দেখানোর বিষয়টিও অস্বীকার করেন তারা। এ বিষয়ে তাদের অন্যতম আয়োজক সফিউল আলম বলেন, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সংগঠনটি স্বৈরাচারের দোসরদের নিয়ন্ত্রণে। তাই আমরা তাদেরটা প্রত্যাখান করছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একই সংগঠনের আলাদা প্রোগ্রাম হলেও আমরা উভয়ে উভয়ের প্রোগ্রামে যাবো।
নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা আয়োজন করছেন তাদের মধ্যে অন্যতম জুবায়ের আলী মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক। জুবায়ের আলী বিশ্বধর্ম তত্ব বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। এছাড়াও রয়েছেন সংস্কৃত বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো.
আর সিনিয়রদের পক্ষে অন্যতম আয়োজক সাফিউল আলম ২০০৫-২০০৬ সালের শিক্ষার্থী, তিনি মীরপুরের সাবেক ঝুট ব্যবসায়ী। আরেক আয়োজক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আনোয়ার পারভেজ ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ২০০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থী ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রনি, আইইআরে ২০১০-১১ সেশনের শিক্ষার্থী আল মামুন ইলিয়াস, তিনি যাকাত ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা। আরেকজন ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের তথ্য বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদ হোসেন কাজল। কাজলের নামে অতীতে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।
ঢাবিতে একই সংগঠনের পাল্টপাল্টি প্রোগ্রাম নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনার বিষয়ে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাবিতে এই ধরণের প্রোগ্রাম করতে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এই ঘটনায় যেকোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা বরদাশত করা হবে না এবং এই আয়োজন করতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র স গঠন র দ র কর একই স করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রিকাশাগার্ল’ সিনেমার বিশেষ শোতে অতিথি শতাধিক রিকশাচালক
সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনীতে সাধারনত বিশেষ শ্রেনী পেশার মানুষরাই দাওয়াত পেয়ে থাকেন। এবার প্রান্তিক মানুষের জন্য সিনেমা প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে। গেল মাসের শেষের দিকে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ‘রিকশা গার্ল’ নামের সিনেমা। ওই সিনেমায় রিকশাচালক গল্প থাকায় বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আগামী মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কেরানীগঞ্জের জয় সিনেমাসের লায়ন শপার্স ওয়ার্ল্ড সিনেমাসে হবে এই প্রদর্শনী। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রদর্শনীতে শতাধিক রিকশাচালক উপস্থিত হবেন। থাকবেন সিনেমার নির্মাতা-শিল্পীরাও।
‘রিকশা গার্ল সিনেমার অভিনেত্রী নভেরা বলেন, ‘যখন শুটি চলছিল তখনই এ ধরনের একটি পরিকল্পনা হয়েছিল। এটি বাস্তবে রূপ লাভ করতে যাচ্ছে। এর আগে মেড ইন বাংলাদেশ সিনেমাটির একটি প্রদর্শনী হয়েছিল গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে। ওই শোতে আমি থাকতে পারিনি। আশা করছি,এবার প্রদর্শনীতে উপস্থিত হয়ে দর্শকের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করব। শো শেষে তাদের সঙ্গে কথা বলবো। সিনেমা নিয়ে তাদের মতামত শুনবো। ’
এদিকে, মুক্তির তিন সপ্তাহের মাথায় ‘রিকশা গার্ল’ উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে ওটিটিতে। আসছে ১২ ফেব্রুয়ারি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গতে দেখা যাবে সিনেমাটি। ‘রিকশা গার্ল’ নির্মাণ করেছেন ‘আয়নাবাজি’ দিয়ে বাজিমাত করা নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী। গল্প তৈরি হয়েছে শিল্পীমনা নারী নাঈমাকে ঘিরে। ছবি আঁকতে পছন্দ করে সে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্রোতের প্রতিকূলে লড়াই শুরু হয় নাঈমার।
ছবি এঁকে যেহেতু পয়সা মেলে না, তাই উপায়ন্তর না পেয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয় সে। জটিল হতে থাকে সিনেমার গল্প। প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় নাঈমা কীভাবে তার স্বপ্ন পূরণ করবে। এখানে নাঈমা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নভেরা রহমান। অন্যান্য চরিত্রে চম্পা, মোমেনা চৌধুরী, নরেশ ভূঁইয়া, অ্যালেন শুভ্র প্রমুখ। যুক্তরাষ্ট্রের লেখক মিতালি পারকিন্সের উপন্যাস অবলম্বনে ‘রিকশা গার্ল’ তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনায়। প্রযোজনা করেছেন এরিক জে অ্যাডামস, ফরিদুর রেজা সাগর, জিয়াউদ্দিন আদিল ও শিহাব আহমেদ সিরাজী।
করোনা মহামারির আগেই শেষ হয়েছিল ‘রিকশা গার্ল’র শুটিং। ২০২০ সালে মুক্তির কথা থাকলেও বদলে যায় পরিকল্পনা। দেশে মুক্তি না দিলেও এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এটি। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কারও জিতেছে ‘রিকশা গার্ল’। দেশে সিনেমাটি মুক্তির আগ পর্যন্ত বিশ্বের ৩০টির বেশি আন্তর্জাতিক উৎসবে প্রদর্শনের পাশাপাশি ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ রাজ্যের ৫২টি শহরে এটি প্রদর্শিত হয়।