‘যা হারিয়েছি, কোনো কিছুর বিনিময়েই তা পূরণ হওয়ার নয়’
Published: 4th, July 2025 GMT
‘জুলাই আন্দোলনে যা হারিয়েছি, কোনো কিছুর বিনিময়েই সেই অভাব পূরণ হওয়ার নয়। সরকার যতই অনুদান দিক, যতই সাহায্য-সহযোগিতা করুক, আমার সন্তানদের যতই প্রতিষ্ঠিত করে দিক, তাদের বাবার অভাব কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না।’—কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব বলেন কুমিল্লার দেবিদ্বারের শহীদ আবদুর রাজ্জাক রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আক্তার।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলেটা জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়ে এতিম হলো। এখন সে ‘বাবা বাবা’ বলে ডাকে। আমি তাকে বাবার মুখ কোথায় দেখাব? কীভাবে এই শোক ভুলব?’
শহীদ আবদুর রাজ্জাক রুবেলের স্ত্রী বলেন, ‘আমার মেয়েটার বয়স এখন পাঁচ বছর চলছে। সে এখনো জানে না তার বাবা কোথায়। স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। যখন দেখে অন্যদের বাবা স্কুল থেকে নিয়ে যায়, তখন বাসায় ফিরে কান্নাকাটি করে আর বলে—‘মা, আমার বাবা কোথায়? বাবা আমাকে কেন নিতে আসে না? তিনি আরও বলেন, ‘আমি মিথ্যে বলি, তোমার বাবা বেড়াতে গেছে। কিন্তু আর কতদিন এই মিথ্যা সান্ত্বনা দেব?’
এক বছরের শোকের ভার বয়ে বেড়ানো এই নারী বলেন, ‘বছর ঘুরে জুলাই তো ঠিকই আসছে, কিন্তু আমার স্বামী তো আসলো না। আমি না পেলাম স্বামীকে, না পেলাম স্বামীর হত্যার বিচার!’
গত বছরের ৪ আগস্ট কুমিল্লার দেবিদ্বারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে শহীদ হন বাসচালক আবদুর রাজ্জাক রুবেল। গুলির পর তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আক্তার জানান, ‘আমার স্বামীর কোনো শত্রু ছিল না। সে বাস চালাতো। গুলি করার পরও যদি তারা থেমে যেত, তাহলে হয়তো সে বাঁচতো। কিন্তু না, তাকে কুপিয়ে, পিটিয়ে মারা হয়েছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর হত্যা মামলার আসামিদের অনেকে এখন জামিনে মুক্ত। পুলিশ ধরছে ঠিকই, কিন্তু আদালত তাদের জামিন দিচ্ছে। তাহলে আমি কি কোনোদিনও স্বামী হত্যার বিচার পাব না?’
হ্যাপী আরও বলেন, ‘তিনি মারা যাওয়ার দু’দিন আগে ২৫০০ টাকা পাঠিয়েছিল। তার মৃত্যুর পর সেই টাকা দিয়েই লাশ বাড়িতে এনেছি, দাফন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যে সাহায্য করেছে, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলছে। বাচ্চার খাবার, ওষুধ, শাশুড়ির চিকিৎসা, নিত্যদিনের খরচ এর মধ্যেই চালাতে হয়।’
শহীদ রুবেলের মা হোসেনেরা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আমার বুকের ধন কাইড়া নিল। সংসারটা সে আগলাইয়া রাখত। চার মাইয়ার পর এই পোলা হইছিল। ছোটবেলায় ওর বাপ মারা যায়। আমি হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে পুত পালছি। কিছু অমানুষ গুলি কইরা, কুপাইয়া, পিটাইয়া আমার মানিক চানরে মাইরা ফেলল! আহারে, আমার পোলার দমটা জানি কেমনে বের হইছে। এক বছর হইছে, আমার রুবেল আর মা কইয়া ডাক দেয় না। রাস্তাঘাটে কত মানুষ দেখি, কিন্তু আমার পোলারে দেখি না।’
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘মারা যাওয়ার দিন পোলা দুপুরে ফোন দিছিল। কইছিল—‘মা, আমি ভাত খাব, হ্যাপীরে কও ভাত বাড়তে। আমি রাইন্ধা বসেছিলাম, ভাবছিলাম, আইবো একসাথে খামু। কিন্তু পুত আইল লাশ হইয়া আইল।’
রুবেল হত্যার বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদ বলেন, ‘রুবেল হত্যা মামলার আসামিরা জামিনে বের হয়ে যাচ্ছে। জুলাই আন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হলেও মামলার চার্জশিট এখনও হয়নি। আমরা জুলাইয়ের সব হত্যা মামলার দ্রুত বিচার দাবি করছি।’
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সদরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালায়। দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অদূরে আবদুর রাজ্জাক রুবেলকে প্রথমে গুলি করে, পরে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে তারা।
দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আবদ র র জ জ ক র ব ল হত য র আম র স আরও ব
এছাড়াও পড়ুন:
ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা
জুলাই পদযাত্রায় অংশ নেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গাড়িবহরে হামলার হয়েছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় কর্মসূচি শেষে পীরগঞ্জে যাওয়ার পথে টাঙ্গন ব্রিজ এলাকায় এ হামলা হয়।
এনসিপি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও আর্ট গ্যালারি মসজিদে নামাজ শেষে পীরগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হয় এনসিপির গাড়িবহর। টাঙ্গন ব্রিজ অতিক্রম করার সময় একটি আন্তঃজেলা বাস এনসিপির বহরের গাড়িকে চাপা দেয়। এতে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এনসিপির নেতাকর্মীরা গাড়ি থামিয়ে এর কৈফিয়ত চান। তখন এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে ৫ থেকে ৬ জন অচেনা মানুষ। এতে গাড়িচালকসহ একজন এনসিপি কর্মী আহত হন।
এনসিপি অভিযোগ করেছে, এ হামলা পূর্বপরিকল্পিত। প্রথমে বাস চাপা দিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তবে, তারা সঠিক গাড়ি চিহ্নিত করতে পারেনি। পরে গাড়িতে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপরে হামলা করে।
ঠাকুরগাঁও এনসিপির মুখপাত্র অপু বলেছেন, হামলাকারীরা মূলত নাহিদ বা সারজিসদের টার্গেট করেছিল। প্রথমে যেহেতু বাসচাপা দেওয়া হয়েছে, ধারণা করা যায়, তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরাসরি হত্যা। এর সঠিক তদন্ত দাবি করছি।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সারওয়ার হোসেন বলেছেন, বিষয়টি জানামাত্র ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। এনসিপি অভিযোগ করছে, এটি হামলা। প্রাথমিকভাবে একজন হামলাকারীর ভিডিও তারা দেখিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/হিমেল/রফিক