‘সেতুতে উঠলেই ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়’
Published: 4th, July 2025 GMT
‘প্রায় ১৩ বছর ধরে গাড়ি চালাই। কিন্তু দীঘিনালা-লংগদু সড়কের বোয়ালখালী বেইলি সেতুর ওপর উঠলেই বুক ধড়ফড় করে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। এই পুরোনো সেতুটার পাটাতন প্রায়ই খুলে যায়। গত বছর আমার সামনেই একটা ট্রাক পড়ে গিয়েছিল। সেই দৃশ্য আজও চোখে ভাসে।’
কথাগুলো বলছিলেন খাগড়াছড়ির একটি পিকআপ ভ্যানের চালক অনিময় চাকমা। প্রতিদিনই পর্যটক নিয়ে দীঘিনালা থেকে তিনি সাজেক ও লংগদু সড়কে পিকআপ চালান। ওই সড়কের বেইলি সেতুর ঝুঁকির কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, ‘সড়কের সব কটি বেইলি সেতুর অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাধ্য হয়ে তিনি বিকল্প সড়ক ব্যবহার করেন। এতে সময় আর জ্বালানি দুটোই বেশি লাগে তাঁর।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বর্তমানে বেইলি সেতু রয়েছে ছয়টি। এগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বোয়ালখালী, বেতছড়ি, মেরুং বাজার, হেডকোয়ার্টার, মাইনী ও জামতলী সেতু নামে পরিচিত। এর মধ্যে মাইনী সেতুর দৈর্ঘ্য ১১০ মিটার। আর বাকিগুলো ১৫ থেকে ৪০ ফুট। নব্বইয়ের দশকে নির্মাণ হওয়া এসব সেতু নিয়েই এখন ভয় সকলের। ভারী যানবাহন চলাচল ও বন্যার কারণে প্রায়ই ব্রিজের পাটাতন খুলে পড়ে। এতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি স্থবির হয় যোগাযোগব্যবস্থাও। উপজেলায় এসব সেতু দিয়েই রাঙামাটির লংগদু, বাঘাইছড়ি ও সাজেকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়। প্রতিদিন গড়ে চার থেকে ৫০০ গাড়ি এই পথে চলে। তবে ছুটির দিনগুলোতে সাজেকগামী গাড়ির চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসব সেতু দিয়ে পাঁচ টনের বেশি ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ। তবে এ নির্দেশনা কেউ মানছে না। এ কারণে প্রায়ই সেতুর পাটাতন খুলে যাচ্ছে, ঝুঁকিও বাড়ছে। সর্বশেষ গত বছর ৩১ ডিসেম্বর বোয়ালখালী বেইলি সেতুতে কাঠবোঝাই ট্রাক আটকে পাটাতন দেবে যায়। এতে তিন দিন ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।ছয় বছর ধরে এই সড়কে ভাড়ায় গাড়ি চালানো মো.
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসব সেতু দিয়ে পাঁচ টনের বেশি ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ। তবে এ নির্দেশনা কেউ মানছে না। এ কারণে প্রায়ই সেতুর পাটাতন খুলে যাচ্ছে, ঝুঁকিও বাড়ছে। সর্বশেষ গত বছর ৩১ ডিসেম্বর বোয়ালখালী বেইলি সেতুতে কাঠবোঝাই ট্রাক আটকে পাটাতন দেবে যায়। এতে তিন দিন ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এ ছাড়া চলতি বছর ১ জুনও পানিতে ডুবে ছয় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল তিন সেতুতে। তাঁরা পাকা সেতু চান।
জানতে চাইলে মেরুং এলাকার বাসিন্দা সুশীল বিকাশ ত্রিপুরা ও রত্নমণি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ টনের বেশি ভারী যান চলাচল নিষেধ থাকলেও চালকেরা মানেন না। এতে প্রায়ই ব্রিজ ভেঙে পড়ছে, বিভিন্ন দুর্ঘটনারও শিকার তাঁদের হতে হচ্ছে।’
জেলার মধ্যে শুধু দীঘিনালাতেই এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগে জানিয়েছি। প্রাথমিকভাবে দুটি সেতু পাকা করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোও নতুন করে নির্মাণ করা হবেঅমিত কুমার সাহা, ইউএনও, দীঘিনালাখাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন প্রথম আলেকে বলেন, ‘দীঘিনালা-বাঘাইছড়ি এবং দীঘিনালা-লংগদু সড়কে নব্বই দশকের লোহার ব্রিজগুলো দ্রুত পাকা করা জরুরি। প্রায়ই এসব ব্রিজ ভেঙে পড়ছে।’
জানতে চাইলে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত কুমার সাহা বলেন, ‘জেলার মধ্যে শুধু দীঘিনালাতেই এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগে জানিয়েছি। প্রাথমিকভাবে দুটি সেতু পাকা করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোও নতুন করে নির্মাণ করা হবে’।
খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দীঘিনালার ছয়টি বেইলি সেতুর স্থলে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি সেতুর দরপত্র শেষ হয়েছে। বাকি সেতুগুলোও ধাপে ধাপে পাকা করা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক এসব স ত
এছাড়াও পড়ুন:
যে জমিতে ঠাঁই মিলেছে সেখানেই লুটপাট
সরকারি ফেরি চালক হিসেবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জমির ওপর করা একটি ঘরে থাকার সুযোগ মেলে আবুল বাশারের। তাতে করে মাসে সামান্য যে টাকা বেতন পেতেন, তার ওপরে বাড়ি ভাড়ার বোঝা চাপেনি। অথচ আশ্রয় পাওয়া সেই আঙিনার গাছ, বালু, পাথর সবই সাবাড় করে দিয়েছেন তিনি।
নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার বানশা গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাশার। তিনি ছাতক সওজের একজন স্থায়ী ফেরিচালক ছিলেন। সেই সুবাদে ছাতক পৌর এলাকার দক্ষিণ বাগবাড়িতে সুরমা নদীর তীরবর্তী সওজের একটি সরকারি পাকা ঘরে বসবাস করতেন বাশার। বছর ৩-৪ আগে অবসরে যান তিনি। তবে এখনও সে ঘরেই আছেন।
স্থানীয়রা জানান, সওজের মালিকানাধীন এই জমিতে বিভিন্ন ধরনের গাছ ছিল। এছাড়া মাটি, বালু ও পাথর রাখা ছিল নানা স্থানে। সেই সঙ্গে বেশকিছু যন্ত্রাংশও দেখেছেন তারা। একটু একটু করে তার সবই সাবাড় করেছেন আবুল বাশার ও তাঁর ছেলে সাজ্জাদ মাহমুদ মনির।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি এই জমি নিজেদের করে নিয়েছেন তারা। বাশারের ছেলে মনির সেখানে বসে চালাচ্ছেন মাদক বিক্রির কারবার। এদিকে নিজেদের জমির দখল নিশ্চিত করতে সম্প্রতি সওজের একাধিক অভিযান পরিচালিত হলেও বাশার ও মনিরের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। সরকারি জমিতে থেকে, সেই জমিতে থাকা সরকারি সম্পদ বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের মতো অপরাধ সওজ কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে আমলে না নেওয়ায় বিস্মিত স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে আপত্তি বা অভিযোগ তুললে, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা না নিয়ে সতর্ক করেই দায়িত্ব সারছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সূত্রের তথ্য মতে, বছর কয়েক আগে চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও সওজের এক অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ওই বাসায় আছেন আবুল বাশার।
এই অঞ্চলে এর আগে সওজের ভূমি থেকে পাথর, মাটি ও গাছ লুটের অভিযোগে ২০২৪ সালে এক ট্রাকচালকসহ দু’জনকে আটক করেছিল সেনাবাহিনী। সে কাজের মূল হোতা হিসেবে সে সময় সামনে আসে আবুল বাশারের ছেলে মনিরের নাম। এ ঘটনায় থানায় সে সময় মামলা হয়।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ্যে তাঁর মাদক সেবনের ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ হয়। জানা গেছে, বর্তমানে মনির তাঁর লোকজন নিয়ে নদী ও সড়ক পথ এবং বালুমহালে চাঁদা আদায় করেন। বিগত সরকারের সময় নিজেকে যুবলীগ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে মাদক চক্র গড়ে তোলেন মনির। এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে পাওয়া যায়নি মনিরকে। অভিযুক্ত সাজ্জাদ মাহমুদ মনিরের নানা অপকর্মের বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এদিকে এসব অভিযোগের কথা অস্বীকার করেছেন তাঁর বাবা আবুল বাশার।
ছাতক সড়ক ও জনপথের (সওজ) উপবিভাগীয় কার্যালয়ের প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন বলেন, সওজ কর্তৃপক্ষ লাফার্জ ফেরিঘাটসংলগ্ন অবৈধ ঘরগুলো উচ্ছেদ করেছে। চাকরি শেষ হওয়ার পরও সরকারি বাসায় কীভাবে বসবাস করছেন বাশার, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, তাঁর ছেলে মনিরের অপকর্মের জন্য অফিসে ডেকে এনে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি, এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দেননি এই কর্মকর্তা।