বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) অর্থ ও হিসাব শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলামকে জুতাপেটা করেছে প্রকৌশল শাখার দৈনিক মজুরিতে চাকরি করা কর্মচারী মতিউর রহমান। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে শহিদুল তার দপ্তরে বসা অবস্থায় মতিউর হঠাৎ ঢুকে জুতাপেটা করে সটকে যান। কয়েকজনকে চাকরি দেওয়ার জন্য ঘুষ বাবদ নেওয়া ৩২ লাখ টাকা ফেরত না দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে মতিউর স্বীকার করেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অর্থদপ্তরে নিজ কক্ষে বসে ছিলেন শহিদুল ইসলাম। এসময় মতিউর ডেস্কে গিয়ে শহিদুলকে জুতাপেটা করে দ্রুত পালিয়ে যান। বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

মতিয়ার বলেন, ‘২০১৬ সালে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার জন্য কয়েকজনের কাছ থেকে ৩২ লাখ ৬০ হাজার টাকা এনে শহিদুলকে দেন। চাকরি দিতে পারেননি তিনি। কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে ঘুরাচ্ছেন। তাকে একটি ফাঁকা চেক দিয়েছেন। সম্প্রতি শহিদুল তার বিরুদ্ধে বন্দর থানায় জিডি করেছেন। এ কারণে তিনি শহিদুলকে জুতাপেটা করেছেন।’

তবে কর্মকর্তা শহিদুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘অফিস চলাকালীন সহকর্মীদের সামনে মতিউর জুতাপেটা করে পালিয়ে যায়। তিনি এ ঘটনায় হতাশ ও বিস্মিত। বিচার চেয়ে তিনি ভিসি, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।’ ঘুষের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। 

অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপপরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, অফিস চলাকালে ডেস্ক এসে কাউকে লাঞ্ছিত করা কাম্য নয়। তারা রেজিস্ট্রারের কাছে বিচার চেয়েছেন। 

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নেতৃত্ব দেওয়া সেকশন অফিসার নাদিম মল্লিক বলেন, তাদের সহকর্মী শহিদুলকে জুতাপেটার ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা করে বিচার চেয়েছেন। লেনদেন থাকলে তা ক্যাম্পাসের বাইরের বিষয়। কিন্তু একজন দৈনিক মজুরির কর্মচারী কর্মকর্তাকে জুতাপেটা করতে পারে না। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ক্ষুব্ধ। 

অপরদিকে কর্মকর্তাদের নেতৃত্ব দেওয়া পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের উপপরিচালক আবু হাসান বলেন, কর্মকর্তাকে জুতাপোটার ঘটনা নিন্দনীয়। চাকরি দেওয়ার নামে লেনদেন করলে তাও দুর্নীতির পর্যায়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত হবে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনা একটা ঘটেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

হাজি সেলিম রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, জানালেন তদন্ত কর্মকর্তা

রাজধানীর শাহবাগ থানার চানখাঁরপুল এলাকায় ঝুট ব্যবসায়ী মনির হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিমকে চার দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তিনি রিমান্ডে ইশারায় মামলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক মাইনুল ইসলাম খান পুলক।

আজ মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম এ আদেশ দেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক জিন্নাত আলী জানান, গত ২০ অক্টোবর হাজি সেলিমের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। কয়েক দিন আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

কারাগারে রাখার আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলার ১২ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি হাজি সেলিমকে ব্যাপক ও নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ‘বাক্‌প্রতিবন্ধী’ হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদকালে তিনি ইশারায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, যা মামলার তদন্তে সহায়ক হবে। আসামির দেওয়া তথ্য মামলার তদন্তের স্বার্থে যাচাই–বাছাই অব্যাহত আছে। মুক্তি পেলে আসামির পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামিকে আবার রিমান্ডে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে জেলহাজতে আটক রাখা একান্ত প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, অসুস্থতাজনিত কারণে হাজি সেলিমের কথা বলার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট শাহবাগ থানার চানখাঁরপুল এলাকায় ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন ক্ষুদ্র ঝুট ব্যবসায়ী মো. মনির। দুপুরে ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এ ঘটনায় মনিরের স্ত্রী এ বছরের ১৪ মার্চ শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুরান ঢাকার লালবাগ ও চকবাজার এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিম দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি ১৯৯৬ সালে ঢাকা-৮ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে হেরে যান।

২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন হাজি সেলিম। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাজি সেলিম প্রার্থী হননি। তাঁর বদলে ছেলে সোলায়মান মোহাম্মদ সেলিমকে ঢাকা-৭ আসন থেকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তিনি নির্বাচিতও হয়েছিলেন।

হাজি সেলিম ও তাঁর স্ত্রী গুলশান আরার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মামলা করে দুদক। বিচারিক আদালত ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল ওই মামলায় রায় দেন। রায়ে তাঁর ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়। ২০২২ সালে ওই মামলায় হাজি সেলিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন হাইকোর্ট। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। কিছুদিন কারাভোগের পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে উচ্চ আদালত তাঁকে জামিন দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাজি সেলিম রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন, জানালেন তদন্ত কর্মকর্তা