পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর সাঁজোয়া যানের বহর সীমান্তের দিকে এগিয়ে চলেছে। আকাশে যুদ্ধবিমান ছুটে বেড়াচ্ছে। টেলিভিশনের পর্দায় প্রচারিত হচ্ছে সংঘাতের আশঙ্কা বার্তা। জাতীয় নেতারা যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের কড়া জবাব দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

কিন্তু ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান যখন যুদ্ধংদেহী গর্জন তুলছে, তখন দেশটির অবসাদগ্রস্ত সাধারণ মানুষ যুদ্ধ করাকে দেশের জন্য সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় হিসেবে দেখছেন।

সরকারি বক্তব্য আর জনগণের ক্লান্তির মধ্যকার এ ফারাক থেকে স্পষ্ট, পাকিস্তান এখন আরও গভীর ভঙ্গুর অবস্থার মুখোমুখি হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক হতাশা দেশটির নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে।

পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো এবং বাসাবাড়িতে যুদ্ধ বা সীমানা নিয়ে আলোচনার তুলনায় মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, প্রতিনিধিত্বহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং অনিশ্চয়তায় ঢাকা ভবিষ্যৎ নিয়েই বেশি কথা হচ্ছে।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলায় দুই দেশের দীর্ঘদিনের শত্রুতা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ হামলার এক সপ্তাহ পর পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অধ্যয়নরত ২১ বছর বয়সী তাহসিন জাহরা বলছিলেন, ‘এটা আমাকে অস্থির করে তোলে।’

তাহসিন আরও বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি, নেতারা শুধু শক্তি প্রদর্শন করতে চান। এমনিতেই আমাদের অনেক সমস্যা আছে। এর ভেতর যুদ্ধ নিয়ে এত কথা বলাটা খুব বাড়াবাড়ি বলে মনে হয়। আমাদের শান্তি দরকার, নতুন কোনো ঝামেলা নয়।’

এই পাকিস্তানি শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতি ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ায় আমার পরিবারের জন্য শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ রাজনীতিবিদদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাঁরা অনেক বেশি কথা বলেন। কিন্তু আমরা তেমন কোনো পরিবর্তন দেখি না। মনে হয়, তাঁরা বুঝতেই পারেন না, মানুষ কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’

যাঁরা এখনো দেশপ্রেমে অটল আছেন, তাঁদের মধ্যেও দেশের সামনে থাকা বিশাল বাধাগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে।

পাকিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো এবং বাসাবাড়িতে যুদ্ধ বা সীমানা নিয়ে আলোচনার তুলনায় মুদ্রাস্ফীতি বেকারত্ব, প্রতিনিধিত্বহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং অনিশ্চয়তায় ঢাকা ভবিষ্যৎ নিয়েই বেশি কথা হচ্ছে।

ইসলামাবাদের ২৫ বছর বয়সী আরেক শিক্ষার্থী ইনামুল্লাহ বলেন, ‘আমি মনে করি, দেশ এখন অনেক দুর্বল। কারণ, অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের পেছনের দিকে টেনে নিচ্ছে।’

তবু পাকিস্তানের নাগরিকেরা আশ্চর্য রকমের সহনশীল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধকে ব্যঙ্গ করে তৈরি মিম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। যেগুলো মাঝেসাঝে অনেক পাকিস্তানির চোখে ভারতীয়দের ‘যুদ্ধবাজ মনোভাবকে’ উপহাস করে বানানো। এ ধরনের কালো কৌতুক বা হাস্যরসকে অনেকে মানসিক চাপ সামলানোর কৌশল হিসেবে দেখছেন।

লাহোর শহরের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জাভেরিয়া শাহজাদ বলেন, হ্যাঁ, এটিকে সহনশীলতা বলা যায়। কিন্তু একই সঙ্গে এটি মনোযোগ–বিচ্যুতিও বটে।

শাহজাদ বলেন, গত কয়েক বছরে তিনি তাঁর রোগীদের মধ্যে এক গভীর হতাশা লক্ষ করেছেন। তাঁর মতে, রাজনৈতিক দমন-পীড়নের কারণে নাগরিক স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে এবং দেশ এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।’

পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই সেনাবাহিনী কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। শুধু সীমান্ত রক্ষা নয়; বরং পর্দার আড়াল থেকে দেশের রাজনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করছে তারা। এটি ঐতিহাসিকভাবে জনগণের গভীর আনুগত্য অর্জন করেছে এবং জাতীয় সংকটকালে, যেমন ভারতের সঙ্গে একাধিক যুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

২০১৯ সালে যখন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সশস্ত্র গোষ্ঠী ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর বহু সদস্যকে হত্যা করে এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে, তখনো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতি জনসমর্থন ছিল প্রবল।

লাহোরের কাছে একটি সীমান্ত নিরাপত্তাচৌকি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই শহীদদের জাতীয় বীর ঘোষণা

জুলাই ঘোষণাপত্রে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪’-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কার করা সংবিধানের তফসিলে এ জুলাই ঘোষণাপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।

আরো পড়ুন:

জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত ছিলেন

রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থান

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে প্রয়োজনীয় সব আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হলো।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ যুক্তিসঙ্গত সময়ে আয়োজিতব্য অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রতিশ্রুত প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন ও মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই শহীদদের জাতীয় বীর ঘোষণা
  • ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা’
  • ঢাবিতে ‘হাসিনার পলায়নের’ বর্ষপূর্তিতে বিভিন্ন দলের কর্মসূচি
  • বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে জুলাই
  • সংবাদমাধ্যম সরকারের চেয়ে জনগণের কাছে বেশি দায়বদ্ধ: তথ্য উপদেষ্টা
  • দেশে জনগণের সরকার জরুরি হয়ে পড়েছে: এ্যানি
  • ইসি মেরুদণ্ডহীন প্রতিষ্ঠান: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
  • শহীদ মিনার থেকে এক দফা ঘোষণা
  • শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা চুক্তি অবিলম্বে প্রকাশের দাবি সিপিবির
  • ১৬ বছর বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে ঘুমাতে পারেনি: নিপুণ রায়