বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় চালুর বিষয়ে সংস্থাটি থেকে সমঝোতার যে খসড়া দেওয়া হয়েছে, তাতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় স্থাপন নিয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এখনো এটি খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। খসড়া আদান–প্রদান শেষ হওয়ার পরে যখন দুই পক্ষ একমতে আসবে, তখন এটি সই হবে। তখন বিস্তারিত বলা যাবে।

এ নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘ একটি খসড়া দিয়েছে, বাংলাদেশ একটি খসড়া দিয়েছে। এখন পর্যন্ত চারবার খসড়া আদান–প্রদান হয়েছে। আমরা খসড়ায় কিছু সংযোজন–বিয়োজন এনেছি, জাতিসংঘ কিছু সুপারিশ করেছে। একটা পর্যায়ে আসার পরে আমরা অন্যান্য যে প্রক্রিয়া রয়েছে, তা নিয়েছি। তাদের দেওয়া খসড়ার অনেকটাই আমরা একমত হয়েছি। আমাদের কিছু পরিবর্তন রয়েছে তাদের দেওয়া খসড়া নিয়ে। সে পরিবর্তন যদি তারা গ্রহণ করে তাহলে তাড়াতাড়ি হবে। আর যদি গ্রহণ না করে এবং বলে পরিবর্তন করতে তখন আমরা দেখব যে পরিবর্তন করা যাবে কি না। খসড়াটি এখন জাতিসংঘের কাছে রয়েছে।’

নেপাল থেকে জাতিসংঘের এ কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হলে বাংলাদেশে কেন খোলা হচ্ছে—জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘নেপালে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ছিল। এরপর তারা (কার্যালয়) চলে গেছে। আমাদের এখানেও সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া রয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে সরকার যদি মনে করে, এ কার্যালয় কার্যকর হচ্ছে এবং আরও থাকা উচিত তাহলে কার্যালয় থাকবে, না হলে থাকবে না।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় কি বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে—এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি বিচার আমি করতে চাই না।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ফোনালাপ নিয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, সংস্কার কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কথা বলেছে। নির্বাচন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র জানতে চেয়েছে, তখন তাদের জানানো হয়েছে, যথা শিগগির সময়ে নির্বাচন হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কবিষয়ক আলোচনা নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘মার্কিন স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে বৈঠক হবে। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখানে গেছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সেখানে আছেন। কাজেই আমরা আশা করব যে একটি সমাধানে আমরা দুই পক্ষ পৌঁছাতে পারব এবং বাণিজ্যে তেমন প্রভাব পড়বে না।’

চীন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে মিলিয়ে সার্কের বিকল্প হিসেবে দেখা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এটিকে কখনো সার্কের বিকল্প হিসেবে আমার কাছে মনে হয়নি। এখানে প্রাথমিক কতগুলো বিষয় নিয়ে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জোট কোনো অবস্থাতেই নয়। সার্ক নিজেও কোনো জোট নয়।’

ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে টালবাহানার কিছু নেই। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধানের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ ফেরত আনার জন্য চিঠি দিয়েছে। প্রয়োজনে এটি ফলোআপ করা হবে।’

মালয়েশিয়ায় সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকায় ৩৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশিদের সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে আটক করেছে। তাঁদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বাংলাদেশ জানতে চেয়েছে, দুই–চার দিনের মধ্যে হয়তো জানা যাবে। আটক ব্যক্তিদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার আদালতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হয়তো করবে, বিষয়গুলো এখনো নিশ্চিত পর্যায়ে নেই। আর আটক ব্যক্তিদের বেশ কয়েকজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে। ফেরত পাঠালে সরকারও যাচাই করবে তাঁদের সম্পৃক্ততা নিয়ে।

বিভিন্ন দেশের ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার ঘটনার প্রভাব নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যেকোনো নেতিবাচক বিষয় ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। আমরা যদি সঠিক পদক্ষেপ নিই তাহলে ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে।’

গত এক বছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কতটুকু সংস্কার হয়েছে। এই সংস্কার নিয়ে আপনারা সন্তুষ্ট কি না—এ প্রশ্নের উত্তরে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে কখনো হ্যাপি হওয়া উচিত নয়। কেননা হ্যাপি হলে আর কিছুটা করার নেই। আমরা চেষ্টা করছি, এটাকে (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) যতটুকু জনবান্ধব করা যায়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট পর য য়

এছাড়াও পড়ুন:

কংগ্রেসে ট্রাম্পের আলোচিত ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ পাস

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আলোচিত ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ দেশটির কংগ্রেসে চূড়ান্ত বাধা পেরিয়েছে। কংগ্রেসের রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার অল্প ব্যবধানে কর হ্রাস ও সরকারি ব্যয়ের বিশাল এই প্যাকেজ পাস হয়।

প্রতিনিধি পরিষদে ২১৮-২১৪ ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাস হয়েছে। পরে এতে সই করেন স্পিকার মাইক জনসন। আলোচিত এই বিলটি কংগ্রেসে পাস হওয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য বড় জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিলটি নিয়ে ট্রাম্পের নিজ দলেও প্রবল বিরোধিতা ছিল। শেষ পর্যন্ত বিলটি পাস হওয়ায় রিপাবলিকান পার্টির জ্যেষ্ঠ সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এখন তিনি সই করলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে।

এর আগে মঙ্গলবার কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে বিলটি বিলটি কোনোরকম উতরে যায়। সিনেটে বিলটি ৫১-৫০ ভোটে পাস হয়। বিলের পক্ষে-বিপক্ষে সমান ভোট পড়ায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ‘টাই’ ভেঙে বিলের পক্ষে ভোট দেন। বিলটির বিপক্ষে ভোট দেওয়া ডেমোক্র্যাটদের ৪৭ সদস্যের সঙ্গে ৩ জন রিপাবলিকানও যোগ দেন।

এই বিলে কর কমানো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ কমানো, সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে খরচ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

বিলটি ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে দেওয়া কর ছাড়েরই সম্প্রসারিত রূপ। পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে খরচও বাড়ানো হবে।

এই বিলে কম আয়ের মার্কিন নাগরিকদের জন্য মেডিকেইড নামের স্বাস্থ্য কর্মসূচি ও খাদ্যসহায়তা কর্মসূচির খরচ থেকে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি ডলার কাটাছাঁটের কথা বলা হয়েছে। এতে লাখ লাখ আমেরিকান স্বাস্থ্য বিমার বাইরে চলে যাবেন।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে পাস হলো ট্রাম্পের আলোচিত ব্যয় বিল ০২ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ