লুট হওয়া পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণে আহত কিশোরী
Published: 4th, February 2025 GMT
গাজীপুরে টঙ্গীতে পুলিশের লুট হওয়া একটি সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে ফেরদৌসি আক্তার (১৭) নামের এক কিশোরী আহত হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ জসিম উদ্দিন নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার সকালে টঙ্গীর ব্যাংকের মাঠ বস্তিতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বিস্ফোরিত সাউন্ড গ্রেনেডটি থানা থেকে লুট হয়েছিল।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ সকালে টঙ্গীর ব্যাংকের মাঠ বস্তির খালি জায়গায় হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। এতে ফেরদৌসি আক্তারের দুই পায়ের নিচের অংশ পুড়ে যায়। এলাকাবাসী দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সংবাদ পেয়ে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরিত সাউন্ড গ্রেনেডের খোসা উদ্ধার করে। সাউন্ড গ্রেনেড রাখার দায়ে পুলিশ জসিম উদ্দিনকে আটক করে। জসিম মাদকাসক্ত এবং ছিনতাইকারী বলে জানায় পুলিশ।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন, বিস্ফোরিত সাউন্ড গ্রেনেডের গায়ে লেখা থেকে বুঝা যায় এটি পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড। সম্ভবত এটি থানা থেকে লুট হওয়া সাউন্ড গ্রেনেড। এই বিষয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আহত
এছাড়াও পড়ুন:
নারীবিদ্বেষী সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে, একে দমন করতে হবে
সমাজে নারীবিদ্বেষী সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে। ব্যাপক হারে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হচ্ছে। মব সহিংসতা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসবের ফলে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলেছে। নারী ও কন্যাশিশুর ওপর সহিংসতা প্রতিরোধে নারীবিদ্বেষী প্রচারণাকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ পালন উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতারা এসব কথা বলেছেন। সংবাদ সম্মেলনে দেশে গত ১০ মাসে (জানুয়ারি থেকে অক্টোবর) ১০টি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের খবর তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এ সময় দেশে মোট ২ হাজার ৪৬৮ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৭১৩ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধষর্ণের পর আত্মহত্যার শিকার হয়েছে বলে খবরে বলা হয়েছে। এ ছাড়া যৌতুক, পারিবারিক নির্যাতন, হত্যা, বাল্যবিবাহ, যৌন নিপীড়ন, অপহরণ, সাইবার সহিংসতার মতো নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে নারী ও কন্যাশিশু।
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলা হয়, ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীদের এক সম্মেলনে এদিনকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন দিবস হিসেবে পালনের দাবি তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনা মানবাধিকার সম্মেলনে দিবসটিকে স্বীকৃতি দিয়ে ঘোষণা করা হয়, ‘নারীর অধিকার মানবাধিকার, নারীর প্রতি সহিংসতা মানবাধিকার লঙ্ঘন।’ ২০০০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২৫ নভেম্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দিনের প্রচারাভিযান চালানোর কথা বলে।
দিবসটি উপলক্ষে এবার ‘সাইবার সহিংসতাসহ নারী ও কন্যার প্রতি সকল প্রকার নির্যাতনকে না বলুন, নারী ও কন্যার অগ্রসরমানতা নিশ্চিত করুন’ স্লোগান নিয়ে ১৬ দিনের কর্মসূচি আজ শুরু করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও সামাজের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখতে হবে। নারীবিদ্বেষী প্রচারণাকে দৃঢ়ভাবে দমন করতে হবে। গণমাধ্যমেও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এখানেও একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করা দরকার।
এক প্রশ্নের জবাবে ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর জন্য কর্মস্থলে ৫ ঘণ্টা কর্মঘণ্টা রাখার (বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন) কথা বলা হলো। এটা কিসের আলামত? সাধারণ নারীরাই এর উত্তর দিয়েছেন। নারীর মধ্যে জাগরণ ও মুক্তির যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, সেটা কেউ দমন করতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, সমাজ নারীর প্রতি সহিংসতাকে নানা অজুহাতে ‘অনুমোদন’ দেয়। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মকাণ্ড নারী নির্যাতন বাড়াতে উসকানি দেয়। নারীর প্রতি বৈষম্যকে স্থায়ী করতে নানা ধরনের বয়ান দিতেও দেখা যায়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠী দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তারা নারীর বিষয় একপাশে সরিয়ে রাখতে চায়। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো সরকার ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চুপ ছিল।
সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মব ভায়োলেন্স (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতা) চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। পাঁচ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা কমছে না।
সংগঠনের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, যত দিন সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী ক্ষমতা না পাচ্ছে, তত দিন নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়ন হবে না। জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন হতে হবে। দলের মনোনয়ন পেয়ে সংরক্ষিত আসনে ‘অমুকের ভাবি’, ‘তমুকের স্ত্রী-বোন’ এলে হবে না। সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসা নারীরা নারীর প্রতিনিধিত্ব করবেন, নারীর পক্ষে কথা বলবেন।
মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপপরিষদের সদস্য সাবিকুন্নাহারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংগঠনের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। মূল প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতা শুধু নারীর অগ্রগতিকেই রুদ্ধ করে না, সামগ্রিকভাবে সমাজ-রাষ্ট্রের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। দেশের নারী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ যদি দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়; স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে যদি পিছিয়ে পড়ে; জনজীবন ও রাজনীতিতে তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ যদি সীমিত হয়ে যায়; তাহলে শুধু নারীর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার অবসান ঘটে না; সমাজে অস্থিরতা, অনাচার, ব্যক্তিগত ঘৃণা-বিদ্বেষ ও সামাজিক কুপ্রথা বাড়ে।
এ বছর প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যাণ ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, দেশের ৭৬ শতাংশ নারী কাছের মানুষের মাধ্যমে প্রধানত স্বামীর হাতে কোনো না কোনো সময় শারীরিক, মানসিক, যৌন ও আর্থিক নির্যাতন বা নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যক্তি, পরিবার ও নাগরিক সমাজ, রাষ্ট্র ও সরকার, গণমাধ্যম ও নারী আন্দোলনের জন্য আলাদা সুপারিশ করা হয়। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও সহনশীলতার সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এ ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি গ্রহণ করতে হবে। গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। নারীদের প্রতি আত্মশক্তি, আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার জন্য উদ্দীপনামূলক নতুন নতুন কর্মসূচি নিতে হবে।