মার্কিন–চীন আলোচনায় অগ্রগতির জেরে বিশ্ববাজারে বেড়েছে ডলারের দর, উঠছে সূচক
Published: 12th, May 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতির খবরে আজ সোমবার সকালে ওয়াল স্ট্রিট স্টকের ফিউচার্সের উত্থান হয়েছে। একই সঙ্গে মার্কিন ডলারের শক্তিশালী হয়েছে। বিশ্বের প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলার ইনডেক্সের মান বেড়েছে।
আজ সোমবার সকালে ওয়াল স্ট্রিটের সূচক এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার্সের উত্থান হয়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। নাসডাক ফিউচার্স বেড়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া ইউরোস্টক ৫০ ফিউচার্সের উত্থান হয়েছে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ ও এফটিএসই ফিউচার্সের উত্থান হয়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ ও ডিএএক্স ফিউচার্সের উত্থান হয়েছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ।
অন্যদিকে এশিয়ার বেশ কয়েকটি বাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে। দিনের শুরুতে জাপানের নিক্কেই এশিয়া সূচকের উত্থান হয়েছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ; দক্ষিণ কোরিয়ার কেএস ১১ সূচকের উত্থান হয়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
সোমবার সকালে ইয়েনের বিপরীতে মার্কিন ডলারের উত্থান হয়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৪৫ দশমিক ৯০ ইয়েন। ডলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতন হয়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। প্রতি ইউরোতে পাওয়া যাচ্ছে ১ দশমিক ১২ ডলার। সামগ্রিকভাবে ডলার ইনডেক্সের মান বেড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ; উঠেছে ১০০ দশমিক ৬০ পয়েন্টে। তবে অফশোর বাজারে ইউয়ানের বিপরীতে ডলারের পতন হয়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।
বিষয়টি হলো, স্টক ফিউচার্স এক ধরনের চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে ক্রেতা একটি নির্দিষ্ট তারিখে পূর্বনির্ধারিত দামে নির্দিষ্ট সংখ্যক শেয়ার কিনতে বাধ্য থাকেন, এবং বিক্রেতাও সেই শেয়ারগুলো বিক্রি করতে বাধ্য। এই স্টক ফিউচার্স দেখে বোঝা যায়, মূল লেনদেনে সূচক বাড়বে না কমবে।
চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতির কারণে বিশ্ববাজারে আশাবাদ তৈরি হয়েছে যে মন্দা হয়তো এড়ানো যাবে। আজ বাজারে তারই প্রতিফলন ঘটেছে, যদিও দুই দেশের বাণিজ্যচুক্তির বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, হোয়াইট হাউস শিগিগরই চীনের পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক থেকে পিছিয়ে আসবে। এমনকি ট্রাম্প যে প্রথমে ৬০ শতাংশ শুল্কের কথা বলেছিলেন, সেই হারে শুল্ক আরোপ করা হবে, সেই আশাও করছেন তাঁরা।
পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, ট্রাম্প চীনের পণ্যে উচ্চ শুল্ক রাখার পক্ষপাতী। সেটা হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়বে এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি হলে বড় ক্ষতি এড়ানো যাবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা হচ্ছে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, এই আলোচনায় প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। চীনও বলেছে, দুই পক্ষের মধ্যে ‘গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্য’ হয়েছে। সেই সঙ্গে উভয় পক্ষ নতুন এক অর্থনৈতিক সংলাপ ফোরাম গঠনের বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
শেষমেশ শুল্কের হার কী হবে, সে বিষয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কিছু না বললেও জানিয়েছে, সোমবার উভয় দেশ বাণিজ্যচুক্তির বিষয়ে যৌথ ঘোষণা দেবে।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিপারস্টোনের জ্যেষ্ঠ গবেষণা কৌশলবিদ মাইকেল ব্রাউন বলেছেন, পরিস্থিতি দেখেশুনে মনে হচ্ছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ কাঠামো তৈরি করেছে; যে কাঠামোর আওতায় দুই দেশের মধ্যে আরও আলোচনা হওয়ার সুযোগ আছে। তিনি আরও বলেন, চলমান আলোচনা থেকে খারাপ কিছু আসবে না; আবারও এটাও ঠিক, সুনির্দিষ্ট চুক্তির বাস্তবতা এখনো তৈরি হয়নি। কথা হচ্ছে, এই আলোচনা থেকে কি শুল্ক স্থগিত, হ্রাস বা তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেই উত্তর এখনো কেউ জানে না।
অন্যদিকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। সেই সঙ্গে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ বিরতির সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, আগামী বৃহস্পতিবার তুরস্কে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে তিনি প্রস্তুত। ভূরাজনীতিতে এসব সুখবরের প্রভাবও বাজারে পড়েছে বলে সংবাদে বলা হয়েছে।
সোনা ও তেলএদিকে ডলার ও শেয়ারবাজারে চাঙাভাব থাকায় বিশ্ববাজারে সোনার দর আজ কিছুটা কমেছে। সোনার দাম আজ ১ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। দাম নেমে এসেছে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ২৬৮ ডলারের। এপ্রিল মাসে সোনার সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছিল। তখন সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ ডলারে উঠে যায়।
এদিকে বাণিজ্য আলোচনায় অগগ্রতির প্রভাব তেলের বাজারেও আশাবাদ তৈরি হয়েছে। আজ সকালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ২৩ সেন্ট বেড়ে ৬৪ দশমিক ১৪ ডলারে উঠেছে। ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২৫ সেন্ট বেড়ে ৬১ দশমিক ২৭ ডলারে উঠেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ন য দশম ক র ব পর ত ১ দশম ক স মব র
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান যুদ্ধ থামালেও গাজায় নির্বিকার ট্রাম্প
ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে আপাতত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আবারও গাজার দিকে ফিরছে, যেখানে প্রতিদিনই বাড়ছে ফিলিস্তিনি প্রাণহানি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ প্রয়োগ করে সফল হলেও গাজায় ইসরায়েলকে থামাতে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নিচ্ছেন না। আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক মাইরাভ জোনসেইন বলেন, ‘ট্রাম্প চাইলে নেতানিয়াহুকে থামাতে পারেন। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, তিনি ইসরায়েলকে গাজায় যা ইচ্ছা করার পূর্ণ ছাড় দিয়েছেন।’
এদিকে সহিংসতা আরও বেড়েছে গাজায়। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯০ জন। বুধবার প্রাণ গেছে ৪৫ জনের, যাদের অনেকেই ত্রাণ সহায়তা নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫৬ হাজার ১৫৭ ফিলিস্তিনি।
গাজা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত চার সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসমর্থিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সহায়তার জন্য গিয়ে ৫৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি। এ ছাড়া নিখোঁজ হয়েছেন ৩৯ জন। এই কেন্দ্রগুলোকে ‘মৃত্যুকেন্দ্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে গাজা কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘খাদ্যকে গণহত্যার অস্ত্রে রূপান্তরিত করেছে ইসরায়েল।’
তবে জিএইচএফ দাবি করছে, তারা এখন পর্যন্ত ৪৪ মিলিয়ন খাবার প্যাকেট সহায়তা হিসেবে বিতরণ করেছে। কিন্তু ইউনিসেফসহ অনেক মানবাধিকার সংস্থাই এই ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে শিশুহত্যা এবং মানবিক নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, জিএইচএফের খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে হওয়া ১৯টি প্রাণঘাতী হামলার মধ্যে অন্তত ১০টিতে হতাহতদের অধিকাংশই শিশু।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েলি বোমা হামলা, অবরোধ ও জ্বালানির অভাবে গাজায় প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে পানির সরবরাহ ব্যবস্থা। এমনকি পানির সংকটে পড়েছেন ত্রাণ বিতরণসহ বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবীরাও। এর ফলে তৃষ্ণায় মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েছেন হাজার হাজার গাজাবাসী।
এমন অবস্থায় যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে হামাস জানিয়েছে, কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চললেও এখনও কোনো কার্যকর প্রস্তাব পায়নি তারা। ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি ‘খুব কাছাকাছি’ হলেও বাস্তবে আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
এএফপি জানায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে। রামাল্লার উত্তর-পূর্বে কফর মালেক গ্রামে গতকাল দখলদারদের চালানো হামলায় অন্তত তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। স্থানীয় সূত্রে আলজাজিরা জানিয়েছে, হামলাকারীরা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পাহারায় ফিলিস্তিনিদের গ্রামটিতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি ছোড়ে ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে।
একই দিনে জেরিকোর কাছে আল-মালিহাত গ্রামে এবং আল-মিনিয়া গ্রামের কাছে ফিলিস্তিনি যানবাহনে পাথর নিক্ষেপ করে দখলদার ইসরায়েলিরা। এসব হামলার সময়ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের পাশে ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ইসরায়েলের এই ‘দ্বৈত ভূমিকা’ যেমন একদিকে সেনা পাহারায় দখলদারদের তাণ্ডব, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিদের ওপর দমনপীড়ন পশ্চিম তীরের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলছে।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির আবারও গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের সঙ্গে সংঘাতে বিরতি নিশ্চিত হওয়ায় এখন ইসরায়েলের নজর আবার পুরোপুরি গাজার হত্যাযজ্ঞে ফিরেছে।