গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের যুগিরসিট গ্রামে জমিতে পানি দেওয়া নিয়ে বিরোধে ছুরিকাঘাতে আহত নাজমুল হক (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে দাফন শেষে উত্তেজিত জনতা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তিনটি বাড়িতে আগুন দিয়েছেন।

নিহত নাজমুল হক ওই গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। তিনি গাজীপুর সদরের ওয়েলডান অ্যাপারেলস লিমিটেডে সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নিহত নাজমুলের চাচা হাবিজ উদ্দিন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১ মে দুপুরে জমিতে পানি দেওয়া নিয়ে নাজমুল ও একই গ্রামের রানা মিয়ার ছেলে আল আমিনের (১৮) মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। ওই দিন রাত ৯টার দিকে আল আমিন ধারালো ছুরি দিয়ে নাজমুলকে কুপিয়ে আহত করেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ মে রাত ১০টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় জানাজা ও দাফনের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে আল আমিন ও তাঁর দুই চাচা বাবুল মিয়া ও ওমর ফারুকের বাড়িতে উত্তেজিত জনতা আগুন দেন।

আজ রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, আল আমিন, তাঁর চাচা বাবুল মিয়া ও ওমর ফারুকের বাড়িতে আগুনের ধ্বংসাবশেষ। পাশাপাশি তিনটি বাড়ির বিভিন্ন কক্ষে পুড়েছে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, কবুতর, খাট, আলমারিসহ বিভিন্ন আসবাব।

আল আমিনের দাদি সাইমন নেসা (৬০) কাঁদতে কাঁদতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার নাতিরে যা শাস্তি দেওয়ার দেউক, তাঁরে মাইরা ফালাইলে মাইরা ফালাউক। কিন্তু আমার পুতাইনের ঘরগুলা পুইড়া পালাইছে। এহন আমি কই থাহাম, কী করাম। আমি এক কাপড়ে কই যামু।’

কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মুমিনুল কাদের বলেন, ‘আমি ফোন পেয়েছি যে বাড়িতে কারেন্টের আগুন লেগেছে। তবে ঘটনাস্থলে এসে দেখে মনে হচ্ছে, এটা কারেন্টের আগুন না–ও হতে পারে। স্বল্প দূরত্বের তিনটি বাড়ি পুড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, হত্যার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। বাড়িতে আগুন লাগার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কৃষি ক্যাডারের তিন কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

কৃষি ক্যাডারের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সাবেক উপপরিচালক (প্রশাসন) ও সদ্য মেহেরপুর হর্টিকালচার সেন্টারে বদলিকৃত ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ, মৌলভীবাজার জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা এবং ডিএই হবিগঞ্জের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. রেজাউল ইসলাম (মুকুল)।

মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ এর ৩০ (ক), (খ), (গ) ও (ঘ) এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) ও ৩(ঙ)-এর আওতায় অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮–এর ধারা ৩৯(১) অনুযায়ী তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন তাঁরা বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাসহ আরও কিছু কর্মকর্তা গত ৫ আগস্টের পর থেকে নিজেদের ‘বিএনপিপন্থী পরিচয়’ তুলে ধরে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়ান। ড. মুহাম্মদ মাহবুবুর রশীদের বদলির আদেশকে কেন্দ্র করে তাঁরা রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি, সংবাদ সম্মেলন এবং এমনকি সড়ক অবরোধের মতো কর্মসূচি পালন করেন।

এই কর্মকর্তাদের একাংশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে বিশৃঙ্খল করে তোলে বলে দাবি করেছে মন্ত্রণালয়। এতে সেখানে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বদলির প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই এই কর্মকর্তারা নতুন পদায়ন হওয়া একজনকে নানা হুমকি দেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে খামারবাড়ির অভ্যন্তরে স্বাভাবিক দাপ্তরিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। একাধিক কর্মকর্তা সংবাদ সম্মেলন করে নিজের বদলি নিয়ে প্রকাশ্যে আপত্তি জানান। এতে সরকারি কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা ও আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।

কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য ও দালিলিক প্রমাণ অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলবে। বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মে জড়িত অন্য কর্মকর্তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা রক্ষা ও দাফতরিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেউই ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক পরিচয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনাকে অস্থিতিশীল করতে পারেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ঘটনা উদাহরণস্বরূপ ব্যবহৃত হবে, যেন ভবিষ্যতে আর কেউ প্রশাসনিক আদেশকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা না করেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ