আলোচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। এই হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া রায় সঠিক ছিল উল্লেখ করে রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যারা সরাসরি মারধরে অংশ নেয়নি, তারাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে আবরারকে রক্ষা না করে হত্যাকাণ্ডে পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছে।

গত ১৬ মার্চ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। সম্প্রতি বিচারপতিদের সই করা পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে।  

শনিবার আসামিপক্ষের আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, হাইকোর্টের দেওয়া ১৩১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট থেকে প্রকাশের পর সংশ্লিষ্টপক্ষদ্বয়কে সরবরাহ করা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে এ মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।
 
হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘হতে পারে কেউ কেউ সরাসরি মারধরে অংশ নেয়নি, কিন্তু তারা সবাই উপস্থিত ছিল এবং ভিডিও ফুটেজে তা স্পষ্ট দেখা গেছে। তারা কেউ আবরারকে রক্ষা করতে যায়নি, বরং পাশ থেকে তা উপভোগ করেছে। এভাবে তারা আবরারকে হত্যায় পরোক্ষ সহায়তা করেছে।’

পর্যবেক্ষণ আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরারকে মারধর করা হয় পূর্বপরিকল্পিতভাবে। এটি হঠাৎ কোনো উত্তেজনার ফল ছিল না। সাক্ষ্যপ্রমাণে এসেছে ৫ অক্টোবর এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ, সাক্ষীদের বক্তব্য এবং স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত। এছাড়া বালিশ, ভেজা বিছানার চাদর, দড়ি ও ক্রিকেট স্ট্যাম্পসহ অন্যান্য বস্তুত্মূলক প্রমাণও মারধরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

রায়ের শেষাংশে বলা হয়, ট্রায়াল কোর্ট (বিচারিক আদালত) উপস্থাপিত সব সাক্ষ্য, আলামত ও স্বীকারোক্তি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেছে এবং অভিযুক্তদের যথাযথভাবে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দিয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম বা বেআইনি কিছু পাওয়া যায়নি। তাই আপিল (রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের) গ্রহণযোগ্য নয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.

আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার প্রমুখ। আসামিপক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু প্রমুখ। 

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের ভাষ্য, আসামিপক্ষ ফের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ পাবে। আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে আসামিদের সাজা কার্যকর হবে।

বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র আবরার থাকতেন শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে। সেখান থেকে ডেকে নিয়ে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। রাত ৩টার দিকে হলের সিঁড়ির করিডোর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ফেসবুকে ভারতবিরোধী স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন হয়। হত্যাকাণ্ডের পরদিন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে রাজধানীর চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার বিচারিক আদালত। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার এই রায় হাইকোর্টও বহাল রাখেন। 

মৃত্যুদণ্ড বহাল হওয়া আসামিরা হলেন—মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভীর, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুনতাসির আল জেমি, মো. শামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মিজানুর রহমান, এস এম মাহমুদ সেতু, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ। তখন তিনজন পলাতক ছিলেন। তারা হলেন মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ। 

আসামিদের মধ্যে মুনতাসির আল জেমি গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের দেয়াল ভেঙে পালিয়েছে বলে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিততে জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা ও ইশতিয়াক আহমেদ মুন্নার। আসামিদের মধ্যে তিনজন মামলার শুরু থেকেই পলাতক। তিন আসামি হলেন– এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মাহমুদুল জিসান ও মুজতবা রাফিদ। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র রহম ন আইনজ ব আবর র ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

আইনজীবীর ভূমিকায় নুসরাত ফারিয়া

ঢাকাই সিনেমার বর্তমান সময়ের চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। ঢাকা ও কলকাতা—দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই পরিচিত মুখ। অভিনয়, উপস্থাপনা, নাচ কিংবা গ্ল্যামার—সব ক্ষেত্রেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন এই তারকা। বিরতির পর আবার বড় পর্দায় ফিরছেন এই অভিনেত্রী। 

সত্য ঘটনা অবলম্বনে রায়হান খান নির্মাণ করছেন ‘ট্রাইব্যুনাল’। নারী ও শিশু নির্যাতন (২০০১) আইনের একটি মামলাকে কেন্দ্র করে নির্মিত হচ্ছে এটি। এই কোর্টরুম ড্রামায় নুসরাত ফারিয়াকে তরুণ ব্যারিস্টারের ভূমিকায় দেখা যাবে; যে সত্য ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়িয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বেন। 

আরো পড়ুন:

জায়েদ ভাই দেশের অর্ধেক মেয়েরই ফেভারিট: নুসরাত ফারিয়া

গ্রেপ্তারের পর প্রথম মুখ খুললেন নুসরাত ফারিয়া

ফারিয়া বলেন, “গল্পটি প্রথম পড়েই বুঝেছিলাম—এটি আমার করা দরকার। চরিত্রটির আবেগ, দায়িত্ববোধ ও দৃঢ়তা আমাকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। একজন অভিনেত্রীর জীবনে এমন চরিত্র খুব বেশি আসে না। আমি চাই, দর্শকরা আমাকে এই চরিত্রে নতুনভাবে দেখুক।” 

কিছুটা ব্যাখ্যা করে নুসরাত ফারিয়া বলেন, “আমি সবসময় এমন কাজ করতে চাই যা শুধু বিনোদন নয়, ভাবনার খোরাক জোগায়। ‘ট্রাইব্যুনাল’ সেই ধরনেরই একটি গল্প।” 

সিনেমার শুটিং চলছে চট্টগ্রামে, এরপর হবে ঢাকা ও এফডিসিতে। এতে আরো অভিনয় করছেন তারিক আনাম খান, আদর আজাদ, তানিয়া বৃষ্টি, মৌসুমী হামিদ ও সাবেরি আলম। আগামী ঈদকে সামনে রেখে সিনেমাটি মুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্মাতা সংস্থা। 

অভিনয়ের পাশাপাশি সংগীতেও সক্রিয় ফারিয়া। সম্প্রতি ফুয়াদ আল মুক্তাদির, সঞ্জয়সহ কয়েকজন সংগীত পরিচালকের সঙ্গে নতুন গান রেকর্ড করেছেন তিনি।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদে থেকেও নির্বাচন করা যায়: অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান
  • রাজশাহীতে ১০ মাসে ২৮ এইডস রোগী শনাক্ত, ওষুধের জন্য যেতে হয় বগুড়া
  • ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী: কে কেন কীভাবে
  • ভালো কাজের বিনিময়ে কারামুক্তি, কেমন আছেন তাঁরা
  • সংবিধানের ৫৩ বছর: বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলের আহ্বান
  • তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল: সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে অসংগতি তুলে ধরে আপিল মঞ্জুরের আরজি
  • গোষ্ঠীস্বার্থে ড্যাপ সংশোধন হলে ঢাকার বাসযোগ্যতা আরও সংকটে পড়বে
  • আইনজীবীর ভূমিকায় নুসরাত ফারিয়া
  • উত্তর কোরিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান কিম ইয়ং নাম মারা গেছেন
  • জবি শিবিরের মেধাবীদের তালিকায় নেই ৩ বিভাগের শিক্ষার্থী