হেফাজতে ইসলামকে আইনি নোটিশ দিলেন এনসিপির তিন নেত্রীসহ ৬ নারী
Published: 5th, May 2025 GMT
প্রকাশ্য জনসভায় নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের গালিগালাজের অভিযোগে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এনসিপির তিন নেত্রীসহ ছয়জন নারী। আজ সোমবার দুপুরে ঢাকার জজ আদালতের আইনজীবীর মাধ্যমে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে হেফাজতের বিরুদ্ধে কেন মানহানির মামলা করা হবে না, সে বিষয়ে সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তা না হলে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্যদের মানহানি করার অপরাধে হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন তাঁরা।
নোটিশ পাঠানো এনসিপির তিন নেত্রী হলেন দলের উত্তরাঞ্চলের সংগঠক দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী, সদস্য সৈয়দা নীলিমা দোলা ও নীলা আফরোজ। অন্য তিন নারী হলেন লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট উম্মে রায়হানা, লেখক ও শিক্ষক উম্মে ফারহানা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও সংস্কৃতিকর্মী ক্যামেলিয়া শারমিন। নোটিশে প্রাপক হিসেবে ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের’ নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে সৈয়দা নীলিমা দোলা প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তে নয়, বরং ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে তাঁরা তিনজন (এনসিপির তিনজন) এই নোটিশে যুক্ত হয়েছেন।
নোটিশে আইনজীবী পলাশ হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশে বলেছেন, আপনি বা আপনারা শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সব মতের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী নন, সেহেতু আপনি বা আপনারা বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে অসম্মানসূচক ও মানহানিকর বিভিন্ন বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার করেছেন। এটি শুধু নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনই নয়, বরং বাংলাদেশের সব নারীর জন্যই মানহানি ও অবমাননাকর বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
হেফাজতের উদ্দেশে নোটিশে বলা হয়, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সম্পর্কে আপনি বা আপনারা এই কমিশনের সঙ্গে বা সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের গঠনমূলক আলোচনা না করে কমিশনের সম্মানিত ও সংগ্রামী নারীনেত্রীদের গালিগালাজ করেছেন। এটি সম্পূর্ণ আইন ও ধর্মের পরিপন্থী বলে সর্বজনস্বীকৃত। তথাপি ওই গালিগালাজকে আপনারা সাধারণভাবে গ্রহণ করে উৎসাহ দিয়েছেন। ফলে ওই গালিগালাজের দায়ভার দল হিসেবে ও দলের নেতা–কর্মী হিসেবে আপনাদের দল এবং আপনারা সবাই সম্মিলিতভাবে দায়ী।
নোটিশে বলা হয়, এই গালিগালাজ দণ্ডবিধির ৪৯৯ ও ৫০০ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এই আইনি নোটিশ পাঠানো যাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প র ত ন আপন র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলায় ‘অ্যামিকাস কিউরি’ নিয়োগ ট্রাইব্যুনালের
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে এই নিয়োগ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলার অপর আসামি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলম (৪০)।
শুনানি শেষে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম সাংবাদিকদের বলেন, বিচারের স্বচ্ছতা, আসামিদের আবার সুযোগ দেওয়া ও আইনের সঠিক ব্যাখ্যা গ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনাল আজ একটি আদেশ দিয়েছেন। সেটি হলো, এই মামলায় মতামত গ্রহণের জন্য, ট্রাইব্যুনালকে সহায়তার জন্য অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল স্বপ্রণোদিত হয়ে তাঁকে এই নিয়োগ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৫ জুন।
মামলার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে গাজী মোনাওয়ার বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মামলা তদন্তাধীন থাকা অবস্থায় এই দুই আসামির কিছু কথোপকথন তদন্ত সংস্থার দৃষ্টিগোচর হয়। সেখানে এক আসামি অপরজনকে বলছেন, ‘২২৭ জনকে হত্যা করার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।’ শুধু তা–ই নয়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকেও হুমকিস্বরূপ কথাবার্তা কথোপকথনে প্রকাশিত হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা রেকর্ডটি সংগ্রহ করেন। সেটি সঠিক কি না, তার যাচাই প্রতিবেদন তিনি গ্রহণ করেন। এতে দেখা গেছে, কথোপকথন এই দুজন আসামির।
গাজী মোনাওয়ার বলেন, প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল আসামিদের সশরীরে উপস্থিত হয়ে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁরা ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে জবাব দেননি। স্বচ্ছতার জন্য তাঁদের হাজির হতে ট্রাইব্যুনাল দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আজ এ বিষয়ে শুনানি বা আদেশের দিন ধার্য ছিল। দুই আসামির কেউ আজও ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হননি। ট্রাইব্যুনাল আজকেই আদেশ দিতে পারতেন, আইন সেটি কাভার করে। কিন্তু স্বচ্ছতা, আসামিদের আবার সুযোগ দেওয়ার জন্য, আইনের সঠিক ব্যাখ্যা গ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনাল আজ অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়েছেন।