২০২৪ সালে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার যখন অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করছে, তখনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এই শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হলেও তা আবার কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা আছে—এই আশঙ্কা দেশের তৈরি পোশাকশ্রমিকদের।

২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক আরোপের ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই ৯ এপ্রিল তা স্থগিত করেন। বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। এর মাঝে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি লেখেন। অঙ্গীকার করেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও বেশি সুতা ও পণ্য কিনবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে বাণিজ্যঘাটতি আছে, তা হ্রাসের চেষ্টা করা হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলারের।

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের বড় অংশই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই তৈরি পোশাকের একক বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক স্থগিত হলেও ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক বহাল আছে বাংলাদেশের পণ্যে। বাস্তবতা হলো, তৈরি পোশাক খাতে মুনাফার হার অত্যন্ত কম; এ পরিস্থিতিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলেও তা হজম করা কঠিন। চীনের সঙ্গে আছে তীব্র প্রতিযোগিতা। সেই সঙ্গে আছে ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রতিযোগিতা।

সাভারের এ৪ ইয়ার্ন ডায়িং কোম্পানিতে কাজ করেন ২৫ বছর বয়সী মুর্শিদা আক্তার। সম্প্রতি এই কারখানায় যোগ দিয়েছেন তিনি। সেখানে তিনি কিছুটা বেশি মজুরি পাচ্ছেন। কারখানা বাসার কাছেই। কারখানার কর্মপরিবেশও ভালো। সব মিলিয়ে নতুন এই চাকরি তাঁর জন্য ভালোই হয়েছে। কিন্তু এখন তাঁর শঙ্কা, ট্রাম্পের শুল্ক কার্যকর হলে ক্রয়াদেশ কমে যাবে। ফলে কাজও কমে যাবে।

১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশকে নিয়ে উপহাস করা হতো। বলা হতো, এই দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু ১৯৮০-এর দশক থেকে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দরজিবাড়িতে পরিণত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মানুষ গড়পড়তাভাবে ভারতের মানুষের চেয়ে সচ্ছল।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে মুর্শিদা আক্তারের মতো ৪০ লাখ মানুষ কাজ করেন। সেই সঙ্গে আরও পাঁচ গুণ মানুষ এই ৪০ লাখ মানুষের আয়ের ওপর নির্ভরশীল, যেমন মুর্শিদার স্বামী ও সন্তান। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের পণ্যে ট্রাম্প যে শুল্ক আরোপ করবেন এবং তার সঙ্গে চীনের পণ্যে যে তিনি ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, তার জেরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি ভেঙে পড়তে পারে।

অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে অত্যন্ত সমালোচনামুখর। তাঁর মত, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ ক্ষমতার কদর্য বহিঃপ্রকাশ। এমন এক সময়ে এই শুল্ক আরোপ করা হলো, যখন কয়েক দশকের ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির পর অর্থনীতির গতি কিছুটা কমে গেছে, কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে অর্থনীতি।

শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে লুণ্ঠন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সেই দুরবস্থা কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা করে উঠতে পারছে না। তাদের ধারণা, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির গতি অনেকটা কমে যাবে; যদিও ২০২৬ সালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াবে বলে তাদের বিশ্বাস। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্কে সেই আশায়ও গুড়ে বালি। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক আগামী দুই বছরের জন্য বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করেছে। সেই সঙ্গে আইএমএফও বাংলাদেশের ওপর নানামুখী চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আইএমএফের পক্ষ থেকে আমাদের প্রবল চাপ দেওয়া হচ্ছে—ভর্তুকি কমিয়ে মূল্য বাড়াতে হবে।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর দেশের তৈরি পোশাক খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তারপর বাংলাদেশের পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই খাতও বুঝতে পেরেছে, টিকে থাকতে হলে পরিবর্তন দরকার। এরপর দেশে অনেকগুলো কারখানা পরিবেশবান্ধব স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের ২৩০টি কারখানা এখন পরিবেশবান্ধব। বিশ্বের আর কোথাও এত পরিবেশবান্ধব কারখানা নেই। রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কাঠামোগত পরিবর্তন এসেছে। তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা কমেছে। কিন্তু এই খাতের রপ্তানিমূল্য বেড়েছে এবং শ্রমিকের সংখ্যাও বেড়েছে।

বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব কারখানাগুলোর মধ্যে ৪এ ইয়ার্ন ডায়িং অন্যতম। নাম ডায়িং হরেও গত কয়েক বছরে এই কারখানায় ডায়িং বা রং করা হয়নি। এই কারখানায় মূলত উচ্চ মূল্যের কাপড়, যেমন জ্যাকেট ও পানিনিরোধক কাপড় তৈরি করা হয়। কারহার্ট থেকে কেলভিন ক্লেইনের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এই কারখানার ক্রেতা। তবে মার্কিন ক্রেতার চেয়ে তাদের ইউরোপীয় ক্রেতাই বেশি। কারখানার ভেতরে বিশাল বিশাল ফ্যান চলে। সেই সঙ্গে কারখানার ভেতরটা আলোকিত। পরিবেশ সুখকর। কারখানার বাইরের দেয়ালে সবুজ লতাপাতা ঝুলছে।

কারখানাটির মহাব্যবস্থাপক খন্দকার ইমাম বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে এই কারখানায়ও হামলা হয়। কারখানার বাইরে মানুষের জটলা তৈরি হয়। দেশের অনেক কারখানাই শেখ হাসিনা জমানার সমর্থক ছিল—মানুষের মনে এমন ধারণা ছিল।

খন্দকার ইমাম বলেন, এই কারখানা হামলায় করতে প্রায় এক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিকদের সঙ্গে তিনিও হেলমেট পরে বাইরের জনতাকে প্রতিরোধ করতে দাঁড়িয়ে যান। শেষমেশ অবশ্য কেউই গুরুতর আহত হননি। এক দিনও উৎপাদন বন্ধ থাকেনি। এই দেশের মতো কোম্পানিটিও জীবনসংহারী হুমকি মোকাবিলা করে টিকে থাকতে শিখে গেছে।

কোম্পানির সাসটেইনেবিলিটি বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের পুরো অর্থনীতি এই পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। যে আন্দোলনকারীরা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছেন, তাঁরাও এটা জানতেন। দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আছে কেবল শ্রমিক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প ক প রব দ ধ র পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের জবাব

পেহেলগামে হামলা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে এ হামলায় দুই শিশুসহ ৩১ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছে। জবাবে রাতেই স্বল্প পরিসরে পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান। তারা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গোলাবর্ষণ করে। এতে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৩ জন আহত হয় বলে জানায় ভারতের সেনাবাহিনী। 

ইসলামাবাদের দাবি, তারা হামলায় অংশ নেওয়া ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এ ছাড়া কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডের সদরদপ্তর ও তল্লাশিচৌকি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। 

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ২৫ মিনিট ধরে চলেছে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিযান। পাকিস্তানের ছয় স্থানে সব মিলিয়ে ২৫টি আঘাত হানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র। এতে প্রাণ গেছে ‘৭০ সন্ত্রাসীর’। এই ছয় স্থান হলো– পাঞ্জাবের শিয়ালকোট, ভাওয়ালপুর ও মুরিদকে, আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদ, বাগ ও কোটলি শহর। ভারতের সেনাবাহিনী বলছে, তারা কোনো সামরিক বাহিনীর স্থাপনায় হামলা চালায়নি। পাকিস্তানের জিও নিউজ জানায়, ভারতের হামলায় নিলম-ঝিলাম হাইড্রো পাওয়ার প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছে জাতিসংঘের একটি দল।

ইসলামাবাদে ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে পাকিস্তান প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারত আগ্রাসন চালিয়েছে; পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। এটি জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। বিনা উস্কানিতে এ হামলা হয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে পাল্টা হামলার অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার সামরিক বাহিনীকে ভারতের হামলার জবাব দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ ও ‘যুদ্ধের কাজ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো উস্কানি ছাড়া ভারতের এ হামলার সুনির্দিষ্ট জবাব দেওয়ার পূর্ণ অধিকার পাকিস্তানের আছে; উপযুক্ত জবাব দেওয়া হচ্ছে। নিহতদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেওয়া হবে। 

এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিএনএন জানায়, তিনি ভারতের হামলাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন। উত্তেজনা নিরসনে ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। পাকিস্তানে হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। চীন বলেছে, ভারতের সামরিক পদক্ষেপ হতাশাজনক; চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, রাশিয়া, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় পক্ষকে সংযত থাকতে বলেছে। 

গতকাল বুধবার ভারতজুড়ে বেসামরিক প্রতিরক্ষা মহড়া শুরুর আগে পাকিস্তানে এ হামলা হলো। এ ধরনের পরিস্থিতির আশঙ্কা করে আসছিল ইসলামাবাদ। হামলায় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে (আজাদ কাশ্মীর) মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাঞ্জাবেও একটি মসজিদে হামলা হয়। দিল্লি বলছে, জঙ্গিদের অবস্থান লক্ষ্য করে আক্রমণ হয়েছে। ভারতে এ হামলার উদযাপন হলেও পাকিস্তানে বিক্ষোভ করে বিপুলসংখ্যক মানুষ। ইসলামাবাদের রাস্তায় গাড়িতে ট্যাঙ্ক বহনের দৃশ্য দেখা গেছে।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীর গুলিতে ২৬ পর্যটক নিহত হন। এ ঘটনায় ইসলামাবাদ জড়িত বলে অভিযোগ করে নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। হামলার জেরে সিন্ধুর পানিচুক্তি স্থগিত, আকাশসীমা বন্ধ রাখাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় ভারত। এবার তারা পাকিস্তানে হামলা চালাল। এর আগে ২০১৬ সালে আজাদ কাশ্মীরে সীমিত পরিসরে বিমান হামলা চালিয়েছিল ভারত।

ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই জানায়, ভাওয়ালপুরে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান কার্যালয়, মুরিদকে শহরে পাকিস্তানভিত্তিক আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়্যেবার প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন আস্তানায় হামলা চালিয়েছে নয়াদিল্লি। এর আগে পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বা টিআরএফ নামের সংগঠন। ধারণা করা হয়, এটি লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

হামলা প্রসঙ্গে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী মঙ্গলবার গভীর রাতে গণমাধ্যমে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে কাপুরুষ শত্রু ভারত ভাওয়ালপুরের আহমেদ ইস্ট এলাকার সুবহান মসজিদ, কোটলি ও মুজাফফরাবাদের অন্তত তিন স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে।’ পরে অন্য এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হওয়ার কথাও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। তিনি জানান, ভারতের আকাশসীমা থেকে এসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, এর জবাব দিচ্ছে সামরিক বাহিনী। ভারত ‘আগুন নিয়ে খেলছে’ বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার। 
হামলায় পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদের শীর্ষ নেতা মাসুদ আজহারের পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হয়েছেন। প্রাণ গেছে তাঁর বড় বোন, শ্যালক, ভাগিনা-ভাগিনির। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে মাসুদ আজহার জানান, নিরপরাধ শিশু, অবিবাহিত নারী ও বয়স্কদের টার্গেট করা হয়েছে। 

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পিটিভিতে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার কথা জানান। পরে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় ধুনদিয়াল সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডের সদরদপ্তর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। রয়টার্স জানায়, ভূপাতিত পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমানের মধ্যে তিনটি রাফায়েল, একটি রাশিয়ান এসইউ-৩০ ও আরেকটি মিগ-২৯। ভারত তিনটি বিমান ভূপাতিত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। এটি কয়েক দশকের মধ্যে ভারতের সামরিক বাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি।

ভারতের হামলা নিয়ে গতকাল ভোরে ব্রিফ করেন পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী। তিনি জানান, পাকিস্তানে হামলায় ভারত বিভিন্ন সমরাস্ত্র ব্যবহার করেছে। আজাদ কাশ্মীরের ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্টের সুবহান মসজিদে হামলা হয়েছে। সেখানে চারটি হামলা করা হয়। এতে পাঁচ পাকিস্তানি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে তিন বছরের এক কন্যাশিশু রয়েছে। আহত হন ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক। আজাদ কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদে হামলা হয়েছে জানিয়ে আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, সেখানে সাত দফায় হামলা হয়। এতে একটি মসজিদ ধ্বংস ও এক কন্যাশিশু আহত হয়।

তিনি জানান, এ অঞ্চলের আরেক শহর কোটলির আব্বাত মসজিদে হামলা হয়েছে। সেখানে পাঁচটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে দু’জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১৬ বছরের এক কিশোরী ও ১৮ বছরের এক তরুণ রয়েছে। এক নারী ও তাঁর শিশুকন্যা আহত হয়েছে। পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক জানান, পাঞ্জাবের মুরিদক শহরের উমালকুরা মসজিদে চার দফা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। সেখানে একজন নিহত এবং আরেকজন আহত হন। এ জায়গায় দুই ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। 

পাঞ্জাব প্রদেশের আরেক জেলা শিয়ালকোটের কোটকি লোহারা গ্রামে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। একটি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট ও আরেকটি খোলা মাঠে পড়ে। তাতে কেউ হতাহত হয়নি। এ অঞ্চলের শাখারগড়ে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। তবে একটি ওষুধের দোকানে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। 

আজাদ কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদে হামলা প্রসঙ্গে স্থানীয় মোহাম্মদ ওয়াহিদ বলেন, ‘প্রথম বিস্ফোরণে আমার বাড়িটা কেঁপে ওঠে। দৌড়ে রাস্তায় বের হই। সেখানে দেখি অন্যরাও জড়ো হয়েছে। আমরা তখনও বুঝে উঠতে পারিনি কী হচ্ছে। এর মধ্যেই আরও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।’ তিনি জানান, ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওয়াহিদ জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছিলেন। কিন্তু তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না, মসজিদকে কেন হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হলো। তিনি বলেন, ‘এটি তো সাধারণ একটা মসজিদ। এখানে আমরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তাম। আমরা এ মসজিদ ঘিরে কখনও সন্দেহজনক কিছু দেখিনি।’

পাকিস্তানে হামলার প্রেক্ষাপটে গতকাল ভারতের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল অংশ নেন। পরে অমিত শাহ এক এক্স পোস্টে পাকিস্তানে হামলা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, ‘পেহেলগামে আমাদের নিরপরাধ ভাইদের নির্মম হত্যাকাণ্ডে ভারতের জবাব অপারেশন সিঁদুর।’ এদিকে সংঘাতের প্রভাব পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজারে। দরপতন হয়েছে রুপির। 

বিমানবন্দর বন্ধ

বুধবার ভোর থেকে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বেশ কয়েকটি বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহু ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ফ্লাইট-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, ইন্ডিগো, স্পাইসজেটের মতো সংস্থাগুলো ‘যাত্রীর সুবিধার্থে’ এসব বিবৃতি দিয়েছে।

অপরদিকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাব প্রদেশে সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিবিসি জানায়, দেশটিতে ভারত হামলা চালানোর পর পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এমন ঘোষণা এলো। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ