পেহেলগামে হামলা নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে এ হামলায় দুই শিশুসহ ৩১ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছে। জবাবে রাতেই স্বল্প পরিসরে পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান। তারা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গোলাবর্ষণ করে। এতে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৩ জন আহত হয় বলে জানায় ভারতের সেনাবাহিনী। 

ইসলামাবাদের দাবি, তারা হামলায় অংশ নেওয়া ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এ ছাড়া কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডের সদরদপ্তর ও তল্লাশিচৌকি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। 

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ২৫ মিনিট ধরে চলেছে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিযান। পাকিস্তানের ছয় স্থানে সব মিলিয়ে ২৫টি আঘাত হানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র। এতে প্রাণ গেছে ‘৭০ সন্ত্রাসীর’। এই ছয় স্থান হলো– পাঞ্জাবের শিয়ালকোট, ভাওয়ালপুর ও মুরিদকে, আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদ, বাগ ও কোটলি শহর। ভারতের সেনাবাহিনী বলছে, তারা কোনো সামরিক বাহিনীর স্থাপনায় হামলা চালায়নি। পাকিস্তানের জিও নিউজ জানায়, ভারতের হামলায় নিলম-ঝিলাম হাইড্রো পাওয়ার প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছে জাতিসংঘের একটি দল।

ইসলামাবাদে ভারতের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে পাকিস্তান প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ভারত আগ্রাসন চালিয়েছে; পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে। এটি জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। বিনা উস্কানিতে এ হামলা হয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে পাল্টা হামলার অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার সামরিক বাহিনীকে ভারতের হামলার জবাব দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ ও ‘যুদ্ধের কাজ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো উস্কানি ছাড়া ভারতের এ হামলার সুনির্দিষ্ট জবাব দেওয়ার পূর্ণ অধিকার পাকিস্তানের আছে; উপযুক্ত জবাব দেওয়া হচ্ছে। নিহতদের প্রতি ফোঁটা রক্তের বদলা নেওয়া হবে। 

এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সিএনএন জানায়, তিনি ভারতের হামলাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন। উত্তেজনা নিরসনে ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। পাকিস্তানে হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। চীন বলেছে, ভারতের সামরিক পদক্ষেপ হতাশাজনক; চলমান পরিস্থিতি নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান, রাশিয়া, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে উভয় পক্ষকে সংযত থাকতে বলেছে। 

গতকাল বুধবার ভারতজুড়ে বেসামরিক প্রতিরক্ষা মহড়া শুরুর আগে পাকিস্তানে এ হামলা হলো। এ ধরনের পরিস্থিতির আশঙ্কা করে আসছিল ইসলামাবাদ। হামলায় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে (আজাদ কাশ্মীর) মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাঞ্জাবেও একটি মসজিদে হামলা হয়। দিল্লি বলছে, জঙ্গিদের অবস্থান লক্ষ্য করে আক্রমণ হয়েছে। ভারতে এ হামলার উদযাপন হলেও পাকিস্তানে বিক্ষোভ করে বিপুলসংখ্যক মানুষ। ইসলামাবাদের রাস্তায় গাড়িতে ট্যাঙ্ক বহনের দৃশ্য দেখা গেছে।
গত ২২ এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্দুকধারীর গুলিতে ২৬ পর্যটক নিহত হন। এ ঘটনায় ইসলামাবাদ জড়িত বলে অভিযোগ করে নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদ এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। হামলার জেরে সিন্ধুর পানিচুক্তি স্থগিত, আকাশসীমা বন্ধ রাখাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় ভারত। এবার তারা পাকিস্তানে হামলা চালাল। এর আগে ২০১৬ সালে আজাদ কাশ্মীরে সীমিত পরিসরে বিমান হামলা চালিয়েছিল ভারত।

ভারতের বার্তা সংস্থা পিটিআই জানায়, ভাওয়ালপুরে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের প্রধান কার্যালয়, মুরিদকে শহরে পাকিস্তানভিত্তিক আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়্যেবার প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন আস্তানায় হামলা চালিয়েছে নয়াদিল্লি। এর আগে পেহেলগামে হামলার দায় স্বীকার করে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট বা টিআরএফ নামের সংগঠন। ধারণা করা হয়, এটি লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

হামলা প্রসঙ্গে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী মঙ্গলবার গভীর রাতে গণমাধ্যমে বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে কাপুরুষ শত্রু ভারত ভাওয়ালপুরের আহমেদ ইস্ট এলাকার সুবহান মসজিদ, কোটলি ও মুজাফফরাবাদের অন্তত তিন স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে।’ পরে অন্য এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হওয়ার কথাও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। তিনি জানান, ভারতের আকাশসীমা থেকে এসব ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, এর জবাব দিচ্ছে সামরিক বাহিনী। ভারত ‘আগুন নিয়ে খেলছে’ বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার। 
হামলায় পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদের শীর্ষ নেতা মাসুদ আজহারের পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হয়েছেন। প্রাণ গেছে তাঁর বড় বোন, শ্যালক, ভাগিনা-ভাগিনির। গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে মাসুদ আজহার জানান, নিরপরাধ শিশু, অবিবাহিত নারী ও বয়স্কদের টার্গেট করা হয়েছে। 

পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পিটিভিতে ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার কথা জানান। পরে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানায়, তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় ধুনদিয়াল সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডের সদরদপ্তর গুঁড়িয়ে দিয়েছে। রয়টার্স জানায়, ভূপাতিত পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমানের মধ্যে তিনটি রাফায়েল, একটি রাশিয়ান এসইউ-৩০ ও আরেকটি মিগ-২৯। ভারত তিনটি বিমান ভূপাতিত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। এটি কয়েক দশকের মধ্যে ভারতের সামরিক বাহিনীর জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষতি।

ভারতের হামলা নিয়ে গতকাল ভোরে ব্রিফ করেন পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী। তিনি জানান, পাকিস্তানে হামলায় ভারত বিভিন্ন সমরাস্ত্র ব্যবহার করেছে। আজাদ কাশ্মীরের ভাওয়ালপুরের আহমেদপুর ইস্টের সুবহান মসজিদে হামলা হয়েছে। সেখানে চারটি হামলা করা হয়। এতে পাঁচ পাকিস্তানি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে তিন বছরের এক কন্যাশিশু রয়েছে। আহত হন ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক। আজাদ কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদে হামলা হয়েছে জানিয়ে আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, সেখানে সাত দফায় হামলা হয়। এতে একটি মসজিদ ধ্বংস ও এক কন্যাশিশু আহত হয়।

তিনি জানান, এ অঞ্চলের আরেক শহর কোটলির আব্বাত মসজিদে হামলা হয়েছে। সেখানে পাঁচটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে দু’জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ১৬ বছরের এক কিশোরী ও ১৮ বছরের এক তরুণ রয়েছে। এক নারী ও তাঁর শিশুকন্যা আহত হয়েছে। পাকিস্তানের আইএসপিআরের মহাপরিচালক জানান, পাঞ্জাবের মুরিদক শহরের উমালকুরা মসজিদে চার দফা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। সেখানে একজন নিহত এবং আরেকজন আহত হন। এ জায়গায় দুই ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। 

পাঞ্জাব প্রদেশের আরেক জেলা শিয়ালকোটের কোটকি লোহারা গ্রামে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। একটি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট ও আরেকটি খোলা মাঠে পড়ে। তাতে কেউ হতাহত হয়নি। এ অঞ্চলের শাখারগড়ে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। তবে একটি ওষুধের দোকানে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। 

আজাদ কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদে হামলা প্রসঙ্গে স্থানীয় মোহাম্মদ ওয়াহিদ বলেন, ‘প্রথম বিস্ফোরণে আমার বাড়িটা কেঁপে ওঠে। দৌড়ে রাস্তায় বের হই। সেখানে দেখি অন্যরাও জড়ো হয়েছে। আমরা তখনও বুঝে উঠতে পারিনি কী হচ্ছে। এর মধ্যেই আরও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।’ তিনি জানান, ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওয়াহিদ জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছিলেন। কিন্তু তিনি বুঝে উঠতে পারছিলেন না, মসজিদকে কেন হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হলো। তিনি বলেন, ‘এটি তো সাধারণ একটা মসজিদ। এখানে আমরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তাম। আমরা এ মসজিদ ঘিরে কখনও সন্দেহজনক কিছু দেখিনি।’

পাকিস্তানে হামলার প্রেক্ষাপটে গতকাল ভারতের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল অংশ নেন। পরে অমিত শাহ এক এক্স পোস্টে পাকিস্তানে হামলা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি লেখেন, ‘পেহেলগামে আমাদের নিরপরাধ ভাইদের নির্মম হত্যাকাণ্ডে ভারতের জবাব অপারেশন সিঁদুর।’ এদিকে সংঘাতের প্রভাব পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজারে। দরপতন হয়েছে রুপির। 

বিমানবন্দর বন্ধ

বুধবার ভোর থেকে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বেশ কয়েকটি বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বহু ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ফ্লাইট-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস, ইন্ডিগো, স্পাইসজেটের মতো সংস্থাগুলো ‘যাত্রীর সুবিধার্থে’ এসব বিবৃতি দিয়েছে।

অপরদিকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ ও পাঞ্জাব প্রদেশে সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিবিসি জানায়, দেশটিতে ভারত হামলা চালানোর পর পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এমন ঘোষণা এলো। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আজ দ ক শ ম র র ম জ ফফর ব দ ইসল ম ব দ পর স থ ত মন ত র ত হয় ছ কর ছ ন র একট মসজ দ গতক ল আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আশা করি ভালো আছেন’ নয়, ই–মেইলের শুরুটা করুন এমনভাবে, যাতে পাঠক পুরোটা পড়ে ফেলেন

বাক্যটি কেন গুরুত্ব হারাচ্ছে

ই–মেইল লেখার সময় আমরা প্রায়ই একটা কথা বলি—‘আশা করি ভালো আছেন’ বা ইংরেজিতে লেখি, ‘হোপ ইউ আর ওয়েল’। এই বাক্য লেখা হয় ভদ্রতার খাতিরেই এবং এতে দোষেরও কিছু নেই। কিন্তু এখন এত বেশি ব্যবহার হয় যে কেউ কেউ ই–মেইলের শুরুতে এই বাক্য দেখলে বাকিটা আর পড়েও দেখেন না।

বিশেষ করে ই–মেইলটা যদি এমন কাউকে পাঠান, যাঁর সঙ্গে অনেক দিন পর কথা হচ্ছে, তাহলে তাঁর কাছে এই বাক্য নিতান্তই যান্ত্রিক বা আগ্রহহীন বলেও মনে হতে পারে। অর্থাৎ ই–মেইলে এ ধরনের বাক্য হয়ে গেছে ‘অটো পাইলট’–এর মতো।

মানুষের হাতে এখন সময় খুব কম। তাই ই–মেইলটা কারও নজরে আনতে চাইলে শুরুতেই এমন কিছু বলতে হবে, যাতে পাঠক একটু থামেন, মনোযোগ দেন।

আরও কিছু ভুলভাল শুরুর ধরন

যান্ত্রিক বাক্য: আমরা অনেক সময় ই–মেইলের শুরুটা এমন করি, যেটা পড়লে মনে হয় যেন কোনো যন্ত্র কপি–পেস্ট করে দিয়েছে। অর্থাৎ ওই একই বাক্য আপনি অনায়াসে শতজনকে পাঠাতে পারেন। আদতে এ ধরনের বাক্য মনোযোগ আকর্ষণ করে না।

হঠাৎ সাহায্য কামনা বা কিছু চাওয়া: কারও সঙ্গে আগে কোনো দিন কথা হয়নি, এমন অবস্থায় সরাসরি সাহায্য কামনা করলে বা কিছু চাইলে সেটা হুট করে অচেনা কারও কাছে টাকা ধার চাওয়ার মতো ব্যাপার।

ফাঁপা শুভকামনা: ‘হ্যাপি মানডে’ বা ‘আশা করি সপ্তাহটা ভালো যাচ্ছে’—অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব কথা অহেতুক। পাঠকও বুঝে ফেলে যে এসব বলার জন্য বলা। তার চেয়ে বরং যাঁকে লিখছেন, তাঁর সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে আরও নির্দিষ্ট কিছু যোগ করুন। যেমন কেউ যদি ছুটির দিনে নিয়মিত মাছ ধরতে যান, তাঁকে লিখুন, ‘আশা করি, ছুটির দিনটা মাছ ধরে ভালোই কাটিয়েছেন।’

আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটি কি আমাদের চিন্তাশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, অবাক করা তথ্য দিল এমআইটির গবেষণা১৯ জুন ২০২৫তাহলে ই–মেইলের শুরুটা কেমন হওয়া উচিত

খুব সহজ কথা দিয়ে। মানে আপনি যেভাবে বাস্তবে কথা বলেন, সেভাবেই শুরু করুন। সেটা হতে পারে আগের কোনো আলাপের প্রসঙ্গ টেনে, কিংবা একটু আন্তরিক ভঙ্গিতে। কিছু উদাহরণ দেখুন—

আগের কিছু মনে করিয়ে দিন: যাঁকে ই–মেইল করছেন, তাঁর সঙ্গে পূর্বপরিচয় থাকলে (সেটা অল্প দিনের হলেও), এই কৌশল প্রয়োগ করতে পারেন। এর আগে আপনাদের কথোপকথন যেখানে শেষ হয়েছিল, সেটার সূত্র ধরিয়ে দিলে তিনি আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

যেমন—

‘গত মাসে অমুক ইভেন্টে আপনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, কথা বলে ভালো লেগেছিল।’

‘গতকালের মিটিংয়ে আপনার একটা আইডিয়া খুব মনে ধরেছে।’

ইতিবাচকভাবে শুরু করুন: ইতিবাচক শব্দ কিংবা বাক্য দিয়ে শুরু করলে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই উৎসাহী কিংবা আগ্রহী হন। আর আপনি যখন শুরুতেই উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো কাজের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন, তখন বিপরীত দিকে থাকা ব্যক্তিটিও আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

যেমন—

‘এই প্রজেক্টে একসঙ্গে কাজ করার জন্য খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। একটা আপডেট ছিল।’

‘গত পরশু আমাদের যে আলাপ হলো, সেটা নিয়ে ভাবছিলাম। একটা আইডিয়া শেয়ার করতে চাই।’

ই–মেইলের শুরুতেই যদি মনোযোগ পাওয়া না যায়, বাকিটা কেউ পড়বেই না। তাই যেভাবে আমরা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলি, সেভাবেই শুরু করুন।

সময়ের কথা মাথায় রাখুন: যাঁকে ই–মেইল লিখছেন, তিনি হয়তো ভীষণ ব্যস্ত কিংবা তাঁকে ই–মেইল করতে হয়তো বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে ফেলেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর ব্যস্ততা কিংবা আপনার দেরি করার প্রসঙ্গটি আসতেই পারে, তবে এতেও বাহুল্য বর্জন করুন।

যেমন—

‘জানি, এখন আপনার অনেক ব্যস্ত সময় যাচ্ছে, তাই ভাবলাম, এই সুযোগটা যেন চোখ এড়িয়ে না যায়।’

‘আগামী সপ্তাহের ডেডলাইনের আপনাকে বিষয়টা একটু মনে করিয়ে দিলাম, যাতে সব ঠিকঠাক থাকে।’

তাঁদের প্রসঙ্গেই বলুন: ই–মেইলে এ ধরনের শুরু তখনই করবেন, যখন সেটা হবে জনসংযোগ, যোগাযোগরক্ষা বা প্রচার–প্রচারণার খাতিরে।

যেমন—

‘আপনার সাম্প্রতিক প্রজেক্টটা দারুণ হয়েছে। কিছু বিষয় তো আমার খুব ভালো লেগেছে।’

‘লিংকডইনে আপনার অমুক বিষয়ক পোস্টটা খুব ভালো লাগল, তাই ভাবলাম, ধন্যবাদ জানাই।’

সূত্র: এমএসএন

আরও পড়ুনগুগলে যেসব বিষয় কখনো সার্চ করবেন না ১৬ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ