জন্মদিন নিয়ে বেশ কিছু কবিতা লিখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর একটি ‘জন্মদিন আসে বারে বারে/ মনে করাবারে-/ এ জীবন নিত্যই নূতন/ প্রতি প্রাতে আলোকিত/ পুলকিত দিনের মতন।’ এ ছাড়া ‘মোর চিত্ত-মাঝে? চির-নূতনের দিল ডাক/ পঁচিশে বৈশাখ’ এই চরণগুলো তো খুবই পরিচিত। আজ আবার ফিরে এল কবির জন্মদিন। কবির হৃদয়ে জন্মদিন আর নূতনের ডাক দিয়ে যাবে না, তবে তাঁর অসংখ্য অনুরাগীর মনে জাগাবে জীর্ণ পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে নূতনকে আহ্বান জানানোর প্রেরণা। আজ ২৫ বৈশাখ তাঁর ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির সৃজনে, মননে, রুচিতে, সংস্কৃতিতে এমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন যে তাঁর জন্মদিন এক আনন্দঘন উৎসবের উপলক্ষ হয়ে আছে জাতির জীবনে। ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে তাঁর জন্ম ১২৬৮ সনের ২৫ বৈশাখ। কবি ছিলেন বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা সারদাসুন্দরী দেবীর চতুর্দশ সন্তান। তিনি তাঁর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁর গান ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ আমাদের জাতীয় সংগীত।

বাঙালির আবেগ অনুভবের মহত্তম প্রকাশ ঘটেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনায়। কবিতা, গান, ছড়া, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণ, শিশুতোষ, পত্র, নাটকসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তাঁর অজস্র রচনা বাংলা সাহিত্যকে করেছে ঐশ্বর্যমণ্ডিত। রচনাকর্ম ছাড়াও তাঁর চিত্রকলা নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে উপমহাদেশের চারুকলা চর্চায়। কালজয়ী তাঁর এসব সৃজনসম্ভার যুগে যুগে মানুষের মানবিক মূল্যবোধের বিকাশে, অন্যায়ের প্রতিবাদে, দেশপ্রেমে, সত্য ও কল্যাণের পথে নির্ভীক-নিঃশঙ্ক চিত্তে এগিয়ে যেতে প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল আমাদের।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল তাঁর সৃজনকর্মে অনুপ্রেরণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি। নিজেও অন্যায়–অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। জালিয়ানওয়ালাবাগে ব্রিটিশ শাসকদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তাদের দেওয়া নাইটহুড উপাধি বর্জন করেছিলেন, যা ছিল সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে অকল্পনীয়। এসব কারণে তিনি গণমানুষের কাছে প্রিয় ও চির নূতন হয়ে আছেন।

সৃজনকর্ম ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা, কৃষি, গ্রামীণ অর্থনীতি ও সমাজকল্যাণমূলক কর্মপরিধিও বিপুল এবং গভীর তাৎপর্যময়। পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্যতিক্রমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন, পূর্ববঙ্গের শাহজাদপুর, পতিসরে কৃষকদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ প্রবর্তনসহ তাঁর ভিন্নমাত্রার বহুবিধ কর্ম উদ্যোগ সমীহ জাগানিয়া হয়ে আছে। কবির দীর্ঘ ৮০ বছরের কর্মময় জীবনের অবসান ঘটেছিল ১৩৪৮ সনের বাইশে শ্রাবণ।

বরাবরের মতোই সারা দেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উদ্‌যাপিত হবে। বাসস জানায়, এ বছর তিন দিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হবে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। এ ছাড়া কবির স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে রবীন্দ্রমেলা, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এবার রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য হলো ‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’। বিভিন্ন জেলায় জেলা প্রশাসকেরা রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করবেন।

রাজধানী ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমি তিন দিনব্যাপী রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান শুরু করবে আজ থেকে। বাংলা একাডেমি বিকেল চারটায় সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সভাগৃহে আয়োজন করেছে একক বক্তৃতা, রবীন্দ্র পুরস্কার প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে লালমাটিয়ার গ্যালারি ইলিউশনস ‘২৫শে বৈশাখ’ নামে ২৫ জন শিল্পীর শিল্পকর্ম নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। উদ্বোধন আজ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়, চলবে ১৭ মে পর্যন্ত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রব ন দ র অন ষ ঠ ন র জন ম

এছাড়াও পড়ুন:

দিনাজপুরে মেতেছে বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা

দিনাজপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিজয়া দশমীতে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলা। 

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) দুপুর থেকে শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ও প্রতিমা বিসর্জন কেন্দ্রে হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশু ও প্রবীণ সবাই অংশ নেন এই আনন্দঘন উৎসবে।

আরো পড়ুন:

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন

বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন, সদরঘাটে ভক্তদের ঢল

শঙ্খধ্বনি, ঢাক-ঢোলের তালে প্রতিমার সামনে একে অপরের মুখে, কপালে ও গালে সিঁদুর লেপন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ভক্তরা। লাল রঙে রঙিন হয়ে ওঠে চারপাশ, সৃষ্টি হয় এক অনিন্দ্যসুন্দর পরিবেশ। সিঁদুর খেলাকে কেন্দ্র করে শহরে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।

দিনাজপুর শহরের বড় মণ্ডপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে একই দৃশ্য দেখা গেছে। প্রতিমা বিসর্জনের আগে এভাবেই মা দুর্গাকে বিদায় জানান ভক্তরা।

পণ্ডিতদের মতে, বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা মূলত মা দুর্গাকে বিদায়ের আগে তাকে শুভকামনা ও আশীর্বাদ জানানোর একটি প্রতীকী রীতি। বিশেষত বিবাহিত নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে স্বামীর দীর্ঘায়ু ও পরিবারের মঙ্গল কামনা করেন।

দিনাজপুর শহরের রাজবাটি, কালীতলা, বড় মণ্ডপসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ছিল এই উৎসবের প্রাণবন্ত আয়োজন। ছোট-বড় সবাই লাল সিঁদুরে রঙিন হয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

শেষ বিকেলে ঢাক-ঢোলের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জনের প্রস্তুতি শুরু হয়। দিনাজপুরে সিঁদুর খেলার এ উৎসব শুধু ধর্মীয় আবেগ নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণের এক রঙিন প্রকাশ।

স্থানীয় পূজারী সুবর্ণা রায় বলেন, “মা দুর্গাকে বিদায় জানাতে মন খারাপ লাগে। তবে সিঁদুর খেলা আনন্দের মধ্য দিয়ে সেই বিষাদকে কিছুটা কমিয়ে দেয়।”

অর্পিতা এক কলেজ ছাত্রী জানান, সারা বছর অপেক্ষা করি দুর্গাপূজার জন্য। আজকের দিনটা আবেগের, আবার আনন্দেরও। মা-কে বিদায় জানালেও সিঁদুর খেলায় মন ভরে যায়।

দিনাজপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, “সিঁদুর খেলা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এই খেলায় আমরা শুধু আনন্দই পাই না, বরং ঐক্যের বার্তাও ছড়িয়ে যায়।”

আরেক তরুণ ভক্ত রুবেল দেবনাথ বলেন, “সিঁদুর খেলা শুধু একটি আচার নয়, এটি আমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও আনন্দ ভাগাভাগি করার এক বিশেষ উপলক্ষ।”

ঢাকা/মোসলেম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব
  • দিনাজপুরে মেতেছে বিজয়া দশমীর সিঁদুর খেলা
  • বুড়িগঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন শুরু, সদরঘাটে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা
  • দেবী দুর্গা শক্তি ও সাহসের মূর্ত প্রতীক: মির্জা ফখরুল 
  • আওয়ামী লীগের ঘাপটি মেরে থাকা অনুচরেরা এখনো তৎপর: মির্জা ফখরুল
  • সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সব রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা সদিচ্ছা অপরিহার্য: নিসচা
  • ‎চার দিনের ছুটিতে পুঁজিবাজার
  • ব্যাংক টানা ৪ দিন বন্ধ থাকবে, প্রয়োজনে টাকা তুলবেন কীভাবে
  • পূজার ছুটিতে খোলা থাকবে কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন
  • চার দিনের ছুটিতে কক্সবাজার রুটে চলবে ‘ট্যুরিস্ট স্পেশাল’ ট্রেন