কাশ্মীরের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তান ভারতের মধ্যকার উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত এক প্রকার যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ভারত প্রথমে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের ওপর ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালায় ভারত; পাকিস্তানের কয়েকটি জায়গায় হামলা চালায় প্রতিবেশি দেশটি। জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা আক্রমণ করে; ভারতের ৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি তাদের। ভারত অবশ্য তিনটি বিমানের কথা স্বীকার করেছে। অন্যদিকে ভারতের হামলায় পাকিস্তানের ৭০ জন নিহতের দাবি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির। আর পাকিস্তানের আইএসপিআরের দাবি অনুযায়ী, ২৬ জন পাকিস্তানি প্রাণ হারিয়েছে।  


ভারত প্রথমে পাকিস্তানের ওপর যে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালায়, দেশটি তার নাম দিয়েছে অপারেশ ‘অপারেশন সিঁদুর’। আমরা জানি গত মাসের ২২ এপ্রিল পেহেলগামের হামলায় যারা নিহত হয় তাদের একটা অংশ ছিলো নব দম্পতি।  স্বামীদের হত্যা করে স্ত্রীদের জীবিত রাখা হয়। নববিবাহিত স্ত্রীদের আর্তনাদ ভিডিওতে দেখা গেছে। বিয়ের পর হিন্দু নারী যে সিঁদুর পড়েন সেই প্রেক্ষাপটেই একে ভারত বলছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এ অভিযানেও প্রাণ গেলো সেই সাধারণ মানুষেরই। পেহেলগামের ঘটনায় ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলো, আর ভারতের হামলায়ও ততোধিক নিহত হলো। আর পাকিস্তানও বসে থাকেনি। 


পাকিস্তান ভারত দুই পারমানবিক শক্তির অধিকারী দেশের মধ্যে যুদ্ধের মহড়ায় প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের স্বস্তিতে থাকার কোনো কারণ নেই। দক্ষিণ এশিয়ার এদুটি দেশের মধ্যে তাদের জন্ম থেকেই বলাচলে শত্রুতা। তাদের প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশে যেমন যুদ্ধের প্রভাব পড়তে পারে তেমনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেরও শান্তিতে থাকার কারণ নেই। এর আগেও ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে জড়িয়েছে। পাশাপাশি দেশ দুটি নিজেদের সামরিক ব্যয়ও বাড়িয়ে চলছে। পরস্পরের উত্তেজনা ও যুদ্ধের শঙ্কা মানেই সামরিক শক্তিতে মনোযোগ বৃদ্ধি পাওয়া। অথচ জনগণের কল্যাণের এই ভয়ানক পথ থেকে ফিরে আসা জরুরি।


পাকিস্তান ভারত উভয় দেশেই এখনও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ দরিদ্র। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়ন বরং সামরিক ব্যয়ের চেয়েও অগ্রাধিকারে থাকার জরুরি। কিন্তু বিবাদমান দেশগুলো সাধারণ মানুষের এ প্রয়োজনের কথা কতটা খেয়াল রাখে? প্রতিবেশী হিসেবে অন্যান্য দেশও অনেকসময় দেখাদেখি সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানোতে নজর দেয়। তাতে শেষ বিচারে ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষই। দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই এটাই সিঁদুরে মেঘের মতো। সিঁদুরে মেঘ মানে বিপদের আশঙ্কা। 
পাকিস্তান ভারত যদি যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে বের না হয়ে আসে তবে তা নিজেদেরকেই নয় বরং দক্ষিণ এশিয়াকেও বিপদে ফেলবে। যুদ্ধ মানেই মানুষের মৃত্যু। অন্যদিকে তার প্রভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ জীবনের ব্যয়ও বেড়ে যায়। সেজন্যই যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। দুই দেশের মধ্যে শান্ত পরিস্থিতি থাকলে দক্ষিণ এশিয়াসহ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশও শান্তিতে থাকবে। 

মাহফজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com
 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়ার উপস্থিতি দলের জন্য আশীর্বাদ

ভ্রমণ ক্লান্তি কাটাতে গতকাল বুধবার সারাদিন বিশ্রামে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নিয়মিত তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন চিকিৎসকরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গতকাল খোশমেজাজে সময় কাটিয়েছেন তিনি।

দলের নেতাদের কেউ গতকাল তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন– এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে উৎসাহী কর্মী অনেককে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ফিরোজার সামনে গিয়ে মোবাইল ফোনে সেলফি তুলতে দেখা গেছে।

দলের একাধিক নেতা জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান লন্ডন থেকে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। চিকিৎসার জন্য চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও চার মাস লন্ডনে ছিলেন। তাঁর দেশে ফেরা এবং শারীরিকভাবে তুলনামূলক সুস্থতা নেতাকর্মীকে স্বস্তি দিয়েছে; তাদের উৎফুল্ল করেছে। তাঁর এই উপস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য দলের চলমান লড়াইয়ে নেতাকর্মীকে উজ্জীবিত করেছে বলেও মনে করছেন নেতারা। দেশে তাঁর উপস্থিতি দলের জন্য আশীর্বাদ।

নেতাকর্মী মনে করছেন, দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাঁর মতো সর্বজনগ্রহণযোগ্য নেতা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারবেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যেটি এখন সবচেয়ে জরুরি হয়ে পড়েছে। আগামীর রাজনীতিতে তাঁর দিকনির্দেশনায় দল ও দেশ উপকৃত হবে বলে বিশ্বাস করেন নেতাকর্মী। আবার বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত পথজুড়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীর শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়ে খালেদা জিয়াও মানসিকভাবে তৃপ্তি বোধ করছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সমকালকে বলেন, চিকিৎসকরা নিয়ম করে বাসায় গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখে আসছেন। তিনি ভালো আছেন, বিশেষ করে তাঁর মানসিক অবস্থা বেশ ভালো। তিনি মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে আছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, তাঁকে একটানা বসে না থেকে কিছুটা হাঁটা-চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয়। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসা শেষে ২৫ জানুয়ারি তিনি ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ওঠেন। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলে। চার মাস পর গত মঙ্গলবার দুই পুত্রবধূকে সঙ্গে নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। 

পারিবারিক সূত্র জানায়, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান তাঁর বাবার বাসা ধানমন্ডিতে থাকছেন। আরেক পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকছেন।

দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সমকালকে বলেন, ‘মাঝে ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রতিহিংসা খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখলেও তিনি এই রাজনীতির জন্য, দেশের গণতন্ত্রের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কারা নির্যাতন সহ্য করেছেন। আমাদের প্রত্যাশা, তিনি পরিপূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠবেন। তাঁর অভিজ্ঞতা আর আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিচক্ষণতায় দেশে আবারও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে আসবে।’

৫ আগস্ট-পরবর্তী বাস্তবতায় মুক্তি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া প্রথম ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলসংলগ্ন মাঠে বিএনপির বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তিনি। এর আগে ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রকাশ্য কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। কারারুদ্ধ হওয়ার আগে তিনি সিলেট সফর করেছিলেন। 

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি বন্দি ছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ