ঈদের আনন্দ বলতে আমাদের জীবনে এখন কিছুই নেই
Published: 27th, March 2025 GMT
‘ঈদের আনন্দ বলতে আমাদের জীবনে এখন কিছুই নেই। সব শেষ হয়ে গেছে। বাবারা সবার জন্য কেনাকাটা করেন, কিন্তু নিজের জন্য কেনেন না। ছোট্ট ভাইয়ের জন্য জামা কিনতে গিয়ে বিষয়টি উপলদ্ধি করতে পেরেছি। তখন আমার চোখে পানি এসে যায়। বাবা যে মাথার ওপর কত বড় বটগাছ, তা যার নেই সেই কেবল বোঝে।’
কথাগুলো বলছিলেন জুলাই আন্দোলনে শহীদ দুলাল সরদারের বড় ছেলে সাইদুল সরদার (২৩)। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় মা ও তিন ভাইয়ের দায়িত্ব এখন তাঁর কাঁধে। ডিগ্রি পাস করা সাইদুল বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিপণন বিভাগে কর্মরত। তাঁর বাবা দুলাল সরদার (৫০) ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই সকালে ঢাকার মেরুল বাড্ডায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পটুয়াখালী সদর উপজেলার হকতুল্লাহ গ্রামের এই বাসিন্দা পেশায় মাইক্রোবাস চালক ছিলেন। স্ত্রী তাসলিমা বেগম এবং সাইদুলসহ চার ছেলে সজিব সরদার (২০), রাজিব সরদার (১৭) ও আবদুল্লাহ সরদারকে (৩) নিয়ে ছিল তাঁর সুখের সংসার। কিন্তু একটি বুলেট তছনছ করে দিয়েছে পুরো পরিবারের স্বপ্ন, সুখ ও আনন্দ। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে পরিবারটি। মা ও ভাইদের নিয়ে যেন অথৈ সাগরে পড়েছেন সাইদুল।
শুধু দুলাল সরদারের নয়, পটুয়াখালীর সব শহীদ পরিবারে একই চিত্র। কেউ স্বামী, কেউ বাবা ও কেউ সন্তান হারিয়ে শোক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারগুলোয় এখন নুন আনতে পান্তা ফুরানোর জোগাড়। সেখানে ঈদ সামনে তাদের হারানোর ক্ষতকে নতুন করে জাগিয়ে তুলছে। সপরিবারে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার কথা মনে হলেই ডুকরে কেঁদে উঠছেন স্বজনরা।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার দক্ষিণ পাঙ্গাশিয়া গ্রামের জসিম হাওলাদার (৩৭)। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩১ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়। স্বামীকে হারিয়ে এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী রুমা বেগম। সেই শোক কাটিয়ে না উঠতেই ১৮ মার্চ তাঁর কিশোরী মেয়ে ধর্ষণের শিকার হন।
শহীদ জসিম হাওলাদারের স্ত্রী রুমা বেগম বলেন, ‘আমার তো একটার পর একটা বিপদ লাইগ্যাই আছে। ঈদের আনন্দ করি কহোন। স্বামী হারাইয়ে কোনো রহমে বাঁইচা ছিলাম। হের মধ্যে আরেক বিপদ আইয়্যা মাথার উপর পড়লো। আমার স্বামী দেশের জন্য জীবন দিয়া গেলেন, আর হেই দেশের মানুষের কাজ থেইকা প্রতিদান এইডাই পাওয়ার ছিল?’
গত ২১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মিলন হাওলাদার (৩৫)। দুমকী উপজেলার আঙ্গারিয়ার পূর্ব ঝাটড়া গ্রামের এই বাসিন্দা সিদ্ধিরগঞ্জে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন।
শহীদ মিলন হাওলাদারের স্ত্রী শাহনাজ বেগম বলেন, ‘উনি (স্বামী) যখন ছিলেন তখন প্রতি বছর কেনাকাটা ও ঈদের আনন্দ করতাম। এ বছর তো উনিই নাই। উনার অনুপস্থিতিতে ঈদ করব, এটা ভাবতেই পারছি না।’ ঈদের আগে এখন পর্যন্ত সরকার থেকে কোনো সহায়তা পাননি বলেও জানান তিনি।
‘আজ যদি আমি মারা যাই, বিজয়ের পর আমার কবরে পতাকা দিও। হয়তো লাশ হব, নয়তো ইতিহাস হব’। ৫ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার আগের দিন ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত এইচএসসি পরীক্ষার্থী সাগর গাজী (২০)। তিনি পটুয়াখালীর গলাচিপার পূর্ব পাড় ডাকুয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তিনি বলেন, ‘ছোট ছেলেটাকে ছাড়া কীভাবে ঈদের আনন্দ করব? সরকার থেকে তিনিও কোনো সহায়তা পাননি।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, জেলার সব শহীদ পরিবারের জন্য খাদ্যসামগ্রীসহ ঈদ উপহারসামগ্রী সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। ইউএনওদের মাধ্যমে শহীদ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পটুয়াখালী জেলার ২২ জন শহীদ হয়েছেন। তাদের মধ্যে গলাচিপা উপজেলার আমখোলার বাউরিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর খান, ডাকুয়ার পূর্ব পাড় ডাকুয়া গ্রামের সাগর গাজী, পানপট্টির গ্রামদ্দন গ্রামের আতিকুল ইসলাম, চিকনিকান্দির পানখালী গ্রামের মামুন হাওলাদার, চরকাজলের চরশিবা গ্রামের রাসেল মাহমুদ ও বকুলবাড়িয়ার বাঁশবাড়িয়ার গোলাম রাব্বী। বাউফল উপজেলার ধুলিয়া এলাকার আক্তারুজ্জামান নাঈম, সাংবাদিক মেহেদী হাসান, সূর্যমনির ইন্দ্রকূল গ্রামের নবীন তালুকদার, মদনপুর বিপাশা গ্রামের জাহাঙ্গীর মৃধা, কেশবপুরের পশ্চিম ভরিপাশা গ্রামের আল-আমিন ও নাজিরপুরের বড় ডালিমা গ্রামের হাফেজ ইমরান জোমাদ্দার। সদর উপজেলার বদরপুরের হকতুল্লাহ গ্রামে দুলাল সরদার, কালিকাপুরের পশ্চিম শারিকখালী গ্রামের বাচ্চু হাওলাদার, মাদারবুনিয়ার চালিতাবুনিয়া গ্রামের মোহাম্মদ রায়হান ও শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকার হৃদয় চন্দ্র তরুয়া। দশমিনা উপজেলা সদরের জিয়াদ হোসেন, আলীপুরের উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের জাকির হোসেন ও আলীপুরার মীরমদন গ্রামের আরিফুর রহমান। দুমকী উপজেলার আঙ্গারিয়ার পূর্ব ঝাটড়া গ্রামের মিলন হাওলাদার ও পাঙ্গাশিয়ার দক্ষিণ পাঙ্গাশিয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন হাওলাদার এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবীর খাসমহল গ্রামের মোহাম্মদ শাহজামাল অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অভ য ত থ ন দ ল ল সরদ র ঈদ র আনন দ পর ব র র ম হ ম মদ উপজ ল র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার
দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।
দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’
তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’
আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা