চট্টগ্রামে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়েছে, ৬০ টাকার ওপরে সবজি
Published: 4th, July 2025 GMT
এক মাস ধরে চট্টগ্রামের বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। তবে গত কয়েক দিনে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা কেজিতে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সামুদ্রিক মাছের সরবরাহ কম। গরু ও ছাগলের মাংসের বিক্রি গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। অধিকাংশ সবজি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে।
সকাল ৮টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, বাজারে ক্রেতা তেমন নেই। কিছু বিক্রেতা দোকান খুলেছেন, কেউ আবার খুলতে শুরু করেছেন। বাজারে কথা হয় মুরগি বিক্রেতা মো.
বাজারের আরেক বিক্রেতা মো. সাইফুল বলেন, এখন পর্যন্ত মুরগির দাম কমই বলা যায়। বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকায় মুরগির দাম কম। তিনি জানান, সোনালি মুরগির দাম বেশ কিছু দিন ধরে স্থিতিশীল। প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কোরবানির ঈদের পর চট্টগ্রামে গরুর মাংসের চাহিদা কমেছিল। তাই অধিকাংশ দোকানে একটি বা দুটি গরু জবাই হয়ে এলেও আজ কিছু দোকানে বাড়তি পশু জবাই করতে দেখা যায়। গরুর মাংস আকার অনুযায়ী দোকানের সামনে ঝুলিয়ে রাখছেন বিক্রেতারা। সেখানে হাড়সহ মাংস ও হাড়ছাড়া মাংস আলাদা রাখা হয়েছে। হাড়সহ মাংস প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। অন্যদিকে হাড়ছাড়া মাংস ৯৫০ টাকার আশপাশে। একই দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি গরুর কলিজা। দোকানভেদে দাম ১ হাজার টাকাও চাওয়া হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, পবিত্র আশুরা ঘিরে মাংসের চাহিদা বাড়ে, তাই তাঁরা বাড়তি পশু জবাই করেছেন। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকায়।
বাজারে বিক্রির জন্য খাঁচায় রাখা হয়েছে ব্রয়লার মুরগি। আজ সকালে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট বাজারেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম রগ র দ ম
এছাড়াও পড়ুন:
চীনকে মোকাবিলায় পরীক্ষার মুখে কোয়াডের ঐক্য
চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া নিয়ে গঠিত কোয়াড জোটের বৈঠক ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ওই বৈঠকে জোটভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নেন। বৈঠকে জোটের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদে চীনের বাড়তে থাকা শক্তি ও আধিপত্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এমন একসময় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে বড় শুল্ক আরোপ করেছেন। কার্যত বিষয়টি জোটের অংশীদারদেরও পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। রয়টার্স জানায়, জোটের কোনো সদস্যই ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক থেকে রেহাই পায়নি।
চীনকে মোকাবিলা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কোয়াডের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উদ্যোগ চালুর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়। তবে বাণিজ্য ও অন্যান্য মতবিরোধের কারণে অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে সম্পর্কের টানাপোড়েন।
ওয়াশিংটনে বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, গুরুত্বপূর্ণ খনিজের সরবরাহ শৃঙ্খলের আকস্মিক সংকোচন ও ভবিষ্যতের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন চার দেশ। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, নির্দিষ্ট অমৌলিক পণ্য ও খনিজ প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তির জন্য বাজারবহির্ভূত নীতি ও অনুশীলনের ব্যবহার নিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। আমরা বৈচিত্র্যময় ও নির্ভরযোগ্য বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছি। খনিজ ও অমৌলিক পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের জন্য যে কোনো একটি দেশের ওপর নির্ভরতা শিল্পগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। সেই সঙ্গে সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাতের মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বৈঠকটিকে ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ বলেছেন। আর স্বাগত জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সদস্যদের ‘গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার’ বলে অভিহিত করে বলেন, নির্দিষ্ট বিষয়ে ‘পদক্ষেপ গ্রহণের’ সময় এসেছে।
জাপান বৈঠকের আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত একটি বার্ষিক প্রতিরক্ষা বৈঠক স্থগিত করে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা ব্যয়ের চাপেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে টোকিও।
অন্যদিকে, ভারত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। গত এপ্রিলে কাশ্মীরের পর্যটকদের ওপর হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের সম্ভাব্য যুদ্ধ রুখতে ‘ট্রাম্প হস্তক্ষেপ করেছেন’– এ দাবিকে ভিত্তিহীন বলছে নয়াদিল্লি।
কোয়াডের চার দেশ চীনের আধিপত্য ঠেকাতে একমত হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের বিশ্বজুড়ে শুল্ক আরোপ নীতিতে মিত্ররাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ব্যয়, এমনকি পারস্পরিক কূটনৈতিক টানাপোড়েনে কোয়াডের সম্মিলিত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অস্ট্রেলিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা আচরণে উদ্বিগ্ন। দেশটিকে পারমাণবিক সাবমেরিন দিতে গঠিত আকুস প্রকল্প নিয়ে পেন্টাগনের তৃতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা এলব্রিজ কোলবি পুনর্বিবেচনা শুরু করায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে ক্যানবেরায়।
গত মঙ্গলবারের বৈঠক নিয়ে আশাবাদী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, এ বৈঠক সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদার ও শক্তিশালী সরবরাহ চেইন গঠনে আমাদের অভিন্ন লক্ষ্যে অঙ্গীকারের প্রকাশ।
বৈঠকের পর রুবিও দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাপানের তাকেশি ইওয়াইয়া ও অস্ট্রেলিয়ার পেনি ওয়াংয়ের সঙ্গে। গত সোমবার নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে জয়শঙ্কর বলেন, কোনো সম্পর্কই সমস্যামুক্ত হয় না। কিন্তু মূল বিষয় হলো, সমস্যাগুলো কীভাবে সামাল দেওয়া যায় এবং সম্পর্ককে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়। তিনি বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা, প্রযুক্তি, মহামারি প্রস্তুতি ও শিক্ষার মতো অনেক ইস্যু রয়েছে, যা আলোচনার দাবি রাখে।
এ বছরের শুরুর দিকে কোয়াড ঘোষণায় জানানো হয়েছিল, ভারতের আসন্ন কোয়াড সম্মেলনের আগে নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে পর্দার আড়ালে রাজনৈতিক টানাপোড়েন প্রকট হয়ে উঠছে। ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সাবেক অস্ট্রেলীয় রাষ্ট্রদূত আর্থার সিনোদিনোস বলেন, ওয়াশিংটন এ বৈঠককে নিরাপত্তাকেন্দ্রিক বার্তা দেওয়ার মঞ্চ হিসেবে দেখতে চায়। কিন্তু বাণিজ্য ও আকুস নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগ এ বার্তাকে ছাপিয়ে যেতে পারে।
জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে গত ফেব্রুয়ারির শিগেরু ইশিবার সঙ্গে ট্রাম্পের শীর্ষ বৈঠকের পর থেকে গতি কমেছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ভারতবিষয়ক গবেষক রিচার্ড রসো বলেন, ট্রাম্পের ভারতসম্পর্কিত কৌশল কিছুটা অগোছালো হলেও দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত স্বার্থ অপরিবর্তিত রয়েছে।