সুন্দরবনের দস্যু করিম শরীফ বাহিনীর দুই সদস্যকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড। সোমবার (৫ মে) বিকেলে সুন্দরবনের শিবসা নদী সংলগ্ন আদাছগী এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও দুইটি নৌকা জব্দ হয়েছে।

মঙ্গলবার (৬ মে) সকালে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের চিফ স্টাফ অফিসার কমান্ডার সঞ্জীব কুমার দে।

আটককৃতরা হলেন- মো.

সাদ্দাম খান (২০) ও আব্বাস মোল্লা (৪০)।

আরো পড়ুন:

মাদারীপুরে ফেনসিডিলসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

সাতক্ষীরায় রাসায়নিক মিশ্রিত ৮৫০০ কেজি আম জব্দ

জব্দকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- দুইটি একনলা বন্দুক, একটি শর্টগান, একটি খেলনা বন্দুক, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম, ২৩ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ২০৪ রাউন্ড ফাঁকা কার্তুজ, ৯টি দেশীয় অস্ত্র, চারটি কুড়াল, সাতটি করাত, ১০টি রড, পাঁচটি হাতুড়ি, একটি সোলার প্যানেল, ২৮টি মোবাইল ফোন, ১১টি ওয়াকিটকি এবং ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দুইটি কাঠের নৌকা। 

কমান্ডার সঞ্জীব কুমার দে জানান, সোমবার (৫ মে) বিকেলে করিম শরীফ বাহিনীর দুই সদস্য মো. সাদ্দাম খান ও আব্বাস মোল্লাকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দীর্ঘদিন ধরে করিম শরীফ বাহিনীর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তারা ডাকাতি ছাড়াও দস্যুর বাহিনীকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য রসদ সরবরাহে সহযোগিতা করতেন। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ঢাকা/শহিদুল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আটক

এছাড়াও পড়ুন:

বাঘ ও তিমির গল্প

গত ১৮ মে সিঙ্গাপুর যাচ্ছিলাম। ইউসুফ এস আহমেদ লিখিত এবং ইশতিয়াক হাসান অনূদিত উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেলস অব বেঙ্গল বইটি অবসরে পড়ার জন্য সঙ্গে নিলাম। ইউসুফ এস আহমেদ একসময় পাকিস্তানের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব ফরেস্ট ছিলেন। ১৯২৬ সালে তিনি বন বিভাগে যোগ দেন এবং ১৯৫৯ সালে অবসরে যান। তাঁর ৩৩ বছরের অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ বইটির ৪১ পৃষ্ঠায় লিখিত বক্তব্যটি আমার নজর কাড়ে। ততক্ষণে বিমান সিঙ্গাপুরের মাটি ছুঁয়েছে, যে দেশটি তার শেষ বাঘটি হারিয়েছে ১৯৩০ সালে।

ইউসুফ এস আহমেদ ১৯২৯ সালে সুন্দরবন ডিভিশনের দায়িত্ব পান। বন্য প্রাণীর প্রতি আগ্রহের কারণে শিগগিরই ‘ওয়াইল্ড ম্যান অব ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট’ নামে পরিচিতি পেলেন। তিনি লিখেছেন, ‘ভোলা নদীর ওপারে ধানসাগর গ্রাম সুন্দরবনের এই অংশে পুবের সীমানা হিসেবে কাজ করছে। ১৯২৯/১৯৩০ সালের শীতকাল। বাঘের চামড়া এবং মাথাসহ পুরস্কার দাবি করে একটি চিঠি এল স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্প থেকে।’

বাঘটি ধানসাগর গ্রামে ঢুকে পড়লে স্থানীয় শিকারিদের সহায়তায় পুলিশের একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টরের গুলিতে মারা পড়ে। ধানসাগর শরণখোলা উপজেলার অধীন বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অন্তর্গত। এটি প্রায় ১০০ বছর আগের ঘটনা।

শত বছর পর ইদানীং বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব একটি পর্যায়ে এসেছে। বাংলাদেশ বন বিভাগের সহযোগিতায় ওয়াইল্ডটিম নামক সংগঠনটি সুন্দরবনের চারপাশে ‘ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম’ গঠন করেছে। সুন্দরবনের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রামে এখন ৩৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক ৪৯টি দলে ভাগ হয়ে প্রায় ১৮ বছর ধরে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো বাঘ গ্রামে ঢুকলেই এই দলের সদস্যরা বন বিভাগের সহযোগিতায় বাঘটিকে বনে ফিরিয়ে দেন। 

দেশের কোথাও বন্য প্রাণী, বিশেষ করে বাঘ মারলে একসময় এলাকায় তিনি ‘হিরো’ হয়ে যেতেন। এটি ছিল সামাজিক স্বীকৃতি। কিন্তু ব্রিটিশরা ভাবলেন, সুন্দরবনের যেসব এলাকা থেকে রাজস্ব বেশি আয় হয়, সেখানকার বনকর্মীদের পুরস্কৃত করলে ওই সব এলাকা বাঘশূন্য করা যাবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক রঞ্জন চক্রবর্তী লিখেছেন, ১৬ নভেম্বর ১৮৮৩ সালে সরকার ‘ক্যালকাটা গেজেট’–এর মাধ্যমে ঘোষণা করলেন: একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘ মারলে ৫০ রুপি এবং বাচ্চা মারলে ১০ রুপি পাওয়া যাবে। অবশ্য চামড়া ও মাথার খুলি জমা দিতে হবে। ১৯০৬ সালে এটি বাড়িয়ে ১০০ রুপি এবং ১৯০৯ সালে ২০০ রুপি করা হলো। ১৮৮১ থেকে ১৯১২ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ৪০০টি প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ মারা পড়েছে। যদিও এটি সরকারি হিসাব, বেসরকারি হিসাব কখনো জানা যায়নি। বাংলাদেশে একসময় প্রায় সর্বত্রই বাঘ ছিল, কিন্তু সুন্দরবনই আজ আমাদের ১২৫টি বাঘের শেষ আশ্রয়স্থল।

সিঙ্গাপুর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লি কং চিয়ান প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরে প্রদর্শিত তিমির কঙ্কাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাঘ ও তিমির গল্প