সরকার যুদ্ধংদেহী হলেও পাকিস্তানের মানুষ কেন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চান না
Published: 5th, May 2025 GMT
পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সাঁজোয়া যানের বহর সীমান্তের দিকে এগিয়ে চলেছে। আকাশে যুদ্ধবিমান ছুটে বেড়াচ্ছে। টেলিভিশনের পর্দায় প্রচারিত হচ্ছে সংঘাতের আশঙ্কা বার্তা। জাতীয় নেতারা যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের কড়া জবাব দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
কিন্তু ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান যখন যুদ্ধংদেহী গর্জন তুলছে, তখন দেশটির অবসাদগ্রস্ত সাধারণ মানুষ যুদ্ধ করাকে দেশের জন্য সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় হিসেবে দেখছেন।
সরকারি বক্তব্য আর জনগণের ক্লান্তির মধ্যকার এ ফারাক থেকে স্পষ্ট, পাকিস্তান এখন আরও গভীর ভঙ্গুর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক হতাশা দেশটির নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো এবং বাসাবাড়িতে যুদ্ধ বা সীমানা নিয়ে আলোচনার তুলনায় মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, প্রতিনিধিত্বহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং অনিশ্চয়তায় ঢাকা ভবিষ্যৎ নিয়েই বেশি কথা হচ্ছে।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় দুই দেশের দীর্ঘদিনের শত্রুতা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ হামলার এক সপ্তাহ পর পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অধ্যয়নরত ২১ বছর বয়সী তাহসিন জাহরা বলছিলেন, ‘এটা আমাকে অস্থির করে তোলে।’
তাহসিন আরও বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি, নেতারা শুধু শক্তি প্রদর্শন করতে চান। এমনিতেই আমাদের অনেক সমস্যা আছে। এর ভেতর যুদ্ধ নিয়ে এত কথা বলাটা খুব বাড়াবাড়ি বলে মনে হয়। আমাদের শান্তি দরকার, নতুন কোনো ঝামেলা নয়।’
এই পাকিস্তানি শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় আমার পরিবারের জন্য শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ রাজনীতিবিদদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাঁরা অনেক বেশি কথা বলেন। কিন্তু আমরা তেমন কোনো পরিবর্তন দেখি না। মনে হয়, তাঁরা বুঝতেই পারেন না, মানুষ কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
যাঁরা এখনো দেশপ্রেমে অটল আছেন, তাঁদের মধ্যেও দেশের সামনে থাকা বিশাল বাধাগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে।
পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো এবং বাসাবাড়িতে যুদ্ধ বা সীমানা নিয়ে আলোচনার তুলনায় মুদ্রাস্ফীতি বেকারত্ব, প্রতিনিধিত্বহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং অনিশ্চয়তায় ঢাকা ভবিষ্যৎ নিয়েই বেশি কথা হচ্ছে।ইসলামাবাদের ২৫ বছর বয়সী আরেক শিক্ষার্থী ইনামুল্লাহ বলেন, ‘আমি মনে করি, দেশ এখন অনেক দুর্বল। কারণ, অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের পেছনের দিকে টেনে নিচ্ছে।’
তবু পাকিস্তানের নাগরিকেরা আশ্চর্য রকমের সহনশীল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধকে ব্যঙ্গ করে তৈরি মিম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। যেগুলো মাঝেসাঝে অনেক পাকিস্তানির চোখে ভারতীয়দের ‘যুদ্ধবাজ মনোভাবকে’ উপহাস করে বানানো। এ ধরনের কালো কৌতুক বা হাস্যরসকে অনেকে মানসিক চাপ সামলানোর কৌশল হিসেবে দেখছেন।
লাহোর শহরের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জাভেরিয়া শাহজাদ বলেন, হ্যাঁ, এটিকে সহনশীলতা বলা যায়। কিন্তু একই সঙ্গে এটি মনোযোগ–বিচ্যুতিও বটে।
শাহজাদ বলেন, গত কয়েক বছরে তিনি তাঁর রোগীদের মধ্যে এক গভীর হতাশা লক্ষ করেছেন। তাঁর মতে, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের কারণে নাগরিক স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে এবং দেশ এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।’
পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই সেনাবাহিনী কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। শুধু সীমান্ত রক্ষা নয়; বরং পর্দার আড়াল থেকে দেশের রাজনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করছে তারা। এটি ঐতিহাসিকভাবে জনগণের গভীর আনুগত্য অর্জন করেছে এবং জাতীয় সংকটকালে, যেমন ভারতের সঙ্গে একাধিক যুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
২০১৯ সালে যখন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সশস্ত্র গোষ্ঠী ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বহু সদস্যকে হত্যা করে এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে, তখনো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতি জনসমর্থন ছিল প্রবল।
লাহোরের কাছে একটি সীমান্ত নিরাপত্তাচৌকি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
সারা দেশে দাঁড়িপাল্লার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে: গোলাম পরওয়ার
আগামী নির্বাচনে ইসলামী আদর্শের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, সারা দেশে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের অনুকূলে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ অবাধ ও নির্বিঘ্নে নিজেদের ভোট প্রয়োগ করতে পারলে ইসলামী আদর্শের শক্তিকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে দেশ শাসনের দায়িত্ব অর্পণ করবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের বিয়ানীবাজারের একটি মিলনায়তনে উপজেলা জামায়াত আয়োজিত এক জনশক্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার এ কথাগুলো বলেন। আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এই তথ্য জানানো হয়।
সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট-বাকশালী আওয়ামী লীগ সরকার ভিন্ন একটি দেশের প্রেসক্রিপশনে ক্ষমতায় এসে দেশের আলেম-ওলামাদের ওপর জেল–জুলুম চালিয়েছে। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের লজ্জাজনক পতন হয়েছে। তাই আগস্ট বিপ্লবকে অর্থবহ ও টেকসই করতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
রাষ্ট্রের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে পতিত স্বৈরাচারের অনুসারীরা সক্রিয় রয়েছে বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘তাই ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আসন্ন নির্বাচনে প্রতিটি আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে হবে। আগামী নির্বাচনে দেশে ভোট বিপ্লব ঘটানোর জন্য নেতা-কর্মীদের এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট-৬ আসনের জন্য দলটির মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন ইসলামী দলগুলোকে নেতৃত্বের আসনে দেখতে চায়। দেশে ইসলামের পক্ষে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে অচিরেই জনগণের সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হবে, ইনশা আল্লাহ। কোনো ষড়যন্ত্রই জনতার বিজয়কে ঠেকাতে পারবে না।’
বিয়ানীবাজার উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ফয়জুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে পৌর জামায়াতের আমির মাওলানা জমির হোসাইনসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।