চুলা বন্ধ করে আসতে আসতে মনে হয়, চুলাটা বন্ধ করিনি—এই সমস্যার সমাধান কী
Published: 8th, May 2025 GMT
প্রশ্ন
আমি অনেক দিন ধরে কিছু মানসিক সমস্যায় ভুগছি। ধরুন, আমার আম্মু কোনো গোপন কথা আমাকে জানিয়ে বলল, কথাটা যেন কাউকে না বলি। কিছুক্ষণ পর আমার মনে হয়, আমি ওই কথাগুলো সবার কাছে বলে দিয়েছি। তারপর চিন্তা করি, আম্মুর সঙ্গে তো সমস্যা বেধে যাবে।
পড়াশোনার ব্যাপারে আমার বন্ধুরা কোনো নোট বা শিটের প্রয়োজন হলে মেসেঞ্জার গ্রুপে নোটগুলো আমাকে দিতে বলে। মাঝেমধ্যে নোটগুলো আমার সেন্ট করতে মনে থাকে না! পরে ওরা আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ‘তুমি তো নোট দিলে না।’ তখন আমার মনে হয়, আমি তো দিয়েছি অথচ দিইনি।
গ্যাসের চুলা বন্ধ করে আসতে আসতে মনে হয়, আমি চুলাটা বন্ধ করিনি।
আমি যখন পড়তে বসি, তখন আমার মাথায় আজেবাজে উল্টাপাল্টা চিন্তা আসে। মনে হয়, আমি কাউকে মেরেছি কি? কাউকে গালি দিইনি তো? এ কারণে আমার সমস্যা হতে পারে। এসব কারণে আমি পড়তে বসে দুশ্চিন্তা করতে থাকি।
দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা মোকাবিলা করছি আমি। কিন্তু এখন আমার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। পড়তে বসলেই এসব চিন্তা এসে আমার মাথায় ভর করছে। আমি অনেক চেষ্টা করছি নিজেকে বোঝানোর, তবু আমার মনকে শান্ত করতে পারছি না।
আমি ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতে পারছি না। সব মিলিয়ে আমার জীবনটা অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। আমি কীভাবে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাব, অনুগ্রহ করে জানাবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তরধন্যবাদ আপনার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে এত সুন্দর করে গুছিয়ে লেখার জন্য। আপনি নিজে সমস্যাটি বুঝতে পারছেন এবং উত্তরণের জন্য চেষ্টা করছেন, এটি খুব ইতিবাচক একটি ব্যাপার।
আপনার সঙ্গে যা হচ্ছে, তা অনেকটাই অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডারের (ওসিডি) উপসর্গের সঙ্গে মিলে যায়। এটি একটি মানসিক সমস্যা, যেখানে একজন ব্যক্তির একই চিন্তার পুনরাবৃত্তি ঘটে বা দীর্ঘসময় একই চিন্তার মধ্যে ডুবে থাকেন (অবসেশন) ও বাধ্যতামূলক কিছু আচরণ করেন (কমপালশন), অর্থাৎ যা থেকে বিরত থাকা ব্যক্তির সাধ্যের বাইরে চলে যায়।
অবসেশন নানা কিছু নিয়ে হতে পারে, যেমন জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার দুশ্চিন্তা। ফলে অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতা, কোনো কিছু নিয়ে সন্দেহ বা খুঁতখুঁতে ভাব, ভয়ংকর বা অস্বস্তিকর কোনো চিন্তা বারবার আসা ইত্যাদি।
কমপালশন বলতে বোঝায়, অবসেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কাজ বারবার করা। যেমন হাত ধোয়া, কোনো কিছু করার পর তা ঠিকমতো হলো কি না, বারবার পরীক্ষা করা, জিনিসপত্র অতিরিক্ত গুছিয়ে রাখা, সবকিছু নিখুঁতভাবে করার প্রবণতা ইত্যাদি।
অবসেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজ বা আচরণ বারবার করার মাধ্যমে সাময়িক একটা স্বস্তি পাওয়া গেলেও দীর্ঘ মেয়াদে এটি মানসিক চাপ বাড়ায় এবং ব্যক্তিকে অবসাদগ্রস্ত করে ফেলে।
আরও পড়ুনখুঁতখুঁতে স্বভাব কি রোগ?০১ মে ২০১৩যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে ওসিডি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সে ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানীর কাছে নিয়মিত সেশন নিতে হয়। তীব্র মাত্রার ওসিডি হলে ওষুধেরও প্রয়োজন হয়। ওষুধ মূলত মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অঞ্চলে সেরোটোনিন নামের নিউরোট্রান্সমিটারসহ বিভিন্ন ব্রেন কেমিক্যালের যে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, সেগুলোকে ভারসাম্য রাখতে সহযোগিতা করে।
বংশগত ও পরিবেশগত কারণ, শৈশবে মানসিক আঘাত বা ট্রমা, দৈনন্দিন জীবনে মানসিক চাপ ইত্যাদি নানা কারণে ওসিডি হতে পারে। মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার জন্য মেডিটেশন, শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্য, জীবনযাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবসম্মত রুটিন তৈরি করে কাজ করা দরকার।
আপনার জন্য আরও দরকার কাজের অগ্রগতি খেয়াল রাখা, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা সামলে রাখার কৌশল শেখা। এ ক্ষেত্রে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতাও প্রয়োজন। ধৈর্য ধরে চিকিৎসা ও ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখলে ধাপে ধাপে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব হয়। আপনার জন্য শুভকামনা।
রউফুন নাহার, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট ও সহকারী অধ্যাপক , এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য ব রব র আম র ম আপন র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীরা হেনস্তা হচ্ছেন, দাবি দ্রোহ পর্ষদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থীর
‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। নারী শিক্ষার্থীদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধা তৈরি করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নারী শিক্ষার্থীরা কটূক্তির শিকার হচ্ছেন।’
আজ রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ও ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ)–সমর্থিত প্যানেল দ্রোহ পর্ষদের ভিপি প্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ঝুপড়িতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের পরিচিতি দেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন। ভিপি প্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ বলেন, ‘প্রশাসন এখনো ক্যাম্পাসের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ। ভর্তি ফরম, সেশনজট, নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, আবাসন, মেডিকেল, শাটল ট্রেন ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় নীরব থাকা প্রমাণ করে যে তারা দায়িত্বহীন। আমরা একটি গণতান্ত্রিক, নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় চাই।’
ভিপি প্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ নাট্যকলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী। আর সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ইজাজ উদ্দিন আহমদ। সহসাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন শাখা ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ জুনায়েদ কবির।
এক প্রশ্নের জবাবে ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ বলেন, ‘নারীদের নির্বাচনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে প্রশাসনের বিপরীত ভূমিকা লক্ষ করেছি। ৯ জন নারীকে অন্যায়ভাবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের কটূক্তি করছে। তাঁদের প্যানেলের এক নারী প্রার্থীও কটূক্তির কারণে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।’
প্রশাসন নির্বাচনের প্রচারের জন্য যে সময় দিয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন ঋজু লক্ষ্মী। তিনি বলেন, ‘প্রচারণার জন্য যে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সেটা পর্যাপ্ত নয়। যে চার দিন রয়েছে, সেটা পূর্ণাঙ্গভাবে কাজে লাগাতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। তাই নির্বাচনের তারিখ দুই থেকে তিন দিন পেছানোর দাবি আমরা সাংগঠনিকভাবে জানাব।’
প্যানেলে আরও যাঁরাদ্রোহ পর্ষদ প্যানেল থেকে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক পদে মো. আছাদ বিন রহমান, সহসাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক পদে নুসরাত জাহান, দপ্তর সম্পাদক পদে নয়ন কৃষ্ণ সাহা, সহদপ্তর সম্পাদক পদে অনুত্তর চাকমা, ছাত্রী কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে রুৎমিলা মুমতাহিন, গবেষণা ও উদ্ভাবনবিষয়ক সম্পাদক পদে উমংনাইং, সমাজসেবা ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক পদে সোহেল রানা, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক পদে রোহান আল মহান, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে এস এম ইব্রাহিম, যোগাযোগ ও আবাসনবিষয়ক সম্পাদক পদে ট্যালেন্ট চাকমা, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়াবিষয়ক সম্পাদক পদে রুদ্যবা আদনিন ও নির্বাহী সদস্য পদে বিসন চাকমা, জেস চাকমা, অরিত্র রহমান লড়বেন।
‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে আরেক প্যানেল ঘোষণাএদিকে চাকসু নির্বাচনে ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে প্যানেল ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। আজ বেলা একটায় ক্যাম্পাসের বুদ্ধিজীবী চত্বরে সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। প্যানেলের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সেশনজট, আবাসন, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, শাটল ও লাইব্রেরি সুবিধা উন্নয়নসহ ৩১টি দফা তুলে ধরা হয়।
প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মুহাম্মদ ইয়াছিন উদ্দীন, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে শহীদুল ইসলাম, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে খায়রুল আমীন, সহখেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে মুহাম্মদ ফয়সাল হোসেন প্রার্থী হয়েছেন।