ছমিরা আক্তার শিরিন। বান্দরবানে সবুজ পাহাড়ের পাদদেশে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি মানবিক পাঠশালা ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের বান্দরবান টিমের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁর কার্যক্রম কেবল এ সংগঠনের পরিসরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আরও বিস্তৃত ও গভীর। ছমিরার নিরলস প্রচেষ্টা পাহাড়ি অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিশু, নারী ও যুবকদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করেছে। মানবিক পাঠশালা ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি বিশেষত শিক্ষা, নারী অধিকার, সচেতনতাসহ সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনমান পরিবর্তনে কাজ শুরু করেন। এখানে কাজ করার পাশাপাশি তিনি আরও কিছু সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করে চলেছেন।
পাহাড়ি এলাকায় অনেক শিশু এখনও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। ছমিরা স্থানীয় বিভিন্ন স্কুল, পাঠশালা ও শিক্ষামূলক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন; যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরা মানসম্মত শিক্ষা পায়। পাহাড়ে তিনি বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছেন, যেখানে পাঠদানকে আনন্দদায়ক ও সহজবোধ্য করা হয়েছে। এছাড়া, শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সচেতনতা নিয়েও কাজ করছেন তিনি। তাঁর উদ্যোগে বিভিন্ন স্বাস্থ্য ক্যাম্প ও সচেতনতামূলক কর্মশালা আয়োজন করা হয়, যেখানে শিশু ও তাদের পরিবারকে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের গুরুত্ব সম্পর্কে শেখানো হয়। তিনি নিয়মিত নারীর অধিকার, আত্মনির্ভরশীলতা ও সামাজিক সচেতনতা নিয়ে কর্মশালা করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় অনেক নারী এখন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছেন, যা তাদের পরিবার ও সমাজের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে এনেছে। বান্দরবানের স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্য হিসেবে বৃক্ষরোপণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনে সচেতনতা বাড়ানোর জন্যও কাজ করছেন।
নিজের কার্যক্রম সম্পর্কে ছমিরা আক্তার শিরিন বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সমাজ পরিবর্তন করতে হলে শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করলে টেকসই পরিবর্তন সম্ভব। তরুণরা যদি নিজেদের সঙ্গে সমাজের জন্যও কাজ
করে, তবে আমরা সবাই মিলে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে পারব। আমার স্বপ্ন, একদিন কোনো শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত
হবে না, কোনো নারী অবহেলিত থাকবে না,
আর সবাই পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হবে। মানবতার জন্য কাজ করাই জীবনের
সবচেয়ে বড় অর্জন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স গঠন র র জন য ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে এসে নিহত ৭৪৩ ফিলিস্তিনি
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ও ইসরায়েলসমর্থিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে খাবার নিতে এসে ৭৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কয়েক সপ্তাহে ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত হয়েছেন আরও চার হাজার ৮৯১ জন। গতকাল শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গাজায় মে মাসের শেষ দিক থেকে ত্রাণ বিতরণ শুরু করে জিএইচএফ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জিএইচএফের কেন্দ্রগুলোতে হামলায় অন্তত ৭৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪ হাজার ৮৯১ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য কাতারে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে আলোচনা চললেও গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামেনি। আজ রোববার ভোরেও গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
জিএইচএফ ইতিমধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সংস্থাটির কর্মীদের পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনীও ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সংখ্যার বিষয়ে আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, মর্মান্তিক বিষয় হলো- তারা সবাই ত্রাণ নিতে ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলেন এবং খাবারের প্যাকেটের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
হানি মাহমুদ গাজা নগরী থেকে সংবাদ সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। হিসাব করে খাবার খাচ্ছে। অনেক পরিবারই খাবার খেতে পারছে না। অনেক মা নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।’
এই সপ্তাহের শুরুতে কয়েকজন মার্কিন ভাড়াটে কর্মীর বরাত দিয়ে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি ও স্ট্যান গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। তারা আরও বলেন, সেখানে অস্ত্রে সজ্জিত কর্মীরা যেন যা খুশি তাই করছেন।
তবে জিএইচএফ এপির প্রতিবেদনকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বলেছে, তাদের কাছে নিজেদের কার্যক্রম স্থলগুলোর নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জুনের শেষ দিকে ট্রাম্প প্রশাসন জিএইচএফের জন্য ৩ কোটি ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে খাবার নিতে গিয়ে আহত হওয়া মজিদ আবু লাবান আল জাজিরাকে বলেন, ‘আমার সন্তানেরা টানা তিন দিন না খেয়ে ছিল। তাই আমি বাধ্য হয়ে ওই (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলাম।’
গাজায় আজও নিহত ২৭ জন
গাজায় ২০ মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। আজ রোববার ভোরেও গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা নগরীর কাছের এলাকা তুফাতে হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-আহলি আরব হাসপাতাল। দক্ষিণের খান ইউনিসে একটি তাঁবুতে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় দুজন নিহত হন এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। আগের দিন শনিবার ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৭৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েল।