বাজিতপুরে বিএনপির একাংশের বিরোধিতার পর সম্মেলন স্থগিত
Published: 4th, July 2025 GMT
পাঁচ বছর আগে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর আগামীকাল শনিবার কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। তবে সম্মেলন বাতিল করার দাবিতে দলের একটি অংশ আন্দোলনে যাওয়ায় তা আর হচ্ছে না। বিশৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার সকালে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বাজিতপুর উপজেলা কমিটির নেতাদের এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন।
এতে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপিতে নতুন নেতৃত্ব গঠনের বিষয়টি ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ বিভক্তিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, সম্মেলনের ব্যাপারে প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে দলে মতবিরোধ আছে। এ অবস্থায় জোর করে নেতৃত্ব ঘোষণা করা দলের জন্য ভালো হবে না। এ কারণেই সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সবার সঙ্গে আলোচনা করে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে।
নেতা-কর্মীরা জানান, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান (মঞ্জু) বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৮ মে মারা যান। তখন দলটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মনিরুজ্জামান। পরে শেখ মজিবুর রহমান (ইকবাল) সভাপতি হন এবং মনিরুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক রাখা হয়। এরপর পেরিয়ে যায় ১০ বছর। পাঁচ বছর আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙে গঠিত হয় আহ্বায়ক কমিটি। তখন বলা হয়েছিল, যত দ্রুত সম্ভব পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে, কিন্তু তা আর হয়নি।
পাঁচ বছর পর বহুল প্রতীক্ষিত সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হয়। শনিবার বাজিতপুরের নাজিম উদ্দিন ভূঁইয়া মাঠে সম্মেলন উদ্বোধনের কথা ছিল বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) শরিফুল আলমের। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খানের। তবে সম্মেলন ঘিরে শুরু হয় বিরোধ। পৌর বিএনপির সভাপতি এহসান কুফিয়ার নেতৃত্বে একাংশ সম্মেলনের বিরোধিতা করেন। তাঁদের মধ্যে আছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কাইয়ুম খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর জলিল, জেলা যুবদলের সহসভাপতি শাহ আলম, সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান, হালিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কাজল ভূঁইয়াসহ উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেকে।
পক্ষটির ভাষ্য, মজিবুর ও মনিরুজ্জামান নতুন করে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে গিয়ে দলের বড় অংশকে বাদ দিয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাঁদের মূল দাবি ছিল, সবাইকে নিয়ে সম্মেলন আয়োজনের। এ দাবিতে গত মঙ্গলবার বাঁশমহলে সমাবেশ ও বিক্ষোভ হয়। সমাবেশ থেকে জোরালোভাবে সম্মেলন বাতিলের দাবি তোলা হয়। এরপর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে পড়ে।
এহসান কুফিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের ভালোর জন্য সম্মেলন স্থগিত চেয়েছি। সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় দল রক্ষা পাবে। আমাদের একটাই চাওয়া, কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সবাইকে নিয়ে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।’
ফোন বন্ধ থাকায় আহ্বায়ক শেখ মজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মনিরুজ্জামান ফোন ধরেননি। তবে তাঁদের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কর্মী-সমর্থক বলেন, প্রতিপক্ষের দাবিগুলো হালকা ও ব্যক্তিস্বার্থপরায়ণ। এক পক্ষের না চাওয়ার কারণে একেবারে শেষমুহূর্তে সম্মেলন বাতিল হওয়ায় দলের বড় অংশের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিভক্তি আরও বাড়বে। ভালোর চেয়ে মন্দ হবে বেশি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন র জ জ ম ন জ ব র রহম ন ব এনপ র স
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত উপজেলার ওয়াপদার মোড় এলাকার মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া মহাসড়কে বাঁশ ও গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন।
পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীরা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা বিএনপির দুর্দিনে পাশে থেকেছেন, সেই ত্যাগী নেতাদের উপেক্ষা করে নতুন কমিটিতে আওয়ামী লীগ–সমর্থকদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। এতে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা কমিটিগুলো বাতিলের পাশাপাশি ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের নিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানান।
কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, বোয়ালমারী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর মিনহাজুর রহমান, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রইসুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব নাজিম উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুস সবুর, পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলাটি বিএনপির নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত। একটি পক্ষ ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম এবং অন্যটি উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন মিয়ার অনুসারী। তাঁরা দুজন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।
২৩ অক্টোবর রাতে বোয়ালমারী উপজেলা ও পৌরসভার ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পৃথক দুটি কমিটি ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ও সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া।
আজ অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে সড়কের ওপর বসে দাবির সমর্থনে বক্তব্য দেন স্থানীয় বিএনপির পদ বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। এতে সড়কের আটকে পড়ে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
পরে বেলা দুইটার দিকে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রইসুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে ঘোষিত কমিটি দুটি বাতিল না করা হলে কঠোর আন্দোলন ও সব সড়ক অবরোধ করা হবে।