বিশেষ ডিভাইসসহ কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার ১২০ প্রার্থী
Published: 9th, May 2025 GMT
সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে মিটার রিডার-কাম মেসেঞ্জার পদে চাকরির জন্য এমসিকিউ পরীক্ষায় বিশেষ ডিভাইস ব্যবহারের সময় ধরা পড়েছেন ১২০ পরীক্ষার্থী। শুক্রবার বিকেলে সুনামগঞ্জ শহরের পৃথক ৫টি নিয়োগ পরীক্ষাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। প্রশ্ন ফাঁস চক্রের এই ডিভাইসসহ পরে ওই প্রার্থীদের বহিষ্কার করা হয়।
জানা গেছে, একটি চক্রের সঙ্গে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে অর্ধেক টাকা পরীক্ষার আগেই পরিশোধ করেছিলেন প্রার্থীরা। এ ঘটনায় জড়িত চক্রের কোনো সদস্যকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তাদের তথ্যও জানা যায়নি।
পরীক্ষার দিন বিকেলে জেলার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চুক্তি ভিত্তিতে ২৫ জন মিটার রিডার-কাম মেসেঞ্জার নিয়োগের এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শহরের ৫টি কেন্দ্রে এক হাজার ৩০০ প্রার্থী এতে অংশ নেন। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে– সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়, উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
৬০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় সময় ছিল ৫০ মিনিট। এই সময়ের মধ্যেই হলে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকরা বুঝতে পারেন, কিছু পরীক্ষার্থী বিশেষ ডিভাইস ব্যবহার করে উত্তরপত্র পূরণ করছেন। পরে তাদের হাতেনাতে ধরা হয়। ৫ কেন্দ্রে ১২০ জন নিয়োগ পরীক্ষার্থীকে ডিভাইসসহ ধরার পর বহিষ্কার করা হয়। সবচেয়ে বেশি বহিষ্কার হয় এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী। এই কেন্দ্রের ২৬৯ জন নিয়োগ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৫৬ জন বহিষ্কৃত হয়েছেন।
ওই কেন্দ্রে গিয়ে ডিভাইসগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ডিভাইসের একটি অংশ ব্যাংকের কার্ডের মতো, আরেকটি অংশ একেবারেই ছোট্ট, কর্ডলেস এয়ারফোনের মতো। এ অংশ কানের ভেতরে ঢুকাতে হয়। কেন্দ্রে দায়িত্বরত শিক্ষকরা অনেক নিয়োগ পরীক্ষার্থীর কানের ভেতর থেকে চিমটি জাতীয় যন্ত্র দিয়ে এ অংশ বের করে এনেছেন। অন্য অংশ শার্টের পেছন দিকে কলারে রেখেছেন কেউ কেউ। কেউ আবার বেল্ট দিয়ে হাতের কনুইয়ের ওপরে রেখেছিলেন।
ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসা নিয়োগ পরীক্ষার্থী পাবনার নাঈম হোসেন বলেন, ডিভাইসে নিজেদের সিম ব্যবহার করতে হয়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বলতে থাকে এভাবে– ‘১ নম্বরের ‘ক’, ২ নম্বরের ‘গ’, ৩ নম্বরের ‘খ’।” এভাবে প্রশ্নের উত্তর বলে যায় এতে। পরীক্ষার্থী শুধু দাগ দেয়। ওই পরীক্ষার্থী জানান, এই ডিভাইস সিন্ডিকেটের সঙ্গে অনেকে আগে চুক্তি করেছে। কেউ কেউ ৫-৬ লাখ টাকায় চুক্তি করে আগেই প্রায় অর্ধেক টাকা পরিশোধ করেছে।
কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে দেখা যায় আটক প্রার্থীদের পুলিশ ছেড়ে দিচ্ছে। কয়েকজন নিয়োগ পরীক্ষার্থী নিজেদের আটক হওয়া সিম নেওয়ার জন্য এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্থাৎ কেন্দ্র সচিব ইনচান মিঞার কক্ষে ঢুকে কাকুতি মিনতি করছেন।
পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিজয় তালুকদার বলেন, প্রশ্ন দেওয়ার পর প্রশ্ন না পড়েই কিছু নিয়োগ পরীক্ষার্থী যখন উত্তর দাগাচ্ছিল, তখনই তাদের সন্দেহ হয়। একজনকে সন্দেহবশে আটক করার পর ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। এর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে বাকিগুলোর তথ্য পাওয়া যায়।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রেমানন্দ বিশ্বাস বলেন, সুনামগঞ্জে কোনো নিয়োগ পরীক্ষায় এই প্রথম এভাবে ডিভাইস পাওয়া গেল। পরীক্ষার্থীদের কেউ সুনামগঞ্জের নয়। এরা একটি বিশেষ সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ডিভাইস ব্যবহার করছিল। এদের কাছ থেকে সিন্ডিকেটের অন্যদের পরিচয় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলেও মন্তব্য করেন এ শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষক ইনচান মিঞা বলেন, বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থীদের আটক রেখে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। পরে তারা পদক্ষেপ নেয়।
পল্লী বিদ্যুতের জিএম মিলন কুমার কুণ্ডু বলেন, ২৫ জন রিডার-কাম মেসেঞ্জার নিয়োগের জন্য পাঁচ কেন্দ্রে এক হাজার ৩০০ পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। আগে থেকেই দায়িত্ব পালনকারী পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছিল, দেশের অন্য কিছু এলাকায় নিয়োগ পরীক্ষায় এভাবে ডিভাইস ব্যবহৃত হয়েছে; তারা যেন সতর্ক থাকেন। সুনামগঞ্জের পাঁচটি কেন্দ্রে সতর্ক থাকায় ১২০ জনকে বহিষ্কার করা গেছে।
ওসি আবুল কালাম জানান, নির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন য় গ পর ক ষ র থ স ন মগঞ জ পর ক ষ য় ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ডাকাতি, বিদেশি মুদ্রাসহ গ্রেপ্তার ১৩
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের সামনে ডাকাতির ঘটনায় প্রায় ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বিদেশি মুদ্রা লুটের ঘটনায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগ।
শুক্রবার (৪ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মিডিয়া ও পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, গত ১ জুলাই বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। মুখোশধারী ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত ১০-১২ জনের একটি দল এমএম আয়াত ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের একটি প্রাইভেটকার গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে প্রায় ৪ লাখ ৯১ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল, ৪০০ ওমানি রিয়াল, ৩০ কুয়েতি দিনার ও ১২ হাজার ৩৫০ দিরহাম লুট করে নেয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তি এবং সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটিরই এক কর্মচারী মো. তুহিনকে (২৮) আটক করে। পরবর্তীতে তার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
পুলিশ জানায়, প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী তুহিন ও অন্যান্য সহযোগীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই ডাকাতির ছক আঁকেন। ঘটনার দিন উবার রাইড শেয়ারে উত্তরা যাওয়ার সময় তুহিন তার লাইভ লোকেশন হোয়াটসঅ্যাপে দলীয় সহযোগীদের পাঠান। এরপর ঠিক নির্ধারিত স্থানে এসে দলটি গাড়ির গতিরোধ করে মুদ্রাভর্তি লাগেজ নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে তুহিনের দেওয়া তথ্য ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ এবং ডিবির যৌথ অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয় তালহা নূর (৩৫), শারমিন (২৫), মো. শাহিন শিকদার (৩৭), ইয়াসিন আরাফাত (৩৬), মো. রফিকুল ইসলাম (৩৬), মো. শুভ হাওলাদারসহ (২৫) মোট ১৩ জনকে। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ২ লাখ ৬৯ হাজার ২৪০ সৌদি রিয়াল, যার মূল্য প্রায় ৮৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় এ ঘটনায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এবং অবশিষ্ট লুণ্ঠিত অর্থ উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা/এমআর/এসবি