অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি ও মহাসচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে এয়ার টিকিটের মূল্য কারসাজিও রয়েছে। আটাব সংস্কার পরিষদ থেকে তিন মন্ত্রণালয়ে এসব লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কেন আটাবে প্রশাসক নিয়োগ করা হবে না, তা জানতে শোকজ (কারণ দর্শাও) নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ২২ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহকে শোকজ পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তাহসিনা বেগমের সই করা নোটিশে সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়।

এর আগে গত ১৮ মার্চ আটাব সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক ও মঈন ট্রাভেলসের মালিক গোফরান চৌধুরী অভিযোগপত্র জমা দেন। এটা দেওয়া হয় মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের কাছে। এ আবেদনে সভাপতি ও মহাসচিবকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ বলা হয়। কমিটি বাতিল করে দ্রুত প্রশাসক নিয়োগের আহ্বান জানানো হয়। একই দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (বিমান ও সিএ) কাছে একই অভিযোগ করে সংস্কার পরিষদ। ১ মার্চ গোফরান চৌধুরীকে আহ্বায়ক এবং আমির হোসেন আরিফকে সদস্য সচিব করে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট আটাব সংস্কার পরিষদ গঠন করা হয়।

অভিযোগগুলো কী
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ সংগঠনের মহাসচিব থাকাকালে ২০১৯ সালে আটাব অনলাইন (ওটিএ-অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি) প্রতিষ্ঠা করেন। এটা বাণিজ্য সংঘবিধি ও আটাব সদস্যদের স্বার্থের পরিপন্থি। আটাব অনলাইনকে ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ জন্য আব্দুস সালাম আরেফের এয়ার স্পিড (প্রা.

) লি. এবং মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহর সায়মন ওভারসিজের নামে চেক ইস্যু করা হয়। ভিন্ন চেকে এয়ার স্পিডের নামে ৯৭ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৬ টাকা এবং সায়মন ওভারসিজের নামে ৭৭ লাখ ২১ হাজার ১১৭ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। পরে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আটাব অনলাইন বিলুপ্ত করা হলেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।

এর আগে ২০২২ সালে আটাব অনলাইন গঠনের নামে তৎকালীন সভাপতি এসএন মনজুর মোরশেদ মাহবুব এবং মহাসচিব আব্দুস সালাম আরেফের বিরুদ্ধে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তখন এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেন কমিটির কয়েকজন নেতা।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বর্তমান কমিটির সময় নির্বাচন ও আটাব মেলাসহ বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে। এর পক্ষে কোনো বিল জমা দেওয়া হয়নি। আরেফ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে ব্লক করে এয়ার স্পিড নামে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে প্রচার করেন। চড়া দামে বিক্রি করেন। ২০২৩-২৪ সালে মালয়েশিয়াগামী এবং ২০২৫ সালে সৌদি আরবগামী যাত্রীদের টিকিট গ্রুপ ব্লক করে দাম বাড়িয়ে বেচেন। এ ছাড়া আটাব সদস্যদের বিদেশে ফেম ট্রিপের নামে অর্থ পাচার করেছেন সভাপতি ও মহাসচিব।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের আত্মীয় পরিচয় দিতেন। প্রশাসনের সহায়তায় ২০১১ সাল থেকে ‘নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে’র মাধ্যমে দুবার মহাসচিব এবং সভাপতি হন। আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মরহুম মুহায়মিন সালেহর মেয়ে। আওয়ামী লীগ নেত্রী পরিচয়ে তিনি একাধিকবার সহসভাপতি ও মহাসচিবসহ বিভিন্ন পদে নির্বাচিত হন।

সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক গোফরান চৌধুরী সমকালকে বলেন, সভাপতি ও মহাসচিব আটাব অনলাইন থেকে চেকের মাধ্যমে নিজ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। পরে এটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে শেয়ারহোল্ডারদের টাকা ফেরত দেননি।

আটাব সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ সমকালকে বলেন, ‘সংস্কার পরিষদ ভুঁইফোঁড় সংগঠন। এর সঙ্গে জড়িতদের ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় পরিচিতি নেই। নানা অভিযোগে এরই মধ্যে ৩০ জনের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। এখন তাদের কেউ কেউ সংস্কার পরিষদের নামে আটাবের নির্বাচিত কমিটির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে সরকার, মিডিয়া ও জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে।’

নিয়মরক্ষার নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২৪ সালের ৫ মার্চ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। এতদিন পর অভিযোগ করা অবান্তর।’

অনলাইনের নামে চেক ইস্যু করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে সালাম বলেন, ‘এটা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২০১৯ সালে এস এন মনজুর মোরশেদ মাহবুবের উদ্যোগে। সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতে অনলাইন বিলুপ্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য মনজুর মোরশেদ মাহবুবের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। আটাব অনলাইনের নামে আমরা কোনো চেক ইস্যু বা টাকা আত্মসাৎ করিনি।’

অর্থ পাচার ও টিকিট ব্লকিংয়ের বিষয়ে সভাপতি বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক নই। এখন আমাদের যদি ফ্যাসিস্টের সহযোগী তকমা লাগানো হয়, তাহলে তো বলব, গত ১৬ বছর যারা এখানে ছিলেন ও ব্যবসা করেছেন, সবাই তাই।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নোটিশের জবাব যথাসময়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।’
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য গ কর আট ব স সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবিতে ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন, গবেষণায় মাত্র ২.০৮%

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। এতে গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ২.০৮ শতাংশ।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের অধ্যাপক আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে বাজেট সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বাজেটের খুঁটিনাটি তুলে ধরেন।

এর আগে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের এক সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছর প্রস্তাবিত বাজেট এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৯৯৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার সংশোধিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৪-২৫ বছরে গবেষণাখাতে ২০ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এবার সেটি শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়েছে।

অন্যদিকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মোট বাজেটের ২৮.৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ২৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেতন, ২০.৮৪ শতাংশ তথা ২১৫ কোটি ৯১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ভাতা বাবদ, পণ্য ও সেবা বাবদ ২৭.৬২ শতাংশ তথা ২৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা এবং পেনশন বাবদ ১৩.৪১ শতাংশ তথা ১৩৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ঘোষিত বাজেটের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ৮৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎস থেকে ৯০ কোটি টাকা আয় দেখানো হয়েছে। এতে ঘাটতি থাকবে ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

গবেষণাখাতের অপ্রতুল বরাদ্দ নিয়ে কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাজেট প্রণয়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। আমরা এর বাইরে যেতে পারি না।

তিনি আরও বলেন, এর আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে গবেষণাখাতে বাজেটের বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি আমাদের প্রস্তাব আকারে এটি দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

সাধারণত সিন্ডিকেট সভায় বাজেট অনুমোদনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে চূড়ান্তভাবে বাজেট পাশ করা হয়। তবে এবার সিনেট অধিবেশন আয়োজনে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এবারই প্রথম সিনেটে বাজেট উপস্থাপন না করে কোষাধ্যক্ষ সংবাদ সম্মেলন করলেন।

এর কারণ হিসেবে কোষাধ্যক্ষ বলেন, সিনেটে ২৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধির মেয়াদ ১৫ জুন শেষ হয়েছে। ৩৫ রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকে ফ্যাসিবাদের সহযোগী রয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, সিনেটে সরকার থেকে প্রতিনিধি থাকে, এখনও সরকার থেকে প্রতিনিধি মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ফলে আমাদের কারণে নয়, প্রশাসনিক জটিলতায় আমরা এ বছর নির্ধারিত সময়ে সিনেট অধিবেশন করতে পারছি না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির শেয়ারহোল্ডারদের ২৫% লভ্যাংশ অনুমোদন
  • সরাসরি: যুদ্ধ বাধলে ইরান-ইসরায়েলের অর্থনীতির কী হাল হবে?
  • সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে জমায় উল্লম্ফন
  • ২ কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
  • ইরান বিষয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বিরোধ
  • জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে তৈরি হবে ‘গণমিনার’
  • মার্জিন ঋণ-নেগেটিভ ইক্যুইটি-প্রভিশনের তথ্য চায় বিএসইসি
  • ঢাবির ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেট প্রকাশ, অবহেলিত গবেষণা ও স্বাস্থ্য খ
  • ঢাবিতে ১ হাজার ৩৫ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন, গবেষণায় মাত্র ২.০৮%
  • দাবি নিষ্পত্তিতে নির্ভরযোগ্য অবস্থানে ‘গার্ডিয়ান’