গাজায় কার্যকর যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা চায় হামাস
Published: 4th, July 2025 GMT
গাজার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব যুদ্ধের অবসান ঘটাবে—এমন নিশ্চয়তা চায় হামাস। গতকাল বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র। এদিকে চিকিৎসকেরা জানান, ইসরায়েলের সাম্প্রতিকতম হামলায় গাজাজুড়ে আরও অনেকে নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেন, প্রায় ২১ মাস আগে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর পর এখন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তির সম্ভাবনা অনেক বেশি।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাত অবসানে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার পর গাজায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা আরও গতিশীল হয়েছে। তবে গাজার অভ্যন্তরে ইসরায়েলের তীব্র হামলা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল হামলায় কমপক্ষে ৫৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলো মেনে নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে কাজ করবে।
হামাসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলছে, সংগঠনটি এমন স্পষ্ট নিশ্চয়তা চায় যে যুদ্ধবিরতি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের অবসান ঘটাবে। দুজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে এখনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।
আজ শুক্রবার ভোরে এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, তারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি নিয়ে অন্যান্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করছে। আলোচনা শেষে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে তারা তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে।
মিসরীয় নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ অবসানের আলোচনা অব্যাহত রাখতে কাজ করছেন মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা। এ বিষয়ে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নিশ্চয়তা আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেই সঙ্গে হামাসকে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণে রাজি করানোর চেষ্টাও চলছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ একজন জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অবগত অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল আজকের মধ্যে হামাসের প্রতিক্রিয়া আশা করছে। এ সাড়া ইতিবাচক হলে একটি ইসরায়েলি প্রতিনিধিদল চুক্তিটি পাকাপাকি করতে পরোক্ষ আলোচনায় অংশ নেবে।
আরও পড়ুনপশ্চিমা বিশ্বের সহায়তা ছাড়া কি ইসরায়েল টিকে থাকতে পারবে ১৮ ঘণ্টা আগেযুদ্ধবিরতি আলোচনা সম্পর্কে অবগত একজন কর্মকর্তা গতকাল বলেন, প্রস্তাবটিতে ধাপে ধাপে ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া এবং ১৮ জনের মরদেহ ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে ইসরায়েলে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির কথা বলা হয়েছে।
গাজায় থাকা অবশিষ্ট ৫০ জিম্মির মধ্যে ২০ জন এখনো জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজায় অবিলম্বে ত্রাণসহায়তা ঢুকতে দেবে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী উপত্যকাটির কিছু অংশ থেকে ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহারও শুরু করবে। একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্যও তাৎক্ষণিকভাবে শুরু হবে আলোচনা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত প রস ত ব র প রস ত ইসর য় ল অবস ন ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
৫ জুলাইয়ের পর আর কোনো আলোচনা নয়, আপনি বিদায় নেন
পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদকে উদ্দেশে করে বলেছেন, ‘আপনি সরকারকে ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছেন। কারো সঙ্গে আলোচনা না করে যা ইচ্ছা তাই করছেন। ক্রাশার মিল গুড়িয়ে দিচ্ছেন, অন্ধ কল্যাণ সমিতির স্থাপনা ভেঙে দিচ্ছেন। দু’এক নেতাকে বশ করে আপনি যদি মনে করেন, পার পেয়ে যাবেন তা হলে ভুল করবেন। ৫ জুলাইয়ের পর আপনার সঙ্গে আর কোনো আলোচনা নয়। আপনি বিদায় নেন।’
আজ বুধবার দুপুরে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় জেলা প্রশাসককে ‘সিলেট বিদ্বেষী’ বলে অ্যাখ্যা দেন আরিফুল হক।
পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ আজ এ সমাবেশের আয়োজন করে। সংগঠনটি সিলেট জেলা পাথর ও পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে আগামী শনিবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সমাবেশে পরিবহন নেতারা জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করেন। যখন সমাবেশে জেলা প্রশাসকের যখন অপসারণ দাবি হচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত নেতাসহ অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন তিনি। বৈঠকে সিলেটের পাথর কোয়ারিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন রাজনৈতিক নেতাসহ অংশীজনেরা।
সমাবেশে আরিফুল হক চৌধুরী আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বলেন, শ্রমিক-মালিকদের দাবিগুলো ন্যায্য ও যৌক্তিক। সরকার যদি দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে সিলেটের অর্থনীতি থমকে যাবে।
সম্প্রতি পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে সিলেট জেলা পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গত কয়েক মাস ধরে বিচ্ছিন্নভাবে স্মারক লিপি ও মিছিল মিটিংয়ের পর গত সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে সংগঠনটি। গত শনিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টা লোড-আনলোডের কর্মবিরতি ও গত রোববার থেকে সিলেট জেলা সকল পণ্য পরিবহনে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হয়। এ অবস্থায় আগামী শনিবার থেকে নতুন করে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
বুধবার সমাবেশে তারা ৫ দফা দাবি উপস্থাপন করে। দাবিগুলো হচ্ছে- বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়া, ক্রাশার মেশিন ধ্বংসের অভিযান বন্ধ করা, পাথর পরিবহনকারী ট্রাক আটকের অবসান, চালকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ, প্রাইভেট কোম্পানিকে গাড়ির ফিটনেস না দেওয়া ও ডাম্পিং আইন স্থগিত রাখা।
সমাবেশে আরিফুল হক ছাড়াও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, পরিবহন শ্রমিক নেতা মইনুল ইসলাম প্রমুখ।
অপর দিকে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজউল হাসান লোদী কয়েস, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জামায়াতের জেলা আমির হাবিবুর রহমান, মহানগর আমির ফখরুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন।
সভায় উপস্থিত থাকা নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সনাতন পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারি চালু, ক্রাশার মিলে অভিযান বন্ধ ও অন্ধ কল্যাণ সমিতির জায়গা থেকে উচ্ছেদ বন্ধের দাবি করেছি। জেলা প্রশাসক পজিটিভ। তিনি পাথর কোয়ারি ইজারা বন্ধের বিষয়টি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। ক্রাশার মিলে যাদের বৈধতা আছে তাদের সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক রয়েছে। উনি (আরিফুল হক) কি জন্য আমাকে নিয়ে এত কথা বলেছেন তা তিনি ভালো বলতে পারবেন। পাথর কোয়ারিসহ বিভিন্ন দাবির ক্ষেত্রে সবার কথা শোনা হচ্ছে। দাবিগুলো ভেবে দেখা হচ্ছে।’