এশিয়াজুড়ে ছোট ছোট সংঘাত তৈরি করছে বড় যুদ্ধের শঙ্কা
Published: 6th, May 2025 GMT
যুদ্ধে জড়িয়েছে বিশ্বের কয়েকটি দেশ। মরছে মানুষ। চলছে মারণাস্ত্র ব্যবহারের প্রতিযোগিতা। আগামী দশকে যুদ্ধের এই প্রবণতা এশিয়া মহাদেশে স্থিতি পেতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আশাহি শিম্বুনের এক জরিপেও উঠে এসেছে এমন তথ্য।
জরিপে দেখা যায়, ভবিষ্যতে ‘এশীয় যুদ্ধ’ নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। অনেক জাপানিও মনে করেন, জাপান একটি বড় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬২ শতাংশ মনে করেন, এশিয়ায় বড় যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। এক দশক আগে এমন মত প্রকাশ করেছিলেন ৫০ শতাংশ।
এশিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা চরম পর্যায়ে রয়েছে। পরিস্থিতি যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে। দেশ দুটির মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে চীন।
অন্যদিকে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী একের পর এক নতুন এলাকা দখল করছে। দেশটিতে জান্তা সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এই সংঘাতে ভারত ও চীনের জোরাল ভূমিকা রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। বাংলাদেশ লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় ঢাকাকে মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে। বিশেষ করে আরাকান আর্মি রাখাইন দখল করায় সীমান্তের পরিস্থিতি জটিল হয়েছে।
পাশাপাশি অশান্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। এই অঞ্চলের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর অধিকাংশ মিয়ানমারে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে। ভিয়েতনাম- ফিলিপাইনে বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো একেকটি অঞ্চলে যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে।
ভিয়েতনামের সামরিক পরিস্থিতিতে চীন নাক গলানোর নজির নতুন নয়। দেশটি দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ‘সম্প্রসারণবাদী’ পদক্ষেপকে বড় হুমকি হিসেবে দেখে। গত দশকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহ যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে।
আশাহি শিম্বুনের জরিপে উত্তরদাতাদের মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছিল, ভবিষ্যতে জাপান বড় একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা কতটুকু। উত্তরদাতাদের ১২ শতাংশ বলেন, ‘খুব সম্ভাবনা’ রয়েছে। ৫০ শতাংশ মনে করেন পরিস্থিতি সেদিকে গড়াতে পারে। আর ৩০ শতাংশ মনে করেন যুদ্ধ হলেও জাপান তাতে নাও জড়াতে পারে। মাত্র ৫ শতাংশ মনে করেন জাপান কোনোভাবেই যুদ্ধে জড়াবে না।
এশিয়ায় জাপানকেন্দ্রিক আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্বেগগুলো সবই চীন সংশ্লিষ্ট । পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপানের জোট নিয়ে অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলছে। জাপান-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা চুক্তি সত্ত্বেও মাত্র ১৫ শতাংশ উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন, সংকটের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে অবশ্যই রক্ষা করবে। ৭৭ শতাংশ জাপানের প্রতিরক্ষা বিষয়ে ওয়াশিংটনের প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
ছোট সংঘাত থেকে বড় যুদ্ধের শঙ্কা
পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ ভারত-পাকিস্তান। ২০১৯ সালে সংঘর্ষের পর থেকে দেশ দুটি ক্রমাগত সামরিক সক্ষমতা বাড়িয়েছে। এ কারণে ছোট ছোট সংঘাত থেকে বড় যুদ্ধ শুরু হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেয়ালে পিঠ না ঠেকলে কোনো পক্ষই যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না। তবে ছোট সংঘাত থেকে অনেক বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে।
ওয়াশিংটনের থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক স্টিমসন সেন্টার মনে করে, ২০১৯ সালের তুলনায় দুই দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মধ্যে উত্তেজনা বেশি।
সামরিক সরঞ্জাম বৃদ্ধি
ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর প্রতিরক্ষা ব্যয় ঊর্ধ্বমুখী। দেশগুলো নতুন প্রজন্মের ট্যাঙ্ক, যুদ্ধজাহাজ, বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী সাজিয়েছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।
ফিলিপাইকে ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিভিন্ন অস্ত্র সহায়তা দিয়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪ সালে মার্কিন সেনাবাহিনী ফিলিপাইনে টাইফুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করলে ক্ষুব্ধ হয় চীন। এমন ঘটনা এশিয়ায় যুদ্ধের শঙ্কা তৈরি করে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ও মডার্ন ডিপলোমেসি
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ ল প ইন পর স থ ত বড় য দ ধ
এছাড়াও পড়ুন:
দলের নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলছে: এনসিপি
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে অধিক হারে নারীদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সমর্থকেরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি।
নারীদের প্রতি এই ধরনের নিপীড়ন ও যৌন হয়রানিমূলক প্রচারণার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে এনসিপি। দলটি বলেছে, এই ধরনের প্রচারণার অব্যাহত থাকলে তারা ভবিষ্যতে সব অনলাইন-অফলাইন নারী নির্যাতক ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এনসিপির এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। দলের পক্ষ থেকে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি অডিও কল ফাঁসের ঘটনায় এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীনকে জড়িয়ে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং পতিত ফ্যাসিবাদী দলের নেতা-কর্মীরা চরম কুরুচিপূর্ণ, যৌন হয়রানিমূলক ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এর আগে নানা সময়ে এনসিপির নারী নেত্রীদের লক্ষ্য করে একই ধরনের অবমাননাকর প্রচারণা চালানো হয়েছে। এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ প্রচার ও প্রোপাগান্ডা কেবল নারীর প্রতি অবমাননা ও নিপীড়নের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি তাদের রাজনৈতিক কর্তাসত্তা ও সক্ষমতাকে অস্বীকার করা এবং রাজনৈতিক পরিসরকে সংকুচিত করার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।
এনসিপি বলেছে, দীর্ঘ দেড় যুগের গুম-খুন-ধর্ষণ ও ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের পর জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে নারীরা নিজেদের কর্তাসত্তাকে পুনরুদ্ধার করেছেন। সুতরাং তাঁদের প্রতি যেকোনো ধরনের অবমাননাকর ও নিবর্তনমূলক আচরণ জুলাই অভ্যুত্থানের মৌলিক আকাঙ্ক্ষা ও আদর্শকে অস্বীকার করে। এনসিপি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, এমনকি ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলোর কিছু নেতা-কর্মীও এই যৌন হয়রানিমূলক প্রচারণায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। অনেক অনলাইন মিডিয়া ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বও এ ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতা, অপেশাদারত্বের পরিচয় দিয়েছেন। একটি মূলধারার দৈনিক পত্রিকাও তাজনূভা জাবীনকে জড়িয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ ফটোকার্ড প্রকাশ করেছে, যা জনপরিসরে তাঁকে আরও বেশি অরক্ষিত করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নমূলক মন্তব্যকে উসকে দিয়েছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এনসিপি রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ফলে এনসিপির নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে অধিক হারে নারীদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য পুরোনো রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সমর্থকগণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এনসিপি নারীদের প্রতি এই ধরনের নিপীড়ন ও যৌন হয়রানিমূলক ক্যাম্পেইনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। এই ধরনের ক্যাম্পেইন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এনসিপি সব অনলাইন-অফলাইন নারী নির্যাতক ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সর্বশক্তি দিয়ে তা মোকাবিলা করবে।