কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলার সড়কগুলোয় অবৈধভাবে বাস ও ট্রাক পার্কিং করায় নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনায় কেউ হচ্ছেন পঙ্গু আবার কেউ হারাচ্ছেন স্বজন।

কুষ্টিয়ার শহরে বাস ডিপো থাকা স্বত্বেও মজমপুর গেট থেকে বাইপাস সড়কের পাশে জিলা স্কুল পর্যন্ত প্রতিদিন পদ্মা-গড়াই নামক কিছু বাসসহ ঢাকার বাসগুলোও রাস্তার পাশে রেখে মেরামত, ধোয়া মোছার কাজ করা হয়। এতে করে যানজট লেগেই থাকে ব্যস্ত এ শহরে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের নজর নেই বলেই জানান চলাচলকারীরা।

সরেজমিনে শুধু কুষ্টিয়া শহরই না দৌলতপুর, খোকসা, কুমারখালী, ভেড়ামারা ও মিরপুরের সড়কগুলোতেও এ ধরনের চিত্র দেখা যায়।

অন্যদিকে সড়ক দখল করে গ্যারেজ ব্যবসা, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বটতৈল মোড় থেকে বিআরবি ফ্যাক্টরি পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক জুড়ে দুইপাশ দখল করে ছোট বড় গাড়ি পার্কিং করে মেরামতের কাজ করে অন্তত ৩০টি মোটর গ্যারেজ। ফলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট ও বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি। 

ইতোমধ্যে এসব এলাকায় ইউপি সদস্য, পুলিশ সদস্য, বিএনপির নেতা, রিক্সা চালক, মোটর সাইকেল চালক এবং শিশুসহ বেশ কয়েকজন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, হেলাল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, বাবু ইঞ্জিনিয়ারিং, পুষ্প ইঞ্জিনিয়ারিং, ফারুক ইঞ্জিনিয়ারিং, মানিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও মিলন ওয়ার্কশপসহ বহু গ্যারেজ মালিক সড়কের উপরেই গাড়ি মেরামতের কাজ করে আসছে। ফলে সড়কপথে চলাচলরত যানবাহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। 

বিষয়টি প্রশাসনের চোখের সামনে ঘটলেও দীর্ঘদিন ধরে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তারা বলছেন, বারবার অভিযোগ করার পরও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন নেই। সাধারণ মানুষের দাবি, এইসব গ্যারেজ অবিলম্বে সড়ক থেকে সরিয়ে নির্ধারিত স্থানে স্থানান্তর করতে হবে। অন্যথায় প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা দুর্ঘটনা একসময় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। নিরাপদ সড়কের স্বার্থে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।

বাস মালিক সমিতির সভাপতি আক্তার হোসেন বলেন, “রাস্তার দুই পাশে গাড়ি রাখার কোনো নিয়ম নেই। তাদের বাস রাখা ও মেরামতের জন্য ডিপো আছে। বাস চালকদের যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করতে নিষেধ দেওয়া আছে। নিষেধ থাকা স্বত্বেও কিছু কিছু চালক সড়কের দুই পাশে গাড়ি রেখে মেরামত ও পরিস্কার করেন। বিষয়টি দুঃখজনক।”

এ বিষয়ে হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, “রাস্তার পাশে গাড়ি পার্কিং করে মেরামত করছে এ ধরনের গাড়িগুলোর প্রতিদিনই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র ঘটন ম র মত সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আন্তরিক হোন

মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার এবং এর নিচের সড়কগুলো ঢাকা শহরের প্রবেশমুখে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ফ্লাইওভারটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল যানজট নিরসন করা; অপরিকল্পিত নকশা, দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং আইন না মানার কারণে সেটিই হয়েছে এখন গলার কঁাটা। পদ্মা সেতু থেকে পাওয়া মূল্যবান সময়টুকু ঢাকার প্রবেশপথেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। রাজধানীর উপকণ্ঠে এই যানজট কেবল সময়ের অপচয় নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতির ওপরও ফেলেছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব।

প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ফ্লাইওভার শনির আখড়া থেকে চানখাঁরপুল পর্যন্ত সংযোগ স্থাপন করলেও এর তিনটি অংশ স্থায়ী যানজটের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে—উঠে আসার অংশ, সায়েদাবাদ অংশ এবং শেষে নামার সময় গুলিস্তান টোল প্লাজা ও চানখাঁরপুল অংশ। গুলিস্তান টোল প্লাজার ধীরগতি এবং সায়েদাবাদে সৃষ্টি হওয়া জট মূলত ফ্লাইওভারের সুফলকে ম্লান করে দিচ্ছে। কিন্তু এই জটের মূল কারণ নিছক বেশি যানবাহন নয়, বরং ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা।

নগর–পরিকল্পনাবিদদের মতে, আধুনিক পরিবহনব্যবস্থায় অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মাণকে উৎসাহিত করা হয় না, কারণ এটি নিচের রাস্তার ট্রাফিক পরিচালন ক্ষমতাকে অনেক ক্ষেত্রেই কমিয়ে দেয়। হানিফ ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে ফ্লাইওভারের ওপর চাপ কমাতে নিচের সড়কগুলোর দিকে নজর দেওয়া হয়নি। ফলে নিচের যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ সড়কটি সংস্কারের অভাবে বেহাল এবং রাস্তাজুড়ে গর্ত, পানি আর ধুলার রাজত্ব। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যানবাহনের চাপ গিয়ে পড়ছে ফ্লাইওভারের ওপর, যেখানে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে নামার মুখে।

তবে এই অব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিকটি হলো সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক নৈরাজ্য। ধারণক্ষমতা ৭০০-৮০০ বাস হলেও সেখানে রাখা হয় আড়াই থেকে তিন হাজার বাস। টার্মিনালের বাইরে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শত শত পরিবহন কাউন্টার। দুর্ঘটনা বা অবৈধ কাউন্টারের কারণে যখন একটি লেনের যানবাহন উল্টো সড়কে চলে আসে, তখন যাওয়া-আসা উভয় পথের গতি রুদ্ধ হয়ে যায়। 

যাত্রাবাড়ী এলাকার যানজট কেবল ট্রাফিক আইন অমান্য বা রাস্তার দুর্বলতার ফল নয়, এর জন্য দায়ী পরিবহন খাতে জেঁকে বসা প্রভাবশালী সিন্ডিকেটও। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে সায়েদাবাদ টার্মিনালের সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। 

প্রতিদিন লাখো যাত্রীর দুর্ভোগ কমাতে হলে এখন শুধু ফ্লাইওভারের ওপর নয়, নজর দিতে হবে এর নিচেও। নিচের ভাঙাচোরা সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করতে হবে। এর ফলে ফ্লাইওভারের ওপরের চাপ কমে আসবে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, এর আশপাশ এলাকা ও সড়কগুলোকে অবৈধ দখল ও কাউন্টারমুক্ত করতে হবে। ট্রাফিক পুলিশকে নিচের সড়কগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আন্তরিক হোন