‘প্রায় ১৩ বছর ধরে গাড়ি চালাই। কিন্তু দীঘিনালা-লংগদু সড়কের বোয়ালখালী বেইলি সেতুর ওপর উঠলেই বুক ধড়ফড় করে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। এই পুরোনো সেতুটার পাটাতন প্রায়ই  খুলে যায়। গত বছর আমার সামনেই একটা ট্রাক পড়ে গিয়েছিল। সেই দৃশ্য আজও চোখে ভাসে।’

কথাগুলো বলছিলেন খাগড়াছড়ির একটি পিকআপ ভ্যানের চালক অনিময় চাকমা। প্রতিদিনই পর্যটক নিয়ে দীঘিনালা থেকে তিনি সাজেক ও লংগদু সড়কে পিকআপ চালান।  ওই সড়কের বেইলি সেতুর ঝুঁকির কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, ‘সড়কের সব কটি বেইলি সেতুর অবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাধ্য হয়ে তিনি বিকল্প সড়ক ব্যবহার করেন। এতে সময় আর জ্বালানি দুটোই বেশি লাগে তাঁর।

খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বর্তমানে বেইলি সেতু রয়েছে ছয়টি। এগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বোয়ালখালী, বেতছড়ি, মেরুং বাজার, হেডকোয়ার্টার, মাইনী ও জামতলী সেতু নামে পরিচিত। এর মধ্যে মাইনী সেতুর দৈর্ঘ্য ১১০ মিটার। আর বাকিগুলো ১৫ থেকে ৪০ ফুট। নব্বইয়ের দশকে নির্মাণ হওয়া এসব সেতু নিয়েই এখন ভয় সকলের। ভারী যানবাহন চলাচল ও বন্যার কারণে প্রায়ই ব্রিজের পাটাতন খুলে পড়ে। এতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি স্থবির হয় যোগাযোগব্যবস্থাও। উপজেলায় এসব সেতু দিয়েই রাঙামাটির লংগদু, বাঘাইছড়ি ও সাজেকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়। প্রতিদিন গড়ে চার থেকে ৫০০ গাড়ি এই পথে চলে। তবে ছুটির দিনগুলোতে সাজেকগামী গাড়ির চাপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসব সেতু দিয়ে পাঁচ টনের বেশি ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ।  তবে এ নির্দেশনা কেউ মানছে না। এ কারণে প্রায়ই সেতুর পাটাতন খুলে যাচ্ছে, ঝুঁকিও বাড়ছে। সর্বশেষ গত বছর ৩১ ডিসেম্বর বোয়ালখালী বেইলি সেতুতে কাঠবোঝাই ট্রাক আটকে পাটাতন দেবে যায়। এতে তিন দিন ওই  সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

ছয় বছর ধরে এই সড়কে ভাড়ায় গাড়ি চালানো মো.

আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সেতুর পাটাতন ভেঙে যাওয়ায় প্রায়ই তাঁকে সড়কে গাড়ি চালানো বন্ধ রাখতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতেও সেতু ডুবে যায়। তাঁর মতো যাঁরা ভাড়ায় গাড়ি চালান তাঁদের জন্য বর্ষার দিনগুলোয় পরিবার নিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এসব সেতু দিয়ে পাঁচ টনের বেশি ভারী যান চলাচল নিষিদ্ধ।  তবে এ নির্দেশনা কেউ মানছে না। এ কারণে প্রায়ই সেতুর পাটাতন খুলে যাচ্ছে, ঝুঁকিও বাড়ছে। সর্বশেষ গত বছর ৩১ ডিসেম্বর বোয়ালখালী বেইলি সেতুতে কাঠবোঝাই ট্রাক আটকে পাটাতন দেবে যায়। এতে তিন দিন ওই  সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এ ছাড়া চলতি বছর ১ জুনও পানিতে ডুবে ছয় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল তিন সেতুতে। তাঁরা পাকা সেতু চান।

জানতে চাইলে মেরুং এলাকার বাসিন্দা সুশীল বিকাশ ত্রিপুরা ও রত্নমণি চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচ টনের বেশি ভারী যান চলাচল নিষেধ থাকলেও চালকেরা মানেন না। এতে প্রায়ই ব্রিজ ভেঙে পড়ছে, বিভিন্ন দুর্ঘটনারও শিকার তাঁদের হতে হচ্ছে।’

জেলার মধ্যে শুধু দীঘিনালাতেই এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগে জানিয়েছি। প্রাথমিকভাবে দুটি সেতু পাকা করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোও নতুন করে নির্মাণ করা হবেঅমিত কুমার সাহা, ইউএনও, দীঘিনালা

খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন প্রথম আলেকে বলেন, ‘দীঘিনালা-বাঘাইছড়ি এবং দীঘিনালা-লংগদু সড়কে নব্বই দশকের লোহার ব্রিজগুলো দ্রুত পাকা করা জরুরি। প্রায়ই এসব ব্রিজ ভেঙে পড়ছে।’

জানতে চাইলে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিত কুমার সাহা বলেন, ‘জেলার মধ্যে শুধু দীঘিনালাতেই এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সড়ক ও জনপথ বিভাগে জানিয়েছি। প্রাথমিকভাবে দুটি সেতু পাকা করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোও নতুন করে নির্মাণ করা হবে’।

খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দীঘিনালার ছয়টি বেইলি সেতুর স্থলে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি সেতুর দরপত্র শেষ হয়েছে। বাকি সেতুগুলোও ধাপে ধাপে পাকা করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক এসব স ত

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুর শিল্পকলা একাডেমি: যেখানে ‘শিল্প-বাণিজ্য’ আছে, ‘কলা’ নেই

শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ আছ এক বছরের বেশি সময় ধরে। একাডেমির মাঠে এক মাস ধরে চলছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা।

জেলা শিল্পকলা একাডেমি সূত্র জানায়, জেলা শহরের তুলাসার মৌজায় ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশে জেলা শিল্পকলা একাডেমির অবস্থান। তিন কক্ষের একটি টিনশেডের আধা পাকা ঘরে ১৯৮০ সালে একাডেমির কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫ বছর ধরে সেই ঘরেই একাডেমির কার্যক্রম চলছে।

শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীত, নৃত্য, নাটক, আবৃত্তি, চারুকলা ও তালযন্ত্র বিভাগ আছে। বিভাগগুলোতে শিশু-কিশোরেরা প্রশিক্ষণ নেয়। এ বছর সংগীত ও নৃত্য বিভাগে ৬৮ জন ভর্তির তথ্য আছে। অন্য বিভাগগুলোতে কতজন ভর্তি হয়েছে, সে তথ্য তাদের কাছে নেই। আগের বছরগুলোতে কোন বিভাগে কত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল, সে–সংক্রান্ত কোনো তথ্য শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তার কাছে নেই।

জেলা কালচারাল অফিসার মোহাম্মদ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জানুয়ারি মাসে শরীয়তপুরে যোগ দিয়েছেন। এর পর থেকে শিল্পকলার কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করছেন। প্রশিক্ষণ বিভাগগুলোতে প্রশিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। গত মে মাসে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল, ১৪ আগস্ট নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। সেখানে সব বিভাগের প্রশিক্ষক পাওয়া যায়নি। সংগীত, চারুকলা ও তালযন্ত্রের (তবলা) প্রশিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর নৃত্য, নাটক ও আবৃত্তির প্রশিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আবার দেওয়া হবে।

কয়েকজন অভিভাবকের ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এর পর থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শিল্পকলা মাঠে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা আয়োজন করার জন্য নিউ স্টাইল মার্কেটিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক গত ১২ আগস্ট ওই প্রতিষ্ঠানকে এক মাসের জন্য সেখানে মেলার আয়োজন করার অনুমতি দেন। বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমি মাঠের ওই মেলায় বিভিন্ন পণ্যের ৫৫টি দোকান বসানো হয়েছে।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির আশপাশে আছে ১০০ শয্যার সদর হাসপাতাল, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মহিলা সংস্থার কার্যালয়, শিশু একাডেমি, শিশুদের বিনোদনের শরীয়তপুর পার্ক ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। মেলার কারণে ওই এলাকায় এবং সদর হাসপাতালের সামনে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান বলেন, ‘জেলা হাসপাতালের সামনে এমন একটি মেলার অনুমতি কীভাবে দেওয়া হয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়। ওই মেলার কারণে হাসপাতালের প্রবেশমুখে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে।’

শরীয়তপুরের কবি ও সাহিত্যিক শ্যামসুন্দর দেবনাথ বলেন, ‘একটি জেলার সরকারি পর্যায়ে সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হচ্ছে শিল্পকলা। তা কীভাবে এক বছর ধরে বন্ধ থাকতে পারে, আমাদের বোধগম্য নয়। এই প্রজন্মের কিশোর ও তরুণদের শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি এমনিতেই আগ্রহ কম। তার ওপরে সংস্কৃতির প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ রাখা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।’

সার্বিক বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বলেন, শিল্পকলা একাডেমির মাঠে এক মাসের জন্য মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি দেওয়ার আগে তিনি জানতেন না, স্থানটি হাসপাতালের সামনে। আর নানা কারণে শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক নিয়োগে দেরি হচ্ছে। নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। শিগগিরই শিল্পকলার কার্যক্রম চালু করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ