ঈদগাহ মাঠ স্ত্রীর কাছে ‘বিক্রি’ করলেন পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক
Published: 11th, May 2025 GMT
জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল ইউনিয়নের শালগাঁও-জয়হার পুকুরপাড় ঈদগাহ মাঠের জমি স্ত্রীর কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিমের বিরুদ্ধে। তিনি তাঁর স্ত্রী ছালমা পারভীনের নামে গোপনে ঈদগাহ মাঠটি রেজিস্ট্রি দলিল সম্পাদন করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সম্প্রতি ঈদগাহের মাটি বিক্রি করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মাটি কাটা বন্ধ করে ঈদগাহ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর ব্যানারে ওই ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত মানববন্ধনে দস্তপুর, শালগাঁও গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা অংশ নেন। মানববন্ধনে ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রীর নামে ঈদগাহ মাঠের জমি রেজিস্ট্রি দলিল সম্পাদনের জাবেদা কপি প্রদর্শন করা হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ১০-১২ ব্যক্তি বলেন, ২০০১ সালে দস্তপুর গ্রামের মরহুম শরিফ উদ্দিন তাঁর শালগাঁও জয়হার পুকুরপাড়ে ৩৩ শতক জমি ঈদগাহ মাঠের নামে দান করেন। একই গ্রামের ফজলুর রহমান ৫ শতক জমি ঈদগাহের নামে লিখে দেন। মোট ৩৮ শতক জমিতে ঈদগাহ মাঠ করা হয়। ২০০২ সাল থেকে সেখানে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে আসছেন স্থানীয় লোকজন। সেই সময় আবদুল হামিদকে সভাপতি ও ফজলুল করিমকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি করা হয়। আবদুল হামিদ জমিদাতা শরিফ উদ্দিনের ছেলে আর ফজলুল করিম জামাতা। সভাপতি আবদুল হামিদ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। এরপর নতুন করে আর কমিটি হয়নি। সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম একাই মাঠ পরিচালনা করে আসছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ঈদগাহ মাঠটি সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম তাঁর স্ত্রী মোছা.
কবলা দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে, হস্তান্তরিত জমির পরিমাণ ৩৮ শতক। জমির শ্রেণি ধানি ও পুকুর। মূল্য ২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। দলিলগ্রহীতা মোছা. ছালমা পারভীন। দলিলে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বরের পরিচালনা কমিটির রেজল্যুশন অনুযায়ী ঈদগাহ মাঠের নিমিত্তে ও উন্নয়নের জন্য অন্যত্র জমি কেনার জন্য নগদ টাকার বিশেষ আবশ্যকের কারণে জমি বিক্রি করলেন।
ঈদগাহ মাঠের জমিদাতা মরহুম শরিফ উদ্দিনের নাতি ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম আবদুল হামিদের ছেলে আবদুল আলিম বলেন, ‘হঠাৎ করেই ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমার ফুফা ফজলুল করিম গোপনে ঈদগাহ মাঠটি আমার ফুফুর কাছে ২ লাখ ৮৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এখানকার প্রতি শতক জমির দাম ৪৫ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ৩৮ শতক জমির দাম ১৭ লাখ টাকার অধিক। জালিয়াতি করে ঈদগাহ মাঠ বিক্রি করা হয়েছে। আমরা ঈদগাহ মাঠে আবার আগের মতো ঈদের নামাজ আদায় করতে চাই।’
ঈদগাহ মাঠে পাঁচ শতক জমিদাতা ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি ঈদগাহ মাঠের জন্য সেই সময় পাঁচ শতক জমি কিনে ঈদগাহ মাঠে দান করেছিলাম। এখন জানলাম ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম গোপনে তাঁর স্ত্রীর কাছে ঈদগাহ মাঠ বিক্রি করেছেন। ঈদগাহ মাঠের মাটি কেটে ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ঈদগাহ কীভাবে নিজের স্ত্রীর কাছে বিক্রি করল, তা জেনে বিস্মিত হয়েছি। আমরা ঈদগাহ মাঠ ফেরত চাই।’
ঈদগাহ মাঠ স্ত্রীর বিক্রির বিষয়ে জানতে শালগাঁওয়ে ফজলুল করিমের বাড়িতে যাওয়া হয়। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কেউ বাড়ির দরজা খোলেননি। বাড়ির ভেতর ফজলুল করিমের ছেলের বউ পরিচয় দিয়ে এক নারী বলেন, ফজলুল করিম বাড়িতে নেই। যদিও গ্রামের একজন দোকানিসহ ১০-১২ ব্যক্তি বলেন, কিছুক্ষণ আগেই ফজলুল করিম বাড়িতে প্রবেশ করেন। এরপর তাঁকে আর বাইরে যেতে দেখেননি কেউ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ ল হ ম দ ঈদগ হ ম ঠ র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
অন্তঃসত্ত্বা নারীকে মারধরের অভিযোগ, নওগাঁয় ইউএনওর অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন
নওগাঁর ধামুইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহরিয়ার রহমান ও ধামুইরহাট পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সালামের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ দুজনকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুরে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তি ও ইউএনওর অপসারণের দাবিতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, উপজেলার মঙ্গলকোঠা আবাসিক এলাকায় ধামুইরহাট পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ফেলা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে পৌরসভার লোকজনের সঙ্গে এলাকাবাসীর বাগ্বিতণ্ডা হয়। ময়লা ফেলতে বাধা দেওয়ার খবর পেয়ে ইউএনও শাহরিয়ার রহমান ও পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সালাম ঘটনাস্থলে যান। এ সময় ওই দুই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে মঙ্গলকোঠা এলাকার এক অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ দুই নারীকে মারধর করেন।
গৃহবধূ সামিরন খাতুন বলেন, ‘পৌরসভার লোকজন গাড়িতে করে আমাদের এলাকায় ময়লা ফেলতে এলে এলাকার সবাই মিলে বাধা দিই। বসতবাড়ির আশপাশে ময়লা ফেললে সমস্যা হবে বলে ইউএনওকে ময়লা না ফেলতে এলাকাবাসী অনুরোধ করেন। কিন্তু ইউএনও আমাদের কথা না শুনে আমাকেসহ মিতুকে (অন্তঃসত্ত্বা নারী) নিজেই লাঠি দিয়ে মারধর করেন। আমরা ইউএনওর অপসারণসহ তাঁর কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’
মানববন্ধনে স্থানীয় আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘ইউএনও আমার গর্ভবতী স্ত্রীর গায়ে তুলেছে সবার সামনে। একজন ইউএনওর আচরণ এমন হলে আমরা বিচার কার কাছে পাব?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও শাহরিয়ার রহমান বলেন, পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা একটি খাস জমিতে ময়লা ফেলতে গেলে স্থানীয় কয়েকজন বাধা দেন এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের গালমন্দ করে তাড়িয়ে দেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য তিনি ওই এলাকায় গেলে এলাকার কিছু লোক তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। সেখানে কয়েকজন অবৈধ দখলদার নারী-পুরুষ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আনসারদের গায়ে হাত তোলেন। নারীদের মারধরের অভিযোগের বিষয়ে তিনি দাবি করেন, ‘সেখানে কারও গায়ে হাত তোলা হয়নি। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, আজ মানববন্ধন করে কিছু লোক ইউএনওর বিরুদ্ধে নারীকে মারধরের অভিযোগ করেন। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক।