‘অপারেশন সিঁদুর’ কিংবা সিঁদুরে মেঘের ভয়
Published: 7th, May 2025 GMT
কাশ্মীরের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তান ভারতের মধ্যকার উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত এক প্রকার যুদ্ধে রূপ নিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ভারত প্রথমে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের ওপর ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালায় ভারত; পাকিস্তানের কয়েকটি জায়গায় হামলা চালায় প্রতিবেশি দেশটি। জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা আক্রমণ করে; ভারতের ৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি তাদের। ভারত অবশ্য তিনটি বিমানের কথা স্বীকার করেছে। অন্যদিকে ভারতের হামলায় পাকিস্তানের ৭০ জন নিহতের দাবি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির। আর পাকিস্তানের আইএসপিআরের দাবি অনুযায়ী, ২৬ জন পাকিস্তানি প্রাণ হারিয়েছে।
ভারত প্রথমে পাকিস্তানের ওপর যে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালায়, দেশটি তার নাম দিয়েছে অপারেশ ‘অপারেশন সিঁদুর’। আমরা জানি গত মাসের ২২ এপ্রিল পেহেলগামের হামলায় যারা নিহত হয় তাদের একটা অংশ ছিলো নব দম্পতি। স্বামীদের হত্যা করে স্ত্রীদের জীবিত রাখা হয়। নববিবাহিত স্ত্রীদের আর্তনাদ ভিডিওতে দেখা গেছে। বিয়ের পর হিন্দু নারী যে সিঁদুর পড়েন সেই প্রেক্ষাপটেই একে ভারত বলছে ‘অপারেশন সিঁদুর’। এ অভিযানেও প্রাণ গেলো সেই সাধারণ মানুষেরই। পেহেলগামের ঘটনায় ২৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলো, আর ভারতের হামলায়ও ততোধিক নিহত হলো। আর পাকিস্তানও বসে থাকেনি।
পাকিস্তান ভারত দুই পারমানবিক শক্তির অধিকারী দেশের মধ্যে যুদ্ধের মহড়ায় প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের স্বস্তিতে থাকার কোনো কারণ নেই। দক্ষিণ এশিয়ার এদুটি দেশের মধ্যে তাদের জন্ম থেকেই বলাচলে শত্রুতা। তাদের প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশে যেমন যুদ্ধের প্রভাব পড়তে পারে তেমনি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেরও শান্তিতে থাকার কারণ নেই। এর আগেও ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে জড়িয়েছে। পাশাপাশি দেশ দুটি নিজেদের সামরিক ব্যয়ও বাড়িয়ে চলছে। পরস্পরের উত্তেজনা ও যুদ্ধের শঙ্কা মানেই সামরিক শক্তিতে মনোযোগ বৃদ্ধি পাওয়া। অথচ জনগণের কল্যাণের এই ভয়ানক পথ থেকে ফিরে আসা জরুরি।
পাকিস্তান ভারত উভয় দেশেই এখনও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ দরিদ্র। তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনমান উন্নয়ন বরং সামরিক ব্যয়ের চেয়েও অগ্রাধিকারে থাকার জরুরি। কিন্তু বিবাদমান দেশগুলো সাধারণ মানুষের এ প্রয়োজনের কথা কতটা খেয়াল রাখে? প্রতিবেশী হিসেবে অন্যান্য দেশও অনেকসময় দেখাদেখি সামরিক খাতে ব্যয় বাড়ানোতে নজর দেয়। তাতে শেষ বিচারে ক্ষতি হয় সাধারণ মানুষই। দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই এটাই সিঁদুরে মেঘের মতো। সিঁদুরে মেঘ মানে বিপদের আশঙ্কা।
পাকিস্তান ভারত যদি যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে বের না হয়ে আসে তবে তা নিজেদেরকেই নয় বরং দক্ষিণ এশিয়াকেও বিপদে ফেলবে। যুদ্ধ মানেই মানুষের মৃত্যু। অন্যদিকে তার প্রভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ জীবনের ব্যয়ও বেড়ে যায়। সেজন্যই যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। দুই দেশের মধ্যে শান্ত পরিস্থিতি থাকলে দক্ষিণ এশিয়াসহ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশও শান্তিতে থাকবে।
মাহফজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইমরান খানকে সরাতে ‘মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা’
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেওয়ার সমন্বিত প্রচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। আর এ ধরনের তৎপরতা মেনে নেবেন না বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা। গত বুধবার পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে এ অবস্থানের কথা জানানো হয়।
এমন সময় পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে এ অবস্থানের কথা জানানো হলো, যখন পাকিস্তানের রাজনীতিতে ‘মাইনাস ইমরান’ গুঞ্জন আবারও ডালপালা মেলেছে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জাতীয়ভাবে এবং দলটির অভ্যন্তরে উত্তেজনা বাড়ছে।
পিটিআই নেতা ও খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দাপুর ওই প্রদেশে গভর্নর শাসন চাপিয়ে দেওয়া এবং দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষককে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার ‘ষড়যন্ত্রের’ নিন্দা জানিয়েছেন।
এদিকে ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) নেতা আজমা বুখারি ও তাঁর মিত্রদের বিরুদ্ধে পিটিআইয়ের অভ্যন্তরে ভাঙন ধরাতে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ এনেছেন দলটির মুখপাত্র শেখ ওয়াক্কাস আকরাম।
তবে আজমা বুখারি বলেন, নিজের বোন ও দলের কারণেই ইমরান খান রাজনীতিতে একঘরে হয়ে পড়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেখুন, ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! যিনি নওয়াজ শরিফকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তিনি নিজেই এখন ঘরে এবং নিজের দলে একঘরে হয়ে পড়েছেন।