ঈদুল আজহা ও হজ যখন প্রতিবাদের ক্ষেত্র
Published: 12th, May 2025 GMT
মক্কার পবিত্র ভূমিতে হজের ভিড়। হাজার হাজার মানুষ তাওয়াফ করছেন, তাঁদের কণ্ঠে লাব্বাইকের ধ্বনি। কিন্তু এই ভিড়ের মধ্যে একটি ছোট দল মিনায় জড়ো হয়েছে। তারা শাসকের অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলছে, তাদের হাতে কোরআন, চোখে ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা। এই দৃশ্য ইসলামের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের একটি অনন্য রূপ। হজ ও ঈদুল আজহা শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং মুসলিমদের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি উত্থাপনের একটি পবিত্র প্ল্যাটফর্ম ছিল তখন। এই প্রবন্ধে আমরা ঈদুল আজহা ও হজের প্রেক্ষাপটে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, ধর্মীয় আচারের সঙ্গে এর সম্পর্ক এবং মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে এর বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করব।
হজের প্রেক্ষাপটে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ
হজ মুসলিমদের জন্য একটি বিশাল সমাবেশ, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একত্র হয়। এই সমাবেশ শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক অভিযোগ উত্থাপনের একটি মঞ্চ হয়ে উঠেছিল বেশ কয়েকবার।
উমাইয়া যুগে হুসাইন বিন আলী (রা.
এই প্রতিবাদ পরবর্তী সময়ে কারবালার ঘটনার পটভূমি তৈরি করে, কিন্তু হজের সময় এটি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ছিল। বলা যায়, হজের সময় মক্কার পবিত্রতা প্রতিবাদকে শান্তিপূর্ণ রাখতে বাধ্য করেছে। উমাইয়া যুগে আবদুল্লাহ বিন উমর (৬১০-৬৯৩ খ্রি.) হজের সময় মক্কায় শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, কিন্তু তিনি স্পষ্টভাবে সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, ‘মক্কার পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’ (ইবনে হাজার আল-আসকালানি, আল-ইসাবা ফি তাময়িজিস সাহাবা, ৪/২১০, বৈরুত: দারুল কুতুব, ১৯৯৫)
আরও পড়ুনদরুদ কেন পড়ব২৮ এপ্রিল ২০২৫আব্বাসীয় যুগের আরেকটি উদাহরণ আছে। ২৪৫ হিজরি সনে (৮৫৯-৬০ খ্রি.) মক্কায় হজের সময় জনগণ খলিফা আল-মুতাওয়াক্কিলের (৮২২-৮৬১ খ্রি.) অত্যধিক করের বিরুদ্ধে মিনায় সমাবেশ করে। তারা কোরআনের কপি হাতে নিয়ে দোয়া করে এবং খলিফার প্রতিনিধির কাছে অভিযোগপত্র পাঠায়। এই প্রতিবাদের ফলে মক্কার হাজিদের জন্য কর হ্রাস করা হয়। (আল-তাবারি, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ৯,/৩২৩, বৈরুত: দারুল কুতুব, ১৯৮৫)
ঈদুল আজহার প্রেক্ষাপটে প্রতিবাদ
সেকালে ঈদুল আজহার সময় মানুষ সমবেত হতো এবং এই সমাবেশ প্রায়ই সামাজিক ও ধর্মীয় অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ তৈরি করত।
ফাতেমীয় যুগে ৪০৫ হিজরি সনে (১০১৪-১৫ খ্রি.) মিসরে ঈদুল আজহার সময় জনগণ খলিফা আল-হাকিম বিআমরিল্লাহর (৯৮৫-১০২১ খ্রি.) কিছু ধর্মীয় নীতির বিরুদ্ধে মসজিদে সমাবেত হয়। তারা ঈদের নামাজের পর কোরআন হাতে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের অভিযোগ তুলে ধরে। এই প্রতিবাদের ফলে খলিফা তাঁর কিছু বিতর্কিত নীতি সংশোধন করেন। (আল-মাকরিজি, ইত্তিআজুল হুনাফা, ১/১৬৫, কায়রো: দারুল কুতুব, ১৯৭০)
প্রতিবাদের বিবর্তন
মধ্যযুগে প্রতিবাদ প্রধানত মসজিদে সমাবেশ, মিছিল ও প্রতীকী অভিযোগের মাধ্যমে প্রকাশ পেত। আধুনিক যুগে এই প্রতিবাদ আরও সংগঠিত ও বৈশ্বিক রূপ নিয়েছে। ২০ শতকে মুসলিম বিশ্বে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দেখা যায়। ১৯২০ সালে ভারতের খিলাফত আন্দোলনে মুসলিমরা অটোমান খিলাফতের পতনের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন গড়ে তোলে। এই আন্দোলন মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতির সঙ্গে সমন্বিত হয় এবং মধ্যযুগীয় মুসলিম প্রতিবাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে সাদৃশ্য বজায় রাখে। (মিনল্ট, কে., দ্য খিলাফত মুভমেন্ট, পৃ. ৬৭, নিউইয়র্ক: কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮২)
আধুনিক যুগেও হজের সময় প্রতিবাদ হয়েছে। ১৯৮৭ সালে মক্কায় হজের সময় একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হাজিরা রাজনৈতিক অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। যদিও এই সমাবেশ দমন করা হয়। (এস্পোসিটো, জে., দ্য অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অব ইসলাম, পৃ. ৬৫৪, অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৯)
ইসলামের ইতিহাসে হজ ও ঈদুল আজহা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জন্য একটি পবিত্র প্ল্যাটফর্ম ছিল। এই প্রতিবাদগুলো ধর্মীয় আচারের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে মুসলিম সমাজের ঐক্য ও ন্যায়বিচারের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছে। এই ঐতিহ্য আমাদের শেখায়, ধর্মীয় আচার ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ একে অপরের পরিপূরক হতে পারে।
আল–জাজিরা ডট নেট অবলম্বনে
আরও পড়ুনহজের প্রস্তুতি যেভাবে নিতে হবে২৫ এপ্রিল ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র জন য হজ র প ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না ঠিক করবে জনগণ: মঈন খান
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কি না– তা জনগণ ঠিক করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কার্টার সেন্টারের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে জাতীয় নাগরিক পার্টির দাবির বিষয়ে মঈন খান বলেন, এটা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেসব রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা বলছে, তারা তাদের বক্তব্য বলেছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক তো বিএনপি নয়– এটি জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয়। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কারা নির্বাচন করবে, কারা করবে না। এটাই আমাদের (বিএনপি) বক্তব্য।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কি আসলেই নির্বাচন করতে চায়, তারা কি আসলেই গণতন্ত্র চায়? সেটা তো আওয়ামী লীগকে বলতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের পর ৯ মাস চলে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ধরে এ দেশের মানুষের ওপরে জুলুম, লুটপাট ছাড়াও ফ্যাসিস্ট কায়দায় এ দেশকে তছনছ করার ঘটনায় তারা ভুল স্বীকার করেনি, তারা ক্ষমা চায়নি বাংলাদেশের মানুষের কাছে। তাই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নটি আসলে আমাদের জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই। এর উত্তর বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ জানে।
বৈঠকে ড. আব্দুল মঈন খান ছাড়াও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার ছিলেন। কার্টার সেন্টারের ডেমোক্রেসি প্রোগ্রামের সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর জোনাথন স্টোনস্ট্রিট ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।