কর্মে, মননে পুরোপুরি রাবীন্দ্রিক তিনি। পরনে ঢাকাই শাড়ি, চুলে ফুল আর কণ্ঠে জাদুকরি সুর– সব জায়গাতে রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। বলা যায়, বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে রবীন্দ্রসংগীতের প্রচার-প্রসার ও বিস্তারে তিনি অগ্রজ একজন। কথা বলায় সদাবিনয়ী ভাব, মুখে লেগে থাকা আবছা হাসির রেখা বিশ্বকবির গল্পের চরিত্রগুলোকে বার বার মনে করিয়ে দেয় যেন। 

সময় এখন বড় অস্থির। দ্রুতগতির ইন্টারনেটের সঙ্গে মানুষের জীবনযাপনও হয়ে উঠেছে গতিশীল। বন্যার জীবন সেই গতিতে তাল মেলায়নি। তিনি এখনও পুরোনোপন্থি বলে দাবি করলেন।

শিল্পীর ভাষ্য, ‘আমি কর্মে, মননে পুরোনোপন্থি। এখন গতির সময়। দ্রুতগতি। সেখানে অস্থির মানুষ এক মিনিটের গান শুনে হয়তো আনন্দ পাচ্ছেন। আমার মনে হয় না এতে শিল্পীর স্থায়িত্ব তৈরি হচ্ছে। এক মিনিটের গানে, রিলে অনেক চমক আছে। মানুষ শুধু গান কেন, যে কোনো কিছুতেই চমক চাইছে। চমক দীর্ঘ সময়ের হয় না। রবীন্দ্রনাথের গান নিষ্ঠা আর ভালোবাসার বিষয়। জানি না, সবাই আমার সঙ্গে একমত হবেন কিনা। যারা রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করেন তাদের আশ্রয় রবীন্দ্রনাথ– আমার জীবন দিয়ে তা উপলব্ধি করেছি।’ 

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা শুধু নিজ দেশে নন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও ব্যাপকভাবে সমাদৃত। বাংলাদেশ ও ভারতে তাঁর বহুসংখ্যক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে ২০টি উল্লেখযোগ্য।

অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন বন্যা। সংগীত নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ভারতে। রবীন্দ্রসংগীত ছাড়াও ধ্রুপদি, টপ্পা ও কীর্তনের ওপর শিক্ষা লাভ করেছেন। প্রাথমিক অবস্থায় বন্যা ‘ছায়ানট’ ও পরে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতেও তিনি গান শিখেছেন। শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন, আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সংগীতজ্ঞদের কাছ থেকে গানের তালিম নিয়েছেন। জীবনজুড়ে তিনি রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাটা নিয়ে চর্চায় থেকেছেন। রবীন্দ্রনাথকে আত্মস্থ করেছেন।  

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথকে আত্মস্থ করার চেষ্টা সবসময়ই করে যাচ্ছি। মনে রাখতে হবে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, শিল্প প্রাসঙ্গিক না হলে সেই শিল্প মৃত। রবীন্দ্রনাথের সময়ে যে ভাবে গান গাওয়া হতো, তা আমাদের সময়ে বদলে গিয়েছিল। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ক্ষেত্রেও তা বদলাবে। আমি যে প্রক্রিয়াতে রবীন্দ্রসংগীতকে ধারণ করি না কেন গানের আত্মমগ্নতায় যেন কোনো ঘাটতি না থাকে। এই আত্মমগ্নতা থাকলেই রবীন্দ্রসংগীত আত্মস্থ করা হয়ে ওঠে।’

কর্মজীবনে বন্যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপারসন হিসেবে কর্মরত। তিনি ‘সুরের ধারা’ নামের একটি সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কাজের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ অর্জন করেছেন। 

সাহিত্য ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কাজের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার সম্মাননা পেয়েছেন। ২০১৭ সালে ভারত সরকার তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘বঙ্গভূষণ’ পদক দিয়ে সম্মানিত করে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

রেগে জীবিত স্ত্রীর শ্রাদ্ধ করলেন স্বামী

ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। সুখে, শান্তিতে ঘর করছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই সংসারে অশান্তি শুরু হয়। কেননা, স্ত্রী আবার অন্য একজনের প্রেমে মজেছেন। শুধু তাই না, নতুন প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার জন্য ছেড়ে গেছেন সাজানো-গোছানো সংসার। রেগে স্বামী জীবিত স্ত্রীর পিণ্ডদান করলেন। শুধু পিণ্ডদান করেই থামেননি, শ্রাদ্ধও করেছেন।

চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জে।

স্থানীয় গণমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, হিঙ্গলগঞ্জের উত্তর মামুদপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রাক্তন সেনা সদস্য নরেন নায়ক। ধলতিলা এলাকার বাসিন্দা সুমিতা সরকারকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। 

আরো পড়ুন:

মার্কিন শুল্কারোপ: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপস না করার ঘোষণা মোদির

ভারতের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান

নরেন নায়কের অভিযোগ, ‘‘স্ত্রী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পুরুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এই নিয়ে দুইজনের মধ্যে ঝগড়াও হয়। একদিন হঠাৎ সুমিতা নিখোঁজ হয়ে যান।’’
নরেন নায়ক বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রীর খোঁজ করেছিলেন। তিনি জানতে পারেন, স্ত্রী অন্যত্র ঘর বেঁধেছেন। এরপরই জীবিত স্ত্রীর শ্রাদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। 

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী,  স্ত্রীর শ্রাদ্ধের আয়োজন হয়। পুরোহিত ডেকে, স্ত্রীর ছবি সামনে রেখে মন্ত্র পড়ে চললো শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। যজ্ঞ করে জীবিত স্ত্রীর পিণ্ডও দান করেন নরেন। শ্রাদ্ধের কাজের জন্য মাথাও মুড়িয়েছেন তিনি।
প্রশ্ন হচ্ছে,  এমন কেন করলেন তিনি? নরেন নায়ক বলেন, “আমার কাছে আমার স্ত্রী মৃত। যিনি একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছেন এবং অন্য কারও সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক অবশিষ্ট নাই। তাই ধর্মমতে বিদায় জানালাম।” 

এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অনেকে, প্রশ্ন তুলছেন ‘‘এমনভাবে কি জীবিত মানুষের শ্রাদ্ধ করা সম্ভব? ’’

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ