‘সরকারের ঘোষণা ইতিবাচক’, শাহবাগ ছাড়লেন আন্দোলনকারীরা
Published: 11th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগ ও দলটি নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, তাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে বর্ণনা করে শাহবাগ ছেড়েছেন অবস্থান করা আন্দোলনকারীরা।
শনিবার (১০ মে) রাত ৩টার পর সংবাদ ব্রিফিংয়ে আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। সেখানে তিনি আন্দোলনকারীদের নিরাপদে ঘরে ফেরার তাগিদ দেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃত্বে টানা তিন দিনের আন্দোলনের মুখে শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি বৈঠকে বসে উপদেষ্টা পরিষদ।
আরো পড়ুন:
দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের পথ খুলল
যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ায় ভারত-পাকিস্তানকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এসে আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার তথ্য দেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামি লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।a
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টালের সামনের সড়কে রাজসিক মোড়ে আন্দোলনকারীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে নানান স্লোগান দেন। লোকজন দলে দলে মিছিল নিয়ে সেখানে আসে।
রাত ১১টা ১০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে হাসনাত আবদুল্লাহ আন্দোলনকারীদের রাজপথ না ছাড়ার আহ্বান জানান। সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংগঠকদের মতামত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পর রাজপথ ছাড়তে বলেন তিনি।
তার প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টার বেশি পর বিফ্রিংয়ে এসে আন্দোলনকারীদের ঘরে ফেরার তাগিদ দেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান হাসনাত। তিনি বলেন, “সরকার আজকে যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সাথে এতদিন পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের কোনো বিধান ছিল না, কিন্তু আজকেই দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ঘটনাগুলোকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।”
তবে একই সঙ্গে এই ইস্যুতে সরকারের পদক্ষেপকে যথেষ্ট মনে করছেন না তিনি। হাসনাত বলেন, “এতটুকু যথেষ্ঠ না, কারণ জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে। জুলাইযোদ্ধারা আওয়ামী লীগ দ্বারা হামলার শিকার হচ্ছেন।”
হাসনাত আরো বলেন, “পরিপত্র হাতে পেয়ে পরবর্তী কর্মসূচি জানিয়ে দেওয়া হবে। আপাতত আপনারা নিরাপদে ঘরে ফিরে যান। আর জুলাই সনদ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত সব কিছু পর্যবেক্ষণ করুন।”
তিন দিন রাজপথে থাকা সহযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাদেরকে অভিনন্দন জানেন হাসনাত। একই সাথে এই আন্দোলনে নারী নেতৃত্বকেও তিনি অভিবাদন জানান।
আওয়ামী লীগ আমলের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার খবরে ফুঁসে ওঠে জুলাই অভ্যুত্থানকারীরা। সেই প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে সবাইকে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম। তার ডাকে সাড়া দিয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেন দলটির নেতাকর্মী ও ছাত্র-জনতা।
ঢাকা/সুকান্ত/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ন গর ক প র ট আওয় ম ল গ ন উপদ ষ ট আবদ ল সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে যাতায়াতের দুর্ভোগ নিরসন হবে কবে
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা লক্ষ্মীপুর। প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবসম্পদ এবং ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে এটি একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। প্রতিবছর এখান থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করেন—চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও চাকরির উদ্দেশ্যে। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, আজও লক্ষ্মীপুর-ঢাকা সরাসরি রুটে কোনো উন্নত মানের এসি বাস সার্ভিস নেই। এমনকি নির্ভরযোগ্য নন-এসি পরিবহন ব্যবস্থাও একেবারে সীমিত। এটি কেবল দুঃখজনক নয়, বরং দীর্ঘদিনের পরিকল্পনাহীনতা এবং নীতিগত অবহেলার একটি বড় উদাহরণ।
বর্তমানে এই রুটে যে বাসগুলো চলাচল করছে, সেগুলোর অধিকাংশই পুরোনো ও অপ্রতিসম যানবাহন। এসব বাসে যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক ভ্রমণের ন্যূনতম সুযোগও নেই। আসনবিন্যাসের দুরবস্থা, গরমে হাঁসফাঁস পরিবেশ, যাত্রাপথে দীর্ঘ সময় ধরে থেমে থেমে যাত্রী তোলা কিংবা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছানো—এসবই যেন এই রুটের যাত্রীদের নিত্য সঙ্গী। নারী, শিশু কিংবা অসুস্থ যাত্রীর জন্য এই যাত্রা একধরনের কষ্টকর অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়।
লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি মূলত পাকা এবং বেশির ভাগ অংশে চার লেনে সম্প্রসারিত। কুমিল্লা হয়ে ঢাকা পৌঁছানো যায় তুলনামূলকভাবে কম সময়ে। এমন সড়কপথে উন্নত মানের বাস সার্ভিস চালু না হওয়া নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। আশপাশের জেলা যেমন—ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কিংবা ময়মনসিংহে শ্যামলী, হানিফ, সোহাগ, গ্রিনলাইনসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় পরিবহন কোম্পানিগুলোর এসি ও আধুনিক বাস চলাচল করে। অথচ লক্ষ্মীপুর এখনো এই সেবার বাইরে রয়ে গেছে।
প্রশ্ন জাগে—এই রুটে কি যাত্রী কম? বাস্তবতা হলো, লক্ষ্মীপুর একটি প্রবাসীপ্রধান জেলা। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মরত। তাঁরা ছুটি কাটাতে দেশে ফিরে ঢাকায় নামেন এবং সেখান থেকে লক্ষ্মীপুরে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া ঢাকায় লক্ষ্মীপুর জেলার হাজারো শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী রয়েছেন, যাঁরা নিয়মিত যাতায়াত করেন। অর্থাৎ, যাত্রীস্রোত আছে, চাহিদাও প্রবল। অভাব শুধু আধুনিক পরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগের।
বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির প্রতিনিধিদের ভাষ্যমতে, তারা এই রুটে উন্নত বাস সার্ভিস চালুর আগ্রহ প্রকাশ করলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল ও পরিবহন–সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর অসহযোগিতার কারণে উদ্যোগগুলো বারবার আটকে যাচ্ছে। অনিয়ন্ত্রিত লোকাল বাস মালিকদের একটি চক্র নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতেই নতুন ও উন্নত সার্ভিসকে প্রতিযোগিতার বাইরে রাখতে চায়।
আরও দুঃখজনক হলো, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও এখনো দৃশ্যমান কোনো কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। অথচ স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ যাতায়াত নাগরিকদের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। শুধু সড়ক নির্মাণই নয়, তা কতটা জনবান্ধবভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটাও উন্নয়নের একটি বড় সূচক।
লক্ষ্মীপুরবাসী আর কত দিন এই অব্যবস্থার সঙ্গে আপস করে চলবে? সম্ভাবনাময় একটি জেলার মানুষকে দিনের পর দিন কেন কষ্টকর ভ্রমণের মুখোমুখি হতে হবে? এখনই সময়—এই রুটে উন্নত ও আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে লক্ষ্মীপুরবাসীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করার। দেরি হলে শুধু জনগণ নয়, পিছিয়ে পড়বে পুরো একটি অঞ্চল—তার সম্ভাবনা, অর্থনীতি ও উন্নয়নের স্বপ্ন।
মো. শিহাব উদ্দিন
চর লরেন্স, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর