ছয় সংস্থা একীভূত করার উদ্যোগ, আপত্তিও উঠেছে
Published: 4th, May 2025 GMT
দেশে বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করা ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করতে চায় সরকার। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির মতামতের ভিত্তিতে সরকার এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। তবে সরকারের এ উদ্যোগ নিয়ে সংস্থাগুলোর কারও কারও মধ্যে আপত্তি রয়েছে।
বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ), পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ (পিপিপিএ) এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।
বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে একাধিক সংস্থা কাজ করে। কেউ বিনিয়োগের অনুমোদন দেয়, কেউ নিবন্ধন দেয়, কেউ দেয় জমি বরাদ্দ। এ ছাড়া পরিবেশ ছাড়পত্র, ট্রেড লাইসেন্স প্রভৃতি প্রয়োজনেও বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরতে হয়। তবে মাঠপর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। ফলে পদে পদে বিনিয়োগকারীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। এসব নিয়ে ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের পরামর্শ ছিল, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এতগুলো সংস্থার বদলে একটি সংস্থা থাকলে তাতে বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হতো। সেই চিন্তা থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান।
যদিও এ কমিটি গঠন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সংস্থা। এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য, বিনিয়োগকারীদের সুবিধার জন্য একটি একক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম করা যেতে পারে। যেটি বিনিয়োগকারীদের জন্য এক দরজায় সেবা (ওএসএস) হিসেবে কাজ করবে। তবে সব প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করা ঠিক হবে না। কারণ, অনেক প্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত দক্ষতার দুর্বলতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। আবার বিনিয়োগকারীরা কিছু প্রতিষ্ঠানের অধীন বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নন। ফলে ভালো করতে গিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কমিটি গঠনগত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) গভর্নিং বোর্ডের সভায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর একীভূতকরণের প্রস্তাব ওঠে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিডার গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সভায় একীভূতকরণের প্রস্তাব যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়। সে আলোকে কমিটি গঠন করে ৩০ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
আট সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানকে। কমিটিতে সদস্যসচিব করা হয়েছে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীকে। বাকি ছয় সদস্য হলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়–সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো.
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে একীভূতকরণের বিষয়ে বিডার উত্থাপিত প্রস্তাবের সামগ্রিক বিষয় পরীক্ষা ও যাচাইপূর্বক মতামত প্রদান করবে এ কমিটি। যদিও বেজা ও বিডা বাদে অন্য চার সংস্থার কাছে প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি পাঠানো হয়নি।
আপত্তি সংস্থা ও বিনিয়োগকারীদেরছয়টি সংস্থাকে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়ে ইতিমধ্যে আপত্তি জানিয়েছে একাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী ও কয়েকটি সংস্থা। যেমন নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে ১৪ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছে, এমন একটি চীনা কোম্পানি ২৩ এপ্রিল বিষয়টি নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূতের কাছে চিঠি লিখেছে। চিঠিতে ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, বেপজার বিনিয়োগ–সহায়ক নীতির কারণে তাঁরা ইপিজেডে বিনিয়োগ করেছেন। এখন ছয় সংস্থা একীভূত হলে তাঁদের সামনে অনিশ্চয়তা বাড়বে এবং ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ (এফডিআই) নিরুৎসাহিত হবে।
আবার ঢাকা ইপিজেডে কার্যক্রম পরিচালনা করা আরেকটি চীনা বস্ত্র কোম্পানি ২৭ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বিষয়ে চিঠি লেখে। চিঠিতে একীভূত করার উদ্যোগ স্থগিতের অনুরোধ জানিয়ে কোম্পানিটির এমডি বলেন, বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যথাযথ আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত আসা উচিত।
বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বেজা, বেপজা, হাইটেক পার্কের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তাও এ উদ্যোগের নানা জটিলতার কথা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেজা ও বেপজার দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিডা বিনিয়োগের নিবন্ধন দেয়, কিন্তু জমি বরাদ্দ দিতে পারে না। বেপজা ও বেজা আলাদা আইনের অধীন পরিচালিত হয়। আর বেপজা শুধু রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে। ফলে তাদের কাজের পরিধি, ধরন ও সক্ষমতায় অনেক পার্থক্য রয়েছে। আবার এই ছয় সংস্থার বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট সেবা দেয়। এগুলো সমন্বয় করে একীভূত প্রতিষ্ঠান তৈরি করা দুরূহ বিষয়। বরং সব কটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সাধারণ ওএসএস ধরনের প্ল্যাটফর্ম করা যেতে পারে।
ঢাকা চেম্বারের (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও শাশা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, সংস্থাগুলো একীভূত করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটি ভালো পদক্ষেপ। এতে বিনিয়োগকারীরা সহজে সেবা পাবেন এবং সরকারের পক্ষেও কেন্দ্রীয়ভাবে অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজ হবে। তবে বেপজাকে এ প্রক্রিয়া থেকে আলাদা রাখা প্রয়োজন বলে মত দেন শামস মাহমুদ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য একট র জন য এক এক ধ ক পর চ ল ক জ কর আপত ত ব যবস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন কীভাবে
আজ থেকে সব করদাতাকে অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে হবে। দেশের প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) আছেন। করযোগ্য আয় থাকলে টিআইএনধারীদের রিটার্ন দিতে হয়।
গত বছর থেকে নির্দিষ্ট এলাকার অধিক্ষেত্রের ব্যক্তি করদাতা, সারা দেশের ব্যাংকে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়। গতবার ১৭ লাখের বেশি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দেন।
এবার দেখা যাক কীভাবে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেবেন।
কোথায় দেবেন
সব করদাতা ২০২৫-২৬ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জমা দিতে পারবেন।
অনলাইনে রিটার্ন জমার আগে প্রথমে করদাতাকে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন নিতে করদাতার নিজের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নম্বর লাগবে। এ দুটি দিয়ে নিবন্ধন করে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাপ্তি রসিদ মিলবে।
কীভাবে দেবেন
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন তথা ই-রিটার্ন দিতে করদাতাকে কোনো কাগজপত্র আপলোড করতে বা জমা দিতে হবে না। শুধু ওই সব দলিলাদির তথ্য দিলেই হবে। যেমন সনাতনি পদ্ধতিতে চাকরিজীবীদের আয়ের বা বেতন-ভাতার প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যাংক হিসাবের এক বছরের লেনদেন বিবরণী (স্টেটমেন্ট) জমা দিলেই চলবে। আগের বছরের ১ জুলাই থেকে পরের বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত (অর্থবছর) সময়ের ব্যাংক হিসাবের স্থিতি, সুদের তথ্য ও ব্যাংক হিসাবের নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য দিতে হবে।
কীভাবে কর দেবেন
করদাতারা ব্যাংক ট্রান্সফার, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, রকেট, নগদ অথবা অন্য কোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই কর পরিশোধ করে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের জন্য রাজস্ব বোর্ডের কর্মীরা কল সেন্টার এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদান করবেন।
যেসব দলিলের তথ্য প্রয়োজন
রিটার্ন জমার সময় নিজের প্রয়োজন অনুসারে কিছু কাগজপত্রের তথ্য লাগবে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস থেকে এসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করতে হবে। যেসব কাগজপত্রের লাগবে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌরকরের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট।
বিনিয়োগ করে কর রেয়াত পেতে চাইলেও কিছু কাগজপত্র লাগবে। যেমন জীবনবিমার কিস্তির প্রিমিয়াম রসিদ, ভবিষ্য তহবিলে দেওয়া চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে (ডিপিএস) চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিলের চাঁদা ও গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ, জাকাত তহবিলে দেওয়া চাঁদার সনদ।