অন্তর্বর্তী সরকার এসে খাদ্য মূল্যস্ফীতিকে গুরুত্ব দিলেও প্রত্যাশিত ফল কি এসেছে? অবশ্য সাম্প্রতিক হিসেবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। যদিও বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ হিসেবে সুখবর দেখা যায়নি। এর আগের টানা এক বছর বাংলাদেশ লাল শ্রেণির তালিকায় ছিল। ছয় মাস পরপর এই চিত্র প্রকাশ করে সংস্থাটি। সেই অনুসারে প্রায় দুই বছর ধরে বাংলাদেশ লাল তালিকায়। তারপরও স্বস্তি এ জন্য যে, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও ১৪টি দেশ এক বছর ধরে লাল শ্রেণিভুক্ত। এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার ভারতও আছে। যদি পণ্যের তুলনায় মুদ্রা সরবরাহ অনেক বেড়ে যায়, অর্থাৎ দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত মাত্রায় টাকা ছাপায়, তখনই মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। এর ফলে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে আপনাকে আগের চাইতে বেশি মুদ্রা খরচ করতে হবে। এর মানে, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে ওই মুদ্রার মান বা ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির একটি স্বাভাবিক চিত্র হলেও বড় ধরনের মুদ্রাস্ফীতিকে অর্থনীতির জন্য অভিঘাত হিসেবে দেখা হয়। মুদ্রাস্ফীতি বলতে বোঝায় পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাওয়াকে, যা সাধারণত ঘটে অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহের কারণে।
প্রায় তিন বছর ধরে বাংলাদেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল। তবে এক বছর ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি ছিল। টানা ১০ মাস পর গত ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নামে। মার্চ মাসেও তা এক অঙ্কের ঘরেই ছিল, যা একটু স্বস্তির বিষয়। এপ্রিলের হিসেবে কমার চিত্র স্পষ্ট। যদিও গত বছরের মার্চের পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আর ১ অঙ্কের ঘরে নামেনি। গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ এত দীর্ঘ সময় ধরে ভোগান্তিতে পড়েনি। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে ওঠে, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিবিএসের হিসাবে, ২০২৪ সালের এপ্রিলের পর থেকে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত এক বছরে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যদি আপনার খাবার কিনতে ১০০ টাকা খরচ হয়; পরের এক বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত খাবার কিনতে লাগল ১১০ টাকা ৪৪ পয়সা। প্রতি ১০০ টাকায় খরচ বেড়েছে ১০ টাকা ৪৪ পয়সা।
এর মানে, বাংলাদেশের সব শ্রেণির মানুষের খাবার খরচ গড়ে এক-দশমাংশ বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি এক ধরনের করের মতো। সেই হিসাবমতে, আমাদের প্রতি মাসে আয়ের পুরোটাই সংসার চালাতে খরচ হয়ে যায়। কিন্তু যদি হঠাৎ জিনিসপত্রের দাম বাড়ে এবং সে অনুযায়ী আমাদের আয় না বাড়ে, তবে অবশ্যই ধারদেনা করে সংসার চালাতে হবে কিংবা খাবার, কাপড়চোপড়, যাতায়াতসহ বিভিন্ন খাতে কাটছাঁট করতে হবে। মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধি বা আয় বৃদ্ধি কম হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে। প্রকৃত আয় কমে যায়। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার অনেক দিন ধরেই কম। মূল্যস্ফীতি বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। মুদ্রানীতির পাশাপাশি রাজস্বনীতি এমন করতে হবে, যেন মূল্যস্ফীতি কমে। এ ছাড়া বাজার তদারকিও জোরদার করতে হবে।
সৈয়দ ফারুক হোসেন: সাবেক
রেজিস্ট্রার, জাবিপ্রবি
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এক বছর
এছাড়াও পড়ুন:
তাসকিনের প্রথমের আনন্দ
চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ, তবে মনে হয়তো তাঁর রেশ ছিল না। নইলে কি আর ওভাবে ভক্তদের সেলফি, ছবির আবদার পূরণ করতে পারেন! সিটি গ্রুপ-প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার ২০২৪ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে যাওয়ার পর মঞ্চে যার শুরু। এরপর বিশ্রাম নিতে যাওয়ার পথে সোনারগাঁও হোটেলের দ্বিতীয় তলার লিফটে ওঠার আগপর্যন্ত একই কাজ করতে হয়েছে তাসকিন আহমেদকে। এমন সন্ধ্যায় অবশ্য ফুরফুরে মেজাজে থাকাটাই স্বাভাবিক। সেলফি পর্বের কিছুক্ষণ আগেই যে তাঁর হাতে উঠেছে সিটি গ্রুপ-প্রথম আলো বর্ষসেরা রানারআপ পুরস্কার।
তাসকিনের হাতে এ পুরস্কার উঠেছে ২০২৪ সালের অসাধারণ পারফরম্যান্সের সৌজন্যে। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া তাসকিন ২০২১ সাল থেকেই ধারাবাহিক পারফর্ম করছেন। তবে ২০২৪ সালটা তাঁর জন্য একটু আলাদাই, পরিসংখ্যানও সেটাই বলছে। গত বছর তিনি উইকেট পেয়েছেন ৬৩টি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গত বছর সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় তাসকিনের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন শুধু দুজন—যশপ্রীত বুমরা (৮৬) ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (৬৪)।