ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার আকাশি বিলে টর্নেডোর উৎপত্তি হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠাগ্রামের আকাশি মাঠে প্রায় তিন মিনিট ধরে টর্নেডো চললেও কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. শাহীন প্রথম আলোকে বলেন, বেলা দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে আকাশি মাঠে টর্নেডোর মতো একটি কুণ্ডলী দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্কও সৃষ্টি হয়। মানুষ ছোটাছুটি শুরু করেছিলেন। দুই থেকে তিন মিনিট স্থায়ী ছিল এটি। অনেকে খলার মধ্যে ধান শুকাচ্ছিলেন। ধানের খড় আকাশে উড়ছিল। কুণ্ডলীর ওপর কালো হয়ে গিয়েছিল। দুই থেকে তিন মিনিট পর কুণ্ডলীটি আকাশের অনেক ওপরে উঠে মিশে যায়। তবে এটি গ্রামের ভেতরে ঢোকেনি। তাই কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েকজন জানান, অনেকে মুঠোফোনে টর্নেডোর ভিডিও করেন। টর্নেডোর কাছাকাছি এলাকায় কোনো মানুষ ছিলেন না। উৎপত্তিস্থলে খড় উড়ছিল। টর্নেডোর ওপরের অংশ কালো হয়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ থাকার পর একসময় এটি আকাশে মিশে যায়। বিকেলের পর টর্নেডোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, কৃষকের ধান শুকানোর খলার পাশে আকাশি মাঠে ঘূর্ণমান কুণ্ডলীর উৎপত্তি হয়। মাটি ও খড় চারদিক দিয়ে ঘুরছিল। ধীরে ধীরে একটি কুণ্ডলী আকাশের দিকে উঠে গেছে। অনেকটা ফানেলের আকার ধারণ করে। আকাশে তখন চারপাশ অন্ধকারের মতো হয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, গোর্কণের জেঠাগ্রামের আকাশি মাঠে এটির উৎপত্তি হয়। তবে সেই মাঠে কোনো পানি ছিল না। টর্নেডো হলেও ফসল, কৃষিজমি ও কৃষকের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনা নাছরিন জানান, কয়েক মিনিট টর্নেডো স্থায়ী হলেও আকাশের দিকে চলে যায়। আকাশি মাঠে টর্নেডোর উৎপত্তি হয়েছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উৎপত ত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বপ্ন দেখা থেমে নেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মমিনুরের

চোখের আলোয় নয়, মনের আলোয় পথ খুঁজে নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী মমিনুর ইসলাম। দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি হয়ে উঠেছেন একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে লুঙ্গি, গামছা, মোজা, ছাতা ইত্যাদি বিক্রি করে নিজের ব্যয় নিজেই নির্বাহ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধার এক সাধারণ পরিবারে জন্ম মমিনুরের। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত সুস্থ থাকলেও একসময় তার চোখের রেটিনা শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকেন তিনি। একপর্যায়ে তার সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি লোপ পায়।

আরো পড়ুন:

সামাজিক-অর্থনেতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান নীতিতে জোর

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: খেলার মাঠে নেপথ্যের নায়ক আনসার ভাই

অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ালেখা শিখে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের অন্যতম সেরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান তিনি। সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের এই শিক্ষার্থী বর্তমানে স্নাতকোত্তরে অধ্যায়নরত।

উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্পে তিনি বলেন, “আমার পরিবারে মা, বাবা, ভাই, বোন আছেন। চোখের চিকিৎসার জন্য আমার পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। একপর্যায়ে আমরা আর্থিক সংকটের মুখে পড়ি। তখন বাসা থেকে প্রতি মাসে টাকা পাঠানো বেশ চ্যালেঞ্জিং হচ্ছিলো আমার পরিবারের জন্য। তাছাড়া দৃষ্টিশক্তি না থাকায় অল্প দূরত্বেও আমাকে রিকশায় যেতে হয়। এতে অন্যদের তুলনায় আমার কিছুটা বেশি অর্থ ব্যয় হয়। তখন ভাবলাম, আমাকে বেঁচে থাকতে হবে এবং নিজে থেকেই কিছু করতে হবে হবে।” 

নিজের স্কুলের পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, “আমি পাবনার সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করি। সেখানে বেশকিছু তাঁতপল্লি ছিলো। তখন কাপড় বিক্রির আইডিয়া মাথায় আসে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামালউদ্দীন হলের হলের সামনে একটা ভ্রাম্যমাণ কাপড়ের দোকান দেই। সেখানে গামছা, লুঙ্গি, টি-শার্ট, মশারি, রুমালসহ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি শুরু করি।”

শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় এসব জিনিসের পাশাপাশি সম্প্রতি সেখানে একটি ওজন ও উচ্চতা মাপার মেশিনও স্থাপন করেছেন তিনি।

প্রতি মাসের আয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি যেহেতু একজন শিক্ষার্থী, তাই পড়ালেখা, ক্লাস ব্যালেন্স করে আমাকে অবসর সময়ে এই দোকান চালাতে হয়। তাছাড়া আমার ক্রেতা সবাই এখানকার শিক্ষার্থী। তাই প্রতিটি পণ্যে সামান্য কিছু লাভ রাখি। বিক্রির লভ্যাংশ দিয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দেই আমি চলতে পারি।”

মমিনুরের দোকানে ক্রেতাদের (শিক্ষার্থী) ভীড়

মমিনুর বলেন, “আমার চোখে আলো নেই ঠিকই, কিন্তু স্বপ্ন দেখতে তো বাঁধা নেই। নিজের খরচটা নিজে চালাতে পারলে আত্মমর্যাদাবোধ থাকে। দোকানটা ছোট, কিন্তু এর পেছনে আমার অনেক বড় স্বপ্ন লুকিয়ে আছে।”

দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার কারণে দোকান পরিচালনায় কিছুটা কষ্ট হয় ঠিকই, তবে সহপাঠী ও হলের কিছু ছাত্র সাহায্য করেন মাঝে মাঝে। পণ্য শনাক্ত করতে মমিনুর স্পর্শ ও স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করেন। অনেকেই তার এই চেষ্টাকে সম্মান করেন। কেউ কেউ দোকানে এসেও তাকে উৎসাহ দেন।

এসব প্রচেষ্টা ছাপিয়ে পুনরায় পৃথিবীর আলো দেখতে পাওয়ার প্রত্যাশা ফুটে ওঠে তার কণ্ঠে। পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করে তিনি বলেন, “আমি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড এবং ব্লাইন্ড হওয়া সত্ত্বেও নিজ প্রচেষ্টায় অর্থ উপার্জন করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে সক্ষম হয়েছি। সেহেতু চাইলে আপনারাও পারবেন। আমরা যেখানেই পড়াশোনা করি না কেনো, যদি আর্থিক অসচ্ছলতা থাকে, তাহলে অবশ্যই নিজের যে বিষয়ে দক্ষতা আছে, সেটা নিয়ে কাজ শুরু করা উচিৎ।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোনো একটি সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ পেলে আমার জন্য সুবিধা হবে। সে সুযোগ না পেলে হয়তো এই ব্যবসার সঙ্গেই থাকব এবং এর পরিসর বৃদ্ধি করার চেষ্টা করবো।”

তার এই সংগ্রামী জীবন ও উদ্যোগ আমাদের সমাজের তরুণ ও যুবসমাজের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা। সীমাবদ্ধতা থাকলেও, ইচ্ছা শক্তি আর পরিশ্রম দিয়ে মানুষ কীভাবে নতুন পথ খুঁজে নেওয়া যায়, মমিনুর তার জলন্ত প্রমাণ।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্বপ্ন দেখা থেমে নেই দৃষ্টিহীন মমিনুরের
  • স্বপ্ন দেখা থেমে নেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মমিনুরের
  • জাবিতে মাস্টারপ্ল্যানের গুরুত্ব নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা সভা
  • জাবিতে বই সহজলভ্য করছে ‘গ্রন্থাশ্রম’