ইউক্রেনের জন্য ৫০ কোটি ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা অনুমোদন করেছে মার্কিন সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটি। জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইনের (ন্যাশনাল ডিফেন্স অথরাইজেশন অ্যাক্ট বা এনডিএএ) খসড়া অনুযায়ী ২০২৬ অর্থবছরের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই খসড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এ-১০ বিমানবহরের বাতিল করাকে সীমিত করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

রয়টার্স জানায়, এনডিএএ হলো মার্কিন সামরিক খাতের বার্ষিক নীতিমালা প্রণয়ন আইন, যা সেনাবাহিনীর জন্য অর্থ বরাদ্দ ও কর্তৃত্ব নির্ধারণ করে। এটি লকহিড মার্টিন ও বোয়িংয়ের মতো অস্ত্র নির্মাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়।

বুধবার ২৬-১ ভোটে সিনেট কমিটিতে গৃহীত এই খসড়া আইনে ইউক্রেনের নিরাপত্তা সহায়তা উদ্যোগের সময়সীমা ২০২৮ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ২০২৫ সালের অর্থ সহায়তা নির্ধারিত ৩০ কোটি থেকে ৫০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়। এই উদ্যোগ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। কারণ, ২০২২ সালে রাশিয়ার আক্রমণের পর দেশটি এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, জুনে উপস্থাপিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাজেট প্রস্তাবে এ-১০ বিমানবহর বাতিলের যে প্রস্তাব রাখা হয়েছিল, তা এই খসড়ায় প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।  

এই খসড়া আইন চীন, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলার বিষয়েও গুরুত্ব দিয়েছে। আইনটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ড্রোন প্রযুক্তি ও হাইপারসনিক অস্ত্রের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ওপর বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে মার্কিন সামরিক আধিপত্য ধরে রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সিএনএন জানায়, ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে এক দফা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। গতকাল শনিবার ভোরে হওয়া এই হামলায় রোমানিয়া সীমান্তবর্তী চেরনিভসিতে অন্তত দু’জন প্রাণ হারান। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেন, লেভিভ, লুটস্ক এবং চেরনিভসির মতো পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে অন্যান্য অঞ্চলেও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

রাশিয়া ‘সন্ত্রাস’ বৃদ্ধি করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে মস্কো। এতে বেসামরিক লোকজন হতাহত হচ্ছেন। ওই পোস্টে রাশিয়ার ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপের জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন সিবিহা।

আরটির খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলতি বছরই যুদ্ধবিরতি দরকার বলে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান কিরিল বুদানভ দাবি করেছেন। শুক্রবার ব্লুমবার্গে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

বুদানভ বলেন, যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতি হওয়া দরকার এবং সেটা এ বছরের অনেক আগেই। এটি বাস্তবসম্মত এবং কঠিন না। এতে অন্তত তিন পক্ষ দরকার– ইউক্রেন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র। আমরা সেই অবস্থানে পৌঁছাব। এই বক্তব্য এমন একসময়ে এলো, যখন ইউক্রেনীয় সেনারা ফ্রন্টলাইনের বিভিন্ন অংশে পিছিয়ে পড়ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ইউক র ন র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে বিভ্রান্তি, আজ আবার বৈঠক হতে পারে

দেশে সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়বে কি না, বাড়লেও কত টাকা বাড়বে, সেটি ফয়সালা হতে পারে এ বৈঠকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ভোজ্যতেল পরিশোধন ও উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গত সোমবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ানোর কথা জানায়। এতে বাজারে একধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তবে সরকার এ বিজ্ঞপ্তিকে আমলে নেয়নি। গত মঙ্গলবার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি।

পুরো পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে গতকাল বুধবার বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সয়াবিন ও পাম তেলের নতুন দাম কার্যকর করেনি বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) এত দিন যা ছিল, তা-ই আছে। নতুন এমআরপির কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, কারখানার মালিকেরা মঙ্গলবার তাঁকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত খুচরা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়েনি।

প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের বর্তমান দাম ১৮৯ টাকা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন দাম হবে ১৯৫ টাকা। আর প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের নতুন দাম ১৭৭ টাকা, যার বর্তমান দাম ১৬৯ টাকা। এ ছাড়া খোলা পাম তেলের দাম ১৫০ টাকা লিটার থেকে বেড়ে ১৬৩ টাকা করার কথা বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

জানা গেছে, ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা করে আসছেন পরিশোধন কারখানার মালিকেরা। গত ২২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে একটি বৈঠক হয়। এ বৈঠক শেষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিল, ‘কারখানামালিকেরা দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় অনেক বেশি।’

সাধারণত বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পর্যালোচনামূলক প্রতিবেদন দেয়। গত মাসে বিটিটিসি ভোজ্যতেল নিয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার এ নিয়ে আরও পর্যালোচনার দায়িত্ব দেয় দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং দ্য ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশকে (আইসিএমএবি)।

আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট মাহতাবউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে আমরা কাজটা করছি।’

সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল গত এপ্রিল মাসে। তখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৮৯ টাকা করা হয়েছিল। এ ছাড়া প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৬৯ টাকা এবং বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৭০ টাকা বাড়িয়ে ৯২০ টাকা করা হয় তখন।

অবশ্য আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে এসে খোলা পাম তেলের দাম লিটারে ১৯ টাকা কমিয়ে ১৫০ টাকা করা হয়। ব্যবসায়ীরা তখন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জবাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছিল, বাড়তে পারে লিটারে বড়জোর ১ টাকা।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিটিটিসির মাধ্যমে ভোজ্যতেলসহ সব নিত্যপণ্য নিয়ে পর্যালোচনা করার নির্ধারিত নিয়মকানুন আছে। তা অনুসরণ না করার ফলেই বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। আর এ কারণে ভোক্তারা অহেতুক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ক্যাবের পক্ষ থেকে আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ