উন্নত ক্যারিয়ার ও উত্তম জীবনযাত্রার উৎকৃষ্ট নির্ণায়ক হলো বিদেশে উচ্চশিক্ষা। আর সে জন্য প্রতিবছর হাজারো শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমান তাদের স্বপ্নের দেশে। প্রথমেই একজন শিক্ষার্থীকে ঠিক করতে হবে তিনি কোন দেশে পড়তে চান। কারণ একেকটি দেশের পড়াশোনা, খরচ, ভর্তির রিকোয়ারমেন্টে পার্থক্য আছে। দেশ বাছাইয়ের পর ঠিক করতে হবে, সাবজেক্ট ও আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে মিলিয়ে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রেও একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বা চাহিদা, টিউশন ফির সঙ্গে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থক্য থাকে।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আবেদন করার ধরন ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে একটু আলাদা। দেশের বাইরে পড়ালেখার পরিকল্পনা থাকলে তাই আগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলো ইন্টারনেট থেকে বিস্তারিত জেনে নিন। আবেদনের শেষ দিন, কী কী কাগজপত্র পাঠাতে হবে, খরচ কেমন– জেনে নিন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন বিষয়টি আপনার জন্য মানানসই। কয়েকটি সেশনে ভর্তি করা হয়; এ ক্ষেত্রে কোন সেশনে ভর্তি হতে চান সে পরিকল্পনাও করে ফেলুন। যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশেই কয়েকটি সেশনে ভর্তি করা হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ, আবেদন ইত্যাদি অন্তত এক বছর আগে থেকে শুরু করতে হবে। যে বিষয়ে পড়তে চান, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। সে সঙ্গে দেখতে হবে আপনার আর্থিক সামর্থ্য এবং পছন্দের সঙ্গে মিলছে কিনা। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ ও স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। কোথায় পড়াশোনা করবেন, তা ঠিক করার আগে চারটি বিষয় মাথায় রাখুন।
l আপনি দেশে কীভাবে পড়াশোনা করেছেন এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে আপনি কী চান?
l আপনার পছন্দের বিষয় অথবা গবেষণার বিষয়।
l পছন্দ অনুযায়ী আপনার বেশ কিছু ইউনিভার্সিটির প্রোফাইল।
l ব্যক্তিগত লক্ষ্য, কোর্স খরচ এবং ভর্তির যোগ্যতা।
এ চারটি বিষয় নিয়ে ভাবলে কোথায় পড়াশোনা আপনার জন্য ভালো হবে সে বিষয়ে পরিপূর্ণ একটা ধারণা পেয়ে যাবেন। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে চাইলে প্রথমেই ভাবতে হবে আপনি কেন বিদেশে পড়তে যেতে চান। তারপর ভাবতে হবে আপনি যে কোর্সটি করার জন্য বিদেশে যেতে চাচ্ছেন, সেই কোর্সটি বিদেশে গিয়ে করলে আপনি কী কী সুবিধা ও অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারেন। প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ ও সেশন ঠিক করে নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আবেদন করার ধরন ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে একটু আলাদা। সাধারণত মার্চ ও অক্টোবর মাসের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করতে হয়। প্রথমেই সব পরীক্ষার মূল নম্বরপত্র ও সনদ সংগ্রহ করে রাখুন।
ভাষা দক্ষতা : যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য অবশ্যই আপনার প্রয়োজন হবে আইইএলটিএস, টোফেল, স্যাট অথবা জিআরই। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে এসব রিকোয়ারমেন্টের পার্থক্য থাকতে পারে। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় দেশগুলোর বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএসে ব্যান্ড স্কোর অন্তত ৬ থাকা দরকার। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এর চেয়ে বেশিও চাইতে পারে। তবে আমেরিকাসহ আরও কিছু দেশের কোনো কোনো বিষয়ে টোফেল, স্যাট বা জিআরই দরকার হতে পারে। জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেন, নরওয়ের মতো ইউরোপীয় দেশে পড়তে গেলে যেমন ইংরেজিতে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে সেই দেশের ভাষার দক্ষতা দরকার হতে পারে। বিশেষ করে জার্মানির মতো দেশে পড়ার সুযোগ নিতে হলে জার্মান ভাষা জানতে হবে।
ভর্তি প্রক্রিয়া : বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয় বাছাই করার পর অনলাইনের মাধ্যমে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। সেখানে পড়াশোনার সব সনদ স্ক্যান করে পাঠাতে হবে। সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আবেদন গ্রহণ বা বাতিলের সিদ্ধান্ত ই-মেইলের মাধ্যমে জানানো হয়। আবেদনপত্র গ্রহণ করা হলে ভিসা আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণপত্র : ভিসা আবেদনের সময় আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ দেখাতে হবে। প্রায় সব দেশেই শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রে দূতাবাস কর্মকর্তারা দেখতে চাইবেন, শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার খরচ সে বহন করতে সক্ষম কিনা। দেশভেদে টিউশন ফি একেক রকম। এর সঙ্গে শিক্ষার্থীর থাকা-খাওয়া, যাতায়াত, হাত ও চিকিৎসা খরচ যোগ করতে হবে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিস্টারের ফি অগ্রিম পরিশোধ করতে হয়। অনেক দেশে স্বাস্থ্যবীমা থাকা বাধ্যতামূলক।
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রকাশের জন্য স্যাট, জিআরই বা জিম্যাট স্কোরকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভাষা দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএস ও টোফেল স্কোরের গুরুত্ব অনেক। এই পরীক্ষাগুলোর জন্য সময় দিয়ে, পরিশ্রম করে, যত বেশি সম্ভব স্কোর তুলতে হবে।
বৃত্তি : ভারত, তুরস্ক, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারিভাবেই নানা ধরনের বৃত্তি রয়েছে। এ রকম বিখ্যাত কয়েকটি বৃত্তি হলো– জাপানের মনবুশো বৃত্তি ও মনবুকাগাকুশো বৃত্তি, এমএইচটিটি স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, জার্মানির ডিএএডি, অস্ট্রেলিয়ার ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপ, যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ স্কলারশিপ, শেভেনিং স্কলারশিপ,
যুক্তরাষ্ট্রের ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্টস প্রোগ্রাম, কানাডার হাম্বার ইন্টারন্যাশনাল এন্ট্রান্স স্কলারশিপ ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীদের পূর্ণ বা আংশিক বৃত্তির সুযোগ রয়েছে। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর থ ক স ন র জন য প রথম ই ঠ ক কর দরক র আপন র ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
জকসু নির্বাচন: ছাত্রদলের প্যানেলকে ‘ভাড়াটিয়া’ আখ্যা দিয়ে একাংশের
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ছাত্রঅধিকার পরিষদ যৌথভাবে ঘোষিত প্যানেলকে কেন্দ্র করে তীব্র বিরোধ দেখা দিয়েছে। ঘোষিত প্যানেলকে ‘ভাড়াটিয়া’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রদলের একাংশের নেতাকর্মীরা।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ‘ঐক্যবদ্ধ নির্ভীক জবিয়ান’ নামের সমন্বিত প্যানেল ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন:
বিচারকের ছেলে হত্যার প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ
নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে আশুগঞ্জ সার কারখানায় সমাবেশ
এ সময় কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরসহ শাখা ছাত্রদলের বহু নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। প্যানেল ঘোষণার পরই ১৮তম ব্যাচের ৩০–৩৫ জনের একটি গ্রুপ স্লোগান দিতে শুরু করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
তারা ‘ভুয়া ভুয়া’, ‘আঠারো আঠারো’, ‘গর্জে উঠো আঠারো’, ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে আঠারো’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে প্যানেল ঘোষণার প্রতিবাদ জানান। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
তাদের অভিযোগ, ঘোষিত প্যানেলটি ছাত্রদলের প্রকৃত কর্মীদের বাদ দিয়ে ‘ভাড়াটিয়া’ দিয়ে সাজানো হয়েছে।
বিক্ষোভরত নেতাকর্মীরা দাবি করেন, জকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে যদি ১৮ ব্যাচের কেউ স্থান পায়, তাহলে তাকে অবশ্যই ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী হতে হবে এবং ব্যাচটি থেকে পাঁচজনকে স্থান দিতে হবে। অন্যথায় প্যানেল ঘোষণা হওয়ার আগে প্রতিটি মনোনীত প্রার্থীর সাংগঠনিক পরিচয় স্পষ্ট করে জানাতে হবে।
এসব দাবি না মানা হলে ‘ঐক্যবদ্ধ ১৮ ব্যাচ’ নামে আলাদা এক্সক্লুসিভ প্যানেল ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এদিকে ঘোষিত সমন্বিত প্যানেলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব (সহ-সভাপতি), শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক খাদিজাতুল কুবরা (সাধারণ সম্পাদক) এবং আহ্বায়ক সদস্য বিএম আতিকুর রমান তানজিল (সহ-সাধারণ সম্পাদক)।
প্যানেলের অন্যান্য সম্পাদক পদে রয়েছেন—মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র সম্পাদক অনিক কুমার দাস, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক নুসরাত চৌধুরী জাফরিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক মো. মাশফিকুল ইসলাম রাইন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক আল শাহরিয়ার শাওন, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক অর্ঘ্য শ্রেষ্ঠ দাস, আন্তর্জাতিক সম্পাদক অপু মুন্সী, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক তাকরিম আহমেদ, ক্রীড়া সম্পাদক মো. কামরুল হাসান নাফিজ, পরিবহন সম্পাদক মাহিদ হাসান, সমাজসেবা ও শিক্ষার্থীকল্যাণ সম্পাদক মো. আনন বিন রহমান এবং পাঠাগার ও সেমিনার সম্পাদক রিয়াসাল রাকিব।
নির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন—ইমরান হাসান ইমন, সাদমান সাম্য, সুলতান মাহমুদ শুভ, মনিরুজ্জামান মনির, তৌহিদুল ইসলাম তানিম ও মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ। আরও একজন নির্বাহী সদস্যের নাম পরে জানানো হবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী